জনম দুঃখী মা
হাবিবুল্লাহ
মায়ের পেটে যখন কোন সন্তান যদি আসে,
তখন থেকেই মাযের মনটা আনন্দেতে ভাসে।
সন্তান জন্ম নেওয়ার আগেই মায়ে করে চিন্তা,
ছেলে হলে রাখবে কি নাম, মেয়ে হলে কোনটা?
এই সমস্ত চিন্তা ভাবনায় কাঁটে যে তার সময়,
সন্তান পেটে বাড়তে থাকলে বাড়ে আরো ভয়।
গর্ভে সন্তান বড় হলে করে কষাঘাত,
ব্যথার তরে দুঃখী মায়ের নির্ঘুম কাঁটে রাত।
দুঃখে বাঁধে সুখের নীড় সন্তানের আশায়,
গর্ভে থেকেও যেই মাকে কাঁদিয়েছি ব্যথায়।
দিনে দিনে বাড়তে থাকে দুঃখী মায়ের ব্যথা,
ব্যথার ঘোরে স্মরণ করে মরণ ভয়ের কথা।
দশ মাস দশ দিন পূরণ হলে কঠিণ প্রসবকালে,
মহাকষ্ট
যোগ হয় তখন ঐ মায়ের কপালে।
প্রসব কালে মা যে আমার এমন ব্যথা পায়,
চিৎকার দিয়ে বলে আমি আর বাঁচব না হায়।
তীব্র কাতর যন্ত্রণাতে ঐ মা বেহুশ হলে,
দুনিয়াতে
এরি মাঝে সন্তান আসে চলে।
জ্ঞান ফিরে আসলে যখন দেখে মা তার সন্তান,
আনন্দে তার মনটা তখন করে কুহুতান।
আতড়া, ভেংড়া নেংড়া হলেও টান দিয়া নেয় কোলে,
তার কপালে চুমু খায় সকল ব্যথা ভুলে।
দিনে দিনে সন্তান যখন বড় হতে চলে,
একই তালে দুঃখ বাড়ে ঐ মায়ের কপালে।
সন্তান কোলে নিয়ে যখন মা বসে ভাত খেতে,
অবুঝ শিশু হাগে-মুতে দেয় না তাকে খেতে।
ঐ শিশুটি কোন ব্যথায় কখনো কাঁদিলে,
তার দুঃখী মা ছোটে আসে সকল কর্ম ফেলে।
আড়াই বছর ঐ শিশুকে খাওয়ায় বুকের দুধ,
কোন সন্তান পারবে না সেই করতে ঋণের শোধ।
মায়ের জন্য গায়ের চামড়ায় জুতাও যে বানাবে,
একটি ফোঁটা দুধের ঋীণ শোধ নাহি তায় হবে।
তুমি অনেক বড় হলেও মায়ের তুমি শিশু,
তাইতো সে মা ছোটে আসে হলে তোমার কিছু।
অবহেলা ভুলেও তুমি ঐ মাকে করো না,
কভু তুমি বলিওনা মা কিছু বুঝনা।
ঐ দু:খি মা তোমার চেয়ে বেশি না বুঝিলে,
এতবড় জ্ঞানী তুমি কেমন করে হলে?
তোমার সুখের তরে মায়ে করে সদা যা,
তাহার সুখে কভু তুমি করেছ কি তা?
আঘাত পেলে পাগল বলে অবুঝ বলে মায়,
তবুও যেন সন্তান তার বদ্দোয়া না পায়।
দূরের যাত্রায় গিয়ে সন্তান বাড়ি না পৌঁছিলে,
চিন্তা করে মা যে তখন আরামের ঘুম ফেলে।
বিদেশেতে
গিয়ে সন্তান কষ্ট যদি পায়,
কেউ সে কথা না জানিলেও বুঝতে পারে মায়।
গরীব হলে অভুক্ত মা খেতে দেয় শিশুকে,
যদিও তার ক্ষধার জ্বালায় কষ্ট বাড়ে বুকে।
ভুল করিলে সন্তান তার করে সদা ক্ষমা,
আদর করে কোলে নিয়ে কাপালে দেয় চুমা।
মায়ের মতন আপন কেহ এই ভাবেতে নাই,
বেশি বেশি ভালোবাসি মাকে আমি তাই।
মায়ের পায়ের নিচে চির জান্নাত,
কখনোই তারে যেন না দেই আঘাত।
আদর সোহাগ দিয়ে বড় করে মায়,
সেই দুঃখী মাকে কি আর কষ্ট দেয়া যায়?
সন্তান বড় হলে ভুলে যায় মাকে,
অযথাই কষ্ট দেয় শুধু তাকে।
কোনভাবে
মাকে যে করিবে আঘাত,
পরকাল তবে তার হবে বরবাদ।
মায়ের প্রাণের দোয়ায় হওয়া যায় অলি,
সদা যেন তার সাথে ভালো কথা বলি।
মা-বাবাকে যদি সদা খুসি রাখা যায়,
পরকালে জান্নাত পাওয়া যাবে তায়।
মাকে সেবা করেছিল এক যে কশাই,
মুসা নবীর জান্নাত সঙ্গী হয়ে গেলেন তাই।
দুনিয়ার
সবে যদি তোমায় ভুলে যায়,
কোনদিন ভুলিবেনা ঐ দু:খী মায়।
সন্তানের
সুখের তরে মা থাকে ব্যাকুল,
ঐ মাকে কভু তুমি বুঝিওনা ভুল।
আল্লাহর
পরে শোন মা-বাবার স্থান,
কুরআন পড়িলে তুমি পাবে এ প্রমাণ।
অবুঝ শিশুটি যদি কেঁদে কিছু চায়,
কোনজন না বুঝিলেও বুঝে তার মায়।
স্বার্থের
তরে যদি সবাই ভুলে যায়,
স্বার্থহীন ভালোবাসা দিবে ঐ মায়।
মা জননী বয়স বেড়ে বৃদ্ধ কভু হলে,
সে সময় তাকে তুমি যেওনা’কো ভুলে।
বৃদ্ধাবস্থায় মাকে পেয়েও জান্নাত যে না পায়,
তার মত হতভাগা দুনিয়াতে নাই।
জান্নাত
জাহান্নাম সবি তার তরে,
তার সেবা কর তাই তুমি প্রাণ ভরে।
সন্তান কখনো ব্যথা যদি পায়,
সেই ব্যথায় ব্যাকুল হয় শুধু ঐ মায়।
কভু তার সন্তান অসুস্থ হলে,
রাত-দিন পাশে থাকে সবকিছু ফেলে।
পৃথিবীর
সেরা ধন ঐ দুঃখী মা,
কোনভাবে
তাকে তুমি কষ্ট দিও না।
সন্তান গুরুতর অসুস্থ হলে,
তাকে ছেড়ে আমায় নাও মায় কেঁদে বলে।
সন্তান কখনো মারা যদি যায়,
সবাই তা ভুলে গেলেও অশ্রু ফেলে মায়।
যে মা মোদের সুখের তরে করে জীবন নষ্ট,
সেই মাকে তবুও মোরা কেমনে দেই কষ্ট?
অতিরিক্ত
আবদার কর যদি মাকে,
না দিতে পারিলে মা নিভৃতে কাঁদে।
তবু মোরা বুঝি না দুঃখী মার ব্যথা,
কই সদা তার সাথে সব কটু কথা।
এই দুনিয়য় দেখ যাদের মা জননী নাই,
তার মত হতভাগা পৃথিবীতে নাই।
মাকে পেয়ে তবে কেন কষ্ট শুধু দাও?
যেই মায়ের ভালোবাসা না চাহিতেই পাও।
কষ্টের পর কষ্ট করে সন্তান পেটে ধরে,
কষ্ট নিয়ে কতশত মা যে গেছে মরে।
সেই মাকে কখনো কি কষ্ট দেওয়া যায়?
সর্বদা তাকে তুমি সম্মান করো তাই।
তোমার ব্যথার তরে কাঁদে ঐ মা,
তার মতো দরদী আর পাবে না।
ছেলেবেলা
পাশে যদি ঐ মা না থাকতো,
অকৃত্রিম
ভালোবাসায় কে জড়িয়ে রাখতো?
ভালোবাসাহীনে জীবন হতো মরু শুষ্ক,
দুঃখের সাগরে সদা তোমার জীবন ভাসতো।
মা হলো ভাই এই দুনিয়ায় খোদার সেরা দান,
খুসি রাখতে হবে সদা ঐ মায়ের প্রাণ।
সকল আদেশ শুনতে হবে মানতে হবে মাকে,
তোমার তরে কষ্ট যেন করতে না হয় তাকে।
সন্তান যদি করে কভু অপরের অন্যায়,
সম্মান গেলেও সন্তানকে তার ফেলে দেয়না মায়।
মাকে তুমি সর্বদা করিলে সম্মান,
আনন্দ আর খুসিতে তার ভরে যাবে প্রাণ।
মায়ের দোয়ায় হওয়া যায় বায়েজিদ বোস্তামী,
তাই তো তোমার মা জননী পীরের চেয়েও দামী।
সন্তান যদি কোন কাজে সফলতা পায়,
সবার চেয়ে খুসি হয় তার দুঃখী মায়।
ভালো কোন কৃর্তি সন্তানের হলে,
গর্বেতের
মায়ের বুক যায় দেখ ফোলে।
মায়ের মনে আশা থাকে সন্তান বড় হবে,
আমরা এখন বল দেখি জাগবো আর কবে?
সন্তানের
ব্যর্থতায় কষ্ট পায় মা,
ব্যর্থতার
কাজ তাই করা যাবে না।
সন্তানের
ভালো কাজে মায়ের ভরে মন,
তাই তো মোদের করতে হবে ভালো কাজের পণ।
আমার জীবন বিলিয়ে দেবো মায়ের সুখের তরে,
সুখ বিনে দুঃখে যেন যায় না সে মা মরে।
অনেক কষ্ট করেছেন মা মোদের সুখের তরে,
এমন সফল হবো যেন মায়ের মনটা ভরে।
কষ্ট হলেও তাকে সদা করবো যে সম্মান,
মোদের সুখের তরে সে জান করেছে কুরবান।
শান্তির
ঠিকানা মায়ের ঐ কোল,
তার সাথে করিওনা বেয়াদবি-ভুল।
শিশুর ঠিকানা দেখ মায়ের আঁচল,
সেখানেই
পায় শিশু শান্তি ও বল।
আদর সোহাগ দিয়ে বড় করে মায়,
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন