ভূমিকাঃ যদিও হেজবুত তাওহীদ সম্পর্কে এদেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো অবগত নয়। আবার যারা জানে তাদের অধিকাংশই তাদেরকে ঘৃণা করে। কিন্তু আমি তাদের সম্পর্কে যাচাই করতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছি বাংলার আকাশে এক বিপ্লবী ঝড়ের পূর্বাভাস! যে ঝড় এদেশের বর্তমান প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলার শক্তি অর্জন করে ফেলবে খুব শীঘ্রই। আর তখন তাদের সামনে দাড়ানোর মতো কোন নৈতিক ভিত্তি কিংবা সুসংঘটিত শক্তি এদেশের অন্য কোন দলের মধ্যে থাকবে না। কেন এবং কিভাবে? চলুন এই আলোচনার মাধ্যমে তা দেখে নেয়া যাক-
অপরাজয়ী হওয়ার মূলমন্ত্রঃ আমি মনেকরি একটি দল মৌলিকভাবে তিনটি কারনে অপরাজেয় হয়ে উঠে। যথা-
ক) দুনিয়াবী সমস্যায় বাস্তবমূখী সমাধান
খ) শক্তিশালী আদর্শিক ভিত্তি।
গ) আদর্শে অবিচল।
এবার চলুন দেখি মৌলিক এই তিনটি দিক থেকে হেজবুত তাওহীদ কতটা শক্তিশালী-
ক) দুনিয়াবী সমস্যায় বাস্তবমূখী সমাধান: প্রথমত তারা যেহেতু ইসলাম প্রচারের বিনিময়ে অর্থ গ্রহণকে হারাম মনে করে, তাই তারা তাদের সদস্যদেরকে পরিশ্রম করে রোজগার করার প্রতি উৎসাহ দিয়ে থাকে। তাছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে তাদের নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো উল্লেখযোগ্য-
কর্মীদের বাস্তব জীবনের সমাধান: অন্যান্য ইসলামী দলগুলোতে দেখা যায় তারা কর্মীদেরকে শুধুমাত্র দলের প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। কিন্তু একজন কর্মী যখন আর্থিক সমস্যায় পতিত হয় তখন সংগঠন তাকে বাস্তব কোন সমাধান দিতে পারে না। কিন্তু হেজবুত তাওহীদ তার প্রতিটি সদস্যের অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলায় তার পাশের কর্মীদেরকে সহায়তা করতে বলে। শুধু তাই নয় তাদের ইমাম প্রতিটি জুমার খুতবায় এই বলে ঘোষণা করে যে- “কার ঘরে খাবার নাই আমার কাছে নির্দিধায় বলুন, কে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, কে টাকার অভাবে বস্ত্র কিনতে অক্ষম আছেন বলুন- আমরা সাধ্যমতো আপনাকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।” এই যে একটা শান্তিময় ঘোষণা, যা আবেগকে তাড়িত করে ইসলামের সেই সোনালী অতীতের গৌরবোজ্জল খোলাফায়ে রাশেদার স্বর্ণযুগের ইতিহাসকে স্বরণ করিয়ে দেয়। বাংলাদেশে এমন কর্মীবান্ধব সংগঠন কি দ্বিতীয়টি আছে?
নিজস্ব কর্মসংস্থান সৃষ্টি: তারা দরিদ্র কর্মীদেরকে সাময়িকভাবে কিছু খাবার বা কিছু টাকা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে না। বরং তাদের সংগঠনের কর্মক্ষম বেকার সদস্যদের জন্য তিলে তিলে গড়ে তুলেছে প্রায় বিয়াল্লিশটি (৪২) প্রতিষ্ঠান। যাতে কর্মীদের স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় এবং কর্মীরা যেন সুদের মতো ঘৃন্য পন্থায় জড়িয়ে পড়তে বাধ্য না হয়। ভাবা যায়! যেখানে অন্যান্য ইসলামী দলগুলো কর্মীদের থেকে শুধুমাত্র নেয়ার জন্য চেয়ে থাকে এবং বলা চলে কর্মীদের দানের মাধ্যমে সংগঠন টিকে থাকে সেখানে হিজবুত তাওহীদ তার কর্মীদের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় কতটা কার্যকর! আমার মনে হয় বাংলাদেশের অন্যান্য ইসলামী দলের নেতারা নিজেদের কর্মীদের নিয়ে এরূপ দূরদর্শী উদ্যোগ আগামী একশত বছর পরও নিতে পারবে না।
খ) শক্তিশালী আদর্শিক ভিত্তি: তাদের আদর্শিক ভিত্তি শক্তিশালী হওয়ার কারণগুলো নিম্নরূপ-
আল্লাহর সার্বভৌমত্বে আপোষহীন: বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামী দলগুলো মুখে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কথা বললেও বাস্তবে গণতন্ত্রকে গ্রহণ করে নিয়েছে, যেই গণতন্ত্রের মধ্যে সুষ্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে যে- জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। যেকথা আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে। পক্ষান্তরে হেজবুত তাওহীদ প্রচলিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে ইসলামী বিপ্লব সাধন করে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যা প্রচলিত বিকৃত গণতান্ত্রিক ইসলামের চেয়ে নৈতিকভাবে উন্নত এবং বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ। প্রকৃতপক্ষে বিপ্লবী চেতনা না থাকলে একটি প্রতিষ্ঠিত শক্তিকে উৎখাত করা যায় না। যারা গণতন্ত্রকে মেনে নিয়েছে বা গণতন্ত্রের সাথে আপোষ করেছে তাদের পক্ষে গণতন্ত্রে বিরুদ্ধে বিদ্রোহী চেতনা অর্জন করা কখনোই সম্ভব হবে না।
নৈতিক চরিত্র গঠনে অনন্য: বাংলাদেশের অন্যান্য ইসলামী দলগুলো যেখানে শুধুমাত্র সাংগঠনিক কার্যক্রমে কর্মীদের সততা পেলেই সন্তুষ্ট। কর্মীদের ব্যক্তিগত জীবনের চাকুরি, ব্যবসা কিংবা নিজ কর্মস্থলে সৎ কি-না এটা তারা তেমন গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণে আনেন না। তবে এক্ষেত্রে হেজবুত তাওহীদ একেবারেই আলাদা। তারা তাদের কর্মীদের বাস্তব জীবনের চরিত্র নিয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখে। তাদের যুক্তি হলো তুমি যদি বাস্তব জীবনেই সততার পথ থেকে বিচ্যুত থাক তাহলে কি এই ইসলাম পরকালে তোমার কোন কাজে আসবে? কাজেই কর্মস্থলে সততা বজায় রাখাই হলো মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
জিহাদ তাদের অনুপ্রেরণ: তাদের কর্মসূচী হলো- ঐক্য, শৃঙ্খলা, আনুগত্য, হিজরত ও জিহাদ (সর্বাত্মক প্রচেষ্টা)। তাদের আলোচনায় জিহাদকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ফলে জিহাদের আলোচনা শুনতে শুনতে তাদের কর্মীরা মানসিকভাবে জিহাদের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে বলে আমি মনেকরি।
সুসংগঠিত এবং শৃঙ্খলিত: হেজবুত তাওহীদ আনুগত্যের প্রতি এতটাই গুরুত্ব দিয়ে থাকে যে, অন্য কোন দলের সাথে তুলনাই করা চলে না। তারা সেনা কমান্ডের মতোই সুসংগঠিত এবং শৃঙ্খলিত শক্তি। এই সংগঠিত শক্তির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে তাদের দ্বারা বিপ্লব ঘটানো শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা বলেই আমার মনে হয়।
আমি মনেকরি একটি সুসংঘটিত ও অবিচল দলের হাতেই আল্লাহ বিজয় তুলে দেন, চাই তা ইসলামী আদর্শের হোক কিংবা কোন আদর্শের। কেননা যদি আল্লাহ তায়ালা শুধুমাত্র ইসলামেরই বিজয় দিতেন তবে পৃথিবীতে অন্য কোন আদর্শ বিজয় লাভ করতে পারতো না। এই উপলব্ধির মাধ্যমে আমার মনে হয় হেজবুত তাওহীদের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও এই সুসংঘটিত, শৃঙ্খলিত, অবিচল ও আপোষহীন নীতির কারণে তাদের দ্বারা বিপ্লব অবশ্যম্ভাবী।
এক উম্মাহ ও এক নেতৃত্বে বিশ্বাসী: হেজবুত তাওহীদের ভাষায়- আমাদের আল্লাহ এক, কুরআন এক, নবী এক অতএব সকল মুসলিম এক উম্মাহর অন্তর্ভূক্ত। আর যখন এই মুসলিম উম্মাহ সকল ফেরকা ও মাজহাব পরিত্যাগ করে এক নেতৃত্বের অধীনে জিহাদ ও জীবন পরিচালনা করবে কেবলমাত্র তখনই মানবতা মুক্তি পাবে এবং ইসলাম বিজয়ী বলে বিবেচিত হবে।
অনুশীলনযোগ্য ইসলামের নমুনা তৈরি:
বর্তমান আলেম সমাজ শুধুমাত্র মুখে ইসলামের গৌরবের কাহিনী বলে বেড়ায়। কিন্তু বাস্তবে অনুশীলন করা যায়, পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় এবং সমষ্টিগতভাবে চর্চা করা যায় এমন একটি সমাজ সৃষ্টি করে দেখাতে পারেনি (যাদের মাঝে বসবাস করে বাস্তব ইসলামের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে)। পক্ষান্তরে হেজবুত তাওহীদ এমন একটি সমাজ তৈরি করে দেখাতে পেরেছে, যেই সমাজে গিয়ে ইসলামের সৌন্দর্য্য কিছুটা হলেও পর্যবেক্ষন করে দেখা যায়। যেমন- ক) তাদের স্কুলের আম গাছগুলোতে আম ঝুলে থাকলেও কোন ছাত্র বা শিক্ষক গাছ থেকে আম ছিড়ে খাচ্ছে না বা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে না। খ) স্কুলের দোকানে বিক্রেতা না থাকলেও ছাত্র-ছাত্রী বা বা শিক্ষক দোকানের জিনিস বিনামূল্যে বা কৌশলে কম মূল্যে নিচ্ছে না। গ) তাদের ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত পণ্যগুলোতে লাভের আশায় কেউ ভেজাল মিশ্রণ করছে না।
চতুর্মুখী পদক্ষেপ: তাদের আছে স্বতন্ত্র মিডিয়া, কর্মসংস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পত্রিকা ও সংস্কৃতি। এই উদ্যোগের ফলে একটি স্বতন্ত্র ও ব্যতিক্রমী সভ্যতা গড়ে উঠছে।
দ্বীন প্রচারে অর্থনৈতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে: হেজবুত তাওহীদ মনেকরে দ্বীনের কাজ করতে হবে শুধুমাত্র জান্নাত লাভের আশায়, এর মধ্যে দুনিয়াবী স্বার্থের আশা করা যাবে না। তাই হেজবুত তাওহীদ কুরআনের বিনিময় নেওয়াকে হারাম বলে। পক্ষান্তরে বর্তমান আলেম সমাজ টাকা ছাড়া দ্বীন প্রচারে ইচ্ছুক নয়, যা দ্বীনের সাথে সাংঘর্ষিক। হেজবুত তাওহীদের ভাষায়- আলেমরা বলেন ওয়াজ মাহফিল জান্নাতের বাগান, তাহলে আপনারা এই জান্নাতের বাগানে টাকা ছাড়া যেতে চান না কেন? খুবই যুক্তিসংগত কথা। আলেমরা এর কী উত্তর দেবেন? হেজবুত তাওহীদ তাদের কর্মীদেরকে বেতনভুক্ত ইমামের পিছনে সালাত আদায় করতে নিষেধ করে থাকে।
গ) আদর্শে অবিচলতায় দৃষ্টান্ত স্থাপন:

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন