আমি ক্লাস ফোরেই শিবিরের কর্মী হয়েছিলাম। দীর্ঘ পড়াশুনার জীবনে শিবিরের সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছিলাম এবং ময়মনসিংহ শহরের অধীনে দুটি থানায় দায়িত্ব পালন করেছি। তারপর যথারীতি কর্ম জীবনে প্রবেশ করে জামাতের রুকনিয়াতের বায়াতও নিয়েছিলাম। কিন্তু নৈতিক কিছু প্রশ্নের উত্তর চাইতে গিয়ে সংগঠনের দায়িত্বশীলদের অবজ্ঞা আর উদাসীনতা লক্ষ্য করলাম। তখন আমার বুঝা হয়ে গেলো যে, এসব প্রশ্নের নৈতিক কোন উত্তর আসলে তাদের কাছে নেই। প্রশ্নগুলো যেকোন জামাতের কর্মী বা দায়িত্বশীলকে করে দেখুন। তারা এগুলোর নৈতিক কোন উত্তর দিতে পারবে না। প্রশ্নগুলো নিম্নরূপঃ
১। গণতন্ত্রের মাধ্যমে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ কী আল্লাহর আইনকে উপহাসের বস্তু বানানোর মতো অপরাধ নয়? ইসলামী আইন কি মানুষের ইচ্ছার উপর এবং ভোটের মাধ্যমে জয়—পরাজয়ের উপর ছেড়ে দেওয়া যায়? কেননা এখানে প্রত্যেক জনগণ তথা কাফের মুশরিকদেরও ক্ষমতার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকে এবং তাদের পাল্লা ভারি হলে তাদের মতো আইন দিয়ে শাসন করার সুযোগ পাবে। তাছাড়া গণতন্ত্র জনগণের রায়ের ভিত্তিতে আইন প্রণয়নে বাধ্য। এই আইন জনগণ পরিবর্তন করতে পারে। পক্ষান্তরে আল্লাহর আইন তথা কুরআনের বিধান অপরিবর্তনীয় এবং অলংঘনিয়। এমতাবস্থায় দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে এরূপ দূর্বল ও অনিরাপদ পন্থা অবলম্বন করা কি নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য?
২। ইসলামী আইনে কি কাফির—মুশরিকদের শাসক হওয়ার সুযোগ রয়েছে? গণতন্ত্র তো তাদের জন্য এ সুযোগ তৈরি করে দেয়। আবার গণতান্ত্রিক নিয়মে ক্ষমতায় গিয়ে তাদেরকে বাধা দেয়াই কি গণতান্ত্রিক হবে?
৩। আল্লাহ কি কাফিরদেরকে বন্ধু ও অভিভাবকরূপে গ্রহণ করতে বারণ করেন নি? গণতন্ত্রের অভিভাবক কারা? গণতন্ত্র না মানলে বিগড়ে যায় কারা? আর মানলে খুশি হয় কারা? (উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমেরিকা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।)
৪। নবীগণের পথে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ না করে একটি দলগত প্রচেষ্টাকে কাফিরদের উদ্ভাবিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বন করার কি আসলেই কোন প্রয়োজনীয়তা আছে? ইরান ও আফগানিস্তান কি গণতন্ত্রের পথ পরিহার করে ক্ষমতায় যেতে সক্ষম হয়নি? সেরকম চেষ্টা করতে অসুবিধা কোথায়?
৫। ধর্মীয় আইনের প্রতি বিদ্রোহ করে ধর্মীয় আইন থেকে মুক্ত করে মানুষের চিন্তা—ধারা দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিচালনার উদ্দেশ্যে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাতে ইসলামের কল্যাণ তালাশ করা কি স্বাভাকি কাজ?
৬। ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া সংবিধান কি বাংলার মুসলমানরা মানতে বাধ্য?
৭। আল্লাহর ঘোষণা “সৃষ্টি যার হুকুম চলবে তার।” জামায়াতের কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে সৃষ্টি আল্লাহর আর আইন চলবে বৃটিশদের। তাই নয় কি? তা না হলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করার কারণ ব্যাখ্যা করুন।
উল্লেখ্য তাদেরকে যখন প্রশ্ন করা হয়, অতীতে ইরান এবং বর্তমানে তালেবানরা বিপ্লবের পথ বেছে নিয়ে সফল, আমরা কি বিপ্লবের পথ বেছে নিতে পারি না?
তখন তারা যুক্তিবিদ্যায় পরদর্শীর মতো উত্তরে বলে: দেখুন, তালেবান আর আমাদের ভৌগলিক অবস্থা এক নয়, তাদের দেশ আমাদের দেশের চেয়ে অনেক বড়, তাছাড়া সেদেশে অসংখ্য পাহাড় আছে আরো হাবিজাবি আছে।
কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, তারা যখন যুদ্ধ শুরু করেছিল তারা কি এটা ভেবেছিল যে, তখনকার সুপার পাওয়ার সুভিয়েত ইউনিয়নের চেয়ে তাদের শক্তি সামর্থ্য কতটুকু? তাছাড়া পরবর্তীতে পরাশক্তি আমেরিকার তুলনায় তাদের সাজ—সরঞ্জাম কত নগন্য? ভাবেনি, তারা একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করেই যুদ্ধ শুরু করেছিল।
তাছাড়া ইতিহাস থেকে দেখা যায়— পরাশক্তি ফিরআউনের কাছে আল্লাহ তায়ালা খালিহাতে কিভাবে মুসাকে পাঠিয়েছিলেন। বলতে পারেন নবীকে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং এতে তার একটা ভরসা ছিল। তবে তারেক বিন যিয়াদের ব্যাখ্যাটা কিভাবে করবেন? যিনি পুরো একটা রাজ্যের বিরুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জন সাথী নিয়ে যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলেন! তাও আবার জাহাজগুলো পুড়িয়ে পিছনে পালাবার পথ বন্ধ করে?
সুতরাং যারা গণতন্ত্র লালন করবে তাদের কাছে দুনিয়ার সংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তারা সর্বদা দুনিয়াবী জ্ঞান দিয়ে সব হিসাব কষে। কিন্তু দেখে না যে, এই হিসাব কষেও বড় বড় নেতাদের জেল—জুলুম আর ফাঁসি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয় না। যুগ যুগ ধরে মার খাওয়া ছাড়া কোন সফলতার সম্ভাবনাও দেখা যায় না।
তারা তুরস্কের সরকারের উদাহরণ টানে, কিন্তু তুরষ্ক কি খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে? যেখানে শুধুমাত্র আল্লাহকেই বিধান দাতা হিসেবে গণ্য করা হবে? তুরষ্ক তো গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে আল্লাহর পরিবর্তে মানুষকে সকল ক্ষমতার উৎস মানা হয়। গণতান্ত্রিক ইসলাম হলো ইসলামের বিকৃত রূপ যেখানে আল্লাহর বিধানকে উপেক্ষা এবং অবজ্ঞা করেও নিজেদের মুসলিম মনেকরে গর্ব করা হয়।
গণতন্ত্র মানতে গিয়ে জামায়াত অন্যান্য ইসলাম বিদ্বেষী দলের মতো বিভিন্ন দিবস মানা শুরু করে দিয়েছে। ইসলামের শিক্ষা যেখানে দিবস বা বার্ষিকী পালন করা হারাম। সেখানে তারা তাদের নেতাদের মৃত্যু দিবস, বদর দিবস, কুরআন দিবস, শিক্ষা দিবস, শহীদ দিবস ইত্যাদি খুব ভাবগাম্ভীর্য সহকারে পালন করছে। আবার কৌশলে মিটিং করার জন্য দেশীয় বিভিন্ন দিবসের নামে ব্যানার ফেস্টুন তৈরি করে বুঝাতে চায় যে, তারাও এসব দিবসের অনুসারী। এটাও তাদের ইসলাম বিকৃতির নিকৃষ্ট উদাহরণ।
🕮আরও পড়ুন...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন