রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪

যৌক্তিক কিছু পদক্ষেপ : কয়েকটি জটিল রোগের সমাধান


ভূমিকা: রোগ নেই পৃথিবীতে এমন লোক খুজে পাওয়া দুষ্কর।আমরা সবাই কোননা কোন রোগে প্রায়ই আক্রান্ত হয়ে থাকি। কিছু লোক এমন আছে যারা ছোটখাট কোন রোগ হলেই গপাগপ ঔষধ খাওয়া শুরু করে। তারা জানেনা যে বেশি বেশি ঔষধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভয়াবহ হুমকী। বেশি বেশি ঔষধ সেবনে শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। যেই রোগটা আপনার শরীর এমনিতেই প্রতিরোধ করতে পারতো, বেশি বেশি ঔষধ সেবনে শরীরের সেই শক্তিটা শেষ হতে থাকে। একসময় এমন অবস্থা দাড়ায় যে, সামান্য রোগ হলেও ঔষধ সেবন ছাড়া আর ভালো হয় না। তাই আমাদের উচিত প্রথমত রোগ হওয়ার পূর্বেই সতর্ক থাকা, যেন আমাদের অবহেলা ও খদ্যাভাসের অসামঞ্জস্যের কারণে শরীরে রোগ সৃষ্টি না হয়।তারপারও ছোটখাট রোগে আক্রান্ত হলে তার ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উপাদান বা ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ফলমুল, মাছ-মাংস ও শাক-সবজি ইত্যাদি খেয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করা।এরপরও যদি শরীর সুস্থ না হয় তখন তো ঔষধের চিন্তা করতেই হবে। আবার কিছু রোগ আছে যেগুলো যৌক্তিক কিছু নিয়ম-কানুন অনুসরণ করেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। আজকের আর্টিকেলটিতে সেই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন জেনে নিই কোন রোগ প্রতিরোধে কী ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার-

১. কোষ্ঠকাঠিণ্য: কোষ্ঠকাঠিণ্য হলে সাধারণত পায়খানা অত্যধিক শুষ্ক হয়ে অনেক আঠালো ও শক্ত হয়ে যায়। ফলে পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয়, সহজে পায়খানা হয় না এবং কিছুক্ষণ পর পরই প্রচণ্ড দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু আসে। এ অবস্থায় একজন মানুষ নিজেকে নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। মিটিং, সমাবেশ বা ঘরের লোকদের থেকে ভয়ে আলাদা থাকার চেষ্টা করে। কারণ পুতিগন্ধময় অবাধ্য বায়ু সবার বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়ায়। 

কোষ্ঠকাঠিণ্য রোধের/নিরাময়ের যৌক্তিক উপায়ঃ একটা বিষয় সুস্পষ্ট যে, এ রোগে আক্রান্ত হলে বার বার বায়ুচাপ তৈরি হয়। আর এই বায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করেই এই রোগ থেকে নিরাময় সম্ভব। যেহেতু ঘন ঘন বায়ুচাপ তৈরি হয় তাই আপনি পর পর দুই-তিনবার বায়ু আটকিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। দেখবেন পায়খানার চাপ তৈরি হবে। এর একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যাও আছে। যেহেতু এসময় বার বার বায়ুচাপ তৈরি হয় তাই দুই-তিনবার আটকানোর ফলে পায়খানার থলেতে চাপ সৃষ্টি করে। এতে সহজেই পায়খার বেগ তৈরি হয়। তবে যেহেতু বায়ু নিজেই একটা বর্জ্য, তাই স্বাভাবিক অবস্থায় বায়ুচাপ আটকিয়ে রাখা উচিত নয়।কারন এতেকরে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া কোষ্ঠকাঠিণ্যের সময় তরল জাতিয় খাবার খাবেন, এতে পায়খানা রসালো ও আরমদায়ক হবে।

২. নখের কোণা দেবে যাওয়া: নখের কোণা দেবে যাওয়ার ‍মূল কারণ আমাদের অসবাধানতা। আবার এই অসাবধানতার কারণেই এটা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং যন্ত্রণা দিন দিন বাড়তে থাকে। নখের কোণা দেবে যাওয়ার কারণ হলো নখ কাটার সময় নখের কোণাগুলো একদম চামড়ার সাথে ঘেষে কেটে ফেলা। এভাবে ছোট করে নখ কাটার ফলে নখের কোণা দিয়ে কাদা বা ধুলোবালি ঢুকে পড়ে এবং তা ভিতরে লেগে থাকার ফলে মাংস ফুলে যায়, দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। এই যন্ত্রণার কারণে আমরা আবারও ভুল করি। তখন কোণাগুলো আরও কেটে ভিতরের ময়লা বের করার চেষ্টা করি। এতে নখের কোণায় আরও গর্তের সৃষ্টি হয় এবং আরও ময়লা ঢুকে সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। 

প্রতিকারের যৌক্তিক পদক্ষেপঃ আপনাকে এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, এই সমস্যার মূল কারণ হলো নখের কোণাগুলো গভীরভাবে কেটে ফেলা।সুতরাং এই সমস্যা প্রতিরোধের প্রধান কাজ হলো নখ কাটার সময় এর কোণাগুলো গভীরভাবে কেঁটে ফেলা যাবে না। আর যদি আপনার অসতর্কতার কারণে নখ দেবে যাওয়া শুরু হয় এবং যন্ত্রণায় ভোগতে থাকেন তবে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করুন-

ক. সরিষার তেল গরম করে আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করুন, এতে যন্ত্রণার উপশম হবে।

খ. বেশি যন্ত্রণা হলে সুই দিয়ে হালকা খুচিয়ে যতদূর সম্ভব ময়লা বের করে দিতে হবে।এক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে যেন খুচানোর ফলে বেশি গর্তের সৃষ্টি না হয়। সেই সাথে সুতি কাপড়ের টুকরো দিয়ে ব্যাথাযুক্ত জায়গা হালকা করে বেধে রাখতে হবে ।এরফলে নখের কোণায় নতুন করে ময়লা ঢুকতে পারবে না। 

গ. কোনভাবেই নখের কোনা কেটে ময়লা বের করার চেষ্টা করা যাবে না। কেননা, কোণা কাটলেই সমস্যা আরও বড় হতে থাকবে।তাই টর্গেট নিয়ে নখের কোণা বড় হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হবে। 

ঘ. সর্বোপরি, সমস্যা থাকুক আর নাই থাকুক নখের কোণা কখনোই চামড়ার সাথে ঘেষে কাঁটা যাবে না। 

৩. স্যাতস্যাতে ঘা: যাদের শরীর খুব রসালো তাদের শরীরে কোন কারণে ঘা হলে সহজে তা সারতে চায় না। বরং সব সময় কষ পড়ে স্থানটি ভেজা ভেজা থাকে। ফলে সহজে তা শুকায় না। এই সমস্যার সৃষ্টি হলে আপনি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় নেকড়াতে আগুন জ্বালিয়ে সেই আগুন বার বার ঘাযের উপর সেক দিতে থাকুন। এতে উক্ত স্থান শুষ্ক থাকবে ফলে ঘা থেকে খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবেন।

৪. ব্রণ: নির্দিষ্ট একটি বয়সে নারী-পুরুষ সবার মুখেই ব্রণ দেখা দেয় । ব্রণের সবচেয়ে মারাত্বক ব্যাপার হলো- রোগটা যতনা যন্ত্রণার, তারচেয়ে মানসিক চাপ ঢের বেশি। কারণ মুখের যা অবস্থা হয়, এই মুখ নিয়ে মানুষের সামনে যেতে বিরক্তই লাগে। যে যাই বলুক ব্রণকে ঠেকানোর মতো কার্য়কর কোন ঔষধ এখনো আবিষ্কার হয়নি।তবে আপনি একটু সচেতন হলে এবং নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে সহজেই এই বিপত্তিকে প্রতিহত করতে পারবেন-

ক. ব্রণকে বাড়ানোর প্রধান হাতিয়ার হলো হাতের স্পর্শ। আপনার হাতের প্রতিটি স্পর্শ ব্রণকে করে তোলবে আরও বড়, বড়িয়ে তুলবে তীব্র যন্ত্রণা, সেই সাথে চেহারাকে করে তোলবে আরও ভয়াবহ। তাই এ রোগের প্রতিকারে প্রথমেই আপনার হাতকে রাখতে হবে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। ব্রণ শক্ত হওয়ার আগে কোনভাবেই তাতে হাত লাগানো যাবে না। 

খ. ব্রণ শক্ত হয়ে দানাদার হয়ে গেলে তখন শুধুমাত্র চাপ দিয়ে দানা বের করে দিতে হবে। তারপর আবারও হাতের স্পর্শ বন্ধ। 

আপনি যদি এই বিষয়টি মেনে চলতে পারেন তবে আপনার মুখ পূর্বের রূপ ফিরে পাবে। ব্রণের দাগের কোন চিহ্নও থাকবে না। তবে অনেকেই না জানার কারণে সময়মত ব্রণের দানা বের করে দেন না। ফলে দানাগুলো চামড়ার নিচে রয়ে যায় এবং পরে এগুলোর কারণে মুখ এবড়ো-থেবড়ো এবং খসখসে হয়ে যায়। 

৬. ব্রণের দাগ দূর করার উপায়: আপনি পূর্ব থেকে সাবধান না হলে বা হাতকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নখের খোচা, চিমটি ও বার বার স্পর্শের কারণে যদি দাগ লেগেই যায় তবুও এই দাগ থেকে মুক্তি সম্ভব।তাও আবার কোনরকম ঔষধের ঝামেলা ছাড়াই। এজন্য আপনাকে শুধুমাত্র একটি কাজ করতে হবে, তাহলো- ব্রণের উৎপাত শেষ হয়ে গেলে- দিনে এক/দুইবার দাগপড়া স্থান ও তার আশপাশে কিছুক্ষণ আলতোভাবে ঘষুন। নিয়মিত এভাবে ঘষলে এক সপ্তাহের মধ্যেই ফলাফল হাতেনাতে পেয়ে যাবেন (আমি নিজে উপকৃত হয়েছি)। আপনার মনে এই প্রশ্ন আসতেই পারে- ঘষলে কিভাবে দাগ দূর হবে? তবে এর একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যাও আছে- ঘষামাজার কারণে উক্ত স্থানে রক্ত চলাচল তাৎক্ষণিক বেড়ে যায়। ফলে আক্রান্ত টিস্যুতে পর্য়াপ্ত রক্ত সরবরাহ ঘটে টিস্যুটি সেড়ে ওঠে। আবার মৃত টিস্যুগুলো অতিরিক্ত রক্ত সরবরাহের ফলে রক্তের সাথে ভেসে গিয়ে প্রস্রাবের মাধ্যমে বা্ইরে বেরিয়ে আসে। 

শেষকথাঃ উপরোক্ত সবগুলো রোগ ও সমস্যায় আমি নিজে পড়েছি এবং আমি স্বয়ং উল্লিখিত পন্থাগুলো অবলম্বন করে উপকৃত হয়েছি। আর্টিকেলের কোন বিষয়ে আপনর ভিন্ন মত থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন। সবশেষে সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে এখানেই লেখার ইতি টানলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন