রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪

ইসলাম কি প্রতারকদের আশ্রয় দিতে বলে?





ভূমিকা: আমাদের দেশের সাধারণ মুসলিমরা কিছু কিছু প্রতারকদের জেনে-শুনে আশ্রয় দিয়ে থাকে এবং এটাকে একটা ভালো এবং সওয়াবের কাজ মনে করে থাকে। আবার এর প্রতিবাদ করাকে পাপের কাজ মনে করে থাকে। আবার এর বাহানা হিসেবে তারা একটি ইসলাম বিদ্বেষী যুক্তি দিয়ে থাকে। যুক্তিটি এরকম যে, তার রিজিক  মেরে আমার কি লাভ? তারমানে, আমরা মনেকরছি তার রিজিক আল্লাহ তায়ালা আমাদের হাতে দিয়ে দিয়েছেন, আর তাই তার ইনকাম অবৈধ জেনেও তাকে বাধা দিলে আল্লাহ আমাদের পাকরাও করবেন। নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক। যেসব প্রতারকদের আমরা প্রস্রয় দিয়ে থাকি তার কয়েকটি রূপ নিম্নে তুলে ধরা হলো-

 

নব মুসলিমের নামে প্রতারক: প্রায়শইঃ মসজিদ থেকে বের হওয়ার পথে দেখা যায় দীর্ঘদিন যাবত একই ব্যক্তি নব মুসলিম নাম করে সাহায্য উঠাচ্ছে। এখানে প্রশ্ন হলো-ব্যক্তিটি কি আসলেই নব মুসলিম? তাছাড়া একজন মানুষ নব মুসলিম হলেই কি তাকে ভিক্ষা করতে হবে? ভিক্ষা করা কি ইসলামের শিক্ষা? নাকি ভিক্ষা করে পেট চালানোর ধান্দা হিসেবে এ পথ বেছে নিয়েছে? তাই তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে সাহায্য করা উচিত। নয়তো আমরা প্রতারকের সহযোগী হয়ে যাবো।

 

মেয়ে বিবাহ দানের নামে প্রতারক: কিছু ব্যক্তিকে দেখা যায় বছরের পর বছর মেয়ে বিবাহ দেয়ার নামে মানুষকে প্রতারিত করে টাকা উঠাচ্ছে। এদেরকে প্রস্রয় দিচ্ছে কারা। আপনি ও আমার মতো সাধারণ মুসল্লিরাই। আচ্ছা আমরা যদি এরকম নগন্য ও তুচ্ছ মানুষদের অন্যায়র প্রতিবাদ করতে ভয় পাই তাহলে সমাজের রাঘব বোয়ালদের ঠেকানোর মতো লোক তৈরি হবে তো?

 

চিকিৎসার টাকার নামে প্রতারক: আমার দেখা এক প্রতারক দীর্ঘদিন যাবত চিকিৎসার নাম করে জেলায় জেলায় সফর করে তার পায়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্য তোলছে। তার কথায় এমন প্রভাব বিস্তার করতে পারে যে, প্রথমে তার কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছিল। পরে দেখা গেলো এটা তার কথার বাহানা এবং মানুষকে প্রতারিত করার একটি মিথ্যা কাহিনী। আপনি আর আমি যদি এসব ছোট প্রতারকদের ঠেকাতে সাহস করি, তাহলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমাদের থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বড় প্রতারকদের ঠেকাতে প্রেরণা পাবে।

 

প্রতিবন্ধী অভিনয়কারী প্রতারক: আজকাল কিছু ইউটিউবার প্রতিবন্ধী অভিনয়কারী কিছু ভিক্ষুকদের মুখোশ উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে। আমি মনেকরি এটি একটি ভালো কাজ এবং নেক উদ্দেশ্যে করে থাকলে এসব ইউটিউবার সওয়াবের ভাগী হবে। তবে আমার ধারণা, প্রকৃত অভিনয়কারী ভিক্ষুকের সামান্য অংশই প্রকাশিত হয়েছে। তাই আমাদের করনীয় হলো নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্যোগেও আশ-পাশের কিছু প্রতারকের মুখোশ উন্মোচন করার চেষ্টা করা। এতেকরে প্রকৃত সাহায্যপ্রার্থী ও আসল প্রতিবন্ধীদের উপকার হবে।

 

মাদরাসা ও এতিমখানার উন্নয়নের নামে প্রতারণা: কিছু কিছু প্রতারক মাদরাসা ও এতিমখানার নাম করে ভুয়া রশিদ বানিয়ে হাট-বাজারের দোকানে দোকানে কালেকশন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এদের কারনে প্রকৃত হকদারগণ বঞ্চিত হচ্ছে। তাই যাচাই-বাছাই না করে দান করলে আপনার টাকা পেয়ে প্রতারকরা আরও উৎসাহিত হবে। একজন প্রতারককে উৎসাহিত করা কি আপনার জন্য ভালো পরিণাম হতে পারে?

 

খাবার খাওয়ার নাম করে টাকা দিয়ে নেশা করা:কিছু ব্যক্তির খারাপ গুণ জানা সত্যেও আমরা তাকে টাকা দিয়ে সওয়াবের আশা করি। আমরা বলে থাকি, আমি তো ভালো নিয়তে দিয়েছি, নেশা করবে-না করবে এটা তার ব্যপার, আমার সওয়াবের ঘাটতি হবে না। কথাটি ইসলামী ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক এবং অজ্ঞতার পরিচায়ক। আচ্ছা আপনি যদি জানেন যে, আপনার সন্তান স্কুলের টিফিনের টাকা নিয়ে তা দিয়ে নেশা করে তখন কি তার হাতে নিশ্চিন্তে টাকা দিয়ে দিবেন? যদি না দেন তাহলে আপনার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেশা করবে জেনেও তাকে টাকা দিলে অবশ্যই গুনাহের অংশীদার  হবেন। তাই সন্দেহভাজন সাহায্যপ্রার্থী সাহায্য চাইলে তাদেরকে খাবার খেতে দিন কিন্তু তাদের হাতে টাকা দিবেন না।

 

প্রতারকদের জন্য হুশিয়ারী: বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : তোমরা সত্যকে অবলম্বন কর। কারণ সত্যবাদিতা ভালো কাজে উপনীত করে। আর ভালো কাজ উপনীত করে জান্নাতে। যে মানুষ সত্য বলে ও সত্যবাদিতার অন্বেষায় থাকেএকপর্যায়ে সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে লিখিত হয়ে যায়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে দূরে থাক। কারণ মিথ্যা উপনীত করে পাপাচারে। আর পাপাচার উপনীত করে জাহান্নামে। যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে ও মিথ্যার অন্বেষায় থাকেএভাবে একসময় আল্লাহর কাছে সে চরম মিথ্যুক হিসেবে লিখিত হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিমহাদীস ২৬০৭)।

 

আমাদের উদাসীনতা ও দায়ভার: এমনও হয়ে থাকে যে,  মসজিদে দাড়িয়ে যে ব্যক্তি সাহায্য চাইছে সে আসলে প্রতারক তা আমাদের জানা। কিন্তু আমরা তা দেখেও না দেখার ভান করি এবং প্রতিবাদ করি না। কারন ইসলাম বিদ্বেষী একটি ধারণা থেকেধারনাটি এমন যে, তার রিজক মেরে আমার কী লাভ? অর্থাৎ একজন মানুষ যতই অন্যায় করুক তার রিজিক নষ্ট করা যাবে না বা তাকে খারপী থেকে ফেরালে গুণাহ হয়ে যাবে আস্তাগফিরুল্লাহ কতই না নিকৃষ্ট আমাদের চিন্তাধারা একজন মানুষ প্রতারণা করে কেজিতে এক ছটাক কম দিলে যেই আপনি ছেড়ে দেন না, সেই আপনিই মসজিদে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষকে প্রতারণা দানকারীর ব্যপারে নিশ্চুপ। প্রকৃতপক্ষে এসব প্রতারকের মুখোশ উন্মোচন করা প্রতিটি মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব শুধু তাই নয় আল্লাহ তায়ালা অন্যায়ের প্রতিবাদকে মুসলিম জাতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করেছেন।

এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, তোমরই হলে শ্রেষ্ঠ জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্যই তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করবে। (সূরা আল ইমরান: আয়াত,১১০) 

হাদিসে এসেছে, আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোনো অন্যায় হতে দেখলে সে যেন হাত দিয়ে তা প্রতিহত করে। যদি তা না পারে, তবে কথা দিয়ে; তাও না পারলে অন্তর দিয়ে (ঘৃণা করবে) এটি ঈমানের দুর্বলতম স্তর। (মুসলিম, হাদিস নং-৭৪)

 

অন্যায়ের প্রতিবাদ না করার ভয়ঙ্কর পরিণাম: হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি, তোমরা অবশ্যই ভালো কাজে মানুষকে আদেশ দেবে এবং অবশ্যই অন্যায় থেকে নিষেধ করবে। যদি তা না করো তা হলে আল্লাহ তোমাদের ওপর তার পক্ষ থেকে শাস্তি প্রেরণ করবেন। এরপর তোমরা তার নিকট প্রার্থনা করলেও তিনি কবুল করবেন না (তিরমিজি, হাদিস নং-৪০৬)


🕮আরও পড়ুন...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন