রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

যে কর্মসূচী “ইসলামী সমাজ”কে ৫০ বছর এগিয়ে দিতে পারে

 যে কর্মসূচী “ইসলামী সমাজ”কে ৫০ বছর এগিয়ে দিতে পারে

লোগো সংশোধনঃ আপনাদের লোগোতে কাবার চিত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা নৈতিকভাবে সঠিক নয়। কেননা যে কোনো বস্তুর ফটো ইসলামে নিষিদ্ধ। তাই লোগোতে কাবা’র ফটো ব্যবহার একটি প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান। কেননা ফটো হলো মূর্তির আরেকটি রূপ। 


রিপোর্ট ভিত্তিক পর্যালোচনাঃ কে কতজন সমর্থক, কর্মী, সাথী, সদস্য বৃদ্ধি করলো তা রিপোর্ট ভিক্তিক খাতা-কলমে অফিসিয়াস সিস্টেমে পর্যালোচনার ব্যবস্থা করা। এতেকরে যেমন- একজন কর্মীর দক্ষতা যাচাই করা যাবে তেমনি তথ্য সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের যোগ্যতাও সৃষ্টি হবে।

স্থানীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে সমাবেশ নিশ্চিতকরণঃ আপনাদের অধিকাংশ সমাবেশে দেখা যায় নির্দিষ্ট গুটি কয়েক লোকই ঘুরে ফির দাওয়াতী কাজ করছে। কেন? আপনারা প্রতিটি জায়গার স্থানীয় লোকদের মাধ্যমে সমাবেশ করেন। লোক না থাকলে কিছুদিন সেই এলাকায় সময় দিলে স্থানীয় সংগঠন তৈরি করে উক্ত সংগঠনকে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেন। এতেকরে নতুন নতুন লোক তৈরি হবে এবং স্থানীয় সংগঠন শক্তিশালী হবে।


শক্তিশালী মিডিয়া ও প্রকাশনী শাখা তৈরিঃ বর্তমান যুগকে বলা হয় মিডিয়ার যুগ। একটি শক্তিশালী মিডিয়া একশত দায়ীর ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ মিডিয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থান ও সময়ের একটি বক্তব্যকে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এবং দীর্ঘ সময় ধরে প্রচার করা যায়। তাই একটি শক্তিশালী মিডিয়া শাখা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।  তাছাড়া সমাজের চিন্তাশীল মানুষেরা ইসলাম নিয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনা লেখালেখির মাধ্যমে প্রকাশ করতে চায়। তাদেরকে সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করতে সংগঠনের প্রকাশনীতে তাদের লেখা আহ্বান করা প্রয়োজন। এতে শিক্ষিত ও চিন্তাশীল মানুষেরা সহজেই সংগঠনে আকৃষ্ট হতে পারে। তাছাড়া সংগঠনের আভ্যন্তরীণ দায়ীত্বশীলগণও একটি প্রকাশনীর মাধ্যমে বাস্তবতার আলোকে করণীয়গুলো সবার মাঝে শেয়ার করতে পারে।


ছাত্রদের জন্য আলাদা শাখা তৈরিঃ দেশের অন্যান্য সংগঠনগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে দেখবেন যে, যারাই সংগঠনে ছাত্র শাখা তৈরি করেছে তারাই লাভবান হয়েছে। ছাত্রদের উদ্যম ও কর্মসক্ষমতা অনেক বেশি। তাছাড়া সংগঠনকে বিভক্ত করে পরিচালিত করতে পারলে অধিক দায়িত্বশীল তৈরি হয়। এতেকরে সংগঠন নেতৃত্বশূন্যতায় ভোগে না এবং সংগঠন বেগবান হয়। এজন্য সংগঠনকে আরাও বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত করে দায়িত্বশীল তৈরি করা যেতে পারে। যেমন-


সংগঠনকে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত করণ ও নেতৃত্ব তৈরিঃ 

যেমন- ক) সাংস্কৃতিক শাখা খ) আইটি শাখা  গ) সংবাদ শাখা ইত্যাদি

তাছাড়া যুব শাখা, কৃষক শাখা, বৃদ্ধ শাখা, পেশাজীবী শাখা ইত্যাদি ভাগে বিভক্ত করে বেশি বেশি নেতৃত্ব তৈরি করা যাকে করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্ধারণ করতে একাধিক বিভাগ থেকে বাছাই করে অধিক যোগ্য নেতা বাছাই করা যায়।


সংগঠনকে গতিশীল করতে নেতার মেয়াদ নির্ধারণ করে দেয়াঃ আর তা এই পদ্ধতিতেও হতে পারে যে, সর্বোচ্চ নেতা একজন থাকবেন। তিনি মজলিশে শুরার সভাপতি এবং সংগঠনের সর্বাধিনায়ক হবেন। তার টিমের (মজলিশে শুরারা) আন্ডারে থাকবে বিভিন্ন বিভাগের কেন্দ্রিয় সভাপতিগণ, যাদেরকে এই টিম দিকনির্দেশনা দিবেন। আর এই কেন্দ্রিয়া সভাপতিগণ হবেন ১-৫ বছরের নির্দিষ্ট একটি মেয়াদ পর্যন্ত। মেয়াদ নির্দিষ্ট থাকলে প্রচেষ্টা বৃদ্ধি পায় এবং কাজে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হয়, যা অনির্দিষ্ট কালের মেয়াদের ক্ষেত্রে তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। যেমন একজন ইবাদতকারী যদি জানতে পারে যে, সে আর মাত্র এক মাস বেঁচে থাকবে। তাহলে তার প্রচেষ্টা ও ইবাদতের একাগ্রতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। যেমন- আলী বানাতের জীবনী। 


তৃণমূল নেতৃত্ব তৈরিঃ সাংগঠনিক দায়িত্বকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতৃত্ব তৈরি করা। যেমন- কেন্দ্রীয় সভাপতি, জেলা সভাপতি, থানা সভাপতি, ইউনিয়ন সভাপতি, ওয়ার্ড সভাপতি, গ্রাম বা মহল্লা সভাপতি ইত্যাদি।


মাইনাস ফর্মূলাঃ অন্যান্য ইসলামী দলগুলো যদি পেইড দায়িত্বশীল ছাড়া চলতে পারে তাহলে আপনারাও পারবেন। তবে হ্যা এক ঝটকাতেই হয়তো পারবেন না কিন্তু আন্তরিক চেষ্টা থাকলে নতুন নতুন স্বচ্ছল পরিবারের লোকদেরকে দায়িত্ব দিয়ে পেইড দায়িত্বশীল মাইনাস কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে পারবেন। বিশেষ করে পরবর্তী দায়িত্বশীলদের বেলায় কার্যকর করা যাবে।


ইহতেসাব মূলক প্রোগ্রামঃ মানুষ মাত্রই ভুল করে। দায়ীত্বশীলগণও ভুল করে থাকে। তবে তাদের এই ভুলগুলোর কারণে কর্মীরা মনে মনে বিরক্ত হলেও ভুলগুলো  ধরিয়ে দিতে সাহস পায় না। তাই মাঝে মাঝে বৈঠকের শেষে ইহতেসাব বা সংশোধন এজেন্ডা রেখে নিজেদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে কর্মীদের আহ্বান করা। কর্মীরা ভুল ধরিয়ে দিলে তাদেরকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করা অথবা ভুল স্বীকার করে নিয়ে পরবর্তীতে সংশোধন করা হবে বলে আশ্বাস দিলে কর্মীরা দায়িত্বশীলদের প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল ও বিশ্বস্ত হয়। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে।


থিংক ট্যাংক বিভাগ চালু করাঃ সংগঠনের এমন একটি শাখা থাকবে, যাদের কাজ হবে অন্যান্য দলগুলোর গতিশীলতার ইতিবাচক কারণ খুজে বের করে সেগুলোকে নিজ সংগঠনে প্রয়োগের আবেদন করা। মজলিশে শুরার মাধ্যমে সেগুলোকে পর্যালোচনার পর সংগঠন সেগুলোকে গ্রহণ বা বর্জন করবে।


সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণঃ  “মানব সেবাই ধর্ম” এই স্লোগানকে সামনে রেখে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে নিজেদেরকে সমপৃক্ত করা। যেমন- রক্তদান সংঘ তৈরি, কর্মীদের নিয়ে রাস্তা-ঘাট মেরামত, যাকাত ও আর্থিক সহায়তা প্রদান, সামাজিক অন্যায় প্রতিরোধে তরুণদের নিয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি তৈরি, পাবলিক টয়লেট ও প্রসাবখানা নির্মাণ, পাবলিক নলকূপের ব্যবস্থা, ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পেইন করা, ফ্রি ব্লাড-গ্রুপিং ক্যাম্পেইন পরিচালনা, মদ-জোয়ার আসরে আশপাশের লোকজন সচেতন করে এগুলো বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া। সুদ প্রতিরোধে কর্জে হাসানাহ ঋণদান কর্মসূচী চালু করা।


সমাজের অবাধ্য সন্তানদেরকে সামাজিক চাপ দিয়ে পিতা-মাতার দায়িত্ব নিতে চাপ সৃষ্টি করা, যৌতুকের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা তৈরি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করা। ইসলাম বিরোধী বিভিন্ন সামাজিক কুসংস্কার নির্মূলে লিফলেট বিতরণ ও সামাজিক সচেতনতা তৈরি, সামাজিক পরিশোদ্ধতার লক্ষ্যে পারিবারিক ঝগড়া মিমাংসার সুরাহা করে দেওয়া। সমাজের ছেলে-মেয়েদেরকে শালিন পোষাক পড়তে উৎসাহিত করা এবং অভিভাবকদেরকে সচেতন করার দায়িত্ব নেওয়া, দানের প্রতি উৎসাহিত করা এবং প্রতারক খয়রাতিদের প্রতিরোধ করা, সমাজের অন্যায়কারীদের বিরোদ্ধে সম্মিলিত আওয়াজ উঠাতে উৎসাহিত করা।


সমাজের খারাপ দায়িত্বশীলদের হটিয়ে দ্বীনদার  ন্যায় ও পরোপকারিদের দায়িত্বশীল নিয়োগ দেয়া, সামাজিক উৎকন্ঠার জায়গাগুলোতে প্রতিরোধ ও আওয়াজ বলিষ্ঠ করা এবং যেকোন নিগৃহীতের পাশে দাঁড়ানো, দরিদ্র মেধাবীতের পাশে দাড়ানো, পজিটিভ সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী মেধার মূল্যায়ন ও পুরষ্কৃত করা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সিস্টের লালন ও দুষ্টের দমন নীতি গ্রহণ করা, সামাজি দূর্যোগ মোকাবেলায় সম্মিলিত এবং ঐক্যবদ্ধ নীতি গ্রহণ করা।


সুস্থ সবল দেহ গঠনে এবং শারীরিক সামর্থ বৃদ্ধিতে সহাক খেলাধুলায় উৎসাহিত করা এবং খেলায় প্রচলিত অনৈসলামিক কার্যকলাপ ও আচরণগুলোর বিলোপ সাধনে সচেষ্ট হওয়া। অলস ও নেশাযুক্ত খেলাগুলোকে নিরুৎসাহিত ও প্রতিরোধ করা। সমাজের ছোট ছোট অংশে ন্যায় ও ইসলামী ঐতিহ্য/মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে সু-কৌশলে কাজ করা। উদ্যোক্তাদের সাপোর্ট করা ও তার বিরোধকারীদের নিরোৎসাহিত করা।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন