মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০২৪

মশা প্রতিরোধের বৈজ্ঞানিক উপায়, জেনে রাখা জরুরী



মশার প্রতিটি কামড় যেন আমাদের জন্য বুকামির দণ্ড! কারণ, আমাদের চিন্তার সময় নেই তাই কয়েল কিনে একদিকে টাকা উড়াই আর ফুসফুসের বারোটা বাজাই, তবুও এর থেকে কখনো মুক্তি মিলে না কিন্তু আজ আমি আপনাদের সাথে এমন একটা কৌশল শেয়ার করবো, যা অনুসরণ করলে আপনাকে মশা সহজে খুজেই পাবে না আর যদি খুজে না পায় তবে কামড়াবে কিভাবে? তবে মশাকে প্রতিরোধ করতে হলে আমারদেরকে প্রথমে জানতে হবে মশা সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা, তবেই তাকে টেক্কা দেওয়া সহজ হবে চলুন তাহলে সংক্ষেপে জেনে নিই মশার আদ্যোপান্ত কাহিনী:-

মশার আদ্যোপান্ত জানার গুরুত্ব: যুদ্ধের ময়দানে সবাই তার শত্রু সম্পর্কে তথ্য জানতে চায়। কারণ, শত্রুর গতিবিধি, সামর্থ দূর্বলতা সম্পর্কে যতবেশি জানা যায়, শত্রুকে মোকাবেলা এবং ঘায়েল করাও ততবেশি সহজ হয়ে ওঠে

মশার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ: আপনি চিন্তা করলে দেখবেন যে, মশা আমাদেরকে সারাদিন বিরক্ত করে না। তার দাপট থাকে সন্ধা থেকে সকাল অবধি। সূর্যের আলো ফুটে ওঠার সাথে সাথেই তার সকল বাহাদুরি শেষ হয়ে যায়। তখন সে লুকিয়ে পড়ে কোন এক অন্ধকারচ্ছন্ন জায়গায় এবং সন্ধার অপেক্ষা করতে থাকে। এই বিশ্লেষণ থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে,

. মশার জন্য আলো একটা বাধা, আর এসময় সে আমাদেরকে বিরক্ত করতে পারে না। সুতরাং দিনের বেলায় এবং আলোময় স্থানে আমরা সম্পূর্ণ নিরাপদ

. মশাকে প্রতিরোধ করতে হলে আমাদেরকে শুধুমাত্র সন্ধা থেকে সকাল পর্যন্ত চিন্তা করতে হবে।তাছাড়া আমরা বাইরে থাকলে এবং কাজে ব্যস্ত থাকলে এমনিতেও মশা আমাদেরকে বিরক্ত করার চান্স পায় না

. মশার বাহাদুরী শুধুমাত্র ঘরে এবং অন্ধকারময় আলোহীন স্থানে

মশার জন্ম বেড়ে উঠার পরিবেশ: মশা জন্মানোর উপযুক্ত জায়গা হলো- আবদ্ধ পানি, স্যাতস্যাতে জায়গা এবং ঝোপঝাড়।এসব জায়াগা যেমন মশা উৎপাদনের কেন্দ্রস্থল তেমনি এগুলো হলো মশার উপযুক্ত আশ্রয়স্থল বা বেড়ে উঠার অনুকুল পরিবেশ। তাই বাড়ির এই জায়গাগুলোর উপর দৃষ্টি রাখা জরুরী

উপরের পয়েন্টগুলো যদি আপনি বুঝে থাকেন তাহলে এটা নিশ্চয়ই ধরতে পেরেছেন যে, মশা উৎপাদনের জায়গা, আনাগুনার স্থান এবং দাপটের সময় আমরা চিহ্নিত  করে ফেলেছি। সুতরাং তাকে কুপোকাত করা এখন আমাদের জন্য অনেকটাই সহজ হবে

আমার ঘরে অন্যের আধিপত্য: চিন্তা করে দেখুন, যেই ঘরটি আপনি নিজের টাকায় বানিয়েছেন একটু শান্তিতে বসবাস করার জন্য, একটু নিশ্চিন্তে ঘুমানোর আশায়, ঠিক সেখানেই হতচ্ছাড়া মশা আপনার ঘুমকে হারাম করতে সারারাত বিরক্তিকর গান আর অযাচিত ইনজেকশনের অভিযান চালায়

আমাদের ভুলগুলো: আমাদের অবস্থা এমন যে, শত্রুর জন্য প্রবেশের পথ খোলা রেখে শত্রু মোকাবেলার লাড়াই করে যাই। যেই দরজা এবং জানালা দিয়ে মশা ঘরে প্রবেশ করছে তা মশার জন্য উন্মুক্ত রেখে মশারি টানানো এবং কয়েল পুড়ানোতে কতটুকু যে লাভ হয় তা তো সবাই জানেন

এবার হোক প্রতিরোধ: এই মশা, যা আপনার ঘরে এসে আপনাকে প্রতি রাত বিরক্ত করছে, তাকে কে ঘরে ডেকে আনে? আপনি নিজেই কি?  একটু ভেবে দেখুন, মশার এমন কোন ক্ষমতা নেই যে, আমরা তাকে ঘরে আসতে বাধা দিলে সে দেয়াল ফুটো করে আসতে পারবে। আমাদের চিরশত্রু মশা আমাদের ঘরে প্রবেশ করে চিহ্নিত কয়েকটি পথ দিয়েই। যেমন- দরজা, জানালা এবং ওয়ালের বায়ুবাহী পথ। (এই পদ্ধতিটি শুধুমাত্র পাকা বাড়ির জন্য প্রযোজ্য) আর এগুলোর সংখ্যা এত বেশি নয় যে তাতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করা খুব কঠিণ কাজ। সুতরাং বলা যায় মশা চলাচলের পথ খুবই সীমিত। আর নির্দিষ্ট কিছু সময়ে এই পথগুলোতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করে রাখলেই মশা আর ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না

মশার জন্য নীল নকশাঃ ইতিমধ্যে আমরা মশার সমস্ত গতিবিধি সম্পর্কে অবগত হয়ে গেছি। এখন সবগুলো বিষয়কে সামনে রেখে আমরা কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো, যেন মশা আমাদের ঘরে প্রবেশের সুযোগ না পায়। তাহলে চলুন বিষয়গুলো জেনে নিই-

. যেহেতু মশা দরজা-জানালা দেয়ালের বায়ু নির্গমনের পথ ছাড়া প্রবেশ করতে পারে না, তাই সন্ধা হওয়ার একটু আগেই মশারি বা মশারীর ন্যায় জালিকা পর্দা দিয়ে দরজা-জানালা ঢেকে দিতে হবে।ঢেকে দেয়ার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন তা টান টান না হয়। কেননা, টান টান করে ঢেকে রাখলে মশা সহজেই ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। বিশেষ করে ঘরে প্রবেশের মূল দরজায় কয়েক স্তর বিশিষ্ট জালিকা পর্দা ব্যবহার করলে এবং তা মেঝের সাথে কিছুটা লেপ্টানো অবস্থায় রেখে দিলে মশা ঘরে প্রবেশের সুযোগ পাবে না

. প্রতিদিন ঢেকে দেয়ার পূর্বে কিছুক্ষণ ঘরের ফ্যানগুলো ছেড়ে রাখুন এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাগুলোতে বাতাসের ঝাপটা দিয়ে মশাগুলোকে ঘর থেকে তাড়িযে দিন

. সূর্যোদয় হলে এবং চারদিকে আলো ছড়িয়ে পড়লে দরজা-জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। এতেকরে ভেতরে আলো-বাতাস প্রবেশ করবে এবং ঘর শুষ্ক থাকবে। আবার আলোর উপস্থিতির কারণে মশাও বিতাড়িত হবে

. বাথরুম, রান্নাঘর ইত্যাদিতে পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। এগুলো যথাসম্ভব শুষ্ক রাখতে হবে, জানালায় অনুরূপ পর্দা ব্যবহার করতে হবে। জায়গাগুলো ব্যহারের পর সেগুলোর দরজা সাথে সাথে বন্ধ করে দিতে হবে। এতেকরে মশা যেমন বংশ বিস্তার করতে পারবে না তেমনি মূল ঘরেও প্রবেশ করতে পারবে না

. বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার রাখুন এবং গর্তগুলো মাটি দিয়ে ভরাট করে দিন। এতে বাড়ির চারপাশ আলোময় শুষ্ক থাকবে ফলে বাড়ির চারপাশে মশা ভিড়তে পারবে না

শেষ কথাঃ মশা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে টপিকটির যথার্থতা মূল্যায়ন পূর্বক আপনার মন্তব্যটি কমেন্টে জানিয়ে দিতে পারেন। আপনাদের সাড়া পেলে গবেষণাধর্মী আরও কিছু নতুন বিষয় নিয়ে লেখার চেষ্টা করবো। আজ তাহলে এখানেই শেষ করলাম


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন