শুরুকথা:
আমাদের পিছিয়ে থাকার মূল কারণ হলো আমাদের চিন্তার অসামঞ্জস্যতা , গুরুত্বহীনতা, অকল্পনীয় আশা আর অপরের সাফল্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা। এই বিকৃত চিন্তাগুলো কিভাবে আমাদেরকে পিছিয়ে দিচ্ছে আর কোন কোন দিকে গুরুত্ব দিলে এই বিশৃংখল অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়া যাবে, সেই বিষয়গুলোই আজকের লেখায় আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে পড়তে থাকুন-
ভূমিকা:
এই উপমহাদেশের লোকজন প্রকৃত পক্ষে মেধার দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই। কিন্তু আমরা জাতিগতভাবে্ এগুতে পারিনা শুধুমাত্র সহযোগিতার মনোভাবের কারণে এবং উদ্দেশ্যহীন ও বিশৃংখ্ল জীবণ যাপনের কারণে । যদি এই গুণটি আমাদের মধ্যে তৈরি করা যায়, তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় আমরা জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাড়াতে পারবো। আজকের লেখায় আমি দেখানোর চেষ্টা করবো ঠিক কী কী সমস্যার কারণে আমরা আজও পিছিয়ে আছি এবং কিভাবে সমস্যাগুলোর মোকাবেলা করা যাবে। বিষয়গুলো জানতে চলুন পুরো লেখাটি একবার দেখে নেয়া যাক-
পিতা-মাতার উদাসিনতা ও কাল্পনিক আশা:
একটি শিশুর ভবিষ্যৎ জীবণকে সাফল্যমণ্ডিত করার লক্ষ্যে একজন অভিভাবকের যতটুকু সচেতনতা আবশ্যক সে বিষয়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ পিতা-মাতাই উদাসীন। প্রকৃতপক্ষে সন্তানকে যতটুকু গুরুত্বের সাথে গাইড করা দরকার এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও পরিশ্রম করা প্রয়োজন ততটুকু তারা করেন না। যদিও বা শহর কেন্দ্রিক পিতা-মাতা এ ব্যপারে কিছুটা সচেতন, কিন্তু গ্রামের অভিভাবকদের অবস্থা একেবারেই নাজুক। গ্রামে দেখা যায় যে, একজন শিশু সময় মত না খেতে আসলে পিতা-মাতা নিজের কাজের ব্যাঘাতের কারণে যে পরিমাণ শাসন করেন এবং শিশুদের হুমকী-ধামকী প্রদর্শন করেন, শিশুদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে পড়াশুনায় সেই পরিমাণ গুরুত্বারোপ করেন না। যদিও বা কেউ সচেতন হয়, তখন দেখা যায় অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি শুরু করে দেয়। একটি পরিকল্পিত রুটিন তারা অনুসর করে না এবং শিক্ষকরাও তাদেরকে একটি পরিকল্পিত গাইডের বিষয়ে অবগত করেন না। ফলে অধিকাংশ ছেলে মেয়ে প্রাইমারীতেই ঝড়ে পড়ে। আবার কিছু ছাত্র-ছাত্রী যদি মেধার পরিচয় দিতে থাকে তখন পিতা মাতা তাকে নিয়ে এত বেশি আশা করে থাকে যে, তাকে খামখেয়ালী এবং পাগলামিই বলা যায়। আর এই পাগলামী চিন্তা ভাবনার কারণে এবং সামর্থের চেয়ে বেশি আশা করার কারণে অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়ে দাড়ায়। আবার দেখা যায়, কোন কারনে যদি ছেলে-মেয়ে মাঝপথে রেজাল্ট খারাপ করে ফেলে তখন তার কারণ ও প্রতিকারের বিষয়ে নজর না দিয়ে পিতা-মাতা একেবারে হতাশ হয়ে যান এবং ছেলে মেয়েকে হুমকী ধামকী প্রদর্শন করে একেবারে দমিয়ে ফেলেন। কিন্তু তারা এই চিন্তা করেন না যে, এই রেজাল্টই চূড়ান্ত নয়; বরং তাকে সঠিকভাবে গাইডলাইন করলে সে আবার ভালো করতে পারবে। কিন্তু অভিভাবকদের এটা বুঝাবে কে?
স্বাধীনতার চেয়ে গুলামীকে শ্রেষ্ঠ মনে করা:
একজন মানুষ লেখাপড়া শেষে ব্যবসার কথা বললে আমাদের দেশে তাকে তাচ্ছিল্লের দৃষ্টিতে দেখা হয় এবং মনে করা হয় ছেলেটি লেখাপড়া করে কিছুই করতে পারলো না। আর তাই নিরুপায় হয়ে সে এখন ব্যবসার কথা ভাবছে। কিন্তু এটা কেউ চিন্তা করে না যে, সরকারি বা বেসরকারি চাকুরি করলে পুরোটা জীবণ তাকে অন্যের অধীনে থাকতে হবে এবং একটা সুনির্দিষ্ট রোটিনে পুরোটা জীবন অতিবাহিত করতে হবে। অনেক সময় বিশেষ প্রয়োজনেও ছুটি কাটানো সম্ভব হয় না। কিন্তু একজন ব্যক্তি যদি নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে তাহলে সে যেমন রোটিন বাঁধা জীবন এবং গোলামী থেকে মুক্তি পাবে তেমনি সে আরও কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরি করতে পারবে। কিন্তু চারপাশের মানুষ এটা বুঝতে চায় না, তারা স্বাধীনতার পরিবর্তে গুলামীকেই সফলতা মনে করে।
প্রতিবেশীর উদাসিনতা ও বিকৃত চিন্তা:
কথায় আছে- পরের উন্নতি এদেশের মানুষের সহ্য হয় না। নিজের নাক কেটে হলেও অপরের যাত্রা ভঙ্গ করতে হবে, এই চিন্তা নিয়েই এদেশের মানুষ বেড়ে উঠে। চিন্তাটা এমন যে, আমি কিছু হই আর না হই, আমার থেকে কেউ যেন এগিয়ে যেতে না পারে। কেউ আমার থেকে এগিয়ে গেলে সেটা তো আমার লজ্জা!(?) কিন্তু একটু বিবেক দিয়ে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, যদি একজন সম্ভাবনাময়ী ছাত্র বা ব্যবসায়ীকে আপনি সঠিকভাবে গাইড এবং পরামর্শ দেন তবে আপনি বরং মহৎ হিসেবেই পরিগণিত হবেন। কিন্তু আপনি যদি সহযোগিতা না করেন বা বিরোধিতা করেন এবং সে আপনার সহযোগিতা ছাড়াই এগিয়ে যায় তবে এতেই আপনি লজ্জিত হবেন। কেননা- তখন সে আপনার গুণগান করবে না, তার মুখ দিয়ে আপনার প্রশংসা আসবে না। বরং তখন হয়তো বলবে পাশের লোকদের সহযোগিতা পেলে সে আরও বড় কিছু হতে পারতো। নিশ্চয়ই উক্ত কথা আপনার জন্য লজ্জারই হবে। তাই একজন মেধাবীকে সহযোগিতা করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কিন্তু আমরা কয়জন এই চিন্তাটা করছি?
অপরাধীকে বাঁচানোর শয়তানি যুক্তি:
এদেশের অফিস-আদালত ও বিভিন্ন কর্মে নিযুক্ত অনেক মানুষই দূর্নীতিতে জড়িত। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো অনেকেরই সেই দূর্নীতির প্রতিবাদ করার সাহস এবং শক্তি থাকতেও একটা শয়তানি যুক্তি দাড় করিয়ে, নিজেকে মহৎ ভেবে এই কাজ থেকে বিরত থাকে। চিন্তাটি হলো এরকম- অন্যের রিযিক নষ্ট করে আমার লাভ কি? সে তো আমার কোন ক্ষতি করছে না। এটা যে কতবড় শয়তানী চিন্তা তা একটু বিশ্লেষণ করলেই বুঝতে পারবেন। আপনি মনে করছেন এই ব্যক্তির চাকুরি চলে গেলে আপনি তার রিজিক নষ্ট করার দায়ে অপরাধী হবেন। কিন্তু তার দ্বারা যে অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আর আপনি প্রতিবাদ করার সামর্থ থাকা সত্বেও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন সেই অপরাধের বোঝা বহন করতে পারবেন তো? তাছাড়া এই অসৎ ব্যক্তির কারণে একজন সৎ ব্যক্তি যে তার প্রাপ্য কর্ম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেই চিন্তা করেছেন কি? সুতরাং একজন অসৎ ব্যক্তি দূর হলে যেমন একজন সৎ ব্যক্তির কর্মসংস্থান তৈরি হবে তেমনি অসংখ্য মানুষ জুলুমের হাত থেকে রক্ষা পাবে। তাছাড়া এই অসৎ ব্যক্তিরা যদি একাধারে কয়েক প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত হয় তবে তারা সোজা পথে আসতে বাধ্য হবে। কিন্তু আপনি এই অসৎ ব্যক্তির ব্যাপারে চুপ থেকে এবং তাকে নিরবে সমর্থন দিয়ে কতবড় অন্যায় করছেন তা একটু ভেবে দেখুন। আপনার এই নিরবতায় কত মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে আর প্রতিনিয়ত জুলুমের শিকার হচ্ছে তা একটু হিসাব মিলিয়ে দেখুন। তবেই বুঝতে পারবেন আপনার ধারণাটি কতবড় ভুল আর শয়তানী একটা যুক্তি।
সমাপনী:
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! লেখাটির যথার্থতার বিচার আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম। লেখার কোন একটি দিক আপনার চিন্তার সাথে সাংঘর্ষিক হলে তা কমেন্টে জানানোর অনুরোধ রইল। আর যদি লেখাটি ভালো লাগে তবে আপনার ফেসবুক এবং সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিন। লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন