ভূমিকা: আমরা যখন পত্রিকা, ফেসবুক এবং ইউটিউবে দেখি, কোন একটি দেশের মানুষ মাছ খায় না, তখন আমরা ভাবি- ইস! যদি সেই দেশে থাকতাম তবে মাছগুলো মজাকরে একাই খেতাম। আবার যখন দেখি বিভিন্ন দেশের মানুষের আত্মীয় স্বজন মারা গেলে সাথে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার ইত্যাদি কবরে রেখে আসে তখন আমারা মনেকরি তারা কতই না বুকা! যদি সেই দেশে থাকতাম তবে রাতের অন্ধকারে সেগুলো চুপি চুপি নিয়ে নিতাম। কিন্তু আমরা বাঙালিরাও কম বুকা নয়। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, আমরাই হয়তো দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বুকা। কেননা আমরা কুসংস্কারের কারণে সর্বশ্র্রেষ্ঠ খাবারগুলো এখনো বর্জন করে চলছি। এখন নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে সেই খাবারগুলো সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক-
মায়ের শালদুধ:
শ্রেষ্ঠ খাবারের মধ্যে প্রথম তালিকাতেই আছে মায়ের শালদুধ, যা আমরা কুসংস্কারের কারণে আজও বর্জন করে চলছি। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, একজন শিশুর জন্য দুনিয়াতে সর্বশ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে মায়ের প্রথম দুধ, যা আমরা শালদুধ বলে অবজ্ঞা করে থাকি। ডাক্তারগণ শালদুধ সম্পর্কে বলেন- মায়ের শালদুধ হচ্ছে একটি শিশুর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ খাবার। এই দুধ এতই পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং জরুরী যে, তাতে রয়েছে শিশুর সর্বরোগের প্রতিষেধক। এই দুধ খেলে শিশুর দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় সবচেয়ে বেশি । শিশুর বেড়ে উঠার জন্য এই দুধের বিকল্প বা সমমানের কোন খাবার পৃথিবীতে নেই। আর তাই তো এই দুধ হয় সবচেয়ে ঘণ। কারণ পুষ্টিতে থাকে তা একেবারে পরিপূর্ণ। কিন্তু আমাদের অজ্ঞতার কারণে আমরা মনেকরি যে, এই দুধ খেলে তা শিশুর গলায় আটকে যাবে। কথাটা খুবই অবাস্তব, অজ্ঞতা আর মূর্খতার পরিচায়ক। যেই খাবারটি শিশুর জন্য আল্লাহ তায়ালা শ্রেষ্ঠ করে, সবচেয়ে উপযোগী করে তৈরি করলেন আমরা তা অজ্ঞতার কারণে বর্জন করলাম। এটা শ্রষ্টার উপর মাতব্বরীর মতই বেয়াদবি এবং অজ্ঞতাই বটে। অথচ এটা ঘন হওয়ার কারণ হলো-এটা একটা শিশুর জন্য জরুরী সব পুষ্টিতে পরিপূর্ণ প্রাথমিক ডোজ।
গরু, মহিষের শালদুধ:
মায়ের শালদুধ যেমন পুষ্টিতে পরিপূর্ণ থাকার কারণে প্রাথম দিকের দুধের ঘনত্ব কিছুটা বেশি থাকে, ঠিক একই কারণে গরু, মহিষ ইত্যাদির দুধও বেশি ঘন হয়। আমরা অনেকে এগুলো নিজেরাও খাই না সেই পশুর বাচ্চাদেরও খেতে দেই না। আবার আমাদের এলাকায় একটি কুসংস্কার আছে যে, এই দুধ কুকুরে খেলেও নাকি গাভির দুধ কমে যায়।তার মানে দাড়াচ্ছে এই পুষ্টিকর খাবার আমরা নিজেরাতো খাবোই না, তার বাচ্চাকেও খেতে দেবো না এমনকি কোন প্রাণীকেই না। খুবই অবাক লাগে। আমাদের অজ্ঞতা আমাদেরকে কোথায় নিয়ে ঠেকিয়েছে। এতদৃষ্টে আমার মনে হয়েছে- শ্রেষ্ঠ খাবারগুলো প্রতি আমাদের শুধুমাত্র অনিহাই নয়, এগুলোর প্রতি রীতিমতো শত্রুতা তৈরি করে দিয়েছে আমাদের আজ্ঞতা ও কুসংস্কার।
ছাগলের দুধ:
এদেশের অধিকাংশ অঞ্চলের মানুষ আজও ছাগলের দুধ বর্জন করে চলে। ছাগলের দুধ নিয়ে কুসংস্কারও কম নয়। মানুষ মনে করে- এই দুধ খেলে নাকি ছাগলের মতই শরীর দূর্গন্ধময় হবে, যা সম্পূর্ণ অবাস্তব আর কুসংস্কারাচ্ছন্ন কথা। আবার বলে থাকে- এই দুধ খেলে নাকি ছাগলের মতই রোদের উত্তাপ বেশি সহ্য করা যায় না। এগুলো সবই অবাস্তব্, হাস্যকর আর অবৈজ্ঞানিক কথা। বরং সত্য হলো- ছাগলের দুধ পুষ্টিগুনে গরুর দুধের চেয়েও বেশি সমৃদ্ধ। সচেতন মানুষ চাইলেই অনলাইন বা পত্র-পত্রিকায় এই তথ্যটি যাচাই করে দেখতে পারবেন।
পরীক্ষার্থীদের খাবারে কুসংস্কা:
আমাদের দেশে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে কুসংস্কার। অধিকাংশ পিতামাতা ছাত্রদের পরীক্ষায় যাওয়ার পূর্বে ডিম খাওয়া বা ডিমের তরকারি দিয়ে খাবার খাওয়া বারণ করে। মনে করা হয় ডিম দিয়ে খাবার খেলে পরীক্ষায় শূন্য পাবে। কারণ, ডিম তো শূন্যের মতোই গোল। কি চমৎকার ব্যাখ্যা! কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে খাবারের সাথে পরীক্ষার ফলাফলের কোনই সম্পর্ক নেই। পরীক্ষায় ভাল করা না করার পিছনে পড়ালেখা এবং অধ্যাবসায়ই দায়ী। কিন্তু কে শোনে করা কথা? পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ডিমের মতো একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবারকে এদেশে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। তাছাড়াও পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অঞ্চলভেদে আরও বেশকিছু খাবারকে কুসংস্কারাচ্ছ করা হয়েছে- যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
সমাপনী:
প্রতিটি সচেতন নাগরিকের উচিত নিজ এলাকায় এসকল কুসংস্কারের মূলোৎপাটনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা এবং এই খাবারগুলোর গুরুত্ব সাধারণ মানুষের সামনে তোলে ধরা। তবেই সমাজ ও জাতি এই খাবারগুলোর সুফল ভোগ করতে পারবে। লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন- এতে আপনার বন্ধুরাও উপকৃত হতে পারবে। লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন