সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০২৪

দেশ ও জাতির উন্নয়নে এক যুগান্তকারী ধারণা!



ভূমিকা: একটি যৌক্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ধারণা যত শক্তিশালীই হোক না কেন তা যদি বাস্তবায়ন করা না হয় তবে তা মূল্যহীন। অপরদিকে একটি সঠিক সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন একটি দেশ ও জাতিকে উন্নয়নের পথে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমি নিচে প্রচলিত কিছু অনুৎপাদনশীল ধারণার বিপরীতে উৎপাদনশীল কিছু ধারণার অবতারণা করবো যা প্রয়োগ করতে পারলে একটি দেশ বা জাতির উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।


অনুৎপাদনশীল প্রতিযোগিতার সংজ্ঞা: যে প্রতিযোগিতা দেশ বা জাতির উন্নয়নে কিৎবা কোনকিছু উদ্ভাবন বা উৎপানে কোনরূপ অবদান রাখতে পারে না তাকে আমি অনুৎপাদনশীল প্রতিযোগিতা বলে সংজ্ঞায়িত করেছি। যেমন— মোবাইলে গেম খেলা। এই খেলায় আসক্ত একজন ব্যক্তি সময় অপচয় ব্যতীত কিছুই লাভ করতে পারে না। যদি এই খেলায় সে বিশে^র চ্যাম্পিয়ন ব্যক্তিটিও হয়ে যায় তবুও জাতি একটি মেধা অপচয় ব্যক্তিত কিছুই পাবে না। তাই এটাকে বলতে পারি অনুৎপাদনশীল খেলা বা প্রতিযোগিতা।


ফুটবল খেলা বনাম ধানের চারা রোপন প্রতিযোগিতা: যদি আপনি মোবাইলে গেম খেলাকে অনুৎপাদশীল খেলা মেনে নিয়ে থাকেন তবে ফুটবলকেও অনুৎপাদনশীল খেলা বলে স্বীকার করতে হবে। কেননা, যদি একটি দেশের সকল মানুষ নিজেদের পেশা ছেড়ে দিয়ে ফুটবল খেলায় মত্ত হয়ে যায় তবে দেশটি অকার্যকর হতে বাধ্য। এর বিপরীতে যদি একটি দেশের সকল মানুষ শুধুমাত্র ধানের চারা রোপন প্রতিযোগিতায় লেগে যায় তবে দেশে অন্যান্য উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলেও দেশের মানুষ অন্তত ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। 


 একটি ফুটবল খেলার আয়োজন করা হলে সেই খেলায় দুই টিমের অনেকগুলো খেলোয়ার ছাড়াও দর্শনার্থীর একটি বিশাল অংশের সামষ্টিক সময় অপচয় হয়। আর এই সময় অপচয়ের মাধ্যমে তারা উৎপাদনশীল কোন চেতনাও লাভ করতে পারে না। তাই সরকার যদি এমন পদক্ষেপ নেয় যে— কৃষকেরা ধানের চারা রোপনের সময় প্রতিটি এলাকায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে রোপনের কাজ সম্পন্ন করবে। 


বিজয়ী কৃষকগণকে মালিকগণ বা স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি বেতনের পাশাপাশি বিজয়ী সংবর্ধনা প্রদান করবে। প্রতিটি খেলা এজন্যই জমে উঠে যে, তাতে জয় পরাজয় থাকে চাই তা উৎপাদনশীল হোক বা অনুৎপাদনশীল। যদি ফুটবল খেলার পরিবর্তে ধানের চারা রোপন প্রতিযোগিতা চালু করা যায় তবে প্রতিযোগিরা যেমন বিজয়ের স্বাধ নিতে পারবে, তেমননি দর্শনার্থীরাও উৎপাদনশীল চেতনা পাবে। সর্বোপরি খেলাটি দেশের উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।


অনুৎপাদনশীল ভারোত্তোলন বনাম উৎপাদনশীল ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতা: আমরা টিভিতে বা ইউটিউবে ভারোত্তোলনের যেসব প্রতিযোগিতা সাধারণত দেখে থাকি তা একেবারেই অনুৎপাদনশীল। তো এই প্রতিযোগিতাটিকে সহজেই উৎপাদনশীল প্রতিযোগিতায় পরিবর্তন করা যাবে যদি এরকম করা হয়— ধরুন একটি ধানমিল ফ্যাক্টরি থেকে শত শত মন ধান বিক্রি হয়। সেখানে শ্রমীকদেরকে দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কম সময়ে অধিক ভারোত্তোলনকারী শ্রমিকদেরকে বিজয়ী ঘোষণা এবং বাড়তি কিছু টাকা প্রদান করা হলে কাজের সামগ্রিক হার অনেকাংশে বেড়ে যাবে এবং শ্রমিকরা কাজকে কঠিন ভাবার পরিবর্তে বিজয়ী হওয়ার পথ ভাবতে থাকবে। কাজকে শ্রমিকদের সামনে এভাবে উপস্থাপন করা গেলে দেশের উন্নয়নে তা সহাক হবে।


বসে দাবা/লুডু খেলা বনাম বসে মুড়ক তৈরি প্রতিযোগিতাঃ দাবা, লুডু, কেরাম, মোবাইল গেম বা এরকম যেকোন খেলা যেগুলো বসে বসে খেলতে হয় সেগুলোর পরিবর্তে বিভিন্ন কোম্পানীর পণ্যের মুড়ক তৈরির প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। আর এটা হবে উৎপাদনশীল খেলা যার মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। 


গাড়ি দিয়ে চলা বনাম দৌড়ে যাতায়াত করা: আমরা এতই বুকা যে, পাঁচ মিনিটের রাস্তা চলার জন্য গাড়ির জন্য দশ মিনিট অপেক্ষা করি। আর এভাবে অলসতার জন্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে সকাল বেলা হাটাহাটি বা দৌড়াদৌড়িকে ভদ্রতা বলে আখ্যায়িত করি। অথচ এই ট্রেডিশন বাদ দিয়ে যদি প্রত্যেককে অফিস হতে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব দৌড়ে আসতে বাধ্য করা হয় তবে যেমন শারিরীক অনেক ব্যধি থেকে চাকুরিজীবি রক্ষা পাবে তেমনি গড় কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া গাড়ি দিয়ে চলার পরিবর্তে হেটে বা দৌড়ে চলার প্রতি মানুষকে সরকারিভাবে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। দূর দূরান্তে চলার জন্য সাইকেল বা এজাতিয় জ¦ালানিবিহীন যানবাহনে চলাচল করতে বলা হবে। এতেকরে গাড়ির ক্ষতিকর ধোয়া থেকে প্রকৃতি যেমন মুক্তি পাবে তেমনি সাধারণ মানুষ অধিক কর্মক্ষম হয়ে উঠবে।


উপবাস থাকা গৌরবের বনাম কৃপণতার/অসহায়ত্বের: সাধারণত একজন মানুষ যদি সামর্থ থাকা সত্বেও দিনে দুইবার খায় তাহলে মানুষ তাকে কৃপণ বলা শুরু করবে। মানুষ এটা ভাবতে শরু করবে যে, লোকটা টাকা বাঁচানোর জন্য নিয়মিত খাবারটাও খাচ্ছে না। আর কোন মোটা মানুষ যদি দিনে দুইবেলা খাবার খায় আর বলে আমি ডায়েট কন্ট্রোল করছি তখন তাকে বলা হয় সে সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিয়েছে। আবার একজন সৈনিককে ট্রেনিং করার সময় ১০—১৫ দিন খাবার সরবরাহ না করে প্রাকৃতিক উপায়ে খাবার সংগ্রহ করে টিকে থাকার দীক্ষা দেওয়া হয়। আর এই কাজটা সে করতে পারলে তাকে সম্মানিত করা হয় এবং প্রতিকুল পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবে বলে গণ্য করা হয়। তাহলে ব্যপারটা কী দাঁড়ালো? 


একই ঘটনা তিনভাবে ঘটার কারণে একজন কৃপণ বলে গণ্য হলো, আরেকজনকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে গণ্য করা হলো আবার আরেকজনকে যোগ্য ও সম্মানিত বলে গণ্য করা হলো। এই প্রেক্ষাপটগুলো বিবেচনা করে আমরা যদি এই সিদ্ধান্ত নেই যে, যারা স্বাস্থ্য ঠিক রেখে মাঝে মাঝে উপবাস যাপন করবে তাদেরকে কৃপণ না ভেবে দেশের সম্পদ স য়কারী এবং সম্মানিত গণ্য করি তাতে কি কোন সমস্যা আছে? তারপর যারা কম খেয়ে অধিক কাজ করতে পারবে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হলে মানুষ আরও বেশি উৎসাহ পাবে।


শেষকথাঃ এভাবে সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে যন্ত্র ব্যবহারের পরিবর্তে মানুষকে শারিরীকভাবে সক্ষম করে গড়ে তুলতে পারলে এবং নিতান্ত প্রয়োজনের ক্ষেত্রে উন্নত এবং জ্বালানীবিহীন যন্ত্র আবিস্কার ও ব্যবহারে হতে পারলে মানুষ যেমন স্বাস্থ্যবান—নিরোগ থাকবে তেমনি প্রকৃতিও সবুজ—সতেজ এবং আরো সুন্দর হয়ে উঠবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন