ভূমিকাঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পৃথিবীতে মানুষ পাঠিয়ে তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য যুগে যুগে পাঠিয়েছেন বহু গাইডলাইন বা কিতাব এবং অসংখ্য নবী ও রাসূল। সকল নবীই মানুষের আইনের পরিবর্তে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করে মানুষকে দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। নবীদের মিশনই ছিল মানুষ যেন রাজা বাদশাহ বা অন্য কারো খামখেয়ালী আইনের অনুসরণ না করে একমাত্র আল্লাহর আইনের অনুসরণ করে আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ হিসেবে জীবন যাপন করতে পারে। তাই নবীগণ তাদের দাওয়াতের শুরুতেই আল্লাহকে রব হিসেবে মেনে নেওয়ার উপদেশ দিতেন। এরপর যারা তার কথা মেনে নিতেন তাদের নিয়ে গড়ে তুলতেন এক ইসলামী সমাজ। সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওফাতের পর মুসলিম সমাজ গড়ে তুলেছিল খেলাফত ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা।
কিন্তু এখন নবীদের আগমনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে এবং খেলাফতের ধারাবাহিকতাও বিনষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে মুসলিমগণ বিভিন্ন মতবাদে জড়িয়ে দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর এমনই এক সময়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে কোন কোন মুসলিম বেছে নিয়েছে গণতন্ত্র। কিন্তু প্রশ্ন হলো- ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে গণতান্ত্রিক পথ বেছে নেয়া কি সঠিক সিদ্ধান্ত? এই প্রশ্নের উত্তরেই লেখাটির অবতারনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন প্রশ্নের দিকে লক্ষ্য রেখে উক্ত বিষয়ে আলোকপাত করা যাক-
ইসলামী রাষ্ট্রের আদর্শ শাসন পদ্ধতিঃ একটি বিষয়ে সকলেই একমত হবেন যে, নবীদের পরে রাষ্ট্রীয় জীবনে যে পথটি সাহাবায়ে কেরাম অনুসরণ করতেন তা হলো খেলাফত ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা। আর এটিই হলো ইসলামী রাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্য শাসন ব্যবস্থা। এখন প্রশ্ন হলো, কিভাবে এই খেলাফত গঠিত হয়? চলুন এ বিষয়ে জেনে নেয়া যাক।
খেলাফত যেভাবে গঠিত হয়ঃ খেলাফতের মূলমন্ত্র হলো- আল কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। আর এ উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে ইসলামী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দুনিয়াবী জ্ঞানে সমৃদ্ধ একটি মজলিশে শুরা বা কমিটি থাকবে যারা বাছাই করে এক বা একাধিক যোগ্য ব্যক্তিকে দেশ পরিচালনার জন্য জনগণের সামনে পেশ করবেন। আর জনগণ এই যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য হতে তাদের পছন্দনীয় ব্যক্তিকে ভোট দানের মাধ্যমে নির্বাচিত করবে সুনির্দিষ্ট বা সুদীর্ঘ সময়ের জন্য। এই পদ্ধতি অধিক সঠিক ও কার্য কর এই কারণে যে, প্রথমে একটি অভিজ্ঞ কমিটি কিছু সৎ, যোগ্য, আমানতদার, উদার, পারদর্শী লোককে বের করবেন যা সাধারণ মানুষের নির্বাচনের চেয়ে অধিক পরিশুদ্ধ ও উপযুক্ত হবে। তারপর এদের মধ্য থেকে জনগণ যাকে ইচ্ছা বাছাই করতে পারবে। এতেকরে জনগণও শাসক নির্বাচনে নিজেদের মতামতকে দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। ফলে জনগণ তাদের উপর এ শাসন চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বলে মনে করবে না। তাছাড়া খেলাফত ব্যবস্থায় যে কেউ শাসকের বিরোদ্ধে প্রকাশ্যে এবং মজলিশে শুরায় অভিযোগ দায়ের করতে পারবে ফলে শাসকগণ অত্যাচারী হওয়ারও সুযোগ পাবে না।
গণতন্ত্র যেভাবে গঠিত হয়ঃ গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র হলো- জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। গণতন্ত্র বলতে কোনও জাতিরাষ্ট্রের (অথবা কোনোও সংগঠনের) এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। (উইকিপিডিয়া বাংলা)। এই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রয়েছে অনেক ফাঁক-ফোকর। যেমন- এই পদ্ধতিতে সাধারণ জনগণকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রতারিত করার সুযোগ থাকে এবং নির্বাচনের পূর্বে সাধারণ জনগণকে ঘোষ বা উৎকুচ দিয়ে ভোট ক্রয় করা যায়। আর গণতন্ত্রে এই ঘুষ বা প্রতারণা ঠেকানোর মতো কোন উপায় বা পথ নেই। আপনি বলতে পারেন, একটি দল মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতায় আসলে পাঁচ বছর পর তাকে বর্জন করার সুযোগ পাবে জনগণ। কিন্তু তাতে কি জনগণের লাভ হবে? পৃথিবীর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে লক্ষ্য করলে দেখবেন সরকারি দল এবং প্রধান বিরোধী দল সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন হয়। আর প্রতিটি দেশে কার্যত এই দুই দলের হাতেই ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকে। এর থেকে বেরিয়ে আসার কোন উপায় থাকে না। কীভাবে বের হওয়া যায় না তা একটু খুলে বলছি। যে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ক্ষমতা দখল করে তারা সাধারণত তাদের সমর্থক গোষ্ঠিগুলোকে বিভিন্ন সুবিধাদি দিয়ে থাকে। যেমন চাকুরির ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য, সমাজে তাদের প্রভাব এবং সমাজের কেউ তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে তাদেরকে শায়েস্তা করার জন্য দলীয় সরকারের পুলিশ বাহিনীর সুহযোগিতা ইত্যাদি। আর এই স্বার্থ পাওয়ার পর একটি দলের লোক সাধারণত দল পরিবর্তন করতে চায় না এবং তার দল বার বার ক্ষমতায় আসুক এটাই প্রত্যাশা করে। এভাবে একটি দেশের মানুষ সরকারি দল ও প্রধান বিরোধী দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া যারা নতুন আদর্শ লালন করে নতুন আরেকটি দল গঠন করতে চায় তাদেরকে সরকারি দল তো বয়কট করেই, বিরোধী দলও তাদেরকে বয়কট করে। কারণ ক্ষমতার ভাগিদার বেশি হয়ে পড়লে বিরোধী দলগুলোরও ক্ষমতা দখল করার সম্ভাবনা কমতে থাকে। তাই যেমনটা চিন্তা করা হয় যে, দলগুলো সৎ না থাকলে নতুন একটি দল গঠন করে আপনি ক্ষমতায় গিয়ে ভালো কিছু করবেন। প্রধান দুটি দলকে টপকে আরেকটি নতুন দল গঠন করে তাদেরকে টপকে আসাটা খুবই কঠিণ, যদি সরকারি দল আর প্রধান বিরোধী দলের লোকজন হয় অসৎ, ধূর্ত আর সন্ত্রাস প্রকৃতির। এটা বুঝাতে একটা সহজ উদাহরণ উল্লেখ করছি। ধরুন, কোন এক এলাকায় দুটি সন্ত্রাসি দল নিজেদের প্রাধান্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যু্দ্ধ শুরু করেছে। এখন আপনি চাইছেন তারা যেহেতু সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে এ অবস্থায় আমি একটি ভালো দল গঠন করে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করবো এবং সেখানকার শাসনভার আমার হাতে নিয়ে নেবো। তখন আপনার প্রতি তাদের ঘৃণা কেমন হবে অনুমান করতে পারছেন? যারা ক্ষমতার জন্যই বিবাদে জড়িত তাদের উপর আপনার ক্ষমতা খাটানো দেখে নিজেদের বিরোধ ভুলে গিয়ে উভয় দলই একত্রে আপনার উপর আক্রমণ শুরু করবে। এটাই তো বাস্তবতা।
গণতন্ত্র যেকারনে অভিশাপঃ গণতন্ত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শাসক সকলের উপর জুলুম চাপিয়ে দিলেও জনগণ কিছুই করতে পারে না। ফলে শাসকগণ জনগণকে চমকপ্রদ মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তাদের সাথে প্রতারণা করার সুযোগ পায় এবং একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে মানুষকে নিষ্পেষিত করলেও সাধারণ জনগণ তা থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় খোজে পায় না। ফলে গণতন্ত্র একশ্রেণির চাটুকার, বাটপার ও মিথ্যা আশ্বাসদানকারীদের কুক্ষিগত হয় এবং এই গণতন্ত্র মানুষকে প্রকৃত মুক্তির স্বাধ দিতে পারে না।
খেলাফত ও গণতন্ত্রের পার্থক্যঃ খেলাফত প্রতিষ্ঠার কয়েকটি রূপ আছে। তন্মধ্যে জনগণের রায় বা ভোটদানও একটা পদ্ধতি। কিন্তু গণতন্ত্রের ভোট পদ্ধতি ও খলিফা নির্বাচনের ভোটদান পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে আকাশ পাতাল ব্যবধান। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাফের বেইমান সবারই ভোটদানের সমান অধিকার থাকে। এমনকি রাষ্ট্র গঠনেও তাদের সমান অধিকার থাকে। পক্ষান্তরে খলিফা নির্বাচনে এরকম অরক্ষিত ভোট পদ্ধতির কোনো সুযোগ নেই যে, পাশ কাঁটিয়ে অধার্মিক বা কাফের-বেইমান রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পারবে। বরং খলিফা নির্বাচন পদ্ধতি হয় মজলিশে শুরার মাধ্যমে। যেখানে মজলিশে শুরা ব্যক্তি বিশেষের ধার্মিকতা, দূরদর্শিতা, উদারতা ইত্যাদি দেখে তাদেরকে বাছাই করে জনগণের সামনে পেশ করবে। তাদের মধ্য থেকে যে কাউকে মুসলিম জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে করবে। ফলে জনগণ তাদের পছন্দমতো ব্যক্তিকে জয়যুক্ত করে দেশ শাসনের ভার অর্পণে সক্ষম হবে। এতেকরে যেমন চুর-বাটপার নির্বাচিত হওয়ার কোন সুযোগ পাবে না তেমনি ক্ষমতায় আরোহন করে কেউ চুরি,বাটপারি বা অধার্মিক কোন কাজে জড়ালে মজলিশে শুরা তাকে পদচ্যুতও করতে পারবে। ফলে এ ব্যবস্থায় ক্ষমতা পেয়ে শাসক যাচ্ছে তাই করারও কোনো সুযোগ পাবে না।
অধিকাংশের মতামত মানে ভ্রষ্টতাঃ আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি যুগে তখনই নবী রাসূল পাঠিয়েছেন যখন সে যুগের অধিকাংশ মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু গণতন্ত্র ঠিক এর বিপরীত। যে কাজে মানুষের সমর্থন বেশি রষ্ট্রীয়ভাবে জনগণ তাই প্রতিষ্ঠিত করতে পারে যদিও তা অন্যায় বা অযৌক্তিক হয়। আমেরিকার দিকে তাকালে দেখা যায়, একটি স্টেটের অধিকাংশ মানুষ মদের বিপক্ষে ভোট দিলে সেখানে মদকে নিষিদ্ধ করা হয় আবার কোন কোন এলাকায় এটার পক্ষে ভোট দিলে তা বিনোদনের বস্তু হিসেবে সাব্যস্ত করে খাওয়ার বৈধতা দেওয়া হয়। এটাই হল আসল গণতন্ত্র। তাহলে কী দাঁড়ালো? অধিকাংশ মানুষ পথ ভ্রষ্ট হলে গণতন্ত্র তখন তাদের স্বার্থই রক্ষা করবে, ভালো মানুষের নয়। আর আল্লাহ যুগে যুগে সেই সময়ই কিতাব ও নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন যখন সমাজ ও রাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ পাপ কাজে লিপ্ত হয়েছে। সুতরাং গণতন্ত্র ও ইসলামী আইনের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর গণতন্ত্র চর্চাকারীরা সাধারণত হয়ে থাকে নৈতিকতা বিরোধী এবং আল্লাহর আইন বিরোধী তথা তাগুতি শক্তি।
গণতন্ত্রে অযুক্তিই যখন যুক্তিঃ ডাক্তার হতে হলে তাকে ডাক্তারি বিদ্যা শিখতে হয়। ডাক্তারের ছেলে পিতার পেশার কারণে যদি পৈত্রিক সূত্রে ডাক্তার পরিচয় দিতে না পারে তবে যোগ্য রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান বলে কিভাবে রাজনীতিতে অগ্রগণ্য হয়? তার যোগ্যতা পরিমাপের জন্য কেন শিক্ষা ও যোগ্যতার মানদন্ড নির্ধারণ করা হয় না কিংবা যাচাই কমিটি গঠন করা হয় না? আর নেতার ছেলে কেন রাজনীতিতে বেশি সুবিধা পাবে যেভাবে পেয়ে থাকে রাজার উত্তরাধিকারীরা?
* গণতন্ত্রের ব্যর্থতাঃ যদি কোন দেশের অধিকাংশ মানুষ দূর্নীতিগ্রস্ত হয় তবে তারা কি কোন ভালো মানুষকে নির্বাচিত করবে? যদি তা না হয় তবে কি সেখানে ভালো মানুষেরাই নিপীড়িত ও জুলুমের স্বীকার হবে না? এমতাবস্থায় গণতন্ত্র কি কমসংখ্যক ভালো মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারবে? উদাহরণস্বরূপ তুরষ্কের কথাই ধরা যাক। দেশটিতে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতায় আরোহন করেছিল কামাল আতাতুর্ক। সে ক্ষমতায় বসেই মুসলিমদের উপর অত্যাচার শুরু করে। এমনকি মসজিদে আযান দেয়াকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আরবিতে কুরআন তিলাওয়াত এবং আরবী শব্দের ব্যবহার দেশে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। মুসলিম প্রধান দেশ হওয়া সত্বেও মহিলাদের হিজাব পড়ে বাইরে বের হওয়া যাবে না মর্মে আইন পাশ করা হয়। মুসলিম স্কলারদেরকে জেল-ফাসি আর গুম করে নিঃশেষ করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। এভাবে গণতন্ত্রের হাত ধরে ক্ষমতায় এসে মুসলিম প্রধান দেশে মুসলমানদের তাহজীব তমুদ্দুন একে একে ধ্বংস করে দেয়ার নীলনকশা বাস্তবায়ন করা হয় এবং সাধারণ মুসলিমদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলা হয়। আর এটা দেখে মানবতার ফেরিওয়ালা ও গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী আমেরিকা যারপরনাই হয়েছিল।
গণতন্ত্র হল তাগুতঃ আল্লাহ বলেন, اَلَا لَهُ الۡخَلۡقُ وَ الۡاَمۡرُ “সাবধান! সৃষ্টি যার হুকুমও তার।” সূরা আরাফ (54), আর গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র হলো- জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। যা পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। তাছাড়া গণতন্ত্রে কুরআনের আইনকে যেমন আইন হিসেবে স্বীকার করা হয় না তেমনি কুরআনের আইনেও মানুষের বিধানকে আল্লাহদ্রোহী আইন বা তাগুত হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَ مَنۡ لَّمۡ یَحۡکُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡکٰفِرُوۡنَ “যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করেনা তারাই কাফের”। সূরাঃ আল মায়েদাহ (44) । আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,وَ مَنۡ لَّمۡ یَحۡکُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الظّٰلِمُوۡنَ “যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করেনা তারাই যালিম” সূরাঃআল মায়েদা (45) ।
* গণতন্ত্রের চোরাগলিঃ গণতন্ত্র হলো সাম্রাজ্যবাদীদের পাতা একটি ফঁদ। ভিন্ন একটি দেশের আভ্যন্তরীন পট পরিবর্তনের একটি মুক্ষম হাতিয়ার। কোন একটি দেশে তাদের মনঃপুত সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে বুর্জোয়া দলগুলোকে তারা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। যেমন- ইমরান খানের কথাই ধরা যাক। ইমরান খান ক্ষমতায় আরোহন করে যখন জাতিসংঘে ইসলামের পক্ষে কথা বলতে শুরু করলো এবং আমেরিকার কবল থেকে নিজ দেশকে বাঁচাতে, ডলারের পরিবর্তে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল দ্বারা আন্তর্জাতিক লেনদেন সম্পন্ন করে দেশকে স্বাবলম্বি করতে চাইল, তখন আমেরিকা পাকিস্তানের বিরুধী দল এবং নিজ দলের কিছু স্বার্থবাদী নেতাকে টাকা-পয়সা এবং অন্যান্য সুবিধা দিয়ে ইমরান খানের বিরোদ্ধে উস্কে দিল। ফলে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হলো। (একটি প্রামাণ্য নিউজের লিংক ) তাই বলা যায়, গণতন্ত্র হলো পশ্চিমাদের একটি পাতানো ফাঁদ। এই ফাঁদে পা দিলে পশ্চিমাদের গোলামী ছাড়া মসনদ টিকিয়ে রাখা কোনভাবেই সম্ভব নয়।
একটি ইসলামী দল গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা পেলে খেলাফতের যে উদ্দেশ্যগুলো অর্জনে ব্যর্থ হবেঃ
যাকাত ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থাঃ/ ধনি মুসলিমদের যাকাত দানে বাধ্য করাঃ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কখনোই যাকাত ব্যবস্থা কায়েম করা সম্ভব হবে না। কারণ অধার্মিক সাধার জনগণ কখনোই নিজের সম্পদের ভাগ দরিদ্রদের হাতে তোলে দিতে চাইবে না। অথচ একটি দেশে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হলে সেখানে যাকাত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যার মাধ্যমে দেশের ধনী গরীবের ব্যবধান কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ধনীদের নিকট হতে যাকাত উঠানোর জন্য লোকবল নিয়োগ করা হবে এবং তা গরীবদের মাঝে বন্টন করে দেওয়া হবে।
ধনি অমুসলিমদের উপর জিজিয়া বা কর ধার্যঃ অমুসলিমদের মধ্যে যারা বিত্তশালী তারাও রাষ্ট্রকে জিজিয়া বা কর দিতে বাধ্য থাকবে। কেননা, ইসলামী রাষ্ট্র তাদেরকে নির্বিঘ্নে এবং শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে এবং তাদের গরীবদেরকে দান করে। অতীত খেলাফতের ইতিহাস এটাই প্রমাণ করে। কিন্তু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা পেলে কোন মুসলিম শাসক অমুসলিম ধনিদের উপর কর বা জিজিয়া আরোপ করতে পারবে না।
কুরআনী আইনের প্রয়োগঃ খেলাফত ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থায় অপরাধীকে তার কৃত অপরাধের জন্য সুনির্দিষ্ট শাস্তি প্রদান করতে হয়। যেমন- হত্যার বদলায় হত্যা অথবা সুনির্দিষ্ট অংকের ক্ষতিপূরণ যদি তার পরিবার মেনে নেয়। চুরির বিচারে হাত কর্তন, বিবাহিত নারী-পুরুষ যেনার পাপ করলে পাথর মেরে হত্যা, অবিবাহিত হলে একশত করে বেত্রাঘাত ইত্যাদি। এসব হলো ইসলামী বিধানের সুষ্পষ্ট শাস্তি। গণতান্ত্রিক পন্থায় কোন একটি দল বিজয় হলে কি এসব আইন সাথে সাথেই প্রয়োগ করতে পারবে? যদি না পারে তবে এ বিজয় তো পরাজয়েরই নামান্তর। কেননা, বিজয়ী হয়েও যেন গণতন্ত্রের ধারক বাহক আমেররিকার কাফের শক্তি তথা তাগুতের কাছে পদানত।
এছাড়াও খেলাফত ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থায় নিম্নোক্ত কাজগুলো কোন বাধা ছাড়াই সম্পাদন করা যায়, যেগুলো গণতন্ত্র অনুসরণ করে ক্ষমতায় আসলে কখনোই সম্ভব নয়। যেমন-
সুদ ভিত্তক ব্যাংকিং ব্যবস্থা বন্ধ করা, ন্যায়বিচার, ঘোষমুক্ত সমাজ তৈরি, অনুপস্থিত উকিলের যুক্তি বর্জন, কাফির, মুনাফিক ও অযোগ্যদের নেতৃত্বে যাওয়া বন্ধ করা, যোগ্য ও মুসলিম নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা কায়েম রাখা ইত্যাদি।
গণতন্ত্রবাদী ইসলামী দলগুলোর কাছে আমার কতিপয় জিজ্ঞাসাঃ
আমি মনেকরি খেলাফত আর গণতন্ত্র এক নয়। খেলাফত বলতে যা বুঝায় সেটাকেই বাস্তবায়ন করা ইসলামী দলগুলোর লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ইসলামের কোন লক্ষ নয় এবং কোন ইসলামী দলেরও লক্ষ হওয়া উচিত নয়। যদি কেউ আমার মতের বিরোধী হন তবে তার কাছে আমার কিছু প্রশ্ন থাকলো- আশাকরি উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজের বিবেককে একবার জিজ্ঞেস করে নিবেন যে, শুধু নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য উত্তর দেওয়া হচ্ছে নাকি প্রশ্নকারির প্রশ্নের যথার্থতা রয়েছে? বিবেকের কাছে হেরে গেলে কাল কিয়ামতে আল্লাহর আদালতেও হারতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। প্রশ্নগুলো নিম্নরূপঃ-
১। গণতন্ত্রের মাধ্যমে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ কী আল্লাহর আইনকে উপহাসের বস্তু বানানোর মতো অপরাধ নয়? ইসলামী আইন কি মানুষের ইচ্ছার উপর এবং ভোটের মাধ্যমে জয়-পরাজয়ের উপর ছেড়ে দেওয়া যায়? কেননা এখানে প্রত্যেক জনগণের ভোটাধিকার থাকে। এমনকি কাফের মুশরিকদেরও শাসক হওয়ার অধিকার থাকে এবং তাদের পাল্লা ভারি হলে নিজেদের মতোকরে দেশ শাসন করার সুযোগ পায়। তাছাড়া গণতন্ত্র জনগণের রায়ের ভিত্তিতে আইন প্রণয়নে বাধ্য। আবার এই আইন জনগণ পরিবর্তন করতে পারে। আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠায় এরকম পথ অবলম্বন করা কি নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য? সূরা কাফিরূনের পটভূমির সাথে এই নির্বাচন পদ্ধতি মিলে যায় না? যেখানে ভোটে জয় হলে কিছুদিন হকপন্থী দল ক্ষমতায় থাকবে তারপর তাদের সময় শেষ হয়ে যাবে। তারপুুর ভোটের আশায় কাফের মুশরিকদের কাছে ধরনা দিতে হবে?
২। ইসলামী রাষ্ট্রে কি কাফির, মুশরিকদের শাসক হওয়ার সুযোগ রয়েছে? গণতন্ত্র তো তাদের জন্য এ সুযোগ তৈরি করে দেয়। আবার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাদেরকে বাধা দেয়াই কি গণতান্ত্রিক হবে?
৩। আল্লাহ কি কাফিরদেরকে বন্ধু ও অভিভাবকরূপে গ্রহণ করতে বারণ করেন নি? গণতন্ত্রের অভিভাবক কারা? গণতন্ত্র না মানলে বিগড়ে যায় কারা? আর মানলে খুশি হয় কারা?
৪। নবীগণের পথে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ না করে একটি দলগত প্রচেষ্টাকে কাফিরদের উদ্ভাবিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করার কি আসলেই কোন প্রয়োজনীয়তা আছে? ইরান ও আফগানিস্তান কি এখনো এই পথ পরিহার করে ক্ষমতায় যেতে সক্ষম হয়নি? সেরকম চেষ্টা করতে অসুবিধা কোথায়? আফগানিস্তানের উদাহরণ আনলে দায়িত্বশীলরা দায়সাড়াভাবে বলে দেন, তাদের দেশে বিপ্লব ঠিক আছে। আমাদের দেশে ঠিক নয়। এই যুক্তি শয়তানের নয় তো? কারণ আফগানিস্তানেও আমেরিকা তার পা চাটা মুসলিম নামধারী গণতন্ত্রের ধারক সরকার কায়েম করে রেখেছিল। তালেবানরা সংখ্যাগুরু হয়েও কেন গণতন্ত্র বর্জন করেছিল? ধরুন, আমি বললাম আপনি বেশি বেশি খান তাই জামাত করা আপনার জন্য ঠিক, আমার জন্য নয়। এটাকে কি যুক্তি হিসেবে মেনে নেবেন?
৫। ধর্মীয় আইনের প্রতি বিদ্রোহ করে ধর্মীয় আইন থেকে মুক্ত করে মানুষের চিন্তা-ধারা দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিচালনার উদ্দেশ্যে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাতে ইসলামের কল্যাণ তালাশ করা কি স্বাভাকি কাজ?
৬। বাংলাদেশের সংবিধানের প্রায় সবগুলো আইন কী কুরআন পরিপন্থী নয়? যেমন- চুরি, ধর্ষণ, হত্যা ইত্যাদির বিচারিক হুকুম। গণতন্ত্র মেনে নির্বাচনে অংশ নেয়া মানে কী আল্লাহ দ্রোহী এই আইনগুলোর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা নয়?
৭। যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় কুরআনকে সংবিধান হিসেবে মেনে নেয় না সেই রাষ্ট্রে তার নিজস্ব কুফুরি মতাদর্শ মেনে নিয়ে নির্বাচিত হয়ে কুরআনের আইন চালু করার পরিকল্পনা কী আদৌ বাস্তব সম্মত পরিকল্পনা? যে রাষ্ট্রের সংবিধানই ইসলামী আদর্শের বিপরীত সেখানে ইসলামী আদর্শ লালনকারী দল কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পার? আর যদি অংশগ্রহণ করে তবে কী তাদেরকে ইসলামের আদর্শ লালনকারী দল বলা যায়?
ইসলামী দলগুলো গণতন্ত্র গ্রহণ করলে সাধারণ মুসলিম যে ভুল বার্তা পাবে: গণতন্ত্র হল সুষ্পষ্ট একটি তাগুতের পথ। এরপরও যদি ইসলামী দলগুলো তাদের নীতিকে কাটছাট করে গণতন্ত্রকে গ্রহণ করতে চান তবে তাদেরকে যেমন সর্বদা থাকতে হবে গণতন্ত্রবাদী ও এর রক্ষকদের অনুগত তেমনি অসংখ্য সাধারণ মানুষ এই পদ্ধতিকে ইসলামী পদ্ধতি মনে করবে, যার অর্থ বাতিলকে হকের সাথে মিশ্রিত করা। একটা কুফুরি মতবাদকে সাধারণ মানুষর নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করার পরিণতি আখিরাতে এই দলগুলোকেই ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَ لَا تَلۡبِسُوا الۡحَقَّ بِالۡبَاطِلِ وَ تَکۡتُمُوا الۡحَقَّ وَ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ “আর তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করোনা এবং জেনে-শুনে সত্য গুপন করোনা ” -সূরা বাকারাহ (৪২)
গণতন্ত্র কি পূর্বেকার শাসন ব্যবস্থার চেয়ে বেশি কঠিণঃ এটা মনে করার কোন কারণ নেই যে, পূর্বের শাসন ব্যবস্থাগুলো গণতন্ত্রের গোলক থেকে বেশি সহজ ছিল। বরং তখনকার শাসন ব্যবস্থা ছিল গণতন্ত্রের চেয়ে আরও জটিল ও কঠিণ। কেননা, গণতন্ত্রে অন্তত যার যার মতাদর্শ নিয়ে কথা বলার একটা আইনী অধিকার আছে। কিন্তু রাজতন্ত্রে কী এরূপ সুবিধা ছিল? তাও আবার ফেরআউন ও নমরুদের মতো অত্যাচারী, সৈরাচারী রাজার আমলে? তারা তো সাধারণ মানুষকে মানুষই মনে করতো না। এমনকি তারা নিজেদেরকে এতই মহান ও শ্রেষ্ঠ মনে করতো যে, নিজেদেরকে রব এবং সাধারণ মানুষকে তাদের গোলাম মনে করতো। আর নবীরা তাদেরকে বলতো তোমরাও সবার মতো সাধারণ মানুষ এবং আল্লাহর কাছে তোমাদের ও অন্যান্য প্রজাদের মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই শুধুমাত্র নেক আমল ছাড়। চিন্তা করে দেখুন, তখন অহংকারী ও অপ্রতিদ্বন্দি রাজাদের মাথা কীরূপ বিগ্রে যাওয়ার কথা!
গণতন্ত্রের চক্কর থেকে কি বের হওয়া সম্ভব?: বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রই যেহেতু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তাই মনে হতে পারে, এই গণতন্ত্র থেকে বের হয়ে আসার কোন পথ নেই। তাই পৃথিবীর অধিকাংশ ইসলামী দলগুলো ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে সরাসরি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে বেছে নিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন রাষ্ট্রের দিকে তাকালে আপনি দেখতে পাবেন, এখনো বহু রাষ্ট্রে গণতন্ত্র ছাড়াও রয়েছে রাজতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। এগুলোকেও নিশ্চয়ই গণতন্ত্রের ধারক বাহকগণ ভালো চোখে দেখে না। এমতাবস্থায় তারা টিকে থাকতে পারলে খেলাফতও টিকে থাকবে। এমনকি আমাদের চোখের সামনেই একটি দেশ খেলাফত প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হলো- আফগানিস্তান। দীর্ঘদিন ধরে খেলাফত টিকিয়ে রেখেছে এমন একটি দেশ- ইরান। তারা পারলে আমরা কেন পারবো না? এমন কি তারা যদি গণতন্ত্র অনুসরণ করতো তখন আমেরিকা তাদেরকেও আরেকটি দল দিয়ে শায়েস্তা করতে পারতো যা তাদের পক্ষে এখন আর সম্ভব নয়।
গণতন্ত্র ছাড়া যেভাবে খেলাফত কায়েম করা সম্ভবঃ প্রত্যেক নবীই মানুষকে প্রথমে আল্লাহর গোলামীর দিকে মানুষকে আহ্বান করেছে। তাদের ডাকে যারা সারা দিয়েছে তাদেরকে তিনি শিক্ষা দিয়ে গড়েছেন এবং তাদেরকে নিয়ে তাগুতি শক্তির বিরোদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। ইরান ও আফগান্তানও সেই একই পদ্ধতিতে খেলাফত প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। অতএব ইসলাম প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আমরাও পদঘাত করে খেলাফতের ভিত্তিতে শাসন ব্যবস্থা কায়েমের পথ অবলম্বন করতে পারি।
আইন রচনার অধিকার কি মানুষের আছে? মানুষের জ্ঞান খুবই সীমিত। মানুষ সাধারণত একশত বছরের অধিক বাঁচতে পারে না। আর মানুষ সেসকল বিষয়েই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে যেসকল বিষয়ের মুখোমুখি সে হতে পেরেছে। আর প্রতিটি যুগের সমস্যাগুলোতে রয়েছে বিশাল ব্যবধান। দুইশত বছর পূর্বে মানুষ যে সমস্যাগুলোকে মানুষ মৌলিক সমস্যা ভাবতো তার দুইশত বছর পর মানুষ নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। আবার তারও দুইশত বছর পর হয়তো পরবর্তী প্রজন্ম আরেকটি নতুন সমস্যার সম্মুখিন হবে। সে হিসেবে মানুষ অনাগত বিষয়ে বেখবর এবং অনভিজ্ঞ। আর এই সিমীত জ্ঞান দিয়ে একটি আইন রচনা করলে দেখাযাবে কিছুদিন পর পর এই আইন অচল হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং বারবার মানুষকে আইন পরিবর্তন করতে হবে। ফলে কোন যুগেই মানুষ সস্থির নিঃস্বাস ফেলতে পারবে না। আমরা জানি, কোন ব্যক্তি যদি একটি যন্ত্র তৈরি করে তবে এর সঠিক ও নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে সেই উদ্ভাবকই সবার চেয়ে ভালো বলতে পারেন। অনুরূপ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের স্রষ্টা। তিনি যেমন অতীত সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন তেমনি ভবিষ্যতৎ সম্পর্কেও অধিক অবগত। সুতরাং তিনি যে আইন আমাদের জন্য দিয়েছেন তা যে সর্বাপ্রেক্ষা শেষ্ঠ এবং মানব সমাজের জন্য অধিক উপযুক্ত সেকথা বলার অবকাশ থাকে না। সুতরাং আল্লাহর আইন মেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, اَلَا لَهُ الۡخَلۡقُ وَ الۡاَمۡرُ “সাবধান! সৃষ্টি যার হুকুমও তার।” সূরা আরাফ (54) তিনি অন্যত্র ঘোষণা করেন, وَ مَنۡ لَّمۡ یَحۡکُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡکٰفِرُوۡنَ “যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করেনা তারাই কাফের”। সূরাঃ আল মায়েদাহ (44) ।
🕮আরও পড়ুন...
ইসলাম কি প্রতারকদের আশ্রয় দিতে বলে?
মসজিদে আমরা যে ভুলগুলো করি: জেনে রাখা আবশ্যক
মাদরাসার ছাত্ররা যেকারণে বেশি খারাপ হয়
মসজিদগুলোর উন্নতি যখন মানবিক অবনতির কারণ
এদেশের প্রচলিত সালাম কি সঠিক? জেনে রাখা জরুরী
যে প্রশ্নের উত্তর নেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কাছে
.........................................................................
* বিভিন্ন টাইটেল (হেডিং)ঃ কেন গণতন্ত্র? খেলাফত নয় কেন?, গণতন্ত্র কি খেলাফতের চেয়ে উত্তম? তবে খেলাফত রেখে গণতন্ত্রে কেন? গণতন্ত্র যেখানে ব্যর্থ, গণতন্ত্রের দূর্বলতা কোথায়? গণতন্ত্রের পতন কেন জরুরুী? খেলাফত যেকারণে গণতন্ত্রের চেয়েও কার্যকর, খেলাফতের যে দিকগুলো গণতন্ত্রের চেয়েও সুন্দর, গণতন্ত্রকে যেকারণে আর চলতে দেয়া উচিত নয়, গণতন্ত্র যেকারণে অকার্যকর, গণতন্ত্রের ভুলগুলো
ক) প্রথমে গণতন্ত্র নিয়ে বিশ্লেষণ তারপর খ) খেলাফন নিয়ে আলোচনা, সর্বশেষে গ) দুটির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য ঘ) দেশে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যার্থতা ও কারণ ঙ) গণতন্ত্র কি ইসলাম সমর্থন করে?
* গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো মানুষ ক্ষমতার উৎস
* গণতন্ত্র কাকে বলে? উৎপত্তিগত বিশ্লেষণ
* গণতন্ত্র মানুষের লিখিত এবং অধিকাংশের রায়ে পরিবর্তনযোগ্য
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন