সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০২৪

প্রেমের ফাঁদ থেকে ছোটদের বাঁচিয়ে রাখার কৌশল


ভূমিকাঃ সাংস্কৃতিক অবক্ষয় বলুন আর সহশিক্ষা ব্যবস্থার ফলই বলুন, বাস্তবতা হলো— প্রতিনিয়ত অসংখ্য কুমলমতি ও মেধাবী ছোট ছোট শিক্ষার্থী প্রেম নামক সর্বনাশা মোহে জড়িয়ে পড়ে অংকুরেই ঝড়ে পড়ছে। এদেরকে সঠিক সময়ে সচেতন করতে না পারার দরুণ এই জাতি অসংখ্য মেধাবীকে প্রতিনিয়ন হারিয়ে ফেলছে। এই নিবন্ধে আমি সর্বনাশা প্রেমের গ্রাস থেকে ছোটদের বাঁচিয়ের রাখার সূক্ষ্ম কিছু কৌশল শেয়ার করবো — যেগুলো প্রয়োগ করতে পারলে ছোটদেরকে এই মারাত্মক ব্যাধি থেকে রক্ষা করা সহজ হবে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

প্রাথমিক কাজঃ কোন শিশু একবার প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে পড়লে সেই মোহ থেকে তাকে ফেরানো খুবই মুশকিলের কাজ। তাই সে এই মোহে জড়ানোর পূর্বেই আপনি নিম্নোক্ত প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারেন:—

নৈতিক শিক্ষাঃ আপনি শিশুকে এমনভাবে নৈতিক শিক্ষা দিন, যেন সে নিজ থেকেই প্রেম নামক অশ্লিলতাকে বড় পাপ হিসেবে জানে এবং একে ঘৃণা করতে পারে। আপনি তাকে ইসলামের আলোকে জানান যে এগুলো যেনার মতো মহাপাপ এবং এর ফলে পরকালে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। তাছাড়া যারা এসব অশ্লীলতা করে বেড়ায় তাদের ভাগ্যে অশ্লীল নারী/পুরুষই জোটবে। পারিবারিকভাবে তারা কখনোই শান্তির দেখা পায় না। তাছাড়া এসব মানুষকে সমাজের মানুষ কখনোই সম্মানের চোখে দেখে না। সকলেই এদেরকে ঘৃণা করে। 

কুফলের দৃষ্টান্তঃ পাড়া মহল্লার কেউ এসব করে বেড়ালে তাদের সম্পর্কে এমন তাচ্ছিল্লের সাথে শিশুদের সামনে উপস্থাপন করুন, যেন শিশুরা বুঝতে পারে এগুলো খুবই গর্হিত কাজ। তাছাড়া তার পরিবারের লোকজন তার কারণে সমাজে কেমন হেয় ও তাচ্ছিল্লে্যর স্বীকার হচ্ছে তা তার সামনে বলুন। শিক্ষার্থী হলে তার পড়ালেখার পূর্বের অবস্থা এবং বর্তমানে তার দায়—দায়িত্ব থেকে পরিবারের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার ইতিহাস বর্ণনা কারুন। সর্বোপরি এসব কথা এমনভাবে উপস্থাপন করুন যেন আপনার শিশুরা এসবের কাছাকাছি হোক তা কখনোই বরদাস্ত করতে পারবেন না। 

পরবর্তী কাজঃ যখন দেখবেন যে, আপনার শিশুটি প্রেমের ফাঁদে ইতোমধ্যে জড়িয়ে পড়েছে— তখন নিম্নোক্ত কৌশলগুলো প্রয়োগ করুন:—

ঘৃণা প্রকাশ ও উপদেশ: শিশুকে এমনভাবে কথা বলুন যেন তার সেই কাজকে আপনি ঘৃণা করেন কিন্তু তাকে নয়। তাকে এসবের মন্দ সম্পর্কে সচেতন করুন। পাড়া মহল্লার অন্যান্য ব্যক্তি পূর্বে এসব করে কেমন পরিণতির স্বীকার হয়েছিল সেসব দৃষ্টান্ত বর্ণনা করুন। তার আশু পরিণতি কী হতে যাচ্ছে তা তাকে বুঝিয়ে বলুন। তাছাড়া পরকালে এই পাপের শাস্তি সম্পর্কে হুশিয়ার করুন। হয়তো এসব উপদেশের ফলে শিশুর বিবেক জেগে উঠবে এবং প্রেম নামক অশ্লীলতা বর্জন করবে। 

সহজভাবে শেয়ার করুন: যখন দেখলেন যে, এসব উপদেশও তার জন্য কাজ হচ্ছেনা তখন কি তাকে মারধর করবেন? না তার দরকার নেই। তখন আপনার কৌশল ধীরে ধীরে পরিবর্তন করুন। প্রেম জিনিসটাকে তার সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করতে থাকুন যেন এটা মোহের কোন বিষয়ই নয়। তাছাড়া অমুকের ছেলে কিছুদিন প্রেম করে প্রেমিকাকে বিয়ে না করে অন্যকে বিয়ে করে। ফলে মেয়েটা পড়ালেখায় মন বসাতে পারছে না। আবার অমুকের মেয়ে কলেজে ভর্তি হয়ে পুরাতন প্রেমিককে বাদ দিয়ে নতুন প্রেমিকের সন্ধানে আছে। সুতরাং এগুলো ধুকাবাজি ছাড়া কিছুই নয় এবং এসবের ফাঁদে পড়ে পড়ালেখায় শৈথিল্য প্রদর্শন করা বা কর্মবিমুখ থাকা কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

বন্ধু হোন নিয়ন্ত্রণে আনুন: তাছাড়া আরেকটি কৌশল অবলম্বন করতে পারেন, তা হলো— তার সাথে গভীর বন্ধুত্ব তৈরি করুন। আপনার ছাত্রজীবনে আপনার অথবা আপনার বন্ধুর প্রেমের ঘটনা মাজা করে বলুন, যেন এটা কোন মোহ নয় মজার বিষয়। এমনকি তার প্রেমিক/প্রেমিকা আজ তাকে কী মেসেজ দিল তা বলতে উৎসাহিত করুন। যখন আপনার সন্তান তার প্রেমিক/প্রেমিকার মেসেজ/চিঠি আপনার সাথে শেয়ার করতে শিখবে তখন ধরে নিন সে আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। সে অত্যধিক খারপ কোন সম্পর্কে জড়াতে পারবে না। সময় মতো তাকে যে কোন ডুজ দিয়ে ফেরাতে পারবেন অথবা লেখাপড়ায় বাধ্য করতে পারবেন।

শেষকথা: শেষ কৌশলগুলোকে মজাদার মনে করে প্রথমেই প্রয়োগ করতে যাবেন না। কারণ এগুলোর ক্ষতিকর অনেক দিক রয়েছে। যেমন— প্রেমে মত্ত থাকলে পড়ালেখায় কিছু না কিছু ক্ষতি হবেই। তাছাড়া শিশুটি অবশ্যই পিতা মাতা বা প্রেমিক/প্রেমিকাকে ধোকা দেওয়া শিখে নেবে। পরবর্তীতে বৈবাহিক জীবনে সে সন্তুষ্ট থাকতে পারবে না। তাছাড়া নৈতিক অবক্ষয় অপূরণীয় থেকে যাবে সবসময়। সুতরাং সাধু সাবধান!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন