শনিবার, ১১ জুন, ২০২২

ছোট যে ভুলগুলো বড় বিপদের কারণ

ভূমিকা: আমরা চলার পথে বিভিন্ন ভুল করে থাকি। তবে মাঝে মাঝে কিছু ছোট ভুল  বড় ধরনের বিপদ বা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আজকে তেমনই কিছু ভুল ও তার প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন শুরু করি..

১) টেপের পানি পরীক্ষা না করা: প্রস্রাব-পায়খানার সময় শুরুতেই টেপের পানি পরীক্ষা না করে নিলে বড় ধরনের বিপদে পড়ে যেতে পারেন। কেননা প্রস্রাব-পায়খানার পর টেপ ছাড়তে গিয়ে যদি দেখেন পানি নেই তখন কি অবস্থা হতে পারে? তাই শুরুতেই টেপের পানি পরীক্ষা করে নিতে ভুলবেন না।

২) পশুর রশ্মি হাতে পেঁচিয়ে ধরা: অনেকেই গরু, মহিষ বা ছাগলের রশ্মি হাতে পেঁচিয়ে ধরেন। তাদের ধারণা এতেকরে পশুকে শক্ত করে ধরে রাখা যাবে। কিন্তু পশু যদি বিগড়ে যায় তবে কি তাকে এভাবে আটকে রাখা সম্ভব? বাস্তবে দেখা যায় যে, পশু বিগড়ে গেলে হাতে পেঁচানো রশ্মি দ্রুত খোলে ফেলা সম্ভব হয় না। ফলে  হাত বা হাতের আঙ্গুল ছিড়ে বিচ্ছিন্ন পর্যন্ত হয়ে যায়। তাই সাবধান! জন্তু-জানোয়ারের রশ্মি কখনো হাতে পেঁচিয়ে ধরবেন না।

৩) দা-বটি ভালোভাবে পরিষ্কার না করা: অনেক সময় মহিলারা দা-বটি দিয়ে কাজ করার পর তা ভালভাবে পরিষ্কার করে রাখেন না। ফলে শিশুরা বা অজানা কেউ তা দিয়ে কোনকিছু কেঁটে খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যায় ভোগে থাকে। তাই এগুলো দিয়ে কাজ করার পর ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখা উচিত।

৪) টিউবওয়েলের হাতল পরিষ্কার না রাখা: গ্রামের প্রায় অধিকাংশ পরিবারই বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েলের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু দেখা যায় যে, শিশুরা টয়লেটের পর ভালোভাবে হাত পরিষ্কার না করেই টিউবওয়েলের হাতল স্পর্শ করে তাতে ময়লা লাগিয়ে দেয়। পরে মা-বোনেরা এই হাতল ধরে রান্না-বান্নার পাতিল ধোয়ার সময় বা পানি নেওয়ার সময় হাতে ময়লা লেগে যায় আর এই রান্না খেয়ে পরিবারের লোকেরা পেটের রোগে ভোগে থাকেন।

৫) ধুম পানের আগুন থেকে বিপদ: বিড়ি-সিগারেট খাওয়ার পর তার আগুন ভালোভাবে না নিভিয়ে ফেলে দিলে বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে। বিশেষত বৈশাখ মাসে গ্রামের এখানে-সেখানে খড় ছড়ানো থাকে। তখন সাবধানতা অবলম্বন না করার কারণে প্রায়ই খড়ের স্তুপ বা বাড়ি ঘরে আগুন লেগে যাওয়ার ঘটনা দেখা যায়। ধুম পানের পর সতর্কতার সাথে এর আগুন নিভিয়ে ফেলুন।

৬) শিশুদেরকে সাতার না শেখানো: গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই শিশুদেরকে সাতার শেখানোর ব্যাপারে গুরুত্ব দেন না। ফলে দেখা যায় এই সামান্য ভুলের কারণে শিশুরা পানিতে ডুবে মারা যায়। তাই প্রতিটি পরিবারের উচিত শিশুদেরকে সাতার শেখানোর ব্যাপারে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া।

৭) হাই কমোড ব্যবহার করা: নিতান্তই কোন সমস্যা না থাকলে হাই কমোড ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা হাই কমোড শীতের দিনে থাকে আরও বেশি শীতল এবং গরম দিনেও থাকে আরও বেশি গরম। তাছাড়া হাই কামোডের ব্যবহার পাইল রোগের কারণ। কেননা তাতে হেলান দিয়ে বসার কারণে গুজ্যদ্বার ক্রমান্বয়ে বাঁকা হতে থাকে।

৮) কাঁচের গ্লাস ব্যবহার করা: কাঁচের গ্লাসে পানি পান করার সময় মুখের দাঁতগুলো বিকৃত অবস্থায় অপরের সামনে দৃশ্যমান হয়। তাছাড়া কাঁচের গ্লাস সাধারণত পুরো হওয়ার কারণে তা দিয়ে পানি পান করাও আরামদায়ক হয় না। তাই কাঁচের গ্লাস পরিহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

৯) রান্না ঘরের দরজা না রাখা: বিশেষত শহরের অধিকাংশ কিচেন রুমের দরজা রাখা হয় না। এতেকরে পুকা-মাকড়, তেলাপুকা ও বিড়ালের হাত থেকে খাবার নিরাপদ রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। কিন্তু আপনি চিন্তা করলে দেখবেন যে, কিচেন রুমের দরজাটাই বেশি জরুরী।

১০) টিনের ঘর ব্যবহার করা: টিনের ঘর শীতের দিনে যেমন দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায় তেমনি গরম দিনেও অসহনীয় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তাই যাদের সামর্থ আছে তাদেরকে বলবো টিনের ঘরকে না বলুন, একটু কষ্ট হলেও পাকা ঘর তৈরী করুন। গরম দিনে পাকা ঘরের মেঝে হবে আরামদায়ক আবার শীতের দিনে মেঝেকে কার্পেট বা কাপড় দিয়ে ঢেকে সহজেই মেঝের শীত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

১১) ব্যাথাযুক্ত স্থান ভালোভাবে মালিশ না করা: শীরের কোথাও ব্যাথা পেলে সেই স্থান ভালোভাবে মালিশ করা উচিত। এতেকরে ভবিষ্যতে সেই স্থানে ব্যাথা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু আপনি যদি ভালোভাবে মালিশ না করেন তবে অসুস্থতার সময় কিংবা বয়স বেড়ে গেলে সেই পুরোনো ব্যাথা আবার নতুন করে ভেসে উঠে।

১২) রাস্তা ঘেষে বাড়ি নির্মাণ: ঘর-বাড়ি রাস্তার সাথে ঘেষে নির্মাণ করা হলে অনেক ধরনের অসুবিধা এবং বিপদ আপদে পড়তে হতে পারে। যেমন- চুর-ডাকাতির ভয়, অতিরিক্ত ধূলো-বালির আনাগুনা, শব্দ দূষণ ইত্যাদি। তাছাড়া ছোট ছেলেমেয়েদের গাড়ি এক্সিডেন্টের ভয় থাকে। তাই ঘর-বাড়ি রাস্তা থেকে সামান্য দূরে নির্মাণ করা উচিত।

১৩) গোসলখানা পরিষ্কার না রাখা: গ্রামের অধিকাংশ গোসলখানা পরিষ্কার রাখা হয় না এবং এগুলোতে শ্যাওলা পড়ে পিচ্ছিল হয়ে থাকে । ফলে প্রায়শইঃ ছোট ছেলে-মেয়েরা পড়ে গিয়ে ব্যাথা পায়। অনেক সময় হাত পা ভেঙ্গেও ফেলে। তাই অলসতা ভেঙ্গে মাঝে মাঝে গোসলখানা পরিষ্কার করা প্রয়োজন।

১৪) ঘর্মাক্ত কাপড় সাথে সাথে না ধোয়া: অনেকেই বাইরে থেকে ফিরে শরীরের ঘর্মাক্ত কাপড়-চোপড় ফেলে রাখে। ফলে এগুলোতে সহজেই দিতি পড়ে যায় এবং কাপড় পরিধানের অযোগ্য হয়ে পড়ে। তাই বাইরে থেকে ফিরে এগুলো সাথে সাথেই ধুয়ে পরিষ্কার করা দরকার।

১৫) খোলা ছাদে পানির ট্যাংকি রাখা: আমাদের দেশে প্রায় অধিকাংশ দালানের ছাদে খোলামেলা ভাবে পানির ট্যাংকি রেখে দেওয়া হয়। এতেকরে ট্যাংকের পানি শীতের দিনে কনকনে শীতল হয়ে থাকে এবং গরম দিনে প্রচন্ড উত্তপ্ত থাকে। এই বিরম্বনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য ট্যাংকির জন্য ছাদযুক্ত দেয়াল তৈরি করা অথবা মাটির পুরু স্তর দিয়ে ট্যাংকের চারপাশ ঢেকে দেওয়া এবং উপরে ছাদ নির্মাণ করে দেওয়া প্রয়োজন।

১৬) জিন্সের প্যান্ট পরিধান: জিন্সের প্যান্ট পরিধান করলে সাধারণত বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন- ঠিকমত বসা যায় না, প্রস্রাব পায়খানার সময় অসুবিধা তৈরি হয়, শরীরে ঠিকভাবে বাতাস প্রবাহিত হয় না ইত্যাদি। তাছাড়া জিন্সের প্যান্ট মূলত কোন আরামদায়ক পোষাকও নয়। শুধুমাত্র ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে, ভুল বুঝিয়ে এই জিন্সের মার্কেটটি ধরে রেখেছে। তাই এই জিন্স পরিহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

১৭) টয়লেটের পর হাত ভালভাবে ধুয়ে পরিষ্কার না করা: টয়লেটের পর হাত ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে সেই ময়লা খাবারে লেগে পেটের সমস্যা দেখা দেয় ও শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই টয়লেট শেষে ভালোভাবে হাত ধুয়ে পরিষ্কার করা দরকার।

১৮) দিনের শুরুতে বার ও তারিখ জেনে না নেয়া: যে কোন সময়েই দিন ও তারিখের বিষয়ে কেউ জানতে চাইতে পারে অথবা নিজের জন্য এই তথ্য দরকার হতে পারে। আর সময় মত এটা জানা না গেলে ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাই দিনের শুরুতেই বার ও তারিখ জেনে রাখা প্রয়োজন।

উপসংহার: লেখাটি ভালো লাগলে লাইক দিয়ে পাশেই থাকুন এবং শেয়ার করে অন্যকেও জানার সুযোগ করে দিন। আজ তাহলে এখানেই শেষ করলাম। সবাইকে ধন্যবাদ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন