শুরুকথাঃ প্রতিটি মানুষই চায় তার ঘরটি হোক একটি নিরাপদ ও শান্তির আবাস। আর তাইতো ঘরকে আরামদায়ক করতে ঘরে ব্যবহার করে এসি, ফ্যান আরও কতকিছু। তাছাড়া ঝড়-তোফানের হাত থেকে ঘরকে রক্ষা করতে এর অবকাঠামোকে যতটা সম্ভব শক্তিশালী করে তৈরি করে। তারপরও অনেক সময় এগুলো নানা কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাই ভূ-গর্ভস্থ ঘর হতে পারে এগুলোর শক্তিশালী একটি বিকল্প এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধান। কিভাবে? চলুন দেখে নেয়া যাক-
১। প্রাকৃতিক এসিঃ সাধারণ ঘরগুলো ঋতুর সাথে তাল মিলিয়ে অধিক ঠান্ডা বা উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। ফলে এই ঘরগুলোকে বসবাসযোগ্য করার জন্য ব্যবহার করতে হয় ব্যায়বহুল এসি/ফ্যান ইত্যাদি সরঞ্জাম। তবে যেহেতু তাপ কিংবা ঠান্ডার প্রভাব সহজে মাটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না তাই ভূ-গর্ভস্থ ঘরটি শীতে তুলনামূলক গরম এবং গরমে তুলনামূলক ঠান্ডা থাকবে। ফলে এ সংক্রান্ত খরচও তুলনামূলক কমে আসবে।
২। ঝড়-তোফান প্রতিরোধীঃ মাটির উপরিভাগে নির্মিত ঘরগুলা ঝড়-তোফানে ভেঙে যায় বা বাতাসে উপড়ে পড়ে যায় এবং চাল বা ছাদ উড়িয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু এই ঘর ঝড়-তুফানে ভেঙে পড়া বা উড়ে যাওয়ার আশঙ্কামুক্ত।
৩। ভূমিকম্প সহায়কঃ ভূ-পৃষ্ঠের উপরে নির্মিত ঘরগুলো ভূমিকম্পের জন্য বেশি ঝুকিপূর্ণ। কেননা এগুলো মাটির উপড় দাড়িয়ে থাকে বলে কম্পনে ধ্বসে পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ঘরগুলো যদি মাটির অভ্যন্তরে হয় তাহলে ধ্বসে পড়ার ঝুকি বহুলাংশে হ্রাস পেয়ে যাবে।
৪। শব্দ দূষণ মুক্তঃ সাধারণ ঘরগুলোতে অযাচিত যে কোন শব্দ অতি সহজেই প্রবেশ করে। কিন্তু ঘরটি ভূ-গর্ভস্থ হলে এটি হবে প্রায় সম্পূর্ণ শব্দ দূষণ মুক্ত ও অধিক নির্জন পরিবেশ। ফলে বিশ্রাম নেয়া বা ঘুম হবে অধিক আরামদায়ক।
৫। অন্যের বিরক্তির কারণ না হওয়াঃ ঘরটি ভূ-গর্ভস্থ হলে যেমন নিজে শব্দ দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তেমনি এই ঘরে আপনি নিজে অধিক শব্দ করলে অন্য ব্যক্তিরাও এই শব্দ কম শুনতে পাবে। ফলে নিজের সৃষ্ট শব্দ অন্যের বিরক্তির কারণ হবে না।
৬। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রক্ষাকবচঃ দেশে অরাজকতা বা যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও এই ঘর হবে অধিক নিরাপত্তার জায়গা। কেনানা এগুলো সাধারণভাবে দৃশ্যমান না হওয়ায় অধিক হারে আক্রমণের ঝুঁকিমুক্ত থাকবে।
৭। আবাদি জমি সাশ্রয়ীঃ মানুষ অধিক হারে ভূ-গর্ভস্থ ঘরের দিকে ঝুকলে আবাদি জমিরও অনেকটা সাশ্রয় হবে।
৮। চোর-ডাকাতের ভয় কমঃ যেহেতু আগমন এবং বহির্গমনের ব্যবস্থা সীমিত তাই চুর-ডাকাত এগুলোতে ঢুকতে যেমন ভয় পাবে তেমনি ধরা পড়লে পালানোরও সুযোগ পাবে না। তাই এগুলোতে চোর ডাকাতের প্রকোপ কম হবে।
৯। ধুলা-বালি মুক্তঃ ঘরটি ভূ-গর্ভস্থ হওয়ার কারণে ধুলা-বালির আনা-গোনা থাকবে না। ফলে ঘরের পরিবেশ থাকবে অধিক স্বাস্থ্যকর।
১০। অধিক সাশ্রয়ীঃ ঘরটি ভূ-গর্ভস্থ হওয়ার কারণে ঘরের বাইরের দেয়াল থাকে মাটির সাথে সংযুক্ত। ফলে বাইরের দেয়ালে রং বা সজ্জার জন্য প্রতি বছর আলাদা খরচ করতে হবে না।
১১। অধিক বিশ্রামোপযোগীঃ বাতি নিভালেই ঘুমের উপযোগী অন্ধকার পাওয়া যাবে। ফলে দিনের বেলাতেও রাতের মতোই আলোমুক্ত ও বিরক্তিহীন ঘুমের সুযোগ থাকবে।
নেতিবাচক দিকসমূহঃ প্রতিটি ইতিবাচক কর্মের বিপরীতে কিছু নেতিবাচক দিকও থাকে। তেমনি এই ভূ-গর্ভস্থ ঘরেরও কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। যেমন- ক) এই ঘরটি স্যাতে স্যাতে হয়ে যেতে পারে।
খ) দেখার জন্য সর্বদা লাইটের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
গ) ভূমি ধ্বসের ফলে মাটির নিচে চাপা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ইত্যাদি।
শেষকথাঃ প্রতিটি উন্নতির কিছু নেতিবাচক দিকও থাকে। যেমন গাড়ি আবিষ্কারের কারণে কিছু মানুষ গাড়ি এক্সিডেন্টে মারাও যায়, বিদুৎপিষ্ট হয়েও অনেক মানুষ মারা যায়। তবে অধিকহারে সুফল থাকায় যেমন এগুলোকে মানুষ গ্রহণ করে নিয়েছে, তেমনি এই ভূগর্ভস্থ ঘরের আইডিয়াটা গ্রহণ করে নিলেও মানুষ অনেক উপকার পাবে বলে আমার বিশ্বাস। তো গবেষণামূলক এই লেখাটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে? কমেন্টে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। তাছাড়া নতুন নতুন আইডিয়া সম্বলিত লেখা পেতে এই সাইটটি মাঝে মাঝে ভিজিট করতে ভুলবেন না। শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন