ভূমিকাঃ
মানুষ ও জীবজগতের জন্য বাতাসের গুরুত্ব বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। বাতাস ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব কল্পনা করাও সম্ভব নয়। মানব জীবন ও প্রাণীজগৎকে বাতাস প্রতিটি মূহুর্তে জীবন সঞ্চার করে যাচ্ছে। আমাদের জীবন ও পরিবেশ রক্ষায় বাতাসের কার্যক্রমগুলো লক্ষ করলে আপনি বিস্ময়ে অভিভূত হতে বাধ্য। এখানে প্রাণীজগৎ ও পরিবেশ রক্ষায় বাতাসের ভূমিকা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে নিন-
জীব জগতের জন্য বাতাস এমন এক অত্যাবশ্যকীয় উপাদান, যা ছাড়া কোন জীবের এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আমরা যদি বাতাসকে পানির মতো কল্পনা করি তাহলে বুঝতে পারবো যে, আমরা সবাই বাতাসের মহা সমুদ্রে তলিয়ে আছি। আমরা পৃথিবীতে যত খালি জায়গা-ই দেখিনা কেন, প্রকৃত পক্ষে সেগুলো একেবারে খালি নয়। বরং সমস্ত ফাঁকা জায়গা বতাস দ্বারা পরিপূর্ণ। বাতাসের দ্বারা সংঘটিত কর্মকান্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করলে বিজ্ঞান প্রিয় যে কোন মানুষ অবাক হতে বাধ্য।শুধু তাই নয় প্রতিটি পর্যবেক্ষণে নতুন নতুন তথ্য ও গবেষণার উপাদান সংগ্রহ করতেও সক্ষম হবে। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের আলোকে এবং সীমিত তথ্যের ভিত্তিতে বাতাসের কিছু কর্মকান্ড নিচে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
পানি বিশুদ্ধকরণে বাতাসের ভূমিকাঃ
প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সবচেয়ে মৃদু পানি হলো বৃষ্টির পানি। প্রতি মুহূর্তে কোটি কোটি গ্যালন পানি বাষ্পে পরিণত হচ্ছে। আর এই বাষ্প কণাগুলোকে বাতাস পরিবহন করে উপরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ফলে তা মেঘে পরিণত হচ্ছে এবং বৃষ্টি হয়ে আমাদের জমিগুলো ঊর্বর করছে। একটা সময় ছিল যখন মানুষ খাবার পানি এবং ফসল উৎপাদনের জন্য বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করতো।
দূর্গন্ধ দূরীকরণে বাতাসের ভূমিকাঃ
প্রতিনিয়ত কলকারখানার বর্জ্যের কারণে ব্যাপক বায়ূ দূষণ ও দূর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিদিন আমাদের উচ্ছিষ্ট খাবার পঁচে এবং বিভিন্ন প্রাণি মরে বাতাসে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বন জঙ্গলের মৃত প্রানী এবং তাদের মলমূত্রের দূর্গন্ধ ততক্ষণ পর্যন্ত ছড়াচ্ছে যতক্ষণ না তা পচে একেবারে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে। এই যে, দীর্ঘ সময়ব্যাপী বাতাসে দূর্গন্ধ ছড়ালো সেই দূর্গন্ধ যদি বাতাসে সর্বদা মিশেই থাকতো তাহলে আমাদের জন্য এই বাতাসই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়াতো। একটু ভেবে দেখুন পৃথিবীর শুরু থেকে প্রতিনিয়ত বাতাসে কত রকমের দূর্গন্ধ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু একটু পর বা দূর্গন্ধের উৎস থেকে খানিকটা দূরে এই গন্ধ আমরা পাই না। এই গন্ধ তাহলে কোথায় মিলিয়ে গেল? মূলত দূর্গন্ধের জন্য দায়ী হলো পচনশীল বস্তু থেকে নির্গত বিভিন্ন গ্যাস। এই গ্যাস বাতাসের চেয়ে হালকা হওয়ায় বাতাস এগুলোকে পরিবহন করে মহাশূন্যে নিক্ষেপ করে। তাই কিছুক্ষণ পর পৃথিবীর কোথাও সৃষ্ট দূর্গন্ধের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায় না। এভাবেই দূর্গন্ধ থেকে প্রতিনিয়ত বাতাস আমাদের রক্ষা করে চলছে।
প্রতিটি নিঃস্বাসে চাই বাতাসঃ
খাবার ও পানীয় ছাড়া হয়তো কিছুদিন বেঁচে থাকা যাবে, কিন্তু বাতাস ছাড়া এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আমরা আমাদের প্রতিটি নিঃস্বাসে যে মহামূল্যবান অক্সিজেন গ্রহণ করছি, সেই অক্সিজেনও মূলত বাতাসেরই একটি উপাদান। বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় ২০.৯৫%। যদিও মহামারী করোনার কারণে মানুষ অক্সিজেনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা হারে হারে টের পেয়েছে। কিন্তু এর প্রকৃত গুরুত্ব অনুধাবন করা মানুষের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। রোদের প্রখর উত্তাপে মানুষের দেহ ক্লান্ত হয়ে পড়লে বাতাসের শান্তির পরশ দেহ-মনকে প্রশান্ত করে দেয়।
অমিত সম্ভাবনার দোয়ার হল বায়ুশক্তিঃ
বায়ুশক্তি হল মানুষের জন্য এক অমিত শক্তির ভান্ডার। বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ আজ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ প্যারাসুটের মাধ্যমে নিরাপদে অবতরণের কৌশল আয়ত্ব করে নিয়েছে। যানবাহনের চাকায় বায়ুশক্তি ব্যবহার করে আরামদায়ক ভ্রমণ সহায়ক চাকা তৈরি করে নিয়েছে, নৌকার পালে বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সহজে পারাপারের ব্যবস্থা করে নিয়েছে। যন্ত্রে বায়ুশক্তি ব্যবহার করে মানুষ আজ ঘর-দরজা পরিচ্ছন্নের কাজ করে নিচ্ছে। আরও অনেক কিছুই করছে এই বায়ুশক্তি ব্যবহার করে। তারপরও বলা যায় মানুষ কার্যকরভাবে এখনো বায়ুশক্তির দশ পারসেন্টও ব্যবহার করতে পারছে না।
বায়ুতে ছড়ায় রোগঃ
প্রতিটি বস্তুরই ভালো ও মন্দ দুটি দিক রয়েছে। বাতাস যেমন আমাদের বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তেমনি এই বাতাসে ভর করে ছড়িয়ে থাকে বিভিন্ন ছোয়াছে রোগের জীবাণু। আবার বাতাসে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে মানুষের ঘর-বাড়ি আর দালান কোঠা নিমিষেই উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে।
শেষকথাঃ
লেখাটি পড়ে যদি নতুন কিছু জেনে থাকেন তবে কমেন্টে আপনার মতামত জানিয়ে দিতে পারেন। আপনাদের উৎসাহ পেলে আরও কিছু নতুন বিষয় ও চিন্তা শেয়ার করা যাবে। লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে রাখতে পারেন। এতেকরে আপনার বন্ধুরাও জানার সুযোগ পাবে। সবশেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে এথানেই শেষ করছি। -আল্লাহ হাফেজ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন