রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪

লোকাল ফ্রিল্যান্সিং: জাতীয় উন্নয়নের এক যুগান্তকারী আইডিয়া


ভূমিকা: বর্তমানে “ফ্রিল্যান্সিং” ক্যারিয়ারের জগতে বিপ্লব সাধন করতে সক্ষম হয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং করে বিশ্বের অসংখ্য মানুষ আজ নিজেদের জীবনমান উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এরপরও আইটি জগতের বাইরে এই ফ্রিল্যান্সিং কার্যকরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। বরং বলাচলে আইটি জগতের বাইরের মানুষ এই ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে এখনো অবগত নয়। কিন্তু আমার বিশ্বাস যদি ফ্রিল্যান্সিং এর ধারণা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং স্থানীয়ভাবে এর প্রয়োগ করা যায় তবে বিশ্বময় উন্নয়নের গতি আরও বহুগুন বৃদ্ধি পাবে। তাহলে চলুন ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-


ফ্রিল্যান্সিং কী? : ফ্রিল্যান্সিং হল কাজের এমন একটি পদ্ধতি যেখানে গ্রাহক একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি কাজ আহ্বান করে। আর ফ্রিল্যান্সারগণ বা কর্মীগণ সেই কাজে অভিজ্ঞ হলে এবং কাজের বিনিময় তার উপযুক্ত মনে হলে সেই কাজটি করে দেয়ার জন্য সম্মত হয়। এর মাধ্যমে গ্রাহক এবং ফ্রিল্যান্সার উভয়েই লাভবান হয়। কেননা, গ্রাহকের যেমন ছোট একটি কাজের জন্য পুরো দিনের বা পুরো মাসের বেতন গুনতে হয় না, তেমনি একজন অভিজ্ঞ কর্মী বা ফ্রিল্যান্সারও একটি নির্দিষ্ট বেতনে একটি অফিসে আটকে না থেকে তার পারদর্শিতা দিয়ে একাধিক লোকের কাজ করে বেশি টাকা ইনকাম করতে পারে।


ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু হলো? উন্নত দেশগুলোতে একজন আইটি এক্সপার্টকে তার মর্যাদা অনুযায়ী একটা ভালো পরিমাণ বেতন দিতে কোম্পানীগুলো বাধ্য থাকে। কিন্তু কিছু কিছু কাজের জন্য কোম্পানীগুলোর পক্ষে যেমন এত বেশি বেতন বহন করা বাস্তব সম্মত হয় না তেমনি একজন এক্সপার্টের জন্যও অল্প বেতন পোষায় না। সেই পরিস্থিতে কোম্পানীগুলো কিছু কিছু কাজের জন্য

ফ্রিল্যান্সিং এর গুরুত্ব অনুভব করে। তারা ছোট ছোট কাজের জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সোস্যাল মিডিয়ার দ্বারস্থ হয়। তারা দেখতে পায় যে,অনুন্যত দেশগুলোতে ডলারের রেট বেশি হওয়ায় খুব কম টাকায় নেট দুনিয়া থেকে কাজ আদায় করে নেওয়া যায়। আর এভাবেই ফ্রিল্যান্সিং এর যাত্রা শুরু হয়।


স্বাভাবিক দৈনিক কাজের প্রক্রিয়াঃ আমাদের দেশে একজন দিনমজুর তার কাজে জন্য খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হয় আর সন্ধ্যা অবধি কাজ করতে হয় । সে ইচ্ছা করলেই বেলা ১২ টায় কর্মস্থলে উপস্থিত হতে পারে না। দেরি করার কারনে তার ঐ দিন পুরোপুর কাজ বন্ধ রাখতে হয়। তাছাড়া যদি তাকে কাজে নেওয়া হয় তবে তাকে পুরো দিনের বেতন দিতে হবে বলে সামাজিক স্বীকৃতি রয়েছে। তাই দেরী হলে যেমন কর্মী কর্মস্থলে হাজির হয় না তেমনি পুরো দিনের বেতন দিতে হবে বলে প্রধান মিস্ত্রীও তাকে কাজে নিতে চায় না। ফলে উভয়পক্ষই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আর এজন্যই লোকাল ফ্রিল্যান্সিং এখন সময়ের দাবি। 


সম্ভাবনাময় লোকাল ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে শুরু করা যাবে:


কর্মঘন্টা অনুযায়ী পারিশ্রমিক প্রদান: পূর্ববর্তী ঘটনার প্রধান মিস্ত্রী যদি একটা নিয়ম করে যে, একজন কর্মী যে কয় ঘন্টা কাজ করবে সে তদানুযায়ী পারিশ্রমিক পাবে। ধরি, ভোর ৭ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত পূর্ণ কর্মদিবস। দৈনিক কাজের বেতন ৬০০ টাকা। তাহলে প্রতি ঘন্টার বেতন হয় (৬০০/১০) = ৬০ টাকা। সুতরাং কেউ দেরী করলে তার কর্মঘন্টা অনুযায়ী বেতন পাবে। এতেকরে কাজের যেমন ঘাটতি হবে না তেমনি কর্মী দেরী করার কারণে একেবারে বঞ্চিত হবে না।


প্রডাকশন অনুযায়ী পারিশ্রমিক প্রদান: কিছু কিছু কর্মস্থল থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত। সেখানে একজন কর্মী যে কোন সময় এসে যে কোন পরিমান পণ্য তৈরি করে ইচ্ছামতো সময়ে চলে যেতে পারবে। এতেকরে কর্মীগণ যেমন নিজেকে পরাধিন মনে করবে না তেমনি কর্মীসংখ্যা অধিক থাকায় কাজের গতিও হবে বেশি।


লোকাল ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধাসমূহ: লোকাল ফ্রিল্যান্সিং শুরু হলে মালিক পক্ষ এবং কর্মী উভয়েই লাভবান হবে। যেমন- কোন মালিকের কোন একটি কাজের বিশেষ চাপ তৈরি হলে সে তৎক্ষনাৎ কর্মী আহ্বান এবং হায়ার করে নিতে পারবে। আবার অভিজ্ঞ কর্মীগণ একই দিনে একাধিক জায়গায় একাধিক মালিকের কাজ করে অধিক লাভবান হতে পারবে। তাছাড়া কর্মীগণ পালাবাদল হলে, পরবর্তী কর্মী নতুন উদ্যমে কাজ করার জন্য পূর্ণ সামর্থ্যবান থাকবে। আর এতেকরে কাজের হারও বৃদ্ধি পাবে। আবার পালাবদলের ফলে কর্মীগণ তাদের নিজস্ব কাজ এবং প্রয়োজনও পূরণ করে নিতে পারবে, যা সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।
 আবার নিজস্ব কাজ এবং প্রয়োজন পূরণের ফলে কর্মীগণ মানসিকভাবেও প্রশান্তি পাবে।

শেষকথাঃ ফ্রিল্যান্সিং এর ধারণা প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ুক এবং দৈনন্দিন প্রতিটি কাজে এর প্রয়োগ নিশ্চিত করে সবাই উপকৃত হোক পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা আরও বেগবান হোক এই প্রত্যাশায় আজকের লেখা এখানেই শেষ করলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন