শুরুকথাঃ
হেজবুত তাওহীদ এমন একটি সংগঠন, বাংলাদেশে যাদের হেটারস সংখ্যাই বেশি। কিন্তু কেন? এর উত্তরে প্রথমেই বলা যায়- এই দল সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ জানেনা। শুধুমাত্র হুজুরদের কথার উপর ভিত্তি করেই বিরোধিতা করে থাকে। তারা এটা দেখে না যে, কুরআন হাদিসের দৃষ্টিতে কোন ভুলটি তারা করছে। বাছ-বিচার না করে অন্ধভাবেই বিরোধিতা করে থাকে, যা কখনোই কাম্য নয়। আমি মনেকরি কোন দল সম্পর্কে না জেনে বিরোধিতা করা বা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের দালাল ট্যাগ দেওয়া একটি বড় ধরনের অপরাধ। আমার পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে এই দলটির যেমন প্রশংসনীয় কিছু দিক রয়েছে, তেমনি কিছু নিন্দনীয় দিকও রয়েছে। নিম্নে এ দুটি দিক নিয়েই আমি আলোচনা করবো। যদি কারও মনে হয় যে, আমার পর্যবেক্ষণে ভুল হয়েছে তবে আপনার অভিমতটি কমেন্টে সুন্দর ভাষায় লিখবেন। এই লেখার উদ্দেশ্য দুটি। প্রথম উদ্দেশ্য- সমালোচকেরা যেন এদের উদ্দেশ্য এবং দূর্বলতাগুলো জেনে সঠিকভাবে সমালোচনা করতে পারে। (তাছাড়া সাধারণ মানুষ যেন এই সংগঠনের প্রকৃত উদ্দেশ্য জানতে পারে এবং তাদের সঠিক দাবীটা বুঝতে পারে।) দ্বিতীয় উদ্দেশ্য- এই সংগঠনের দায়িত্বশীলগণ যেন তাদের ভুলগুলো চিহ্নিত করতে পারে এবং উপযুক্ত সংশোধন ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
নিম্নে আমার পর্যবেক্ষণের আলোকে হেজবুত তাওহীদের প্রশংসনীয় এবং নিন্দনীয় দিকগুলো তুলে ধরলাম:-
✅প্রশংসনিয় দিকসমূহ:✅
কুরআনকে একমাত্র সংবিধান হিসেবে গ্রহণ: সবচেয়ে গরুত্বপূর্ণ এবং বড় ব্যপারটি হলো দল হিসেবে তারা তাওহীদের নিগুঢ় সত্যটি বুঝতে পেরেছে। অথচ আজকের এই যামানায় ইসলামের নামধারী বড় বড় দলগুলো এবং কথিত পীরা-বুযুর্গ এবং ক্বওমী গড়নার আলেমগণ এই তাওহীদকে বুঝতে না পেরে মানব রচিত গণতন্ত্রের অনুসরণ করে আল্লাহর অবাধ্যতায় শামিল হয়েছে এবং সীমাহীন কষ্টের স্থান জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাওহীদ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এটাকে বুঝে-শুনে গ্রহণ না করলে কোন আমলই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। আরও স্পষ্ট করে বললে তাওহীদ মানা ছাড়া একজন মানুষ ঈমানদার বলেই গণ্য হবে না। আর এই তাওহীদের সরল কথা হচ্ছে- “আল্লাহর হুকুম বা বিধান ছাড়া আমি অন্য কারও বিধান মানিনা, মানবো না।”। যার আরবী হচ্ছে- “লা ইলাহা, ইল্লাল্লাহ”। যে বাক্যের প্রতি সকল নবী আহ্বান করেছেন। হিজবুত তাওহীদ এই তাওহীদকে ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং মানুষের সামনে এই আহ্বান বলিষ্ঠভাবে তোলে ধরতে পেরেছে। কিন্তু আজকের কথিত ইসলামী দলগুলো এবং ওলামা ও পীরগণ, আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে মানব রচিত সংবিধান তথা গণতন্ত্রের বিধান মেনে গণতন্ত্রের অনুকূলে দলগুলোকে সাজিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়, কিন্তু কুরআনের নির্দেশনা মেনে নয়! রাসূলের অনুসরণ করে নয়! গণতন্ত্রের ধারায় এবং গণতন্ত্রের আনুগত্য করে!! এক্ষেত্রে হেজবুত তাওহীদ তাদের থেকে আসমান সমান দূরত্বে এগিয়ে রয়েছে। অন্তত তারা তাওহীদে বিশ্বাস স্থাপন করে ঈমানদার হিসেবে গণ্য হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা একজন ঈমানদার ব্যক্তিকে ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিতে পারেন, যতবড় পাপীই হোক না কেন, যদি সে তাওহীদের সঠিক বিশ্বাস এবং স্বীকৃতি দিয়ে থাকে।
মানব রচিত সকল বিধানের ঘোর বিরোধী এবং এগুলোর অসাড়তা প্রমাণে সচেষ্ট: তাদের ভাষায় “মানবজাতির সম্মুখে দুইটি মাত্র পথ। একটি হোল, স্রষ্টার দেওয়া নিখুঁত ত্রুটিহীন জীবনব্যবস্থা যেটি মানবজীবনে, আমাদের জীবনে কার্য্যকরী কোরলে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, নিরাপত্তাহীনতা, অপরাধ, সংঘর্ষ, রক্তপাত প্রায় বিলুপ্ত হোয়ে নিরাপদ ও শান্তিময় জীবন আমরা পাবো। এই শান্তিময় অবস্থাটির নামই স্রষ্টা দিয়েছেন এসলাম, অর্থাৎ শান্তি।
দ্বিতীয় পথটি হোল, স্রষ্টার দেওয়া জীবনবিধান (দীন) প্রত্যাখ্যান কোরলে মানবজাতিকে অবশ্যই নিজেদের জীবনবিধান নিজেদেরই তৈরী কোরে নিতে হবে। কারণ যেমনটি পেছনে বোলে এসেছি, সামাজিক জীব মানুষের জীবনবিধান ছাড়া চলা অসম্ভব। স্বভাবতই এই জীবনবিধান নির্ভুল ও ত্রুটিহীন হওয়া সম্ভব নয়। যার ফলে সমাজ জীবনে নৈরাজ্য, অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, সংঘর্ষ, রক্তপাত, নিরাপত্তাহীনতা অবশ্যম্ভাবী হোয়ে পোড়বে। বর্তমানে মানবজাতি এই দ্বিতীয় পথটিকেই গ্রহণ কোরেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকমের জীবনবিধান দিয়ে তাদের জীবন পরিচালিত কোরছে এবং ফলে মানুষের জীবন অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, নিরাপত্তাহীনতা, অপরাধ, সংঘর্ষ, রক্তপাতে পরিপূর্ণ হোয়ে আছে।” (বইঃ হেজবুত তাওহীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, পৃষ্ঠাঃ৬)
প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষ ঈমানদার হতে চাইলে প্রথমে তাকে তাগুতকে তথা আল্লাহ ব্যতীত সকলের আইন অমান্য করতে হয়, যার আরবী স্বীকৃতি হলো, “লা-ইলাহা” অর্থাৎ “আমার কোন ইলাহ নেই, কোন বিধানদাতা নেই” তারপর তাকে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে হয়, যার আরবী স্বীকৃতি হলো, “ইল্লাল্লাহ” অর্থাৎ “আল্লাহ ছাড়া”। এ প্রসঙ্গে কুরআনের আয়াতগুলো লক্ষ্য করুন-
فَمَنۡ یَّكۡفُرۡ بِالطَّاغُوۡتِ وَ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَكَ بِالۡعُرۡوَۃِ الۡوُثۡقٰی ٭ لَا انۡفِصَامَ لَهَا ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ
সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করে, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করে, তাহলে সে এমন মজবুত হাতল ধরল যা কখনো ভাঙ্গবে না এবং আল্লাহতায়ালা হচ্ছে সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সুরা বাকারাহ- ২৫৬)।
সুরা নাহলে বর্নিত হয়েছে-
وَ لَقَدۡ بَعَثۡنَا فِیۡ كُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ وَ اجۡتَنِبُوا الطَّاغُوۡتَ
“নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসুল প্রেরণ করেছি, তারা যেন শুধু আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুতকে বর্জন করে।” (আয়াত-৩৬)।
وَ مَنۡ یَّبۡتَغِ غَیۡرَ الۡاِسۡلَامِ دِیۡنًا فَلَنۡ یُّقۡبَلَ مِنۡهُ ۚ وَ هُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ
“আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরাঃ আলে-ইমরান, আয়াতঃ ৮৫)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, وَ مَنۡ لَّمۡ یَحۡکُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡکٰفِرُوۡنَ “যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করেনা তারাই কাফের”। সূরাঃ আল মায়েদাহ (44)।
সুতরাং যারা পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর বিধানের অনুসরণ না করে গণতন্ত্র বা অন্য বিধানের অনুসরণ করবে তারা আল্লাহর বিধান মানার ক্ষেত্রে কুফরী করবে।
প্রচলিত ভুলের যৌক্তিক খন্ডন: তারা অনেকগুলো প্রচলিত ভুলের যৌক্তিক খন্ডন করতে পেরেছে। এর মধ্যে বড় একটি বিষয় হলো- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থের বিকৃতি। বর্তমানে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ করা হয়- “আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই” এই কথার মধ্যে বাঙ্গালী কোন উদ্দীপনা উপলব্ধি করতে পারে না। আর তাই বাংলার হিন্দুরাও এই বাক্যগুলো অবলিলায় পাঠ করে ফেলে। তারা প্রমাণ করতে পেরেছে যে, এই বাক্যটা একটা বিপ্লবী বাক্য এবং এই ঘোষণা দেয়া মানে জাতির বিরোধ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া। “আমি আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য কোন বিধান মানি না বা মানার যোগ্য বিবেচনা করি না।” তাছাড়া তারা প্রমান করেছে যে, সালাত নয়, জান্নাতের চাবি হলো তাওহীদ বা কালেমার ঘোষণা। তাছাড়া ছোটবড় আরও অনেক বিষয়ে প্রচতিল ভুল নিয়ে তারা কথা বলে থাকে।
শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো: তাদের সাংগঠনিক কাঠামো খুবই শক্তিশালী। এই সংগঠনের কর্মীরা খুবই সুশৃঙ্খল। এখানে অধস্তন কর্মীরা ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদেরকে আন্তরিকতার সাথে মেনে চলে। প্রাণবন্ত একটি সংগঠন এমনই হয়ে থাকে।
আর্থিক উন্নয়নে বাস্তবমূখী পদক্ষেপ: কর্মীদের আর্থিক উন্নয়নে এই সংগঠনের নেতাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ রয়েছে। তাদের মূলনীতি হলো এই সংগঠনের কর্মক্ষম কোন ব্যক্তি বসে না থেকে যেন কর্মে নিযুক্ত হয়। একটি সংগঠনের নিজস্ব আর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং নিজ কর্মীদের কর্ম সংস্থানের চিন্তা সংগঠনকে বাস্তবমুখী করে তোলে এবং এর ভিত্তিপ্রস্তর গভীর থেকে গভীরে প্রোথিত করতে সাহায্য করে।
শিক্ষায় গুরুত্ব প্রদান: শিক্ষাক্ষেত্রেও এদের বিভিন্ন কার্যক্রম প্রশংসার দাবীদার। তাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে কিছু স্কুল পরিচালিত হয়। এতেকরে বুঝা যায়, যুগের চাহিদার আলোকে সকল শাখায় তারা তাদের কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে আগ্রহী।
নিবেদিত প্রাণ কর্মী গঠন: এই সংগঠনের কর্মীগণ একেকজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। তাদের বিরোদ্ধে মানুষের এত এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এই সংগঠনটি তার কর্মীদেরকে অনুগত ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে।
❎নিন্দনীয় দিকসমূহ:❎
ইসলামী পরিভাষা উচ্চারণে ত্রিমুখী নীতি: যদি আপনাদেরকে প্রশ্ন করা হয় ইমামকে এমাম বলেন কেন? তখন উত্তরে বলেন আমরা বাঙ্গালী আর অতীতে এভাবেই লেখা হতো, একথা বলে আতীতে পড়ে থাকতে চান। আবার আপনারাই বলেন, ইসলামকে আমরা আধুনিক সময়ের উপযোগী করে মানুষের সামনে পেশ করছি। অথচ অতীতে এমাম, এসলাম ইত্যাদি লেখা হলেও বর্তমানে আরবী উচ্চারণের সাথে মিল রেখে ইমাম ও ইসলাম লেখা হচ্ছে। এটা ইতিবাচক। যদিও এখনো অনেক পরিভাষা আরবী উচ্চারণের সাথে মিল রেখে করা করা হচ্ছে না, সেগুলোকেও পরিবর্তন করা উচিত। যেমন- “এশা” এর পরিবর্তে “ইশা”, এবং “আলেম” এর পরিবর্তে বাংলায় “আলিম” লেখা উচিত। আবার আপনারা ‘ইসলাম’ শব্দটিকে কোথাও ‘এসলাম’ আবার কোথাও ‘ইসলাম’ লিখছেন। যেমন- একটি বইয়ের নাম দিয়েছেন- “এসলামের প্রকৃত রূপরেখা” আরেকটির নাম “ইসলামের প্রকৃত সালাহ”, আবার সংগঠনের নাম লিখেছেন “হেযবুত তাওহীদ” অথচ আরবি উচ্চারণের সাথে মিল রেখে লিখা উচিতি ছিল “হিজবুত তাওহীদ” অথবা বাংলা উচ্চারনে “হেজবুত তওহীদ”। আবার আধুনিক যুগে আপনাদের বইয়ের ভাষা এরকম- ‘মানুষের কাছে কাম্য “হোচ্ছে” এমন একটি জীবনব্যবস্থার মধ্যে সে বাস “কোরবে”’ (হেজবুত তাওহীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পৃষ্ঠাঃ৩)। বুঝিনা আপনাদের এত দ্বিধাদ্বন্দ কেন? আপনাদের তৃতীয় আরেক নীতি হলো ‘নামাজ’, ‘রোযা’ বলা যাবে না কারণ এগুলো কুরআনে নেই, এগুলো পার্শি বা ইরানী ভাষা (ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃষ্ঠঃ৫) ….. আমরা হেযবুত তওহীদ এই পার্শি শব্দগুলোর ব্যবহার ত্যাগ করে আল্লাহ কোর’আনে যে শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন সেই শব্দগুলো আবার চালু করার চেষ্টা করছি। (ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃষ্ঠাঃ ৭)। এখন প্রশ্ন হলো- “এসলাম”, “এমাম”, “মোমেন” শব্দগুলো কি কুরাআনের পরিভাষার বিকৃত উচ্চারণ নয়?
সালাতে বিকৃতি: আপনারা সালাতকে বলে থাকেন সেনাবাহিনীর সামরিক ট্রেনিং। জানিনা আপনারা এই দলীলটা কোথায় পেয়েছেন। আচ্ছা যদি এটাকে সামরিক ট্রেনিং বলা হয় তবে বাস্তব যুদ্ধে এই ট্রেনিং কি কি কাজে আসবে? এই ট্রেনিং এর মাধ্যমে কি কোন অস্ত্র চালনায় পারদর্শি হওয়া যায়? নাকি শারীরিক বড় কোন উন্নতি হয়, যা বর্তমান ডাক্তারী শাস্ত্র দ্বারা প্রমাণ করা যাবে? এই ট্রেনিংয়ে তো কোন লম্ফ, জম্পও করা হয় না এবং শরীরকে বিশেষ মোচর দেওয়াও হয় না! তাহলে কিভাবে একে সামরিক প্রশিক্ষণ বলছেন? সালাতের বিষয়ে কুরআনের অনেক আয়াত এবং বহু হাদিস বিদ্যমান আছে। যদি সালাতের মূল উদ্দেশ্য সামরিক প্রশিক্ষণ হতো তাহলে কেন কুরআন বা হাদিসের কোথাও সুষ্পষ্টভাবে একথা বলা হয়নি? বা এ বিষয়ে আপনাদের হাতে দলীল মজুত থাকলে তা জাতির সামনে পেশ করছেন না কেন?
যেখানে আল্লাহ তায়ালা সালাতে মুমিনদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত ও বিনয়াবনত হতে বলেছেন (সুরা মু’মিনুন, আয়াতঃ ২) সেখানে আপনারা সালাতকে প্যারেডে রূপান্তরিত করে নিয়েছেন। রাসূল (সাঃ) যখন কোন বিপদে পতিত হতেন তখন সালাতে দাড়িয়ে আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ জানাতেন। তাছাড়া আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং বলেছেন, ধৈর্য্য এবং সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইতে, সেই সালাতকে আপনারা বলছেন সামরিক প্যারেড? প্যারেড তো করা হয় শারীরিক সক্ষমতা ও শৃঙ্খলা অর্জনের জন্য, প্যারেডে কি বিনয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়?
তাছাড়া আপনাদের সালাতের ভিডিও দেখে খুবই হতাশ হয়েছি। যেখানে তাকবীরের উচ্চারণগুলোতে সাংঘাতিক ভুল ও ইচ্ছাকৃত বিকৃতি করেছেন। মাখরাজের ভাষায় যাকে বলা হয় “লাহনে জলি” বা বড় ভুল। যে ভুলে অর্থের বিকৃতি কুফুরির পর্যায়ে চলে যায়।
হেজবুত তাওহীদের সালাত প্রশিক্ষণের ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, সালাতের সময় ঘাড়কে সোজা রাখার জন্য তারা সরাসরি সামনের দিকে শুন্য বরাবর দৃষ্টি রাখে। অথচ হদিসে দৃষ্টিকে সিজদার স্থানের দিকে রাখতে বলা হয়েছে, যাতে মাথা কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে থাকবে। যেমন- আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
إنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه و سلم كانَ إِذَا صَلَّى، طَأْطَأَ رَأْسَهُ وَرَمَى بِبَصَرِهِ نَحْوَ الأَرْضِ
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন, তখন মাথাটা নিচু করে ঝুঁকিয়ে রাখতেন এবং দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন জমিনের দিকে”।
[মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস নং ১/৪৭৯। তিনি বলেন, হাদিসটি শাইখাইনের শর্ত অনুযায়ী বিশুদ্ধ। আল্লামা আলবানী রহ. হাদিসটির বিশুদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সহমত পোষণ করেন। পৃ: ৮৯।]
আপনাদের এই সামরিক সালাতে কি কান্নার স্থান আছে? অথচ রাসূল (সাঃ) ও তার সাহাবাগণ (রাঃ) সালাতে দাড়িয়ে কান্না করতেন। যেমন-আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে আয়েশা, ছাড়ো আমাকে, এই রাতটি রবের ইবাদতে কাটাব। নবীজি পবিত্রতা অর্জন করে নামাজে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন, কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কোল ভিজে যায়। তারপর আবার কাঁদতে লাগলেন, কাঁদতে কাঁদতে দাড়ি মোবারক ভিজে যায়। আয়েশা (রা.) বলেন, তারপর আবারও অনেক কাঁদলেন, এমনকি চোখের পানিতে জমিন সিক্ত হয়ে ওঠে। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৬২০)
আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলাম, তখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন, আর তাঁর ভেতর থেকে কান্নার এমন শব্দ বের হচ্ছে, যেন চুলায় রাখা পানির ডেকচি টগবগ করে ফুটছে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৯০৪)
তাছাড়া সরাসরি সহীহ হাদিসের বর্ণনানুযায়ী আপনাদের সালাতকে তুলনা করলে বহু রদবদল দেখা যায়। যেমন-সালাতে দাঁড়ালে মাঝখানে ফাঁকা না রাখার হাদিস, রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় হাত উত্তোলনের হাদিস, বৈঠকে শাহাত আঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করার হাদিস, আমীন জোরে বলার হাদিস ইত্যাদি। লেখার কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় হাদিসগুলো উল্লেখ করা হলো না।
***
আপনাদের এমামের আবিষ্কৃত সালাতের প্রকৃত উদ্দেশ্য:
আপনাদের এমাম “ইসলামের প্রকৃত সলাহ” বইয়ের ১৮নং পৃষ্ঠায় “সেই মহাগুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ হলো- সালাহ” অনুচ্ছেদে সালাতের খুটিনাটি বহু নিয়ম-কানুন হাদিস থেকে উত্থাপন করলেও সালাহ এর প্রকৃত উদ্দেশ্য যে সামরিক প্রশিক্ষণ সে বিষয়ে সরাসরি একটি আয়াত বা হাদিসও দেখাতে পারলেন না। সালাহ এর প্রকৃত উদ্দেশ্য যদি সামরিক প্রক্ষিণ হতো তাহলে কেন এ বিষয়ে সরাসরি কোন আয়াত বা হাদিস থাকবে না? আল্লাহ এবং তার রাসূল (সাঃ) সালাহ এর প্রকৃত উদ্দেশ্যটাই সুষ্পষ্ট করে বলবেন না এটা কি হতে পারে? লেখক বহু আলোচনার মাধ্যমে প্রমাণ করতে চাইলেন যে, সামরিক প্রশিক্ষণ আর সালাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিল রয়েছে। কিন্তু কথা হলো- মিল থাকলেই তো দু’টো জিনিস এক হয়ে যায় না! ধরুন একজন মুমিনের চেহারা ও কন্ঠের সাথে একজন কাফেরের চেহারা ও কণ্ঠ হুবুহু মিলে গেলো। এখন এই বাহ্যিক মিল থাকার কারণে কি মৃত্যুর পর তাদের পরিণতি একই হবে? নিশ্চয়ই না। অতএব, সালাতের নিয়মের সাথে সামরিক প্রশিক্ষণের যত মিলই থাকুক না কেন সালাতকে এজন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বলা যাবে না কারণ, আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) একথা আমাদরকে বলেননি। সালাতের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- “আমিই আল্লাহ্, আমি ছাড়া অন্য কোন হক্ব ইলাহ নেই। অতএব আমারই ইবাদাত করুন এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করুন।” (সূরা ত্বহা, আয়াতঃ১৪) অর্থাৎ সালাতের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো আল্লাহকে স্বরণ রাখা। কিন্তু হেজবুত তাওহিদের এমাম কুরআনে বর্ণিত সালাতের উদ্দেশ্য গ্রহণ না করে নিজের মনমতো সালাতের প্রকৃত উদ্দেশ্য বানিয়ে নিয়েছেন। এটা কি দ্বীনে বিকৃতি ঘটানোর মতো অপরাধ নয়?
পর্দায় বেপর্দা নীতি: আমি আপনাদের ওয়েসাইটে প্রদর্শিত “পর্দা প্রথার গোড়ার কথা” বইটি পড়ে বিস্মিত হয়েছি। কারণ এই বইয়ে পর্দার সামগ্রিক আলোচনা উপস্থাপন না করে শুধুমাত্র বেছে বেছে মুখ খোলা রাখার বর্ণনাগুলো একত্র করা হয়েছে। যেমন- উক্ত বইয়ের ১৬নং পৃষ্ঠায় সূরা আহযাবের ৫৯নং আয়াত উল্লেখ করেছেন, “হে নবী আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মো’মেনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে, ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না, আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” তারপর এর ব্যাখ্যায় বইয়ের ১৭নং পৃষ্ঠায় বলেছেন, ….তার সাথে আরো একটি বিষয় এ আয়াতে যুক্ত রয়েছে, সেটি হলো যা পরিধান করা হলে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে সে বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। এতে করে এটা সুস্পষ্ট হয় যে, নারীদেরকে মুখমণ্ডল ঢেকে রাখতে বলা হয়নি। কারণ মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা হলে চেনা সম্ভব না তা সাধারণ জ্ঞানে বোঝা যায়।…
এখানে আয়াতে উল্লিখিত “এতে তাদের চেনা সহজ হবে” কথার ভুল অর্থ আপনি গ্রহণ করেছেন। আপনি মনে করেছেন তাদের মুখ দেখে ব্যক্তিকে চেনার কথা বলা হয়েছে, যা মোটেও সঠিক নয়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- অন্যান্য ধর্মের হাজারও পর্দাহীন নারীদের ভীড়ে একজন মুসলিম নারীকে তার পর্দার জন্য আলাদা করে চেনা সহজ হবে। আর এই পর্দার কারনে সে উত্যক্তও হবে না।
“তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়।” আয়াতের এ অংশের ব্যাখ্যায় লেখক বলেছেন, “এ আয়াতে আল্লাহ নারীদেরকে চাদর বা ওড়নার মতো একটি বাড়তি বস্ত্রখণ্ড দিয়ে নিজেদেরকে শালীনভাবে আবৃত্ত করার জন্য বললেন যেন তাদের দ্বারা যৌন আবেদন সৃষ্টি না হয়”
অথচ আল্লাহ বলেছেন “তাদের চাদরের কিয়দাংশ” অর্থাৎ যে চাদর তারা ইতিপূর্বে মাথা ঢাকার জন্য পরিধান করতো তারই কিয়দাংশ। এ বিষয়ে আলেমগনের ব্যাখ্যা হলো- নিজের উপর চাদরকে নিকটবর্তী করার অর্থ চাদরকে মস্তকের উপরদিক থেকে লটকানো। সুতরাং চেহারা, মাথা ও বুক ঢেকে রাখা যায় এমন চাদর পরিধান করা উচিত। [রেফারেন্সঃ https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=3592]
তারপর বইয়ের ১৭-১৮নং পৃষ্ঠায় সূরা নূরের ৩১নং আয়াতের উদৃতি উল্লেখ করেছেন-“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতু¯পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মো’মেনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যেন তোমরা সফলকাম হও।”
তারপর এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বললেন- “অর্থাৎ নারীরা তাদের সাধারণ প্রকাশমান অঙ্গগুলোকে উন্মুক্ত রাখতে পারেন।” এখানে প্রশ্ন হলো নারীদের স্বাভাবিক প্রকাশমান অঙ্গ কতটুকু্? অথবা অঙ্গগুলো কী কী? কারণ একজন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া নারী যতটুকু স্বাভাবিক প্রকাশমান অঙ্গ মনে করে ততটুকুই সে উন্মুক্ত রাখে আবার মাদরাসা পড়ুয়া নারীদের স্বাভাবিক প্রকাশমান অঙ্গগুলোও এক নয়। তাছাড়া একজন বাঙ্গালী নারীর স্বাভাবিক প্রকাশমান অঙ্গ আর একজন আমেরিকান নারীর স্বাভাবিক প্রকাশমান অঙ্গ এক নয়। সর্বোপরি আপনাদের প্রোগ্রামের ভিডিওগুলোতে দেখানো মহিলাদের দৃষ্টিভঙ্গিও ভীন্ন ভীন্ন দেখা যায়। যেমন- কারও মুখ ঢাকা, কেউ কেউ মাথাসহ মুখ খোলা রেখেছে, আবার কারও হাত কনুই এর উপর পর্যন্ত খোলা এবং কারও কারও বুকে পর্যাপ্ত কাপড় নেই।
তাহলে স্বাভাবিক প্রকাশমান অঙ্গের স্বীমানা কী? আবার উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা যে নারীদের লজ্জাস্থান ঢেকে রাখতে বললেন সেই লজ্জাস্থানের পরিধিই বা কতটুকু?
এর পরের কয়েকটি বাক্যে বলেছেন- “চেনার জন্য মুখ খোলা রাখা, খাওয়ার জন্য, শ্বাস গ্রহণের জন্য নাক মুখখোলা রাখা, কাজ করার জন্য হাত ও হাঁটার জন্য পায়ের প্রয়োজনীয় অংশ খোলা রাখা কি স্বাভাবিক নয়? এসব ঢেকে রাখা কি অসুবিধাজনক নয়?”
তারপর আল্লাহ তায়ালার শানে বেয়াদবী করে তার প্রতি সীমাবদ্ধতা আরোপ করে বলেছেন, “তাই আল্লাহ এসব ঢাকতে বলতে পারেন না, বললে সেটা অপ্রাকৃতিক হত।” মনেহয় আল্লাহ তায়ালা কি বলতে পারবেন না-পারবেন তা আপনার কাছ থেকে জানতে হবে। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)
আচ্ছা মুখ ঢেকে রাখা যদি এতই অসুবিধার কাজ হয় এবং নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ডাক্তারগণ অপারেশনের সময় ঘন্টার পর ঘন্টা মুখ ঢেকে রেখে বেঁচে ফেরে কিভাবে? তাছাড়া খাওয়া দাওয়ার যে প্রসঙ্গ টানলেন, নারীরা কি বাইরে গিয়ে হেটে চলে খাবার খাবে নাকি যে, সেসময় পর্দা করলে খাবার খেতে অসুবিধা হবে? পর্দার বিধান তো শুধুমাত্র বাহিরে অবস্থানের সময়টুকুর জন্য, ঘরের মধ্যে তো এগুলো ঢেকে রাখার কথা কেউ বলেনি।
সামান্য পর্দার বেলাতেই যদি বলেন, “আল্লাহ এসব ঢাকতে বলতে পারেন না, বললে সেটা অপ্রাকৃতিক হত।” তাহলে কনকনে শীতের ভোরে আরামের ঘুম ভেঙ্গে ঠান্ডা পানি দিয়ে অযু করে ফজরের সালাত পড়তে বললে কোন যুক্তিতে আপনাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলতে পারবেন কী?
“এসব ঢেকে রাখা কি অসুবিধাজনক নয়?” বাহ! খুব সুন্দর প্রশ্ন। যখন তারা হাত মুখ খোলা শুরু করবে তখন তসলিমা নাসরিনের মতো প্রশ্ন করবেন- “গরম কালে পুরুষেরা ইচ্ছা করলেই মানুষের সামনে তাদের শার্ট খোলে ফেলতে পারে, কিন্তু মহিলারা খুলতে গেলে সমাজ মেনে নিতে চায় না, এটা কি বৈষম্য নয়?” এভাবেই আপনারা ইসলাম কায়েমের পথ পরিষ্কার করবেন!
হেযাবের হাদিস সম্পর্কে আপনাদের আলোচনা: উক্ত বইয়ের ১৯নং পৃষ্ঠায় “হেযাব সম্পর্কে হাদিস যা বলে?” অনুচ্ছেদের অংশবিশেষ (১নং পয়েন্ট সম্পূর্ণ) এরূপ-
… এবার সহীহ হাদিসগ্রন্থগুলো থেকে জানার চেষ্টা করা যাক রসুলাল্লাহ (সা.) ও খুলাফায়ে রাশেদুনদের যুগের মো’মেন নারীরা কীভাবে হেযাব করতেন।
১. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে নাসাঈ বর্ণনা করছেন যে, বিদায় হজের প্রাক্কালে রসুল (সা.) এর উটে সহযাত্রী হিসাবে (তাঁর ভাই) ফজল বিন আব্বাস (রা.) ছিলেন। এ সময় ক্বাথ’আম গোত্রের এক রূপসী তরুণী রসুল (সা.)—কে কোনো এক বিষয়ে প্রশ্ন করে, তখন সেই রূপসী তরুণীর দিকে ফজল বিন আব্বাস (রা.) তাকিয়ে ছিলেন। তখন রসুল (সা.) তাঁর মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন।(বুখারি, হাদিস নং— ১৫১৩; মুসলিম, হাদিস নং— ১৩৩৪; আবু দাউদ, হাদিস নং১৮১১; নাসাঈ, হাদিস নং— ২৬১৩)
এ প্রসঙ্গে আলী (রা.) এর বরাত দিয়ে তিরমিজি জানাচ্ছেন যে, ঐ সময় ফজল বিন আব্বাস (রা.) এর মুখ কেন ঘুরিয়ে দিচ্ছেন তা জানতে চেয়ে তাঁর বাবা আব্বাস (রা.) রসুল (সা.)—কে প্রশ্ন করেন—“ইয়া রসুলুল্লাহ, আপনি কেন আপনার ভাতিজার মুখ ঘুরিয়ে দিলেন?” উত্তরে রসুল (সা.) জানান—“তিনি আশঙ্কা করছেন যে, এ তরুণ—তরুণীর কারো মনে শয়তানের কুভাব প্রকাশ হতে পারে, তাই তিনি ফজলের মুখ ঘুরিয়ে দিয়েছেন।”
বহুবিদ্যা বিশারদ শাওক্বানী (রা.) বলেন যে— ইবনুল আল ক্বাতান (রা.) উপরের ঘটনা থেকে সিদ্ধান্ত নেন যে, মহিলাদের মুখের দিকে তাকানো বৈধ হবে, যদি যৌন আকাঙ্ক্ষার কোনো সম্ভাবনা না থাকে। এখানে লক্ষ করার বিষয় হলো—
(ক) যদি নারীদের মুখ দেখা নিষিদ্ধ হত তাহলে এত জনসমাগমের সামনে ফজল ইবনে আব্বাস (রা.) মহিলাটির দিকে তাকাতেন না।
(খ) যদি নারীদের মুখ দেখা নিষিদ্ধ হতো তাহলে ফজল ইবনে আব্বাস (রা.) এর পিতা আব্বাস (রা.) রসুল (সা.) কর্তৃক ফজল ইবনে আব্বাস (রা.) মুখ ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ কী তা জানার জন্য প্রশ্ন করতেন না।
(গ) যদি নারীদের মুখ ঢাকার নির্দেশ থাকত তাহলে রসুল ঐ সময় ঐ ক্বাথ’আম গোত্রের মহিলাকে কোনো কিছু দিয়ে তাঁর মুখমণ্ডল ঢাকতে নির্দেশ দিতেন।…
উল্লিখিত হাদিসের আলোকে আপনাদের বিশ্লেষণের ভুলগুলো: উল্লিখিত আলোচনায় আপনারা প্রমাণ করতে চেষ্টা করলেন যে, নারীরা মুখ খোলা রাখতে পারবে। কিন্তু আপনাদের মাথায় কেন এটা আসলো না যে, নারীর মুখ খোলা থাকায় স্বয়ং রাসূল (সাঃ) তার একজন সাহাবীর মনে শয়তানের কুপ্রভাব আশংকা করলেন, কিন্তু আপনারা আপনাদের কর্মীদের বিষয়ে শংকিত নন! তাহলে কি এটাই প্রমাণ করতে চাইছেন যে, আপনাদের কর্মীদের ঈমান সাহাবাদের চেয়েও উন্নত হয়ে হয়ে গেছে, যেকারনে আপনাদের পুরুষ কর্মীরা সুন্দরী নারীর দিকে তাকালে বিভ্রান্ত হবে না? তাছাড়া ইবনুল আল ক্বাতান এর শর্ত অনুযায়ী কে যৌন উত্তেজনা অনুভব করবে আর কে করবে না এটা নির্ণয়ের মাপকাঠি কি আপনাদের হাতে আছে?
পর্দা সংক্রান্ত কিছু হাদিস: (আপনাদের পছন্দের বিপরীতে)
আসুন এখন পর্দা নিয়ে আপনাদের উত্থাপিত দলীলের বিপরীতে কিছু হাদিস দেখে নেয়া যাক-
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে। (সহীহ বুখারী ৪/৬৩, হাদীস : ১৮৩৮)
চিন্তা করে দেখুন, যদি সাধারণ অবস্থায় নারীরা নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না-ই করতো তবে ইহরামের জন্য নিষেধ করার অর্থ কি? তাহলে ঘটনা কি এই নয় যে, ইহরামের বাইরে মহিলারা নিকাব এবং হাতমোজা পরিধান করতো!
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত কাপড় ঝুলিয়ে রাখে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। তখন উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে মহিলারা তাদের কাপড়ের ঝুল কীভাবে রাখবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক বিঘত ঝুলিয়ে রাখবে। উম্মে সালামা বললেন, এতে তো তাদের পা অনাবৃত থাকবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে এক হাত ঝুলিয়ে রাখবে, এর বেশি নয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪১১৭; জামে তিরমিযী ৪/২২৩; সুনানে নাসাঈ ৮/২০৯; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১১/৮২
খেয়াল করুন, নারীদের পা যেন ঢেকে থাকে এজন্য তারা পায়ের চেয়ে একহাত বেশি কাপড় ঝুলিয়ে দেবে। যদি পা ঢাকার বিষয়ে এই অবস্থা হয় তাহলে কি মুখ খোলা রাখবে?
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম তখন আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা অতিক্রম করত। তারা যখন আমাদের সামনাসামনি চলে আসত তখন আমাদের সকলেই চেহারার ওপর ওড়না টেনে দিতাম। তারা চলে গেলে আবার তা সরিয়ে নিতাম।-মুসনাদে আহমাদ ৬/৩০; ইবনে মাজাহ
আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, আমরা পুরুষদের সামনে মুখমন্ডল আবৃত করে রাখতাম। ...-মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৫৪
ফাতিমা বিনতে মুনযির রাহ. বলেন, আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রা.-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখতাম।-মুয়াত্তা, ইমাম মালেক ১/৩২৮; মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৫৪
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, একজন মহিলা পর্দার পিছন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে একটি কাগজ দিতে চাইল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাত গুটিয়ে নিলেন (কাগজটি নিলেন না এবং) বললেন, আমি জানি না, এটা কি পুরুষের হাত না নারীর। মহিলা আরজ করলেন, ‘নারীর হাত।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি যদি নারী হতে তাহলে নিশ্চয়ই নখে মেহেদী থাকত।’-সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসায়ী
চিন্তা করুন, যদি মহিলাটি মুখ খোলা রেখে পর্দা করতো তবে কি তিনি তাকে চিনতেন না, সে মহিলা না পুরুষ?
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভাষণে বলতে শুনেছি, কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে মাহরাম ব্যক্তি ছাড়া নির্জনে অবস্থান করবে না। এবং কোনো নারী মাহরাম ছাড়া সফর করবে না।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩০২৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৪১।
এখন প্রশ্ন হলো- আপনাদের অনুষ্ঠানে যে সমস্ত মহিলারা উপস্থিত হয় তাদেরকে কি আপনারা মাহরামসহ মিটিং-এ আসার নির্দেশ দেন?
একমাত্র হকের দাবীদার ও জান্নাতের গ্যারান্টিদাতা: আপনাদের বিভিন্ন বক্তব্যে আপনারা দাবী করে থাকেন যে, এই যুগে একমাত্র হকের দল আপনারাই। আমি প্রশ্ন করতে চাই, আপনারা কি দুনিয়ার সব কয়টি দেশের সব কয়টি ইসলামী দল পর্যবেক্ষণ করে এই কথা বলছেন? কেননা আপনাদের এই সংগঠনের ব্যাপারে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া যেমন তেমন কোন দেশ জানে না এবং আপনাদের পক্ষেও সকল দেশের ছোট-বড় সকল দলের লক্ষ্য উদ্দেশ্য জানা এবং তাদেরকে হক বা বাতিল হিসেবে চিহ্নিত করার ক্ষমতা থাকার কথা নয়। তাছাড়া আল্লাহ তায়ালা কি আপনাদেরকে হকের ডিলারশীপ প্রদান করেছেন? কেননা নবী রাসূলগণ ছাড়া কেউ ভুলের উর্ধ্বে নয় এবং শতভাগ গ্যারান্টি দেওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। হাদিসের ভাষায়- ভয় এবং আশার মাঝেই ঈমান। তাছাড়া ইউটিউবে “হেযবুত তওহীদ সঠিক পথে আছে তার প্রমাণ কী” শীর্ষক প্রশ্নের উত্তরে আপনাদের বর্তমান এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বললেন যে, “দেখুন, আমার জানামতে হেজবুত তাওহীদ ছাড়া সারা পৃথিবীতে শুধুমাত্র তাওহীদের দিকে ডাক দেওয়ার আর কোন সংগঠন আমার নজরে এ পর্যন্ত আসে নাই।” প্রশ্ন হলো- আপনার নজরে আসেনি বলেই কি পৃথিবীতে এমন দল থাকবে না? অথবা আপনি দেখেননি বলেই কি একথা বলতে পারেন যে, হেজবুত তাওহীদই একমাত্র এবং শুধুমাত্র হকের দল? তাহলে দেখে নিন আমরাও নির্ভেজাল তাওহীদের প্রতি মানুষকে আহ্বান করছি “ইসলামী সমাজ” নামক সংগঠনের মাধ্যমে (ওয়েব এড্রেস: https://islamisomaj.com)। তবে আপনাদের মতো ইসলামের বিভিন্ন বিধানের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে নয়।
তিলাওয়াতে অশুদ্ধ ও বিদ্রোহাত্মক অবস্থান: হেযবুত তাওহীদের এমামকে সহীহ কুরআন শিক্ষার পরামর্শ দিলে তিনি উল্টো আজগুবী এক অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন- এখন কি শিশুদের মতো “আলহাম, আলহাম” বলে মশক করার সময় আছে? এভাবে সহীহ কুরআন শিখতেই তো ২০-২২ বছর লেগে যায়! তার এই দাবীটি কি সঠিক? কুরআন সহীহ করে শিখতে কি ২০-২২ বছর সময় লাগে? বাস্তবতা হলো একজন সচেতন মানুষ সহীহ কুরআন শিক্ষা করতে বড়জোড় দুই থেকে তিন মাস সময়ই যথেষ্ট। আপনি সারা জীবন কুরআনের আন্দোলন করতে পারবেন কিন্তু মাত্র দুই থেকে তিন মাস কাজের ফাঁকে ফাঁকে সহীহ কুরআন শিখতে পারবেন না, এটা কেমন কথা? তাছাড়া তারতীল সহকারে কুরআন তিলাওয়াত করার বিষয়ে তো আল্লাহ তায়ালাই আদেশ করেছেন। (সূরাঃ আল-মুযযাম্মিল, আয়াতঃ৪)
অতি প্রতিক্রিয়াশীল: আল্লাহ তায়ালা দ্বীনের দাওয়াত দিতে হিকমাহ ও উত্তম পন্থা অবলম্বন করতে বলেছেন। যারা ঝগড়া বাধাতে চায় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে মূর্খ আখ্যায়িত করেছেন এবং তাদেরকে সালাম দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে বলেছেন। কিন্তু আপনাদের অবস্থা দেখায় যায় ভিন্ন। আপনাদের নিয়ে কেউ কোন উক্তি করলে তার বিরুদ্ধে যুক্তি প্রমাণ নিয়ে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে উঠেপড়ে লেগে যান। আর আলেমদেরকে কথায় কথায় ধর্ম ব্যবসায়ী বলে উস্কানী দেন। এটা কি দায়ীর কাজ?
নিজস্ব নীতির প্রচারে গুরুত্বের অভাব: আপনাদের এমন কোন বক্তব্য আমি শুনিনি যেখানে শুধুমাত্র নিজেদের নীতির দিকে মানুষকে আহ্বান করতে। আপনাদের বক্তব্যের উদ্দেশ্যই দাঁড়িয়েছে যুক্তি প্রমাণ দিয়ে অপরের মুখ বন্ধ করতে। কিন্তু এতেকরে কি মানুষের মুখ বন্ধ হবে? নাকি আরও বৃদ্ধি পাবে? আমার মনেহয় অপরের সমালোচনা গায়ে না মেখে নিজস্ব নীতির প্রচারে একনিষ্ঠ হওয়া জরুরুী।
দাজ্জাল সম্পর্কে অদ্ভুত ধারণা: দাজ্জাল সম্পর্কে তারা একটি অদ্ভুত এবং সম্পূর্ণ নতুন ধারণা তৈরি করেছে। তাদের মতে ইহুদী-খ্রিষ্টান সভ্যতাই হলো রাসূল (সাঃ) বর্ণিত দাজ্জাল । তারা বলেন, রাসূল (সাঃ) বর্ণিত “ব্যক্তি” দাজ্জাল হলো রূপক বর্ণনা, যা দ্বারা তিনি এই গণতন্ত্র নামক শাসন ব্যবস্থাকেই বুঝাতে চেয়েছেন।
সেলিম সাহেব বলেন রাজা অষ্টম হেনরী যখন মানুষের তৈরি গণতন্ত্রের ঘোষণা দেয় সেই ঘোষণার মাধ্যমেই দাজ্জালের জন্ম হয়। তাছাড়া এই দাজ্জাল মুসলিমদেরকে শুধু কষ্ট দেয়। ইরাকে অবরোধ করে শিশুখাদ্যের সংকট তৈরি করে ৭০ লক্ষ্য মুসলিম সন্তানকে হত্যা করে। প্রশ্ন হলো সাদ্দাম কি তাহলে প্রকৃত মুসলিম ছিল? সে তো গণতন্ত্রের অনুসারীই ছিল? তাহলে মুসলিমদের উদাহরণে সাদ্দাম হোসেনের রেফারেন্স আনা হলো কেন? তাকে তো তাদের অনুসারী হিসেবে দুনিয়াবী সাফল্য দেওয়ার কথা ছিল? দ্বিতীয়ত সভ্যতার কি নিজস্ব কোন অনুভূতি আছে? তাহলে সভ্যতার দোষ কেন? কেন মানুষের নয়? তৃতীয়ত হাদিসে বলা হয়েছে দাজ্জালের জন্য ইহুদীরা অপেক্ষায় থাকবে দাজ্জালের আবির্ভাবের পর সত্তর হাজার ইহুদী দাজ্জালের নেতৃত্ব মেনে নেবে। এটা কি সভ্যতার নেতৃত্ব মেনে নেবে বুঝায়? চতুর্থত ঈসা (আঃ) এর নিশ্বাসে যদি কাফেররা মারা যায় এবং তার নিঃশ্বাস যদি দৃষ্টি সীমা পর্যন্ত পৌছায় তবে কাফেরগণ ব্যতীত সভ্যতা কী করে তার সাথে যুদ্ধ করবে?
একটি হাদিস খেয়াল করুন, রাসূল (সাঃ) দাজ্জালের দৈহিক গঠন বর্ণনা করে বলেন, দাজ্জাল হবে বৃহদাকার একজন যুবক পুরুষ, শরীরের রং হবে লাল, বেঁটে, মাথার চুল হবে কোঁকড়া, কপাল হবে উঁচু, বক্ষ হবে প্রশস্ত, চক্ষু হবে টেরা এবং আঙ্গুর ফলের মত উঁচু। (বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান) দাজ্জাল নির্বংশ হবে। তার কোন সন্তান থাকবেনা’’। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)
এখন বলুন, সভ্যতার কি দৈহিক গঠন হয়? সভ্যতা কি পুরুষ বা মহিলা হয়, তার শরীরে রং বর্ণনা করা যায়, সভ্যতা কি বেঁটে হয়? তার মাথার চুল কি কোঁকড়া হয়, তার কপাল কি উঁচু বা নিচু হয়, বক্ষ কি প্রশস্ত হয়? বিষয়টা হাস্যকর নয় কি? আপনাদের দেয়া চক্ষুর কাল্পনিক ব্যাখ্যার সাথে তাহলে এগুলোর ব্যাখ্যাও জাতির সামনে পেশ করুন।
মূলত দাজ্জাল ব্যক্তিই হবে এবং সে আজব কিছু ঘটনা ঘটাতে পারবে, তা না হলে এমনিতেই কি মানুষ তাকে রব বলে মেনে নেবে? সে মানুষকে মেরে আবার তাকে জীবিত করতে পারবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ দাজ্জাল মানুষের কাছে গিয়ে বলবেঃ আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত করে দেখাই তাহলে কি তুমি আমাকে প্রভু হিসেবে মানবে? সে বলবে অবশ্যই মানব। এ সুযোগে শয়তান তার পিতা-মাতার আকৃতি ধরে সন্তানকে বলবেঃ হে সন্তান! তুমি তার অনুসরণ কর। সে তোমার প্রতিপালক’’। (সহীহুল জামে আস্-সাগীর, হাদীছ নং-৭৭৫২)
খেয়াল করুন, সভ্যতা কি মানুষের সাথে কথা বলতে পারে? তাছাড়া বর্তমান সভ্যতার কোন ধারক বাহক কি কাউকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করতে পেরেছে? কিংবা সন্তানের সামনে মৃত বাবা-মা কে হাজির করার মতো কিছু করে দেখাতে পেরেছে?
পৃথিবীতে দাজ্জালের অবস্থানের সময় সীমা:
সাহাবীগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছেন দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে? উত্তরে তিনি বলেছেনঃ সে চল্লিশ দিন অবস্থান করবে। প্রথম দিনটি হবে এক বছরের মত লম্বা। দ্বিতীয় দিনটি হবে এক মাসের মত। তৃতীয় দিনটি হবে এক সপ্তাহের মত। আর বাকী দিনগুলো দুনিয়ার স্বাভাবিক দিনের মতই হবে। আমরা বললামঃ যে দিনটি এক বছরের মত দীর্ঘ হবে সে দিন কি এক দিনের নামাযই যথেষ্ট হবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ না; বরং তোমরা অনুমান করে সময় নির্ধারণ করে নামায পড়বে। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।)
এখন বলুন তো? আপনাদের কথিত দাজ্জালের জন্মের দিনটি কি এক বছরের সমান ছিল? সুতরাং প্রমাণ হলো যে, দাজ্জালের আগমন এখনো হয়নি।
দ্বীনী দায়িত্ব পালনের জন্য বিনিময় গ্রহণ সম্পর্কে হেজবুত তাওহীদের বক্তব্য: হেজবুত তাওহীদের বক্তারা বলে থাকে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোন বিনিময় নেওয়া যাবে না। তাই তাদেরর কর্মীদের বলতে শুনা যায়, যে ইমাম টাকা নিয়ে সালাত পড়ায় তাদের পিছনে সালাত পড়বে না। প্রশ্ন হলো- তাহলে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করে বিনিময় গ্রহণ কি হারাম? ইসলামে হালাল ও হারম সম্পর্কে সুষ্পষ্ট বিধি বিধান রয়েছে। তন্মধ্যে হালালগুলোকে আল্লাহ তায়ালা ব্যাপকভাবে বর্ণনা করলেও হারমগুলোকে গুনে গুনে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া হালাল-হারামের বিষয়ে অসংখ্য হাদিসও বিদ্যমান রয়েছে। এখন তারা যে বলছে, দ্বীনী দায়িত্ব পালন করে তার বিনিময় নেওয়া যাবে না অর্থাৎ এটা হারাম, এর পক্ষে কি কোন দলীল দেখাতে পেরেছে? অথচ ইতিহাস স্বাক্ষী যে, হযরত আবু বকর (রাঃ) থেকে শুরু করে সকল খোলাফায়ে রাশেদীন এবং তাদের অধীনস্ত সকল গভর্নরগণ ভাতা গ্রহণ করতেন।
এ নিয়ে আমার ব্যক্তিগত চিন্তা-গবেষণায় মনে হয়েছে, যে সকল বিষয় ইসলাম ব্যক্তিগতভাবে পালন করতে বলেছে তা পালনে বিনিময় গ্রহণের সুযোগ নেই। যেমন- ব্যক্তিগত সালাত আদায়, সাওম পালন, কুরআন শিক্ষা করা ইত্যাদি। তবে একজন স্বাধীন ব্যক্তি যে কি-না প্রতিদিন একই মসজিদে ইমামতি করতে বাধ্য নয়, কিন্তু সমাজ বা রাষ্ট্র তাকে বাধ্য করে, খিলাফতের আমীর হতে ইসলাম তাকে বাধ্য করেনি, কিন্তু ঐ সমাজ বা রাষ্ট্র তাকে ঐ দায়িত্ব অর্পন করে তখন তার ব্যক্তি ও পরিবার চালানোর জন্য ঐ সমাজ বা রাষ্ট্র তাকে বিনিময় বা ভাতা দিতে বাধ্য। আবার যদি ঐ দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে এমন অল্পমূল্য দেওয়া হয় যার দ্বারা তার সংসার চলে না তখন তার জন্য দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার অধিকার রয়েছে বলে আমি মনেকরি। তাই তার একথা বলার অধিকার আছে যে, এত না হলে আমি এই দায়িত্ব পালন করতে পারবো না, অথবা অন্য কাওকে দায়িত্ব দিয়ে দিন। যেমন- কোন সমাজের পক্ষ থেকে যদি একজন ইমাম নিযুক্ত করে তাকে বেতন না দিয়ে বলে যে, ইসলামের জন্য সওয়াবের আশায় আপনাকে এই দায়িত্ব পালন করতেই হবে। তাহলে আমার মতেে এটা অন্যায় হবে। আবার যদি তাকে রিজিক তালাশের অন্য কোন সুযোগ অথবা পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে মাস শেষে একশত টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয় তবে সেটাও আমার মতে অন্যায় হবে। সুতরাং সমাজ বা রাষ্ট্র যদি কোন ব্যক্তিকে এমন দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়, যে দায়িত্ব পালনে সরাসরি ইসলাম তাকে বাধ্য করেনি, তখন তার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতা দাবী করার অথবা এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে। যদি আমার বিশ্লেষণে ভুল থাকে তাহলে নৈতিক পরামর্শ আহ্বান করছি।
শেষকথাঃ সবশেষ বলব, আপনারা আলেমগণের প্রতি যে অভিযোগ করে বলেন, আলেমরা দ্বীনের মধ্যে অতি বিশ্লেষণ করে সহজ-সরল দ্বীনকে কঠিন করে ফেলেছে। ঠিক সেই অভিযোগটি আপনাদের উপরও বর্তায়। কেননা অতি বিশ্লেষণ করে আপনারা সালাতকে সামরিক ট্রেনিং বানিয়েছেন, পর্দাকে বেপর্দায় পৌছে দিয়েছেন, কুরআনের শাব্দিক উচ্চারণে বিকৃতির খেলায় মেতেছেন এবং দাজ্জালকে মানুষ থেকে সভ্যতা বানিয়ে দিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন