সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ২য় শ্রেণির পদমর্যাদা প্রদান ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রীর সমীপে-
স্মারকলিপি |
[নতুন পেজ]
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
শিক্ষকের মর্যাদার জয় হোক
বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোট
তারিখঃ ১৭/১০/২০১৮ইং
বরাবর,
মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
বিষয়ঃ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদের ২য় শ্রেণির পদমর্যাদাসহ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকের বেতন স্কেল নির্ধারণ প্রসঙ্গে।
জনাব,
অমিত সম্ভাবনাময়ী আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে এনে দিয়েছেন স্বাধীন ভূখন্ড, পতাকা ও সার্বভৌমত্ব। আমরা প্রাথমিক বিদ্যলয়ের সহকারী শিক্ষকগণ চিরকাল শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করি সেই মহা নায়কের নাম যিনি ১৯৭৩ সালে একটি ঘোষণার মাধ্যমে ৩৬,১৬৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের মাধ্যমে আমাদেরকে দিয়েছেন সরকারি কর্মচারির পদমর্যাদা ও আত্মমর্যাদা। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার ২০১৩ সালে ২৬,২০০ এর অধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছেন। এরই অংশীদার বর্তমানে সংসদে বিরোধী দল।
বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার শিক্ষার উন্নয়নে অনবরত অবদান রেখে চলেছে। উলেখ করা যেতে পারে ১ জানুয়ারি তারিখে বিনা মূল্যে বই বিতরণ, উপবৃত্তি সংখ্য বৃদ্ধিকরণ, প্রতিটি গ্রামে একটি করে বিদ্যালয় স্থাপন, প্রতিটি বিদ্যালয়ে কমপক্ষে একটি করে পাকা ভবন নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, এমএলএসএস নিয়োগ, স্টুডেন্ট কাউন্সিল পবর্তন, স্লিপ কমিটির মাধ্যমে অর্থ বরাদ্ধ এগুলো সবই বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ যা প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে অভাবনীয় ভূমিকা রাখছে। যার অংশীদার বর্তমানে সংসদে বিরোধী দল।
জাতি গঠনের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের জীবনমান ও আত্মর্যাদা বৃদ্ধিকল্পে বর্তমান সরকার এদেশের প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ সহকারি শিক্ষকের প্রাণের দাবি আমাদের পদমর্যাদা ২য় শ্রেণিতে উন্নীতকরণসহ যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়ন করা হোক। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণ ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী হওয়ার কারণে সমাজে বৈষম্যের শিকার হই।
১৯৭৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণের পরবর্তীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের মাঝে বেতনের কোন ব্যবধান ছিল না। প্রধান শিক্ষকরা কার্য্যভার ভাতা হিসাবে ১০ টাকা বেশি পেতেন ।১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বেতন পেতেন ১৬ তম গ্রেডে ৭৫০ টাকা এবং একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক বেতন পেতেন ১৭ তম গ্রেডে ৬৫০ টাকা। ব্যবধান ছিল ১০০ টাকা। ২০০৬ সাল পর্যন্ত একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ১৬ তম গ্রেডে ৩,১০০ টাকা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক ১৭ তম গ্রেডে ৩০০০ টাকা বেতন পেতেন। ব্যবধান ১০০ টাকাই ছিল। কিন্তু ২৯ আগষ্ট ২০০৬ সালে বেতন আপগ্রেডের নামে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ১৩ তম গ্রেডে ৩,৫০০ টাকা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষকদের ১৫ তম গ্রেডে ৩,১০০ টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয়। এই সময় দুই ধাপ বেতন বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। ২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন সরকার প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ও পদমর্যাদা বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। তখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল নির্ধারণ করা হয় ২য় শ্রেণির পদমর্যাদাসহ ১১ তম গ্রেডে ৬,৪০০ টাকা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষকের বেতন স্কেল নির্ধারণ করা হয় ৩য় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে ১৪ তম গ্রেডে ৫,২০০ টাকা। ৩য় শ্রেণি থেকে প্রধান শিক্ষকগণ ২য় শ্রেণিতে উন্নতি হলেও সহকারি শিক্ষকগণ ৩য় শ্রেণিতে থেকে যান। বেতন আপগ্রেডের সময় মূল বেতনের ব্যবধান হয় ১২০০ টাকা এবং ২০১৫ সালের অষ্টম জাতীয় পে- স্কেলে সে ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ২৩০০ টাকা। ১৯৭৩ সালে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের মধ্যে বেতন স্কেলের ব্যবধান না থাকলেও বর্তমানে তিন ধাপ ব্যবধানে পরিণত হয়েছে। এখন একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাতীয় বেতন স্কেলের ১১তম গ্রেড (১২,৫০০/-) এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকগণ জাতীয় বেতন স্কেলের ১৪ তম গ্রেড (১০,২০০/-) টাকা পান। ১৬ বছর চাকুরির পর একজন প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারি শিক্ষকের বেতনের ব্যবধান হবে ভাতাসহ প্রায় ২০,০০০ টাকা, যা সহকারী শিক্ষকদের জন্য চরম বৈষম্য। নিম্নে প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের মধ্যে বেতন বৈষম্যের চিত্র (১৯৭০-২০১৫) আপনার সমীপে উপস্থাপন করা হলঃ
বেতন স্কেল |
প্রধান শিক্ষক |
প্রধান শিক্ষক |
সহকারি শিক্ষক |
সহকারি শিক্ষক (প্রশিক্ষণ বিহীন) |
ব্যবধান |
পদোন্নতি |
||||||||
বেতন |
গ্রেড |
শ্রেণী |
বেতন |
গ্রেড |
শ্রেণী |
বেতন |
গ্রেড |
শ্রেণী |
বেতন |
গ্রেড |
শ্রেণী |
|
বিদ্যমান নীতিমালা উপজেলার ভিতরে
সিনিয়রিটি ভিত্তিক |
|
০১/০৬/১৯৭০- |
১৩৫ |
-- |
-- |
১২০ |
-- |
-- |
১৩৫ |
১৭ |
৩য় |
|
-- |
-- |
০০ |
|
০১/০৬/১৯৮- |
৭৫০ |
১৬ |
৩য় |
৬৫০ |
১৭ |
৩য় |
৭০০ |
১৭ |
৩য় |
|
১৮ |
৩য় |
৫০ |
|
০১/০৭/১৯৯১- |
১৩০০ |
১৬ |
৩য় |
১১২৫ |
১৭ |
৩য় |
১২০০ |
১৭ |
৩য় |
|
১৮ |
৩য় |
১০০, ৭৫ |
|
০১/০৭/১৯৯৭- |
১৯৭৫ |
১৬ |
৩য় |
১৭৫০ |
১৭ |
৩য় |
১৮৫০ |
১৭ |
৩য় |
|
১৮ |
৩য় |
১২৫ |
|
০১/০১/২০০৫- |
৩১০০ |
১৬ |
৩য় |
২৮৫০ |
১৭ |
৩য় |
৩০০০ |
১৭ |
৩য় |
|
১৮ |
৩য় |
১০০,২৫০ |
|
২৯/০৮/২০০৬- |
৩৫০০ |
১৩ |
৩য় |
৩৩০০ |
১৪ |
৩য় |
৩১০০ |
১৫ |
৩য় |
|
১৬ |
৩য় |
৪০০,৩০০ |
|
০১/০৭/২০০৯- |
৫৫০০ |
১৩ |
৩য় |
৫২০০ |
১৪ |
২য় |
৪৯০০ |
১৫ |
৩য় |
|
১৬ |
৩য় |
৬০০,৫০০ |
|
০৯/০৩/২০১৩ |
৬৪০০ |
১১ |
২য় |
৫৯০০ |
১২ |
|
৫২০০ |
১৪ |
৩য় |
|
১৫ |
৩য় |
১২০০,১০০০ |
পিএসসি নীতিমালা |
৮ম জাতীয় পে-স্কেল-২০১৫ |
১২৫০০ |
১১ |
|
১১৩০০ |
১২ |
|
১০২০০ |
১৪ |
|
|
১৫ |
|
২৩০০,১৬০০ |
|
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সহিত বর্ণনা করছি যে, জাতীয় বেতল স্কেল এর বর্ণিত ছকে এই বৈষম্য আরও চরম আকার ধারণ করেছে। ২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষকদের সাথে সহকারী শিক্ষকদের তিন ধাপ বেতন বৈষম্য ও পদমর্যাদা বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ার পর আমরা সহকারী শিক্ষকরা এই বৈষম্য নিরসনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বার বার সংবাদ সম্মেলন করেছি, মানব বন্ধন, শিক্ষক সমাবেশ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতীকি অনশনসহ স্মারকলিপি পেশ করেছি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালকগণের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছি, মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের সাথে অনেক বার দেখা করে দাবী পেশ করেছি, অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর অর্থমন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বৈষম্যগুলো তুলে ধরেছি।
সবাই বলেছেন বৈষম্য বিরাজমান এবং তা সমাধান করবেন। কিন্তু চার বছর পার হলেও কোন সমাধান নেই। ২০১৭ সালের ২৩শে মার্চ থেকে ৩০শে মার্চের মধ্যে সারা দেশের ৬৬,০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতি সহকারী শিক্ষক একটি করে প্রায় ৩,৫০,০০০ পোষ্টকার্ডের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে দাবীগুলো প্রেরণ করেছিলাম। কিন্তু এসব খোলা চিঠি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছে কিনা বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আদৌ অবগত হয়েছেন কিনা তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। এসব দাবী দাওয়া নিয়ে বিগত ৫ বছরে আন্দোলনের পাশাপাশি মাননীয় অর্থমন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে দফায় দফায় বৈঠক হলেও আশ্বাস ছাড়া কিছুই পায়নি সহকারী শিক্ষকরা।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর লক্ষাধিক সহকারী শিক্ষক ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরন অনশনে বসলে ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী জনাব মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এম.পি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক উপস্থিত হয়ে বেতন বৈষম্য নিরসনের প্রতিশ্র“তি দিলে শিক্ষকরা অনশন এক মাসের জন্য স্থগিত করেন। মন্ত্রী মহোদয় সকল শিক্ষক ও মিডিয়ার সামনে বলেন যে, দাবী যৌক্তিক হলে অবশ্যই মেনে নেয়া হবে।
অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, মন্ত্রী মহোদয়ের প্রতিশ্র“তির পর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে দাবী যৌক্তিকতার প্রমাণ সহ বেতন গ্রেড বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছতে প্রায় ৬ মাস পার হয়ে যায়। এরপর ৫ জুন ২০১৮ খ্রিঃ এই প্রস্তাবনায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেতন কাঠামো সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় জানান যে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বৈষম্য নিরসন সম্ভব নয়। মন্ত্রী মহোদয়ের এই বক্তব্যে আমরা সহকারী শিক্ষকরা হতাশ।
এই অবস্থায় দ্রুত এই বেতন গ্রেড বৈষম্য নিরসনে আমরা মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
২য় শ্রেণির পদমর্যাদাসহ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের কেবলই পরের ধাপে নির্ধারণ।
অতএব, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রীর নিকট আমাদের আকুল আবেদন এই যে, সবার জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং মেধাবীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে সহকারী শিক্ষকদের ২য় শ্রেণির পদমর্যাদাসহ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন স্কেল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের পরের ধাপে নির্ধারণের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন ও দ্রুত পদক্ষেপের জন্য ২১ শে অক্টোবর ২০১৮ সালের সংসদ অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রীর কাছে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।
নিবেদক
বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের পক্ষে
(মোঃ........................)
সহকারী শিক্ষক
জাফর মন্ডল পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
মোবাইল:............
(মোঃ...................)
সহকারী শিক্ষক
বোররচর বার্তিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
মোবাইল: ............
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন