বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫

বিজ্ঞানের উন্নতি যখন প্রকৃতি ধ্বংসের প্রধান হাতিয়ার (৩য় কিস্তি)


এই পৃথিবীর প্রকৃতি ও পরিবেশ শুরুতে এত উন্নত ও টেকসই ছিল যে আগেকার মানুষেরা হাজার বছর বেঁচে থাকতে পারতো! কিন্তু মানুষ যখন আরো টেকসই এবং আরো সুন্দর ও উপভোগ্য জীবনের আশায় বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যান্ত্রিক উন্নতি ঘটাতে থাকলো তখন থেকেই পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংস হতে শুরু করলো। যদিও যান্ত্রিক উন্নতি ও প্রতিটি গবেষণার ফলে মানুষ তাৎক্ষনিকভাবে কিছুটা লাভবান হয়েছে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এগুলো পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্ট করতে একেকটা মহামারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কিভাবে? চলুন দেখে নেয়া যাক-

কল-কারখানার বর্জ্য যখন প্রকৃতির ধ্বংসকারীঃ মানুষ শিল্প বিপ্লবের নামে তৈরি করেছে বিভিন্ন কল-কারখানা। এই কলকারখানার ধোয়ার কারণে বায়ু দূষণ হচ্ছে। এর ফলে মানুষ ও জীব বৈচিত্রের মধ্যে নানাবিধ রোগ তৈরি করছে। তাছাড়া এই ধোয়া বায়ুমন্ডরের স্তরকে ধ্বংস করে পৃথিবীতে গ্রীণ হাউজ ইফেক্ট তৈরি করছে। তাছাড়া এই কল-কারখানার বর্জ্যগুলো খাল-বিল, নদী-নালা এমনকি সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ে পানিকে দূষিত করে ফেলছে। ফলে জলজ জীব জগৎ মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। 

কল-কারখানায় উৎপন্ন সামগ্রী যখন পরিবেশ দূষণকারীঃ এক সময় মানুষ মাটির হাড়ি পাতিল ব্যবহার করতো, যা ছিল পরিবেশ বান্ধব। কিন্তু বর্তমানে মানুষ পালিথিন, প্লাস্টিকের সামগ্রী, সীসার তৈরি বাসন-পাত্র ব্যবহার করছে। আর এগুলো মানব শরীরে প্রবেশ করে নানা ধরনের জটিল রোগ সৃষ্টি করছে। তাছাড়া এগুলো মাটিতে মিশে মাটি দূষণ করছে। পালিথিন সহজে পচে না বলে এগুলো দিনের পর দিন মাটিতে জমে মাটিকে ফসল উৎপাদনের অনুপযোগী করে ফেলছে।

ইট-পাথর ব্যবহারের কুফলঃ অধিকহারে ইট-পাথর ব্যবহার করে বাড়ি-ঘর এবং রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করার ফলে একদিকে পরিবেশ অধিকহারে উত্তপ্ত হচ্ছে। অপরদিকে দিন দিন আবাদি জমিগুলো ইট-পাথরের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে।

গাড়ি ও কলকারখানার ধোয়ার প্রভাবঃ গাড়ির ধোয়া থেকে উৎপন্ন হয় কার্বণ মনোক্সাইড নামক এক বিষাক্ত গ্যাস যা মানুষ নিশ্বাসের সাথে গ্রহণ করা ফলে দিন দিন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া কল-কারখানা থেকে উৎপন্ন কার্বণ-ডাই অক্সাইড এবং কার্বণ মনোক্সাইড গ্যাস বৃদ্ধির কারণে বায়ুমন্ডলের ওজোনোস্তর ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে। ফলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি সরাসরি মানুষ ও জীব-জন্তুর শরীরে পড়ে প্রাণিকুল ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

যুদ্ধাস্ত্র ও বোমা আবিস্কারের কুফলঃ যুদ্ধাস্ত্র ও বোমার আবিস্কার মানব সভ্যতা ও পৃথিবীর জন্য আজ হুমকী হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ বিজ্ঞানের অপব্যবহার করে একে অপরকে ঘায়েল করতে এবং নিজ দেশের আধিপত্ব বিস্তারের জন্য তৈরি করেছে অত্যাধুনিক সব মারণাস্ত্র ও মানব বিধ্বংসী বোমা। যুদ্ধের একটি সাধারণ নীতি হলো কোন পক্ষই বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করতে পারবে না। অতীতে এই নীতি পুরোপরি কার্যকর ছিল। কেননা তখন যুদ্ধ হতো মুখোমুখি এবং তলোয়ার দিয়ে। অতএব এখানে শুধুমাত্র সৈন্যরাই হতাহত হতো। কিন্তু বর্তমান উন্নত যুদ্ধাস্ত্রগুলো যেন বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার উদ্দেশ্যেই তৈরি হয়েছে। কেননা যুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর লোকজন নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে পারলেও বেসামরিক সাধারণ নাগরিকদের উপরই বিপদ নেমে আসে। তাছাড়া বর্তমানে পৃথিবীর দেশেগুলোতে যে পরিমাণ পারমাণবিক বোমা রয়েছে তা দিয়ে পৃথিবীকে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাতবার ধ্বংস করে দেওয়া যাবে! কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার চিন্তা করেছেন? মানুষ বিজ্ঞানের উন্নতির নামে কী ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছে!

মোবাইল-কম্পিউটার ও আধুনিক ডিভাইসের ক্ষতিকর প্রভাবঃ মোবাইল কম্পিউটারসহ আধুনিক ডিভাইসগুলো মানুষের কাজে এনে দিয়েছে গতি। ফলে মানুষ হারিয়েছে স্থিতি। এক সময় মানুষ অফিস থেকে ছুটি নিলে নিরাপদে ছুটি কাঁটাতে পারতো। কিন্তু মোবাইল থাকার কারণে ছুটি নিয়েও পার নেই। জরুরী প্রয়োজনে অফিস থেকে ফোন করে বসে। তাই কর্মচারীকে হয়তো ভিজিটিং স্পট থেকে নয়তো আত্মিয়ের বাড়ি থেকে অফিসের কাজে ছুটে আসতে হচ্ছে। তাছাড়া ইন্টারনেটের কারণে পৃথিবীটা গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রামে পরিণত হওয়ার ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য।

মোবাইলে ইন্টারনেট সুবিধা থাকায় শিশুরা অতিমাত্রায় কার্টুনের নেশায় মত্ত হয়ে যাচ্ছে, তরুণরা বিভিন্ন গেম, টিকটক, ও বিভিন্ন সোস্যাল মিয়ায় অতিমাত্রায় আসক্ত হচ্ছে এবং ছেলে-মেয়েরা অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে।। বয়স্করাও নাটক সিনেমা, পরকীয়া ও ভয়াবহ জোয়ার নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। গড়ে লাভবান লোকসংখ্যার বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যাটাই বেশি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন