ভূমিকা: পানি ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব অসম্ভব। তাই বলা হয়ে থাকে পানির অপর নাম জীবন। একটি গ্রহে প্রাণের সন্ধান মিলবে কিনা বা গ্রহটিতে মানুষের বসবাস সম্ভব হবে কি-না তা জানতে বিজ্ঞানীরা প্রথমেই গ্রহটিতে পানির সন্ধান করে। কেননা পানি ছাড়া যেমন প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয় তেমনি পানিবিহীন গ্রহে মানুষের জন্য বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়।
খাবারে পানির বিকল্প নেই:
আমরা প্রতিনিয়ত কত রকমের খাবার খাই তার হিসাব নেই। আবার অঞ্চল ভেদে মানুষের খাবারের হরেক রকম পার্থক্য দেখা যায়। সুতরাং বলা যায় আপনি শত প্রকারের খাবার বর্জন করলেও ভিন্ন আরেক ধরনের খাবার খেয়ে নিশ্চিন্তে জীবন পার করে দিতে পারবেন। কিন্তু একটি জায়গায় সবাই এক। তা হলো খাবারে পানির ব্যবহার। আপনি যা কিছুই খান না কেন সাথে পানি রাখতেই হবে। এর বিকল্প কেউ চিন্তাই করতে পারে না। এজন্য পানিকে বলা যায়া খাবারেরও খাবার। একটানা কয়েকদিন একই রকম খাবার খেলে মুখে অরুচি ধরে যায়। কিন্তু আমরা যে প্রতিনিয়ত পানি পান করছি- একারণে অরুচি ধরেছে এমন কোন কথা কখনো কেউ শুনতেও পায় নি। আবার একটি খাবার খেতে সাথে কত রকমের উপাদানের প্রয়োজন হয়- লবণ, হরেক রকমের মশলা, আরও কত কিছু! কিন্তু পানি এমন এক ব্যতীক্রম খাবার/পানীয় যার স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য কোন কিছু মেশানোর চিন্তা করতে হয় না। এই পানি সর্বদা এমনিতেই স্বাদে পরিপূর্ণ। বরং এর সাথে কিছু মেশালেই পরিপূর্ণভাবে তৃষ্ণা নিবারণ করা যায় না।
শারীরিক প্রশান্তিতে চাই পানি:
আমরা কোন কাজে কঠোর পরিশ্রম করলে আমাদের দেহ ক্লান্ত ও অবসাদ হয়ে যায়। শরীর ঘেমে একাকার হয়ে যায় এবং শরীরে দূর্বলতা অনুভব হয়।এই ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে পানির বিকল্প কিছু নেই।পানির শীতল পরশে ক্লান্ত দেহ-মান শান্ত ও ফুরফুরে হয়ে উঠে।
পরিচ্ছন্নতার মূল উপাদান পানি:
আমাদের শরীরে ময়লা লেগে গেলে প্রথমেই দরকার পানি। তেমনি কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করতেও পানির প্রয়োজন। সাবান না থাকলে হয়তো পরিষ্কার করা কিছুটা কষ্টসাধ্য হবে, কিন্তু পানি ছাড়া তা একেবারেই অসম্ভব। আমাদের চারপাশের সবকিছু পারিচ্ছন্ন রাখার এবং পরিষ্কার করার মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় পানি।
পানির অবস্থা ও বিস্ময়:
পানিই একমাত্র উপাদান যা প্রকৃতিতে তিনটি অবস্থাতেই বিরাজমান।যথা- কঠিণ, তরল ও বায়বীয়। পানিকে উত্তপ্ত করতে থাকলে তা আয়তনে বেড়ে যায় এবং পানির চেয়ে হালকা হয়ে যায় আবার শীতল করে বরফে পরিণত করলেও তা পানির চেয়ে আয়তনে বেড়ে যায় এবং হালকা হয়ে যায়। ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করলে আপনি অবাক হতে বাধ্য।
প্রকৃতির পানি পরিশোধন প্রক্রিয়াঃ
পানি সবকিছুকে পরিষ্কার করলেও পানিকে পরিশাধন ও বিশুদ্ধ করা আমাদের জন্য খুবই কঠিণ কাজ। কিন্তু এই পানিকে উত্তমভাবে পরিষ্কার করতে পারে একমাত্র প্রকৃতিই। রোদের উত্তাপে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি গ্যালন পানি বাষ্প হয়ে উপরে উঠে। বাষ্প হলে পানির কণাগুলো এতই ক্ষুদ্র হয় যে এর সাথে কোন রোগ জীবাণু থাকতে পারে না।তাই বৃষ্টির পানি হল প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সবচেয়ে মৃদু ও নিরাপদ। আবার এই পানি যখন বৃষ্টির মাধ্যমে মাটিতে পরে তখন মাটি তাকে এমনভাবে ছেকে নিম্নদেশে শোষণ করে নেয় যে, তার সাথে কোন ময়লা আবর্জনা ও জীবাণূ প্রবেশ করতে পারে না। ফলে ভূ-গর্ভের পানি হয় পরিষ্কার, নিরাপদ ও জীবাণুমুক্ত।চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন যে, আমাদের প্রতিদিনের মল-মূত্র ও পঁচা বাশি খাবারের পানিও বাষ্পাকারে পরিশোধিত হচ্ছে এবং কিছু পানি মাটির ছাকুনি প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত হচ্ছে। প্রক্রিয়াগুলো চিন্তা করলে আপনাকে অবাক হতেই হবে।
পানির গঠনে আছে অবাক তথ্য:
যে পানি আমাদের জীবনে এত গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য সেই পানি মূলত মৌলিক কোন উপাদান নয়। এই পানি গঠিত হয়েছে দুটি গ্যাসিয় পদার্থের সমন্বয়ে! যেই পানিকে আমরা ধরতে পারি স্পর্শ করতে পারি সেই পানি দুটি গ্যাসিয় পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত, যাদেরকে ধরা যায়না, স্পর্শ করা যায় না এবং খালি চোখে দেখাও যায় না! আপনি যদি এগুলো ভেবে অবাক হন তবে আপনার জন্য রয়েছে আরও কিছু বিস্ময়কর তথ্য। যেই পানি ছাড়া আমাদের জন্য তৃষ্ণা নিবারণ সম্ভব হয় না সেই পানির উপাদানের একটি হলো অক্সিজেন (বাতাসে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের পরিমাণ যথাক্রমে ২০.৯৫% ও ০.০০০০৫৫%) । এই করোনাকালীন সময়ে অক্সিজেনের গরুত্ব মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেলেও পুরোপুরি এর গুরুত্ব অনুধাবন করা মানুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। খাবার এবং পানি ছাড়া হয়তো আপনি কয়েকদিন বেঁচে থাকতে পারবেন, কিন্তু অক্সিজেনা ছাড়া এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। যেই পানি আমাদের তৃষ্ণা মিটায় এবং শরীরের ক্লান্তি দূর করে সেই পানির উপাদানগুলোই আবার বতাস হয়ে আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসে প্রাণ সঞ্চার করছে।শীতকালে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে আমাদের শরীর ফেটে যায়। আর যদি বাতাসে জলীয় বাষ্প একেবারে না থাকে তবে বাতাসের এক ঝাপটায় আমাদের দেহ ফেটে চৌচির হয়ে যাবে।
পানি সম্পর্কিত আরও কিছু তথ্য:
পানিকে বলা যায় অফুরন্ত শক্তির এক বিশাল ভান্ডার। পৃথিবীর মোট বিদ্যুতের প্রায় ২০% পানি থেকে উৎপাদিত হয় এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রায় ৮৮% উৎপাদিত হয় এই পানি থেকেই।পানি জীববৈচিত্রে পরিপূর্ণ এক উপদান। পৃথিবীর প্রায় ৯৪% প্রাণী বাস করে পানিতে।পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ প্রাণী হলো নীল তিমি, যা পানিতে বসবাস করে।উচ্চতার বিচারে সবচেয়ে বড় পর্বতটি রয়েছে পানির নিচেই। এর নাম হলো মওনা কিয়া। যার মোট উচ্চতা ৩৩ হাজার ৫০০ ফুট। এটি এভারেস্টের চেয়েও প্রায় ১ মাইল বেশি উঁচু। মানুষের ব্যবহৃত সবচেয়ে বড় যানবাহনগুলো মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন জাহাজ, যেগুলো চলে শুধুমাত্র পানিতেই।
পানি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুধাবন:
আমরা জানি যে, দুটি হাইড্রোজেন অণু এবং একটি অক্সিজেন অণুর (H2O) সমন্বয়ে পানি গঠিত হয়। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, এই হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনকে একটি পাত্রে লক্ষ কোটি বছর একত্রিত করে রাখলেও পানি তৈরি হবে না যদি না তাতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়। আচ্ছা, এত বিশাল পরিমাণ পানি ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হলো কিভাবে? নাকি এমনি এমনিই হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন একত্রিত হয়ে তাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হয়ে পানিতে পরিণত হলো? এটা কি আদৌ সম্ভব?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন