মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১

সমাজকে ভালো রাখার উপায়




সমাজে ভালোর প্রভাব: মানুষ কতভাবেই না দ্বীনের পথে আসছে:

ঘটনা-০১: পাশের এলাকায় বিশাল এক ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। হয়তো আপনি ওয়াজ শুনতে যাওয়ার ইচ্ছাও করেননি। কিন্তু বন্ধু-বান্ধবের পীড়াপিড়িতে ওয়াজ শুনতে চলে গেলেন। সেখানে বক্তারা নামাজের গুরুত্ব ও পরকালের শাস্তির ব্যপারে সবাইকে সতর্ক করলেন। দুনিয়ার ক্ষনস্থায়ী জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতার চেয়ে পরকালীন জীবনের শান্তি ও  আযাবের গুরুত্ব বর্ণনা করলেন।   আলোচনা শুনে  আপনার মনে হলো পরকালের ব্যপারে এখনই সতর্ক হওয়া দরকার। নিজেকে পরিবর্তনের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মাহফিল থেকে ফিরে আসলেন।

ঘটনা-০২: আপনি হয়তো কোন এক কাজে নিমগ্ন আছেন। হঠাৎ তাবলীগের কয়েকজন ভাই এসে আপনার সাথে কথা বলা শুরু করলো। “ভাই! আসরের নামাজটা কি আদায় করা হয়েছে?” “ইয়ে, মানে কাজের ব্যস্ততায় সুযোগ করতে পারিনি।” তারপর তারা আপনাকে নামাযের গুরুত্ব বুঝালো এবং মাগরিবের নামায আদায় করতে মসজিদে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে চলে গেলো। আপনি যথরীতি হাতের কাজ শেষ করে মাগরিবের সালাত আদায় করতে মসজিদে চলে গেলেন। সালাত আদায়ের পর সেখানে বয়ান হলো- “দুনিয়ার লাভের চেয়ে আখেরাতের লাভ বেশি জরুরী। দুনিয়া একদিন শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু আখেরাত হলো অনন্তকালের সফর।  সেই সফরের সামানা দুনিয়ার জিন্দেগী শেষ হওয়ার আগেই সংগ্রহ করা দরকার। আখেরাতের মুক্তির জন্য আমাদেরকে সালাত আদায় করা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।” আলোচনা শেষে দ্বীনের জন্য তিন দিন সময় লাগাতে বলা হলো। পাশের মানুষদের উৎসাহ আর দেখাদেখি আপনিও রাজি হয়ে গেলেন। তাবলীগে সময় দিয়ে অযু-গোসলের তরিকা এবং নামাযের জরুরী কিছু মাসয়ালা শিখে ফেললেন। পাশাপাশি আলেমদের সার্বক্ষণিক তত্ত¡াবধান আর নসিহত শুনে নিজেকে পরকালমুখী এবং দ্বীনদার মানুষ হিসেবে তৈরি করতে সিদ্ধান্ত নিয়ে তিন দিনের সফর শেষে বাড়িতে ফিরে আসলেন। 

ঘটনা-০৩ঃ আপনার স্কুলের মেধাবী এক ছাত্র বন্ধু নিয়মিত সালাত আদায় করে। কথাবার্তায়ও খুব অমায়িক। একদিন সে আপনাকে একটি ইসলামি সাহিত্য হাতে ধরিয়ে দিয়ে পড়ার জন্য অনুরোধ করলো। অনিচ্ছা সত্যেও বইটি হাতে নিয়ে হ্যা সূচক জবাব দিলেন। কিন্তু বাসায় এসে বইটি পড়ার কথা আর মনেই হলো না, ব্যাগের বই ব্যাগেই রয়ে গেলো। পরদিন দেখা হলে বন্ধুটি বইয়ের ব্যপারে জিজ্ঞেস করলো। আপনি হয়ো একটা অযুহাত দেখিয়ে বললেন, “আসলে কালকে সময় পাইনি।” আজ স্কুল শেষে বাড়িতে এসেই বইটি হাতে নিয়ে পড়তে লাগলেন। পড়তে পড়তে জানতে পারলেন, “এই দুনিয়ার জীবনটাই শেষ নয় । পরকাল নামক অনন্ত এক জিন্দেগী অপেক্ষা করছে। যা মৃত্যুর সাথে সাথেই শুরু হয়ে যাবে। সেই পরকালীন জীবনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যই আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। দুনিয়ার জীবনটা মানুষের জন্য এক বিশাল পরীক্ষা কেন্দ্র। আল্লাহ তায়ালা দেখে নিতে চান কে তার অনুগত আর কে অবাধ্য। যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে সে বড় সফলতা লাভ করবে। আখেরাতে চিরকালের জন্য জান্নাতের অধিবাসী অধিবাসী হতে পারবে। আর যে ব্যক্তি শয়তানের প্ররোচনায় নফসের খেয়াল খুসি মতো জীবন অতিবাহিত করবে, আল্লাহর বিধানকে অগ্রাহ্য করবে, পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হব্।ে আখেরাতে জাহান্নামের আগুনে সে পুড়তে থাকবে অনন্তকাল ধরে।” বিষয়গুলো জানতে পেরে আপনার অন্তর শিহরিত হলো এবং আপনি পরকালীন মুক্তি ও সফলতার জন্য দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে পাপমুক্ত জীবন গড়ার পরিকল্পনা করে ফেললেন। 

ঘটনা- ০৪: আপনি নাটক সিনেমায় খুব অভ্যস্ত। মোবাইলে ফেসবুক আর ইউটিউব নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকেন। মোইলের স্ক্রিনে স্ক্রল করতে করতে আনকমন একটি ওয়াজের হিডিং চোখে ভেসে উঠলো। কৌতুহলী হয়ে তা প্লে করে শুনতে থাকলেন। যে সিনেমা নাটকে আপনি আসক্ত হয়তো তার ভয়াবহতা নয়েই ওয়াজে আলোচনা হচ্ছে। ওয়াজ শুনতে শুনতে আপনার ঘুমন্ত বিবেক কথাগুলোতে সাড়া দিতে লাগলো। তারপর এ বিষয়ে আরও কিছু ওয়াজ শুনলেন। এক সময় মনে হলো- এই পাপাচারের গন্ডি থেকে আপনাকে বের হওয়া দরকার। পরকালীন ভয়াবহ শাস্তির ভয় আপনাকে দিশেহারা করতে লাগলো। ফলে দুনিয়ায় সৎ ভাবে জীবন অতিবাহিত করতে এবং দ্বীনের পথে নিজেকে পরিবর্তনের জন্য চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। 

এরকম হাজারও উসিলায় প্রতিনিয়ত মানুষ দ্বীনের পথে ধাবিত হচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি তারা দ্বীনের পথে অবিচল থাকতে পারে? অধিকাংশ মানুষই দ্বীনের পথে টিকে থাকতে পারে না আমাদের প্রচলিত শয়তানী সমাজ ব্যবস্থার কারণে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় শয়তানের এতই প্রভাব যে, একজন মানুষ চাইলেও সহজে ইসলামের উপর টিকে থাকতে পারে না, শয়তানী সমাজ ব্যবস্থা তাকে অটোমেটিক মন্দ পথে ধাবিত করে থাকে। অথচ এই মন্দ কাজের জন্য তাকে কারও মুখ দিয়ে কিছু বলতেও হয়না। এটা কিভাবে সম্ভব হয় তা নিচের ঘটনাগুলো পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন-

সমাজে শয়তানের প্রভাব: শয়তান সমাজে বিছিয়ে রেখেছে শয়তানী জাল: 

আপনি ভালো হওয়ার নিয়ত করলেও চারপাশের মানুষ কিন্তু এখনো ভালো হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি। তারা এখনো হেদায়েতের আলো থেকে বঞ্চিত এবং অশ্লীলতা আর পাপাচারে ডুবে আছে। তাদের প্রতিটি ঔদ্ধ্যত্ব আচরণ আর অশ্লীল কথাবার্তা আপনার অন্তরে বার বার আঘাত করে। আপনি সমাজের মানুষের এ হেন আচরণে ক্ষুব্ধ এবং চরমভাবে বিরক্ত। কিন্তু আপনার একার করারই বা কি আছে? মন্দ কাজের প্রভাবে কিভাবে একজন মানুষ পাপাচারে জড়িয়ে যেতে পারেন তার কয়েকটি নমুনা এখানে উল্লেখ করা হলো।

ঘটনা-০১ঃ পাশের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন চলছে। সেখানে প্রচন্ড শব্দে অশ্লীল গান আর বাদ্য চলছে। এসব কর্মকান্ডে আপনি বিরক্তে এবং কাতর। কাউকে বলতেও পারছেন না আবার সহ্যও করতে পারছেন না। বাধা দিতে গেলে বলবে বেটা আজ একেবারে হুজুর সেজে গেলে। কালকেও তো আমাদের সাথে গান বাজনা করলি ইত্যাদি ইত্যাদি। এসবের ভয়ে আপনি নিরব।  তার দুইদিন পরে হয়তো আরেক বিয়ের অনুষ্ঠানে গান চলছে, তারপর আরেকজনের। তাছাড়া মাঝে মাঝে আইক্রিম ওয়ালাও অশ্লীল গান ছেড়ে আইসক্রিম বিক্রি করছে। এভাবে চলতে চলতে আপনার খারাপ লাগা কমেই নিস্তেজ হয়ে আসছে। এক সময় এগুলোতে আর কোনই সমস্যা মনে হচ্ছে না। এর মানে কি ঘটছে বুঝলেন তো? একটা অপরাধ আপনি মেনে নিতে বাধ্য হলেন। আপনাকে কারও কোন কিছু বলতেও হলো না। শুধুমাত্র সমাজে শয়তানের প্রধান্যের কারনে আপনি হেরে গেলেন। 

ঘটনা-০২ঃ পাশের বাড়ির মেয়েটা বেপর্দায় চলাফেরা করে। তার বাবা নিয়মিত নামাজ পড়লেও মেয়েকে পর্দার সাথে চলার কথা বলে না। বললেও হয়তো এর প্রতিকারে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মেয়েটা প্রতিদিন কারণে অকারণে রাস্তায় বেপর্দায় চলাফেরা করে। এই কান্ড দেখে আপনি খুবই বিরক্ত আর লজ্জিত। কিন্তু কিছুই বলতে পারেন না। তাছাড়া নিজের বোনটাও ঠিকমতো পর্দা করতে চায় না। কিছু বলতে গেলে মুখের উপর বলে দেয়, অমুক চাচা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। কই তার মেয়ে তো আমার চেয়ে আরও বেশি বেপর্দায় চলে। তাকে তো তার বাবা কিছু বলে না। এসব শুনে আপনার আর সহ্য হয় না। কিন্তু কিছু যে করবেন, তা কি করা উচিত তাও বুঝতে পারছেন না। এভাবে চিন্তা করতে করতে একসময় চিন্তার তেজ কমতে থাকে। ইদানিং এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে আর ভাল লাগে না। ধুর, যেভাবে মনে চায় চলুক, তাতে আমার কি? যে বেপর্দায় চলবে সে পরকালে শাস্তি পাবে, তাতে আমার কি আসে যায়। তাছাড়া কত হুজুর নামাজ পড়ে তারাও তো কোন দিন এ বিষয়ে কাওকে কিছু বলে না। আমি একা চিন্তা করে লাভ কি? ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর প্রতিনিয়ত এগুলো দেখতে দেখতে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। এখন এসব দেখলে আর আগের মতো অন্তরে আঘাত লাগে না। এভাবে আপনি দ্বিতীয় আরেকটি অন্যায়, আরেকটি পাপাচারের বিষয়ে উদাসীন হয়ে গেলেন। তাহলে কি বুঝা গেল? সমাজের দ্বিতীয় আরও একটি অন্যায় আপনি শেষ পর্যন্ত মেনে নিলেন। অথচ এটা মেনে নিতে আপনাকে বাধ্যও করা হয়নি, কারও মুখ দিয়ে বলতেও হয়নি। শুধুমাত্র সমাজের শয়তানি উদাসীনতাই এর কারণ।

ঘটনা-০৩ঃ দুনিয়াটা বড়ই বিচিত্র! যেই বেহায়াপনাকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে, সেই বেহায়াপনা আর অশ্লীলতাকে আমাদের সমাজ আর রাষ্ট্র বানিয়ে নিয়েছে সংস্কৃতি। আপনি যে জিনিসগুলো বর্জন করতে চান আপনার চারপাশে তার এক বিশাল সমারোহ। পাশের বাড়ির টিভির সিনেমা নাটকের অশ্লীল প্রেমালাপের শব্দ অনায়াসেই আপনার কানে ঢুকে পড়ছে। কিভাবে সুন্দরী মেয়েদের সাথে প্রেম করতে হয় তা একেবারে হাতে কলমে শিখিয়ে দিচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে নায়ক-নায়িকার অশ্লীল জাহান্নামী গান কানে বেজে উঠছে। আপনি শুনছেন, আপার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে আর ছোট ভাই বোনেরাও এগুলো নিয়মিত শুনছে। কি জঘন্ন অবস্থা, কল্পনা করা যায়! ফেরানোর কোনই জো নেই। কিছু বলতে যাবেন? কিভাবে বলবেন? কি বলবেন, মাথায় কোন কাজই করছে না। এভাবে চলতে থাকলো চিন্তা আর অস্থিরতা। এক সময় চিন্তা স্তিমিত হয়ে গেলো। এখন পাশের বাড়ির টেলিভিশনের অশ্লীল গান আর ডায়লগে মন আগের মতো বিষিয়ে উঠে না। কারণ এগুলো শুনতে শুনতে এখন আপনি অভ্যস্ত। এভাবে মেনে নিলেন তৃতীয় আরেকটি অন্যায়। একটু ভাবুন, ইসলামে যে বিষয়গুলো নিষিদ্ধ সে বিষয়গুলোর ব্যপারে যদি আপনার মনে আপোষ তৈরি হয়, তাহলে তা কত বড় সাংঘাতিক তা কি হিসেব করে দেখেছেন? তাছাড়া আপনার নিরব সমর্থনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আপনার পুরো পরিবার। 

ঘটনা-০৪ঃ আপনি একটি রাস্তা দিয়ে নিয়মিত অফিসে যান। আপনার ছেলে মেয়েরাও ঐ রাস্তা দিয়ে স্কুলে যায়। পথিমধ্যে এক জায়গায় সব সময়ই নিনেমার অশ্লীল পোষ্টার লাগানো থাকে। প্রতিবার আসা যাওয়ার পথে এসব চোখে পড়ে। শুধু কি আপনার চুখেই পড়ছে? আপনার কুমলমতি শিশুরা এগুলো দেখছে না? এগুলো দেখে তারা কি কল্পনা করছে? কি শিক্ষা নিচ্ছে? দম বন্ধ হওয়ারই কথা। কিন্তু? কিছু কি মাথায় আসছে? তাহলে আপনি কিভাবে ভালো থাকলেন আর কিভাবে সন্তান আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভালো রাখবেন? একটু ভেবে দেখুন, আপনি যে ভালো হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আপনার এই অসহায়ত্বগুলো কি সেই সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিপরীত নয়? এগুলো কি জঘন্নতম পাপাচার নয়? একটু চিন্তা করে দেখুন। এটা এমন এক পাপাচার যা, আপনাকে কারও বাধ্য করতে হচ্ছে না, নিজের কাছেই প্রতিনিয়ত পরাজিত হচ্ছেন। শুধুমাত্র সমাজে শয়তানের অদৃশ্য প্রভাব বিস্তারের কারনে। 

শুধু এখানেই শেষ নয়, সমাজের এই মানুষগুলো মাঝে মাঝেই নিজের পকেটের টাকা খরচ করে, গানের আসর, নাটকের আসর, দরগা, মাজার আর মেলার আসর আরও কত কত আয়োজন আর প্রচলন চালু করেছে। আর এভাবে আপনি একে একে সবগুলো বিষয়ের সাথে আপোষ করে নিচ্ছেন, নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাহলে কি প্রকৃত অর্থে সৎ, ধার্মিক, আর ভালো থাকার অবস্থায় থাকতে পারছেন? নাকি কোন আলেম, বক্তা, ইমাম, খতিব আপনাকে ভালো রাখতে পারছে? সমাজের নামী দামী সব ভালো মানুষদের সামনেই প্রতিনিয়ত এই অন্যায় অনাচারগুলো সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু কেউ সাহস করে এগিয়ে আসছে না, প্রতিকারের কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা কেন পদক্ষেপ নিচ্ছে না? কারণ তারাও আপনার মতো এই অবস্থাগুলোর মধ্য দিয়ে যেতে যেতে এখন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারাও প্রতিনিয়ত মনের সাথে একাকি লড়াই করতে করতে এখন পরাজিত সৈনিক হয়ে এসবে ক্ষান্ত দিয়েছে।

কিন্তু এভাবে যে আপনি ক্ষান্ত হয়ে গেলেন, সবাই চুপ হয়ে গেলো, এটা ইসলাম কতটুকু সমর্থন করে? চলুন না হয় এ বিষয়ে কিছু ইসলামী দিক নির্দেশনা দেখে নেয়া যাক।  

মন্দ কাজের পরিণতিঃ 

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন- “যারা চায় ঈমানদারদের মধ্যে নির্লজ্জতা বিস্তার করুক তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে পীড়াদায়ক শাস্তি।” (সূরা নূর-১৯)

যারা অশ্লীলতার জন্য মানুষকে আহŸান করে এবং আদেশ দেয় তারা মূলত শয়তানের অনুসারী। এ ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন- ”শয়তান তোমাদের অভাবের অঙ্গীকার করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়।” (সূরা বাকারা-২৬৮)

অশ্লীলতা এমনই এক চারিত্রিক ত্রæটি যা ঈমানের পরিপন্থী। এ ব্যপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

“হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) বলেছেন, সেই ব্যক্তি ঈমানদার নয়, যে সর্বদা পরনিন্দা করে বেড়ায়, যে অভিসম্পাতকারী, যে অশ্লীল কথা বলে এবং যে নির্লজ্জ।” (মুসলিম)

মন্দ কাজের জন্য দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানেই শাস্তি ভোগ করতে হবে। যেমন- হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- “হযরত ওবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একদল সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে ঘিরে বসেছিলেন, এমতাবস্থায় তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা আল্লাহর সাথে অংশীদার করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তোমাদের নিজেদের সন্তানদেরকে (অর্থাৎ কন্যা সন্তান) হত্যা করবে না, কারও প্রতি জেনে শুনে মিথ্যা অপবাদ দিবে না, এবং কোন ন্যায়ঙ্গত উত্তম কাজের ব্যপারে আমার অবাধ্য হবে না। অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ (এসকল অঙ্গীকার) পূরণ করবে তার পুরষ্কার রয়েছে আল্লাহর কাছে, আর যে ব্যক্তি এগুলোর কোন একটিতে লিপ্ত হবে, সে এর জন্য দুনিয়াতে শাস্তি ভোগ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)

সুতরাং কোন মুমিন জেনে শুনে পাপাচারে লিপ্ত হতে পারে না। কিন্তু একটি সমাজে যদি পাপাচার চলমান থাকে তবে সেই সমাজে বসবাসরত মুমিন ব্যক্তিগণের দায়িত্ব কর্তব্য কি হওয়া উচিত সে বিষয়ে কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিভঙ্গি তোলে ধরা হলো-

সৎ কাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানঃ 

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন- “তার কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে? যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক আমল করে এবং বলে আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। (হা মীম আস-সাজদাহ: ৩৩)

মূলত আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টিই করেছেন সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করার জন্য। এ ব্যপারে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- “ তোমাদেরকে উত্তম জাতি হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমাদের কাজ হলো তোমরা মানুষদেরকে সৎ কাজে আহŸান করবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ হতে মানুষকে বিরত রাখবে। (সূরা আলে ইমরান: ১১০)

সুতরাং সমাজে অন্যায় কাজ চলতে দিয়ে ভালো থাকার উপায় নেই এবং নিজেকে ভালো দাবী করার কোনই ভিত্তি নেই। যারা সফলকাম হতে চায় তাদের উচিত সমাজের মানুষকে মন্দ কাজ হতে বিরত রাখা এবং সৎ কাজের দিকে আহŸান করা। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ঘোষণা করেন- “তোমাদের মধ্যে অবশ্যই একটা দল থাকবে, যারা জাতির লোকদেরকে আহŸান করবে কল্যাণ ও ন্যায়ের দিকে এবং বিরত রাখবে অকল্যাণ ও অন্যায় থেকে। আর এরাই হবে সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান: ১৪০)

সুতরাং আমরা সমাজের মধ্যে অন্যায় অপরাধগুলো চলতে দিয়ে, সমাজের মানুষদেরকে এই অন্যায় কাজ থেকে ফেরানোর উদ্যোগ না নিয়ে বড়ই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছি, যার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। আর এই ভয়াবহতার রূপটা কেমন হতে পারে সে বিষয়ে একটি হাদিস উল্লেখ করা হলো-

“হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করিম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আমি শপথ করে বলছি- যার নিয়ন্ত্রণে আমার জীবন। অবশ্যই তোমরা সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে। নতুবা তোমাদের উপর অচিরেই আল্লাহর আযাব নাযিল হবে। অতঃপর আযাব হতে পরিত্রাণ চেয়ে দোয়া করলেও তোমাদের দোয়া কবুল হবে না।” (তিরমিযি)

উপরোক্ত আলোচনা পড়ার পর সমাজের চলমান অশ্লীলত ও  পাপাচার দূরীকরণে নতুন করে ভাবতে আপনি বাধ্য। 

কিন্তু উপায় কি? 

মনে রাখবেন, প্রতিটি সমস্যারই একটা সমাধান আছে। সমাজের সমস্যাগুলোকে আপনি রোগের সাথে তোলনা করতে পারেন। রোগ যত জটিল আর কঠিনই হোক না কেন তার একটা চিকিৎসা অবশ্যই আছে। তবে রোগের তারতম্য অনুসারে এর চিকিৎসা স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। যেহেতু সমাজের চলমান সমস্যাগুলোও দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত আছে তাই এগুলোকে হয়তো হুট করেই তাড়িয়ে দেওয়া সম্ভন নয়। তবে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়ে কৌশলের সাথে সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন- “তোমরা মানুষকে আল্লাহর পথে ডাক কৌশলের মাধ্যমে এবং উত্তম নসীহতের দ্বারা।” সূরা নাহল:১২৫


যেভাবে শুরু করতে হবেঃ 

চিন্তা করলে দেখতে পাবেন যে, সমাজের চলমান সমস্যাগুলো উক্ত সমাজের কিছু মানুষের দ্বারাই সৃষ্ট এবং চলমান। এখানে রাষ্ট্রের জোড়ালো কোন ভূমিকা নেই। আবার সমস্যাগুলো দূর করতে হলেও সমাজের কিছু মানুষকেই উদ্যোগী হতে হবে। তাই আপনি সমাজ থেকে এগুলো দূর করার জন্য নি¤েœাক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারেন-

১।  সতর্ক ও উদ্বুদ্ধ করা ঃ 

প্রথমত সমাজের চলমান পাপাচারগুলোতে আপনার খারাপ লাগার বিষয়গুলো অন্য নামাযীদের সাথে শেয়ার করুন, এর প্রভাবে সমাজটা কেমন করে নষ্ট হচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কিরূপ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তা অন্যদের সাথে বার বার আলোচনা করার মাধ্যমে সজাগ ও সতর্ক করুন এবং প্রতিকারে কী কী উদ্যোগ নেওয়া যায় সে ব্যপারে তাদের কাছে পরামর্শ চান। মনে রাখবেন প্রতিটি খালেস ও সালাত আদায়কারী ব্যক্তিই অশ্লীলতার কারণে মন আঘাত পায়, কিন্তু একাকি তা প্রতিকারের সাহস পায় না। ফলে ক্রমান্বয়ে তাদের মনোবল দূর্বল হতে থাকে এবং অনাচারগুলো মেনে নিতে বাধ্য হয়। আশা করা যায়, আপনার উৎসাহ ও প্রেরণার মাধ্যমে এদের অনেকেই উদ্যোগী হয়ে উঠবে। 

হতাশার দিকঃ 

হয়তো এমনো হতে পারে, যাকে আপনার মনে হলো সে আপনার কথা শুনেই রাজি হয়ে যাবে, কিন্তু আপনার মনের কথাগুলো শেয়ার করার পর দেখা গেলো সে তেমন গুরুত্বই দিচ্ছে না বা আপনাকে আরও উল্টো বুঝিয়ে দিল যে, এসব করতে গেলে বহু ঝামেলা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব শুনে দমে যাওয়া উচিত নয়। মনে রাখবেন ভালো কাজে শয়তানের বাধা আসবেই। যে কাজগুলো আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে পছন্দনীয় সেই কাজগুলোতে শয়তানের বাধাও বেশি। তাই অনেকেই সালাত আদায় করলেও সমাজের চলমান পাপাচারগুলোর ব্যপারে একেবারেই উদাসীন।

আশার দিকঃ 

সমাজকে পরিবর্তনের কাজটা শুধু ভালো কাজই নয়, এটা সদকায়ে জারিয়ার মতো এক বিশাল সওয়াবের কাজ। আপনার উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার কারণে সমাজের মানুষগুলো সৎ পথে ধাবিত হলে, অন্যায় পথ থেকে ফিরে আসলে আপনি কবরে শুয়ে শুয়েও এর সওয়াব পেতে থাকবেন। আর এতবড় কাজে শয়তানের বাধা থাকবে না তা মনে করার কোনই কারণ নেই। বরং এ কাজ  থেকে শয়তান আপনাকে বিরত রাখতে মনে অনীহা সৃষ্টি করবে, হতাশা আর নিরুদ্দম করতে চাইবে। আপনি মন থেকে না দমলে অন্যের ঘাড়ে শয়তান চেপে বসে আপনার বিরোদ্ধে উষ্কানি নিয়ে বাধা তৈরি করে এ কাজ থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। তবে আশার দিক হলো আপনি ভালো কাজে উদ্যোগী হলে আল্লাহ স্বয়ং আপনার সাহায্যকারী হবেন এবং এমন ব্যক্তিদের দ্বারা আপনাকে সহযোগিতা করবেন যাদেরকে আপনি কল্পনাও করেননি। তাই ধৈর্য্যরে সাথে চেষ্টা করতে থাকুন। মূলত আমাদের দায়িত্বই হলো চেষ্টা অব্যহত রাখা। সফলতার মালিক তো কেবল আল্লাহ তায়ালাই। 


২। ইসলামী সংঘ প্রতিষ্ঠাঃ 

কিছু মানুষ আপনার সাথে সম্মত হলে এবং সমাজ থেকে অশ্লীলতা ও পাপাচার দূর করতে আগ্রহী হলে তাদেরকে নিয়ে একটি সামাজিক ইসলামী সংঘ তৈরি করুন। এতেকরে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখা যাবে এবং সুশৃঙ্খলভাবে সামাজিক অনাচার দূরীকরণের পরিবেশ সৃষ্টি করা যাবে। যদি আপনি একটি সংঘ প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন তবে তাকে গ্রহণযোগ্য ও গতিশীল রাখার জন্য নি¤েœক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারেন-

দায়িত্ব বন্টনঃ সংঘটি সূচারুরূপে পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করে যোগ্য ব্যক্তিদেরকে বিভিন্ন দায় দায়িত্ব অর্পণ করা এবং নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক প্রোগ্রাম ডাকা এবং টার্গেটকৃত কাজের বিষয়ে সবাই মিলে পর্যালোচনা করা। অধিকহারে দায়িত্বের ক্ষেত্র তৈরি এবং প্রত্যেক সদস্যকেই কোন না কোন দায়িত্ব দিয়ে কর্মতৎপর রাখা। সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে প্রয়োজনে গ্রæপ ভিত্তিক দায়িত্ব প্রদান করা, যাতে সবাই কাজ করার সুযোগ পায়। 

পাঠাগার প্রতিষ্ঠাঃ “পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন” সূরা আলাক্ব:০১ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে সবাইকে বই পড়ায় অভ্যস্ত করা। এতেকরে সবাই দ্বীন পালনে সচেতন হবে এবং ইসলামী জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ লাভ করবে। একজন মানুষ যতক্ষন ইসলামী সাহিত্য পড়ার ধারাবাহিকতায় থাকবে ততক্ষন সে সক্রিয় ও তৎপর থাকবে। কারন ইসলামী চিন্তাগুলো তার মাথায় ততক্ষণ সতেজ থাকে যতক্ষন সে ইসলামী বই পড়া অব্যহত রাখে।

সমাজের নেতৃস্থানীয়দেরকে অন্তর্ভুক্তকরণঃ সমাজের নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে যারা অধিকতর সৎ ও নীতিবান তারা সাধারণত প্রতিটি সমাজেই আজ বঞ্চিত ও অবহেলিত। কারণ প্রায় প্রতিটি সমাজই আজ টাকাওয়ালা, অসৎ ও চালবাজ মার্কা লোকদের কবলে। তবে এর ব্যতীক্রমও আছে, কিন্তু সংখ্যাটা একেবারেই নগন্য। তবে যাই হোক না কেন, সমাজের নেতৃস্থানীয় সৎ ও নীতিবান লোকদেরকে সংঘের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব বুঝিয়ে তাদের সম্মতি ও সমর্থন আদায় করা। মূলত সমাজের নেতৃস্থানীয়দের সমর্থন  থাকলে উক্ত সমাজে ভালোকাজগুলো বাস্তবায়ন করা খুবই সহজ হয়ে যায়। তাই তো সকল নবী রাসূলগণ প্রথমে সমাজের প্রধান বা রাজা বাদশাহের কাছে নিজেদের দাওয়াত পেশ করতেন। শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তো দুই ওমরের এক ওমরকে ইসলামের পক্ষে পেতে স্বয়ং আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। 

তাছাড়া সমাজের নৈতিক সমর্থন ও সম্মতি আদায়ের লক্ষ্যে নি¤েœাক্ত পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন-

শিশু ও বয়ষ্কদের জন্য কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থাঃ আমাদের সমাজের অনেক সালাত আদায়কারী সঠিকভাবে সালাতে পঠিতব্য সূরাগুলো সুন্দর করে পড়তে পারেন না। আবার স্কুল কলেজের অনেক ছাত্র সালাত আদায় করে তারাও সঠিকভাবে সালাতের নিয়ম-কানুন, সূরা এবং দোয়াগুলো সঠিকভাবে জানেনা তাদের জন্য বয়ষ্ক কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা। তেমনিভাবে শিশুদের জন্যও কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যদি সামর্থ থাকে তবে একজন হুজুর রাখা যেতে পারে। তা না হলে অন্তত সংঘের যে ভালো কুরআন জানে তাকে শিক্ষা বিভাগের দায়িত্ব দিয়ে কুরআন শিক্ষায় কাজে লাগানো যেতে পারে। এতে যেমন সংঘের ব্যপারে সমাজে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে তেমনি সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব লাভ করা যাবে। 

আলোচনা সভা এবং ওয়াজ মাহফিলের আয়োজনঃ মাঝে মাঝে ছোট পরিসরে আলোচনা সভার আয়োজন করা এবং পারলে বছরে অন্তত একবার বড় পরিসরে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা যেতে পারে। এতেকরে একদিকে দাওয়াতিকাজ হবে তেমনি কিছু নাতুন মানুষ পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ পাবে। তাছাড়া এই কাজগুলোর মাধ্যমে সমাজে সংঘের প্রভাব তৈরি হবে। এই কাজগুলো ছাড়াও মাঝে মাঝে সংঘের সবাইকে নিয়ে রাস্তা-ঘাট মেরামত, অসহায় ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা ও কাজে সহযোগিতা করা। যেমন- ফসল কেঁটে দেওয়া, বাড়ি ঘর নির্মানে কায়িক পরিশ্রম করে দেওয়া ইত্যাদি। 

সতর্কতাঃ উল্লিখিত কাজগুলো সমাজে বাস্তবায়ন করতে পারলে নিঃসন্দেহে উক্ত সমাজে সংঘটির প্রভাব প্রতিষ্ঠা পাবে। কিন্তু এই অবস্থাড শয়তান একটি ধোকায় ফেলতে পারে যে, মানুষের সন্তুষ্টিই সংঘের লক্ষ্য হয়ে দাড়াতে পারে। তখন হয়তো অনেকেই বলবে, সংঘের দুর্নাম হয় এমন কোন কাজ করা যাবে না। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনার উদ্দেশ্য কিন্তু মানুষের সন্তুষ্টি অর্জন ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল সমাজ থেকে অন্যায় ও অশ্লীলতা দূর করা। এই উদ্দেশ্য ও লক্ষ ভুলে গেলে চলবে না। মূলত আপনাদের এই কাজগুলো পরিচালিত হচ্ছে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যেই। সুতরাং মাঝ পথে আটকে থাকলে উদ্দেশ্য কখনোই সফল হবে না। সমাজের অন্যায়গুলোর প্রতিবাদ করতেই হবে এবং অন্যায়ের বিরোদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই হবে। রাসূল (সাঃ) যখন দাওয়াতী কাজ শুরু করেছিলেন তখন তাকেও অন্যায়ের সাথে সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যা করেছেন এবং তা ছিল মূলত আল্লাহর নির্দেশ। 

এবার হোক প্রতিবাদ ঃ আপনি যদি উপরোক্ত কাজগুলোর কিছু কিছু বাস্তবায়ন করতে পারেন তখন সংঘের উদ্যোগে সমাজের চলমান অন্যায়গুলোর ব্যাপারে সবাই কথা বলা শুরু করুন এবং অন্যায়কারীদেরকে মৌখিক প্রতিবাদ করতে শুরু করুন। এজন্য কারও রক্ত চক্ষুর পরোয়া করা যাবে না। মূলত সমাজের অন্যায় কাজগুলোতে প্রতিবাদ না করার কারনে যেমন নিজেরা উক্ত পাপের অংশীদার হই তেমনি তা যে একটা অপরাধ সেই বোধটা অপরাধীদের মনেই হয় না। তাই তুমুল প্রতিবাদ শুরু করলে অপরাধীরা যেমন নিজেদের অন্যায়টা শুধরে নেওয়ার সুযোগ পাবে তেমনি নতুন কেউ সেই অন্যায় কাজ করতেও সাহস পাবে না। আর আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ না করার কারনেই সমাজের অশ্লীলতা আর বেহায়াপনাগুলো ফুলে ফেঁপে বিশাল আকার ধারণ করেছে। অন্যায় কাজ দেখে চুপচাপ সামনে দিয়ে চলে গেলে হয়তো আপনি অন্যায়কারী এবং সাধারণ মানুষের কাছে ভালো হতে পারবেন, কিন্তু আল্লাহর কাছে ভাল হতে চাইলে অন্যায়ের বিরোধিতা করা এবং প্রতিবাদ করা ছাড়া কোন উপায় নেই। এ ব্যপারে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- “ তোমাদেরকে উত্তম জাতি হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমাদের কাজ হলো তোমরা মানুষদেরকে সৎ কাজে আহŸান করবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ হতে মানুষকে বিরত রাখবে। (সূরা আলে ইমরান: ১১০)

এখানে লক্ষনীয় যে, আমাদের সমাজের অনেকেই আছেন যারা শুধুমাত্র কিছু ভালো কাজের আদেশ করে থাকেন, কিন্তু খারাপ কাজে সরাসরি কখনো বাধা দেন না। ফলে সমাজের অন্যায়গুলো দিন দিন বাড়তে থাকে। 

সালাত কায়েম করাঃ সালাত আদায় করা আর কায়েম করা এক জিনিস নয়। শুধুমাত্র নিজে সালাত পড়াকে সালাত আদায় করা বলা হয়। আর যখন আপনি আপনার পরিবার ও আশপাশের লোকদেরকে ডেকে নিয়ে একসাথে সালাত আদায় করবেন তাকে বলা হবে সালাত কায়েম করা। প্রকৃতপক্ষে সমাজ থেকে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ দূর করার সবচেয়ে সেরা মাধ্যম হলো সালাত কায়েম করা। এ ব্যপারে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- “আর আপনি সালাত কায়েম করুন, নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।” - সূরা আল আনকাবূত:৪৫

এখানে লক্ষ করার মতো একটা বড় বিষয় হলো আমাদের সমাজের অধিকাংশ সালাত আদায়াকারী নিজেরা সালাত আদায় করলেও সালাত কায়েম করে না। অথচ সালাত কায়েমের ব্যপারেই কুরআন মাজিদে সবচেয়ে বেশি তাকিদ করা হয়েছে। তাই সমাজের সকলকে সালাতের দাওয়াত দিন, যাদেরকে বাধ্য করা সম্ভব তাদেরকে সালাত আদায়ে বাধ্য করুন। যেমন- ছোট ভাইবোন, প্রতিবেশি এবং সন্তানাদিদের। একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখতে পাবেন যে, যে সমস্ত ছেলে-মেয়েরা অন্যায় ও অশ্লীলতায় নিমজ্জিত হয় তাদের অধিকাংশই সালাত আদায় করে না। আর আমরা যারা অভিভাবক আছি তারা সন্তানদেরকে ভালো রাখতে চাই, খারাপ হয়ে গেলে হুজুরদের নিকট অভিযোগ করি কিন্তু সন্তানরা যে সালাত আদায় করছে না এবং খারাপ হওয়ার পিছনে যে এই সালাত ত্যাগ করাই সবচেয়ে বড় কারণ তা বুঝতে চাই না। অভিভাবক হিসেবে তাদেরকে সালাতের উপর প্রতিষ্ঠিত করা যে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব সেটাও কখনো মনেই করছি না। শুধু অভিযোগ করছি আমার ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেলো কিভাবে তাকে খারাপ কাজে থেকে বিরত রাখা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। সুতরাং নিজেদের সন্তানাদিদেরকে সালাতের উপর প্রতিষ্ঠিত করুন এবং যারা সমাজে অন্যায় কাজের মূল হোতা তাদেরকেও সালাতের জোর তাকিদ দিন। একজন ব্যক্তিকে সালাতে অভ্যস্ত করতে পারলে সে এমনিতেই মন্দ কাজ ছেড়ে দেবে। 

সমাজ স্বীকৃত একটি দলঃ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা  (লোকদেরকে) কল্যাণের দিকে আহŸান করবে, সৎ কজেরর নির্দেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর এসকল লোকই হবে সফলকাম।” [সূরা ইমরান, আয়াত:১০৪]  সমাজে এই আয়াত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমাজের নেতৃস্থানীয়দের অনুমোদন স্বাপেক্ষে একটি গ্রæপ বা দল থাকবে, যারা সমাজের সকল মানুষকে ভালোর দিকে আহŸান করবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। তাদেরকে গাইডলাইন এবং পরামর্শ দেবে সংঘ ও সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। এই দলটির কার্মসূচীগুলো নি¤œরূপ হতে পারে-

১। প্রতিটি সন্তানকে কুরআন শিক্ষা ও দ্বীনের জন্য জরুরী ও ফরজ পরিমাণ ইসলামী শিক্ষা অর্জনের জন্য অভিভাবকগণকে তাকিদ দেওয়া ও বাধ্য করা।

২। সমাজের প্রতিটি পরিবারের পুরুষ ও মহিলাদের পর্দার ব্যাপারে খবরদারী করা এবং অবহেলাকারীদেরকে সামাজিকভাবে হেয় করা ও বিভিন্ন আইন করে তা বন্ধের ব্যবস্থা করা।

৩। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানাদি ও বিয়েতে অশ্লীল গান বন্ধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৪। নাটক ও গান বাজনার আসড় প্রতিহত করা এবং এগুলো বাস্তবায়নে সরাসরি বাধা প্রদান।

৫। মদ, বিড়ি-সিগারেট, জুয়া ইত্যাদি পাপাচার সমাজ থেকে দূরীকরণে কাজ করা।

৬। ইসলামের ফরজ বিধান পালনে খোজ খবর ও বাধ্য করা- সালাত, সিয়াম, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি।

৬। সালাত পরিত্যাগকারীর জানাযা অংশগ্রহণ না করার আইন বাস্তবায়ন করা।

৭। সমাজ থেকে সুদ-ঘোষ দূর করা এবং এর ধারক বাহকদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করা।

৮। ইসলামী শরিয়া মোতাবেক সু-বিচার সমাজে প্রতিষ্ঠা করা।

৯। সমাজের সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদেরকে নেতৃত্বে এগিয়ে আনা।

১০। এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যান কে হবে তার বিল উত্থাপন ও সেই অনুযায়ী সৎ ব্যক্তিকে ভোটদানে সবাইকে সম্মত করা এবং নির্বাচিত করা। জুলুমকারী মেম্বার চেয়ারম্যানের বিরোদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বাধ্য করা।

১১। বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে অবহেলা ও নির্যাতনেকারীকে শাস্তি প্রদানে সামাজিক আইন করা।

১২। মেধাবীদেরকে পুরষ্কৃত করা, দরিদ্র মেধাবীদেরকে আর্থিক সাহায্য করা, সমাজে ভালো কাজের অবদান রাখা ব্যক্তিদেরকে ষান্মাসিক বা বার্ষিক আয়োজনে পুরষ্কৃত করা।


............................................

আমাদের উদাসীনতা ও ভিত্তিহীন অভিযোগঃ

১। ইমাম সাহেবরা শুধু আফসোস করেন, দিন দিন মানুষ বেদীন হয়ে গেলো! আজকাল লোকজন মসজিদে আসতে চায় না! অথচ তিনি দশ বছর যাবৎ ইমামতি করছেন, কিন্তু নিজস্য উদ্যোগ ও চেষ্টায় একজন মানুষও দ্বীনের পথে আসছে না। কিন্তু এক সময় মানুষেরা ইসলাম প্রচার করতে ভিন্ন দেশ থেকে জীবন ও পরিবারের বিসর্জন দিয়ে এদেশে এসে ইসলাম প্রচার করেছেন। কিন্তু আপনারা শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে ইমামতিই করে যাচ্ছেন। ইসলামী চেতনা নিয়ে দাওয়াতী কাজ করছেন না। তো এ অবস্থার জন্য তো দায়ী আপনারাই। আপনি এত বিদ্যা বুদ্ধি অর্জন করেও তা মানুষের হেদায়াতের জন্য, দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য প্রয়োগ করছেন না। শুধুমাত্র জুমার দিনে মানুষের মন আকর্ষণের জন্য বয়ান করছেন। 

২। পিতা-মাতা অভিযোগ করেন, আমার সন্তান তো কথা শুনে না। পিতা-মাতা সন্তানের খেদমত আশার করে, কিন্তু তাকে খেদমত পাওয়ার উপযোগী করে গড়ে তোলতে উদাস। মক্তবে পড়ানোর সময় নেই, কিন্তু দ্বীনদার মানুষের মতো সন্তান যেন তাকে খেদমত করে এই আশা করেন, সন্তানদের সাথে সঠিক আচরণ করেন না, সঠিক আচরণ শিখান কিন্তু কামণা করেন, সন্তান যেন তাদের একান্তু অনুগত হয়। হাস্যকর আশাই বটে। 

৩। বক্তারা অভিযোগ করেন, কত ওয়াজই তো জীবনে করলাম, কিন্তু সমাজে তো কোন পরিবর্তন আসছে না। আপনি শুধুমাত্র দাওয়াত দিলে টাকার বিনিময়ে ওয়াজ করেন। কিন্তু আপনার এই বক্তব্য ইসলামের মুহাব্বতে আপনার সমাজে দিচ্ছেন না, যাতে সমাজের মানুষগুলো পরিবর্তন হতে পারে। আপনি শুধু টাকা কামাই আর সুনাম অর্জনের জন্য মাহফিলে মাহফিলে ওয়াজ করে বেড়াচ্ছেন। এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত ওয়াজ করেও কি সমাজ পরিবর্তন করা সম্ভব?

৪। আপনি মসল্লি সারাজীবন সালাত আদায় করলেন অথচ, আপনার সুরাগুলো এখনো যে শুদ্ধ হলো না সেই বিষয়ে আপনার কোন পদক্ষেপই নেই। বরং বলতে গেলে আরও বিরক্ত হয়ে যান। রাগ করেন। এই সলাত দিয়ে জান্নাতেও যেতে চান। হাস্যকর নয় কি?

৫। আমরা বলি আমাদের মেম্বার-চেয়াম্যান ভালো না। একজন মাত্র চেয়ারম্যান সমাজের হাজারও মানুষকে ঠকাচ্ছে, জুলুম করছে, কিন্তু আমরা হাজার মানুষেও একত্রি হয়ে তার প্রতিবাদ করার সাহস পাই না, যদিও কেউ তার কামাই খেয়ে বাচে না, বরং সেই সকলের ভোটের মুখাপেক্ষি। অথচ আমরা বলি আমার দল- দ্বীনের জন্য সৎ কাজের আদেশ করে থাকে এবং অন্যায় কাজে বাধা দিয়ে থাকে। কতই না বুকা আমরা। 

৬। শ্রোতা ওয়াজ শুনতে এসেছে, অথচ সে এশার সালাত আদায় করেনি, ওয়াজ শুনে যে, ফজর পরবে এই নিয়তও করে না, শুধু শুরু আর কানের বিলাসিতার জন্য আসেন। হেদায়াতের জন্য নয়।

------------------------------------------------------------------------------------

আমাদের চিন্তাগত ভুলগুলো:

১। আপনাকে ভালো কাজে ঐক্যবদ্ধ হতে বললে চিন্তা করেন যে, সবাই তো তাবলীগের সাথী না বা আমার দলের লোক না, তাই তাদের সাথে মিলে কাজ করা যাবে না। অথচ আপনাকে একটি ফুটবল টিম গঠন করতে বললে দলের কথা চিন্তা করেন না, তখন চিন্তা করেন কোন কোন খেলোয়ারকে দলে রাখলে দলটি জয় লাভ করতে পারবে। সুতরাং সমাজে ভালোর প্রচার করতে চাইলেও কাকে রাখলে ফলাফল ভালো হবে সেদিকেই নজর দেওয়া উচিত। দল মতের সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, তবেই একটি সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন করা সম্ভব।

২। সমাজের দশজন লোক ভালো কাজে ঐক্যবদ্ধ হলে একটি সমাজ পরিবর্তন করা সম্ভব। কিন্তু দশ হাজার বা দশ লাখ মানুষও যদি ভালো কাজ করতে ঐক্যবদ্ধ হয় তবুও রাষ্ট্র পরিবর্তন করা ততটা সহজ হবে না। সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যমেই রাষ্ট্র পরিবর্তন করা সম্ভব। কিন্তু রাষ্ট্র পরিবর্তন হলেও যদি নিজ এলাকার মানুষের স্বভাব ভালো না হয় তবে নিজের জন্য কোনই উপকার নেই। আল্লাহ তায়ালা হিসাবও নিবেন প্রথমে নিজের, তারপর পরিাবারের, তারপর সমাজের, তাপরও বহু দূরের বিষয় হলো রাষ্ট্রের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ। 

৩। আপনি তাবলীগ বা ইসলামী আন্দোল করে রাষ্ট্রে কুরআনের আইন বাস্তবায়ন করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন, অথচ আপনার পরিবারে ইসলামের যথাযথ প্র্যাকটিস নেই। সমাজ ইলামের ধার ধারে না সেই ব্যপারে আপনার কোন উদ্যোগ নেই। রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত যদি হয়েও যায় তখন তো আপনার পরিবার ও সমাজের মানুষেরাই এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবে এবং ¯েøাগান তোলবে। সুতরাং সমাধান হলো রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েমের চেষ্টা অবশ্যই করুন। তবে তা শুরু করুন, নিজের পরিবার ও সমাজ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে।

৪। একজন মানুষের পৃথিবী হলো তার পরিবার, সমাজ ও এর আশপাশ। এই এরিয়ার মানুষগুলো, সৎ ও দূর্নীতিমুক্ত হলেই তার জন্য পৃথিবীটা সুন্দর মনে হবে। কিন্তু পৃথিবীর সব এলাকা ভালো হলেও যদি নিজ এলাকা ভালো না হয় তবে ঐ ব্যক্তির জন্য তা কখনই আনন্দের হবে না। কারণ তার সমাজে সে প্রতারিত হবে।

৫। আপনি ইসলামী আন্দোলন করে সমাজ পরিবর্তন করতে চান অথচ, সমাজের লোকদের সাথে আলোচনা ছাড়াই আপনার মনমত একজন প্রার্থীকে নির্বাচনে দাড় করিয়ে অবৈধ পন্থায় টাকা খরচ করলেন। কেন এটা করলেন। ঐ ব্যক্তির দ্বারা ও প্রথমে সমাজে খেদমত হয়ে থাকলে ভোট তাকে এমনিতেই দেওয়ার কথা। সেই ভাবে প্রচেষ্টা না করে ইসলাম বিরোধিদের মতোই পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চান আর এই ভাবে দেশটাও পরিবর্তন করতে চান । এটা কি হাস্যকর কথা নয়?

৬। সমাজের ইমাম বা সৎ নেতৃবৃন্দ ঠিক করবে কে ভুটে দাড়াবে কাকে জনগণ ভোট দেবে। কিন্তু একজন হুট করে কারও অনুমতি ছাড়াই দাড়িয়ে গেলো এবং অবৈধভাবে টাকা দিয়ে ভোট কিনে নিল আর সমাজ তা মেনে নিল এই প্রক্রিয়ায় চললে সমাজকে কখনোই কি পরিবর্তন করা যাবে। তাই এগুলো নির্ধারণ করবেন আলেমরা তারপর তারা যাকে ভোটের যোগ্য ঘোষণা করবেন সমাজ তাদেরকেই ভোট দিতে বাধ্য থাকবে। তবেই সঠিক নেতা নেতৃত্ব আশা করা যাবে।

৭। নিজের পর ভাল থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি চিন্তা করতে হবে প্রথমে পরিবারকে নিয়ে, তারপর সমাজকে নিয়ে। কুরআনের নির্দেশনাও তাই “তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে নিজে বাচো, এবং পরিবারবর্গকে বাচাও।” কিন্তু আমরা প্রথমেই রাষ্ট্র পরিবর্তনের কাজ শুরু করে দেই। কদাচিৎ পছন্দ মতো বেছে বেছে নির্দিষ্ট কিছু লোকের কাছে দাওয়াত পেশ করার চেষ্টা করি। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তাও করি না। বলি অমুকে নামাজ পড়ে না, কিন্তু আমার পরিবারে যে আমি ছাড়া কেউ সালাত আদায় করছে না, তার কোন খবরই নেই। আল্লাহর দেওয়া সিস্টেমের বিপরীতে কাজ করে সফলতা আশা করা কতই না বুকামি।

৮। সন্তান ১০ বছর হলে তাকে পিটিয়ে হলেও সালাত আদায়ে বাধ্য করতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা সে ব্যপারে একেবারেই উদাসীন। বাংলা পড়া ঠিকমতো না পড়লে তাকে মারেন, শাসন করেন। সমাজও এই জন্য আপনার প্রশংসা করে। কিন্তু সালাত আদায়ের জন্য আপনি কখনো এইভাবে মারার কথা চিন্তা করেন না। মারলেও তখন লোকে খারপ বলে এই হলো সমাজ ও আমাদের মন মানষিকতা।

৯। আমাদের ঈমানী তেজ এতই কম যে, একটি সিনেমার পোষ্টার মসজিদের সামনে লাগানো থাকলেও তা মুসল্লিরা ছিড়তে সাহস করেন না, ইমাম সাহেবও এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন না । অথচা তা প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ দেখে গুণাহগার হচ্ছে। কিন্তু তাদের গুণাহকে বাচাতে উক্ত পোষ্টার ছেড়ার বিষয়ে আমরা নির্বিকার। রাতের অন্ধকারেও ছিড়ে ফেলার সাহস নেই। অথচ এটা ছিড়ে ফেলা যে ভালো কাজ তা মনেই করছি না।

১০। দুইদিন চেষ্টা করেই বলি তাকে হেদায়েতের পথে আনা সম্ভব নয়। অথচ আল্লাহ তায়ালা আপনার পুরো জিন্দেগীটাই দিয়েছেন দায়িত্ব পালনের জন্য সেইদিকে আপনার খেয়াল নেই। এই চিন্তা করেন না যে, কেউ দীনের পথে আসলে তো ভালো কথা নয়তো আপনার প্রতিদিনের ডিউটিই হলো ডাকা। কাকে আল্লাহ তায়ালা হেদায়েত দিবেন কি দিবেন না এটা তার ইচ্ছা কিন্তু আপনাকে দায়িত্ব দিয়েছেন ডাকার জন্যই। এই অনুভুতিটা কারওই নেই।

১১। সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার যে কাজগুলো হচ্ছে, তার ধিকাংশই আল্লাহর দেয়া তরতীবের বিপরীতে। তাই সমাজ ও রাষ্ট্র আশানুরূপ পরিবর্তন হচ্ছে না।

১২। নিজের পরিবারকে অন্যের মাধ্যমে উপদেশ শোনানোর ব্যবস্থা করুন। কেননা নিজের পরিবারে নিজের প্রভাব কম থাকে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন