ভূমিকা: শিশুদের মন খুবই কুমল হয়ে থাকে। তাদের মগজকে কাদার সাথে তোলনা করা যায়। নরম কাদাকে যেমন সহজেই যে কোন আকৃতি দেয়া যায়, তেমনি সঠিক পরিচর্যা ও যত্নের মাধ্যমে একজন মানব শিশুকেও যে কোন বিষয়ে পারদর্শী করে গড়ে তোলা সম্ভব। শিশুদের শিক্ষাদান কৌশল হল একধরনের আর্ট বা শিল্প। একজন দক্ষ শিল্পী যেমন তার পারদর্শীতার
মাধ্যমে কাগজে সুন্দর চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারে, তেমনিভাবে একজন যোগ্য শিক্ষক বা অভিভাবকও তার শিশুকে সঠিক
গাইডলাইনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে বিকশিত করতে পারে। যদি একজন অভিভাবক বা শিক্ষক নিম্নোক্ত
বিষয়গুলোর প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেন তবে তিনিও একজন দক্ষ শিল্পীর মতোই শিশুকে লক্ষস্থলে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবেন:-
ভালো কাজের
প্রশংসা: ভালো কাজে যদি সাফল্যের পরিমাণ সামান্যও হয় তবুও আপনার শিশুর প্রশংসা করুন। তাকে ঐ ধরনের কাজ আরও বেশি করার জন্য উৎসাহিত করুন। দেখবেন কাজটি কঠিণ হলেও দিন দিন ঐ কাজে শিশু আরও বেশি মনোনিবেশ করছে। ফলে একটা সময় ঐ কাজটিতে শিশু পারদর্শী হয়ে উঠতে পারবে। কোন কাজে শিশুরা প্রশংসিত হলে ঐ কাজে শিশুদের আত্মবিশ্বাস
বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং কাজটি আরও দক্ষতার সাথে করতে সক্ষম হয়। সুতরাং বলা যায়, প্রশংসার সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে একজন শিশুকে তার লক্ষ্যস্থলে
অপ্রতিরোধ্য করে গড়ে তোলা সম্ভব। আবার এই প্রশংসার অপব্যবহারের
মাধ্যমেই একটি শিশুকে নরপিচাশের চেয়েও ভয়ঙ্কর করে
তোলা সম্ভব।
ধমক নয়
নিরুৎসাহিত করুন: শিশুরা কাজে ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই তাদের কাজে বা আচরণে ভুল হলে প্রথমেই রেগে যাওয়া উচিত নয়। বরং প্রথমে তাকে মন্দ কাজে নিরুৎসাহিত
করা এবং এই মন্দ কাজের খারাপ পরিণতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া উচিত। এতে শিশুটি কাজটি না করার যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাবে। ফলে আশা করা যায় পরবর্তীতে শিশু ঐ কাজ আর করবে না।
তিনবার সংশোধন রুল: যে কোন কাজে শিশুদেরকে
পর পর তিনবার বুঝিয়ে সংশোধনের চেষ্টা করা উচিত। তারপরও যদি তার দ্বারা উক্ত কাজটি ঘটে তবে তাকে ধমক দেওয়া যেতে পারে। কেননা, তখন তার শয়তানি ইচ্ছাই তাকে উক্ত কাজটি করতে প্ররোচিত করছে বলে ধরে নেওয়া হবে। কিন্তু শিশুকে সংশোধনের সুযোগ না দিয়ে প্রথমেই তাকে ধমক দেওয়া হলে শিশুরা উক্ত কাজ না করার কারণ খুজে নাও পেতে পারে বা কাজের মন্দ পরিণতির কথা নাও জানতে পারে ফলে পিতা-মাতা বা অভিভাবকের
প্রতি শিশুর অভিমাণ তৈরি হতে থাকবে এবং দিন দিন তা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এরূপ চলতে থাকলে শিশুটি অত্যন্ত জেদী হয়ে গড়ে উঠবে এবং হঠকারী আচরণের অধিকারী হবে।
গালি নয়
ধমক বা শাস্তি: শিশু যদি বড় ধরনের কোন অন্যায় করেই ফেলে, তবে তাকে গালি দেবেন না। কারণ গালি দিলে সাময়িকভাবে
যদি থেমেও যায় তবুও তাকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। কেননা উক্ত গালি শিশুটি শিখে নেবে এবং একসময় এই গালি আপনাকে বা প্রতিবেশিকে
দিয়ে বসবে। অর্থাৎ শিশুটিও গালিগালাজে
অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। তাই তাকে গালি না দিয়ে ধমক বা হালকা শাস্তি দিন। এতেকরে আশা করা যায়, শিশুটি গালিও শিখবে না এবং মন্দ করতে ভয় পাবে বা তা থেকে বিরত থাকবে।
অভিভাবকের আচরণ: শিশুরা সাধারণত অনুকরণ প্রিয় হয়। অর্থাৎ শিশুদের সামনে বড়রা যে আচরণ করে থাকে শিশুরা তার অনুকরণ করে থাকে। তাই প্রতিটি অভিভাবকের উচিত নিজেদের আচরণের প্রতি দৃষ্টি দেয়া। আপনি শিশুর ভালো আচরণ প্রত্যাশী
কিন্তু আপনার নিজের আচরণই যদি ভালো না হয় তবে শিশুরা ভালো আচরণ শিখবে কোথা থেকে?
পরিসমাপ্তি: কথায় আছে, আজকের শিশুরাই আগামীর সুনাগরিক। শিশুদেরকে উপযুক্ত শিক্ষার আলোকে গড়ে তুলতে পারলে তারা দেশটাকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারবে। তাই অভিভাবদের
উচিত ধৈর্য্যের বৃক্ষ হয়ে শিশুদের প্রতিপালন এবং নৈতিকতা ও সুশিক্ষা প্রদান করা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন