রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪

যেই বুকামির দন্ড আজীবন বয়ে বেড়াতে হয়


শুরুকথাঃ

বেঁচে থাকার জন্য এবং জীবন নির্বাহের জন্য আমাদেরকে প্রতিদিন বিভিন্ন কাজ করতে হয়, অনেক ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এর মধ্যে কিছু কাজ এবং সিদ্ধান্তে ভুল হয়ে গেলে সেগুলো সহজেই শুধরে নেওয়া যায়। কিন্তু এমন কিছু কাজ বা সিদ্ধান্ত রয়েছে যেগুলো ভুল করে একবার করে ফেললে বা বাস্তবায়ন হয়ে গেলে সেগুলো আর শুধরে নেওয়ার উপায় থাকে না এবং এর মন্দ প্রভাব বা কুফল সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। আজকের লেখায় এমনি কিছু ভুল বা বুকামি নিয়ে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক-

অন্যের কাছে টাকা আমানত রাখা বা সঞ্চয় করাঃ  

কিছুদিন পূর্বে ফেসবুকে একটি ভিডিও খুব ভাইরাল হয়েছিল। ভিডিওর ঘটনা ছিল এরূপ- এক ব্যক্তি বিদেশ থেকে তার স্ত্রীর নিকট টাকা পাঠিয়ে তা শ্বশুর বাড়িতে সঞ্চয় করতো। দীর্ঘদিন এভাবে টাকা রাখার পর দেশে এসে তা চাইতে গেলে তারা দিতে অস্বীকার করে। ফলে ঝড়গা তৈরি হয় এবং তার স্ত্রীর নেতৃত্বে তাকে তার শ্বশুর ও শ্যালক বেপক মারধর করে। কেউ একজন এটা ভিডিওতে ধারেণ করে ফেসবুকে ছাড়লে তা ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায় সেখানে বর পক্ষের লোকজন কেউ ছিল না যে তার পক্ষ নিয়ে কথা বলবে এবং এর প্রতিবাদ করবে। এজন ব্যক্তি ছিল যে তার বন্ধ হবে হয়তো সে তার শ্বশুর পক্ষের লোকজনকে মার ফেরানো থেকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই বিদেশীকে ছোট বাচ্চার মত এক ছেলে ব্যাপক মারধর করলেও সে মাটিতে উপুর হয়ে পড়ে রয়েছে। কোন প্রতিবাদ বা নাড়াচাড়াও করছে না। কারণ তাদের কাছে সে এখন ধরা খেয়েছে ।  উক্ত ভিডিওর কমেন্টে লোকজন তার শ্বশুর শাশুরি, শ্যালক বা স্ত্রীকে নয় বরং তাকেই দুষারূপ করতে থাকে। এছাড়াও অনেক ঘটনা এরূপ শুনা যায় যে, গ্রাম থেকে ঢাকায় গিয়ে অনেকেই অপরিচিত ও অজানা ব্যক্তিকে আত্মীয় বানিয়ে তাদের কাছে টাকা গচ্ছিত রাখে। একসময় তা চাইতে গেলে তা আর কখনো ফিরে পায় নি। তাই সাবধান! নিজের ইনকামের টাকা নিজের কাছেই রাখুন। অন্যকে অযথা বিশ্বাস করার দরকার নেই। যদি অন্যের কাছে টাকা রাখতেই হয় তবে তা মা বাবার কাছে রাখুন নিরাপদে থাকবে। যদি তারা খেয়েও ফেলে তবুও মনে আফসোস থাকবে না। কেননা তারা তো প্রতিদানের আশা ছাড়াই আপনাকে মায়া-মমতা দিয়ে লালন পালন করে বড় করেছে।

গুপন পাপ বা অপরাধের কথা স্ত্রী বা বন্ধুদেরকে বলাঃ 

আমাদের প্রতিবেশি এক দাদা একদিন আমাকে একটি গল্প শোনান। গল্পটির মূলকথা ছিল এরূপ- এক লোক একদা বৃষ্টির দিনে আনমনা হয়ে হাসতেছিল। তা দেখে তার স্ত্রী প্রশ্ন করলো- তুমি হাসছো কেন? লোকটা কোন উত্তর দিল না। এতে তার স্ত্রী অভিমান করে বললো- তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো না? আমি কি তোমার মনের কথা জানতে পারি না? ইত্যাদি। যেহেতু তাদের মধ্যে যথেষ্ট ভালবাসা ছিল তাই স্ত্রীর পীড়াপিড়িতে একটি গুপন অপরাধের কথা প্রকাশ করে দিল। ঘটনাটি ছিল এই- লোকটি একদিন তার এক প্রতিবেশিকে শত্রুতার জেরে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। যখন সে তার প্রতিবেশিকে মারতে যায় তখন ছিল বৃষ্টির দিন। প্রতিবেশি কোন উপায়ান্তর না দেখে বলেছিল- হে বৃষ্টি! একমাত্র তুই ছাড়া এখন আমার কোন স্বাক্ষী নেই। এই খুনির ব্যপারে তুই সবাইকে জানিয়ে দিস! তারপর বহুদিন কেঁটে যায় কেউ কোনদিন সেই খুনের ঘটনা জানতে পারে না। তাই বৃষ্টি এলেই লোকটির হাঁসি পায় এ কথা ভেবে যে, কই? বৃষ্টিতো এতদিনেও সেই খুনের স্বাক্ষী দিল না? এই কথাটা সে তার স্ত্রীকে বলে হাসতে শুরু করল। দিন যায়, মাস যায়। একসময় তার ও স্ত্রীর বন্ধনের মাঝে ফাঁটল তৈরি হলো। একসময় দুইজনের মাঝে প্রচন্ড ঝগড়া বেঁধে গেলো। সেই ঝগড়ার মাঝে শুরু হলো বৃষ্টি। তখন তার স্ত্রীর মনে পড়ে গেলো সেই খুনের ঘটনা। ফলে সে তার স্বামীর থেকে প্রতিশোধ নিতে খুন হওয়া ব্যক্তির আত্মিয়-স্বজনের কাছে সেই ঘটনা ফাঁস করে দিল। ফলে বেচারার অপরাধের প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে ফাঁসির আদেশ দিল। 

তাই সাবধান! আজকের মুহব্বতের স্ত্রী বা ঘনিষ্ঠ বন্ধু যে কোন সময় শত্রু হয়ে যেতে পারে। তাই কাউকে গুপন পাপ বা কৃত অন্যায়ের ব্যাপারে বলা মানে চরম বুকামি। এ ভুলের কোন ক্ষমা বা সংশোধনের পথ নেই। 

সমাপনীঃ 

চলার পথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ক্ষেত্র বিশেষে একটি মাত্র ভুল সিদ্ধান্তই পুরো জীবণকে বিষিয়ে তুলার জন্য যথেষ্ট। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। লেখাটি ভাল লাগলে ফেসবুকে শেয়ার করে রাখুন, এতে অন্যরাও উপকৃত হবে। লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন