শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪

বেশি টাকার ঘর মানেই কি বেশি আরামদায়ক ? জেনে রাখা জরুরী



ভূমিকা: আমাদের অনেকের ধারণা, ঘর-বাড়ি তৈরিতে বেশি টাকা খরচ করলেই বুঝি বেশি শান্তি মিলবে। ধাণাটা সঠিক নয়। আপনার পরিকল্পনাটা যদি থাকে গুছানো, তবে অল্প টাকায় নির্মিত ঘরটিই হতে পারে সবচেয়ে আরামদায়ক এবং নিরাপদ। আর এ বিষয়টিকে প্রধান্য দিয়েই পুরো লেখাটি সাজানো হয়েছে। তাহলে চলুন পুরো আলোচনাটি একবার দেখে নেওয়া যাক-

শুরুকথা:  মানুষ তার চাহিদা পুঁজির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের ঘর তৈরি করে থাকে কেউ বা টিনের ঘর, কেউ মাটির ঘর কিংবা ছনের ঘর, আবার কেউ একটু সামর্থবান হলে দালান ঘরণ নির্মাণ করে থাকে কিন্তু প্রশ্ন হলো বেশি টাকা খরচ করলেই কি ঘরটি বসবাসের জন্য বেশি আরামদায়ক হয়? এই প্রশ্নের আলোকেই বাস্তবতার নীরিখে ভিন্ন ভিন্ন ঘরের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে  আলোচনা করা হয়েছে আলোচনাটি শেষ পর্যন্ত পড়লেই বুঝতে পারবেন কোন ঘরটি আপনার জন্য বেশি সুবিধাজনক প্রয়োজন তাহলে চলুন শুরু করা যাক-

ছন, খড় মাটির ঘরের সুবিধাসমূহ: ছন, খড় মাটির ঘর নাতিশীতোষ্ণ হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই ঘর শীতের দিনে অন্যান্য ঘরের তুলনায় অধিকতর গরম থাকে এবং গরমকালে থাকে অধিকতর ঠান্ডা। কারণ ছন, খড় মাটি হলো তাপ কুপরিবাহী। অর্থাৎ এগুলোর ভেতর দিয়ে তাপ সহজে পরিবাহিত হতে পারে না। তাই গরম দিনে যখন চালের উপরিভাগটা অত্যধিক গরম থাকে তখন এই তাপ ছন, খড় বা মাটির ভেতর দিয়ে সহজে ঘরের অভ্যন্তরে প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে ভেতরের দিকটা থাকে তুলনামূলক ঠান্ডা আরমদায়ক। আবার শীতের দিনে তার বিপরীত অবস্থা বিরাজ করে। কারণ গরমকালের উষ্ণ তাপমাত্রার কারণে ভেতরের দিকের ছন, খড় বা মাটি ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ফলে শীতের আগমনের কারণে বাইরের দিকটা ঠান্ডা হয়ে উঠলেও তার প্রভাব ভেতরে প্রবেশ করতে বেশ সময় লেগে যায়।এতেকরে শীতকালে ঘরের ভেতরের দিকে কম ঠান্ডা থাকে। আবার বৃষ্টি বা শীলা বৃষ্টিতে টিনের ঘরের মতো বিকট শব্দের সৃষ্টি হয় না। এসব ঘর সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব, শব্দ প্রতিরোধক এবং আরামদায়ক হয়ে থাকে

ছন, খড় মাটির ঘরের অসুবিধাসমূহ: ছন, খড় মাটির ঘর সাধারণত অন্যান্য সকল ঘরের তুলনায় বেশ দুর্বল নড়বড়ে হয়ে থাকে। ঝড়ো বাতাসের তীব্র ঝাপটায় ছন খড়ের ঘরের চাল বেড়া উড়ে যায় এবং মাটির ঘর ভেঙে পড়ে। আবার ছন খড়ের চাল পুরোনো হয়ে গেলে বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ে ভেতরের কাপড় চোপর মাটি ভিজে মেছাকার অবস্থার সৃষ্টি করে। রোদের প্রখর উত্তাপে মাটির ঘর ফেটে যায় এবং ভেঙে পড়তে পারে। এসব ঘর বার বার মেরামত করতে হয় যা পরিশ্রমসাধ্য কাজ

টিনের ঘরের সুবিধাসমূহ: টিনের ঘরের সবচে বড় সুবিধাটি হলো- কষ্ট হলেও একবার এই ঘর মজবুতভাবে দাড় করাতে পারলে দীর্ঘ সময় নিশ্চিন্তে বসবাস করা যায়, একটা লম্বা সময় ঘর নিয়ে ভাবতে হয় না। নতুন টিনের ঘর দূর থেকে দেখার মজাই আলাদা

টিনের ঘরের অসুবিধাসমূহ: অন্য যে কোন ঘরের তুলনায় টিনের ঘরের অসুবিধার ক্রমটি বেশ লম্বা বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। টিনের ঘর সাধারণত তাপ পরিবাহী। তাই শীতের দিনে খুব তাড়াতারি ঘর ঠান্ডা হয়ে যায় এবং গরম কালেও চাল, বেড়া ইত্যাদি প্রচন্ড উত্তপ্ত হয়ে উষ্ণতাকে কয়েক গুণে বাড়িয়ে তোলে। ফলে শীত বা গরম সব ঋতুতেই এই ঘরে বৈরি পরিবেশ বিরাজ করে। তাছাড়া বিজলী পতিত হলে বা বিদ্যুতের তার ছিড়ে এই ঘরের চাল বা বেড়ায় পড়লে পুরো ঘরটিই বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে। ছোটরা খেলতে গিয়ে এবং বড়রা অসাবধান হলে হাত কেঁটে ফেলে, টিনের কোনায় বা তাঁরকাটায় লেগে জামা-কাপড় ছিড়ে যায়। বৃষ্টিতে প্রকট শব্দের সৃষ্টি করে। শিলা বৃষ্টি বা ঝড়ো বাতাসে চালে বা বেড়াতে ভাঙা ডালপালা বিভিন্ন উড়ন্ত বস্তুর আঘাতে ভায়বহ শব্দ দূষণসৃষ্টি করে। তাছাড়া তীক্ষ্ণ রোদের সময় নতুন টিনের চাল বা বেড়া চুখে বিরক্তিকর ধাধা অসুবিধার সৃষ্টি করে থাকে

পাকা ঘরের সুবিধাসমূহঃ যাদের কিছু টাকা পুঁজি আছে তারা সাধারণত নিজের ঘরটি পাকা করার সিদ্ধান্তই নিয়ে থাকেন। কেননা এই ঘরের বাড়তি কিছু সুবিধা আছে যা অন্য ঘরগুলোতে নেই। যেমন- পাকা ঘর সবচেয়ে মজবুত দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। শীতকালে এই ঘরের মেঝে অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে অসুবিধার সৃষ্টি করলেও গরমকালে এই মেঝে তুলনামূলক ঠান্ডা আরামদায়ক হয়ে থাকে। ফলে এতে শুয়ে থাকলে দেহের উত্তাপ কমে যায় এবং প্রশান্তির সৃষ্টি করে

পাকা ঘরের অসুবিধাসমূহঃ পাকা ঘরের সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো- এটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল ঘর। তাই সবার পক্ষেই পাকা ঘর তৈরির সামর্থ হয়ে উঠে না। তাছাড়া কিছুদিন পর পর দেয়ালে রং না করলে দেখতেও খারাপ লাগে। আবার রং করতে গেলেও বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়। পাকা ঘরে শিশু বৃদ্ধরা পড়ে গিয়ে যখম হাত পা ভেঙে ফেলতে পারে। তাছাড়া পাকা ঘর সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধবও নয়

শেষকথাঃ কোন ঘরটি আপনার কাছে বেশি উপযোগী মনে হয়েছে? আর কোন কোন দিক নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন তা কমেন্ট করে জানিয়ে দিতে পারেন।লেখাটি ভালো লাগলে তা আপনার ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানার সুযোগ করে দিন। পরিশেষে সবার সুস্থতা দীর্ঘায়ু কামনা করে আজ এখানেই শেষ করলাম- আল্লাহ হাফেজ


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন