বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

জামায়াতের ভাইদের প্রতি ইসলামী সমাজের আহ্বান


আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ


প্রিয় দ্বীনী ভাইয়েরা, 

সংগঠনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে ত্যাগ-কুরবানী করছেন তা নিশ্চয়ই দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে নয়। পরকালীন মুক্তি এবং জান্নাত লাভই আপনাদের একমাত্র উদ্দেশ্য বলে আমরা মনেকরি। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, এই ত্যাগ আর কুরবানী যদি ভুল পথে হয় তবে পুরো প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে এবং উল্টো একারনে পরকালে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। যেমন- অনেকেই নিজ টাকা-পয়সা এবং সময় ও শ্রম ব্যয় করে পীর এবং মাজারের পেছনে ছুটছে। তাদের ত্যাগ কুরবানী আর আবেগের ফলাফল কেমন হবে তা আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। তাই আপনাকে বলছি, কোন সংগঠন ইসলামের দলীল নয়। বরং দলীল হচ্ছে কুরআন এবং সুন্নাহ। যদিও কোন সংগঠনকেই ১০০% হক বলা যায় না। তবে, ইসলামের মানদন্ডে কম-বেশি হবে এটা অবশ্যই বলা যায়। আবার কিছু কিছু সংগঠন বুঝে বা না ‍বুঝে  ইসলামের নামে ইসলাম বিরোধীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।


ত্যাগ-কুরবানী হোক দ্বীনের পথেই!

আমরা চাই আমাদের প্রচেষ্টা আর ত্যাগ-কুরবানীর বিনিময়ে যেন এই বাংলাদেশে দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। মনে রাখবেন, দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে কুরআন-সুন্নাহ’র নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে, বৃটিশদের রেখে যাওয়া গণতন্ত্রের নির্দেশনায় দ্বীন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। যদি কখনো এই পন্থায় ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব হয়েও যায়, তবে তা হবে গণতান্ত্রিক ইসলাম তথা বিকৃত ইসলাম। আল্লাহর মনোনীত ইসলাম নয়। যেই ইসলাম ভোটের জন্য কাফেরদের পদানত থাকবে।


গণতন্ত্র হল তাগুত!

বাংলাদেশের সংবিধান তো সেই সংবিধান, যেখানে আল্লাহর দেয়া প্রতিটি সুষ্পষ্ট আইনের মোকাবেলায় ভিন্ন ধরনের আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যেমন- ইসলামী শরিয়ায় চুরির বিচারে হাত কর্তন, যেনার শাস্তি অবিবাহিতের ক্ষেত্রে একশত বেত্রাঘাত, বিবাহিত হলে পাথর মেরে হত্যা। বাংলাদেশের সংবিধানে কি এর বিপরীত আইন করা হয়নি? তাছাড়া ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হলো যাকাত ভিত্তিক আর বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থনীতি সুদ ভিত্তিক। সুতরাং এটাই হলো তাগুতের সংবিধান! মানব রচিত এই বিধানের এক চুল পরিমাণ মেনে নিলে তা হবে আল্লাহর আইনের সাথে বিরুদ্ধাচরণ। কেননা আল্লাহর দ্বীন পরিপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

  وَ مَنۡ یَّبۡتَغِ غَیۡرَ الۡاِسۡلَامِ دِیۡنًا فَلَنۡ یُّقۡبَلَ مِنۡهُ ۚ وَ هُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ-“আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দীন তালাশ করবে, তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরাঃ আলে-ইমরান, আয়াতঃ ৮৫)

মূলত সংবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহর। মানুষ কেবল তা অনুসরণ করতে বাধ্য।


গণতন্ত্র বনাম মাওলানা মওদূদী (রহঃ) এর অবস্থানঃ 

মাওলানা মওদূদী (রহঃ) এর স্বপ্ন ছিল, আল্লাহর যমীনে তার  দ্বীনকে মূল অবয়বে প্রতিষ্ঠা করা। দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বাতিল কোন দ্বীনের আশ্রয় গ্রহণ বা গণতন্ত্রকে গ্রহণ করা নয়। তিনি তার পুরো জীবন অতিবাহিত করেছেন গণতন্ত্রসহ সকল তন্ত্র-মন্ত্রের উচ্ছেদ করে কুরআনী সংবিধান প্রতিষ্ঠা করতে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য যে, তার মৃত্যুর পর দ্বীন প্রতিষ্ঠার এই সংগঠনটিকে গণতন্ত্রের অনুগামী করা হয়েছে। এটাকে সহ্য করতে না পেরে তারই সংগ্রামের সহযোদ্ধা, তৎকালীন জামায়াতের সিনিয়র দায়িত্বশীল, স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের প্রথম আমীর, সত্যানুসন্ধানী ব্যক্তিত্ব এবং সত্য গ্রহণে আপোষহীন নেতা মুফতী আব্দুল জাব্বার (রহঃ) গণতন্ত্রের ভেতর জামায়াতের অন্তর্ভুক্তির বিরোধীতা করলেন। তিনি তৎকালীন জামাতের বিভিন্ন সভা ও সেমিনারে গণতন্ত্রের পরিণতি ও ভয়াবহতা নিয়ে সতর্ক ও সাবধান করতে থাকলেন। কিন্তু তার কথাগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং তাকেই উপেক্ষা করা হলো। একারনে তিনি বিকৃত জামায়াত ত্যাগ করে মূল জামায়াতের প্রকৃত লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের আলোকে  “মানুষের নয়! সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর” এই নীতির ভিত্তিতে “ইসলামী সমাজ” নামক এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।


দ্বীনের মূলনীতি:

দ্বীনের মূলনীতি হলো- প্রথমে “লা ইলাহা” তারপর “ইল্লাল্লাহ”। অর্থাৎ প্রথমে মানব রচিত সকল প্রকার কুফুরী সংবিধান ও মতবাদ অস্বীকার ও পরিত্যাগ করতে হবে, তারপর ঈমান আনতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

فَمَنۡ یَّكۡفُرۡ بِالطَّاغُوۡتِ وَ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَكَ بِالۡعُرۡوَۃِ الۡوُثۡقٰی ٭ لَا انۡفِصَامَ لَهَا ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ  “সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করে, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করল, তাহলে সে এমন মজবুত হাতল ধরল যা কখনো ছিন্ন হবে না এবং আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সুরা বাকারাহ- ২৫৬)।


ইসলামী সমাজের আহ্বান!

ইসলামী সমাজ একমাত্র আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস-ঈমান আনয়নের ঘোষণা করে, কেবলমাত্র তাঁরই দাসত্ব, তাঁরই আইনের আনুগত্য ও উপাসনা এবং তাঁরই মনোনীত সর্বশেষ নাবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শর্তহীন আনুগত্য-অনুসরণ ও অনুকরণের অঙ্গীকারের ভিত্তিতে গঠিত হয়েছে। ইসলামী সমাজ আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রদর্শিত শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সর্বাত্মক আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সকল প্রকার উগ্রতা, জঙ্গীতৎপরতা, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ইসলামী সমাজ-এর দৃঢ় অবস্থান। ইসলামী সমাজ সকল প্রকার সামপ্রদায়িকতার উর্ধে উঠে ক্ষমা ও উত্তম ধৈর্য্যর নীতিতে অটল থেকে একমাত্র আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের ভিত্তিতে মানুষের সার্বিক কল্যাণে ঈমানী দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সুতরাং “ইসলামী সমাজ” সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার একটি আদর্শবাদী ও আপোষহীন প্রতিষ্ঠান। এই সংগঠনে আপনাকে আন্তরিক আমন্ত্রন জানাচ্ছি।

আমাদের ওয়েবসাইট- https://islamisomaj.com,

ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/islamisomajbd,

ইউটিউব চ্যানেল- https://www.youtube.com/@islamisomaj


🕮আরও পড়ুন...


গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ কি গ্রহণযোগ্য?

ইসলাম কি প্রতারকদের আশ্রয় দিতে বলে?

মসজিদে আমরা যে ভুলগুলো করি: জেনে রাখা আবশ্যক

মাদরাসার ছাত্ররা যেকারণে বেশি খারাপ হয়

মসজিদগুলোর উন্নতি যখন মানবিক অবনতির কারণ

এদেশের প্রচলিত সালাম কি সঠিক? জেনে রাখা জরুরী

যে প্রশ্নের উত্তর নেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কাছে 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন