শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫

হেজবুত তাওহীদের প্রতারণার স্বরূপ উন্মোচন


ভূমিকাঃ হেজবুত তাওহীদের শৃঙ্খলাবোধ এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠার শ্লোগান খুবই মনোমুগ্ধকর। তারা বলে বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলো যদি ইসলাম দিয়ে সমাধান না করা যায় তবে শুধুমাত্র লিপিবদ্ধ কুরআন আর এই ইসলামের মূল্য কী? তাদের এই কথাগুলো শুনে আমি এক সময় এই সংগঠনে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। তারপর চিন্তা করলাম যেহেতু অনলাইনে তাদের বক্তব্য ও বইগুলো পাওয়া যায়, তাই প্রথমে সেগুলোকে একটু পড়ে-শুনে যাচাই করে দেখি।

যাচাই করতে গিয়ে খেয়াল করলাম তাদের লেখা এবং বক্তবে প্রচুর অসংগতি। বিশেষ করে হাদিস নিয়ে তাদের অবস্থান আমাকে খুবই হতাশ করে। তাদের বিভিন্ন বক্তব্য ও লেখায় ইচ্ছামতো তাদের অবস্থান চেঞ্জ করছে। কোথাও সূত্রহীন অনির্ভর কথাকেও সহীহ হাদিস বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আবার তাদের সুবিধা না হলে সহীহ হাদিসকেও কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষের সামনে সত্যটা তুলে ধরতে এবং তাদের প্রতারণার স্বরূপ উন্মোচন করতে কলম ধরলাম। অনুসন্ধিৎসু পাঠক মাত্রই হেজবুত তাওহীদ সম্পর্কে আমার এই লেখার সত্যতা যাচাই করতে পারবেন। তাহলে চলুন মূল লেখায় প্রবেশ করি-

স্লোগানেই প্রতারণা: আপনাদের সংগঠনের প্রাথমিক স্লোগানটাতেই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। আপনাদের স্লোগানটি হলো- “মানবতার কল্যাণে নিবেদিত অরাজনৈতিক আন্দোলন।” আচ্ছা, ইসলাম কি অরাজনৈতিক? ইসলাম যদি রাজনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে সমাধান দিয়ে থাকে তাহলে তো ইসলাম পরিপূর্ণ তথা রাজনৈতিকও বটে। তাহলে আপনারা অরাজনৈতিক কথাটি কেন ব্যবহার করছেন? এটা কি প্রতারণা নয়?

হাদিস নিয়ে হেজবুত তাওহীদের ছলচাতুরী অবস্থান: ‍কুইচ্ছাকে যেমন কাঁদামাটিতে ধরে রাখা যায় না তেমনি হেজবুত তাওহীদের এমামকেও হাদিস নিয়ে প্রশ্ন করে আটকাতে পারবেন না। কারণ, এজন্য তারা তৈরি করে নিয়েছে ছলচাতুরী এবং স্ববিরোধী কয়েকটি কৌশল। এই কৌশলগুলো বুঝতে পারলে কুইচ্ছাকে যেমন কোচ দিয়ে বধ করা যায়, তেমনি এই হেজবুত তাওহীদকেও কায়দা করে আটকাতে পারবেন। আটকাতে না পারলেও অন্তত তাদের পিছলিয়ে যাওয়ার কৌশলগুলো পরিষ্কার বুঝতে পারবেন। তাহলে চলুন তাদের ছলচাতুরী কৌশলগুলি আপনাদের সামনে উন্মুক্ত করি-

পছন্দসই হদিসে পাকা বিশ্বাসীর ভাবঃ যেই হাদিসগুলো তাদের মনমতো হয় সেগুলো এমনভাবে জোড় গলায় এবং জোসের সাথে বলবে যে, আপনি এগুলো শুনে তাদেরকে পাকা হাদিসে বিশ্বাসী মনে করে ভুল করবেন। যেমন- তাওহীদ ও ঈমানের বিষয়ে কয়েকটি হাদিস খুব জোড় গলায় প্রচার করে।

মনমতো হলে প্রচলিত কিচ্ছা-কাহিনীও তাদের কাছে সহীহ হাদিসঃ যেমন- দাজ্জাল? ইহুদি-খ্রিষ্টান সভ্যতা! বইয়ে তাদের গুরু বায়জিদ খান পন্নীর উদৃতি- “এই প্রসঙ্গে এখানে আরেকটি হাদিস পেশ করতে চাই। এ হাদিসটি আমি ছাত্রজীবনে ভারতের মধ্যপ্রদেশের একজন বড় আলেমের কাছ থেকে শুনেছিলাম। তখন ওটার উৎস লিখে রাখি নি এবং এখন আর কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। হাদিসটি হলো, আল্লাহর রসুল বলেছেন— দাজ্জালের ঘোড়ার বা গাধার (বাহনের) এক পা পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে, অন্য পা পশ্চিমপ্রান্তে হবে। এ হাদিসটি আমি সহিহ বলে বিশ্বাস করি। (দাজ্জাল? ইহুদি-খ্রিষ্টান সভ্যতা! পৃষ্ঠাঃ ৩৩-৩৪)

কী বুঝলেন? ওনার মনমতো হয়েছে বিধায় হাদিসটি কোথাও খুজে না পেলেও সহিহ হাদিস বলে বিশ্বাস করে নিয়েছেন এবং তা প্রচার করার দায়িত্ব পালন করছেন!

আচ্ছা, আপনাদের এমাম না হয় হাদিসটি খুঁজে পায়নি, আপনার দলের এতগুলো কর্মী ও তাদের গুষ্ঠিশুদ্ধ মিলেও কেন আজো পর্যন্ত এই সহীহ হাদিসটি ‍খুঁজে বের করে জাতির সামনে প্রকাশ করছেন না? পারবেন কি? তা না হলে এটাকে কেন হাদিসের নামে জালিয়াতি বলা যাবে না?

পছন্দ না হলে সহীহ হাদিসেও সমস্যা বের করে: ঘরে ফটো ঝুলানো নিষেধ মর্মে সহীহ বুখারী এবং মুসলিমের উদৃতি উল্লেখ করে তাদের অবস্থান জানতে চাইলে একটা কূট কৌশল অবলম্বন করে। তখন বলে কি- হাদিসগুলো অনেক পরে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এরূপ বলা কি হাদিস অস্বীকারের নামান্তর নয়? আবার আরেকটি কৌশল অবলম্বন করে। বলে কি- এসব খুটিনাটি নিয়ে এখন ভাবার সময় নাই! আগে তাওহীদে আসেন! প্রশ্ন হলো- হেজবুত তাওহীদের এমাম নিজেও কি তাওহীদে আসে নাই? তাহলে নিজেরাই কেন তাদের প্রতিষ্ঠাতা এমামের ফটো প্রদর্শন করছে? তাহলে একথা বলার উদ্দেশ্য কী? কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া, তাই নয় কি?

(ফটো নিয়ে প্রশ্ন করায় হেজবুত তাওহীদের এমাম সেলিমের গুজামিল উত্তর এবং হাদিস অস্বীকৃতির নমুনা দেখতে এই লিংকে প্রবেশ করুন: https://www.youtube.com/watch?v=PyJaOQU1pC8 )

আচ্ছা, হাদিস অনেক পরে লেখা বলে যদি না মানেন, তাহলে স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিচ্ছেন না কেন যে- আমরা হাদিস মানিনা? তাছাড়া হাদিস অনেক পরে লেখা হলে যদি তা না মানা যায় তবে চৌদ্দশত বছর পরে তৈরি হওয়া আপনার সংগঠনকে জনগণ কোন যুক্তিতে মেনে নেবে? এর ব্যাখা দিন?

হাদিস নিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর দেয়: আপনি যদি তাদেরকে প্রশ্ন করেন- হাদিস নিয়ে আপনাদের সুস্পষ্ট অবস্থান কী? তারা তখন আরেকটি কৌশল অবলম্বন করে। বলে কি- কুরআনের সাথে যেই হাদিস মিলবে আমরা সেটাকে মেনে নেবো। আচ্ছা, “কুরআনের সাথে যেই হাদিস মিলে”- এই কাল্পনিক সূত্রের মাধ্যমে কিভাবে প্রমাণ করবেন যে, রাসূলের পথে কাঁটা দেওয়া বুড়ির ঘটনাটি সত্য না মিথ্যা? তাছাড়া পথিমধ্যে রাসূলের দেখা দুটি এতিম শিশুর ঘটনা এবং তাদেরকে রাসূল কর্তৃক নতুন কাপড় দেয়া ও খাবার খাওয়ানোর হাদিসটির সত্যতা কিভাবে যাচাই করবেন?

আসলে এই কথাটা তাদের একটা ধুকাবাজি। মূলত যেই হাদিসগুলো তাদের পছন্দ না হয় সেগুলোকে কৌশলে এড়িয়ে যেতে তারা এই সূত্রটি প্রয়োগ করে।

তাছাড়া, কুরআনে তো দাজ্জাল ও তার ফিতনা নিয়ে কোন আলোচনা নেই। এটা এমন আলোচনা যা কুরআনে উল্লেখ নেই। আবার ইমাম মাহদি সম্পর্কেও কুরআনে উল্লেখ নেই এগুলো মানেন কেন? আর এগুলো নিয়ে বই লিখেন কেন? তাও আবার হাদিসে বর্ণিত মানব দেহাবশিষ্ট দাজ্জালের ধারণার বাইরে?

সুতরাং আপনাদের উদ্ভাবিত কাল্পনিক সূত্রটি গুজামিল মাত্র। হাদিস যাচাই করতে হয় এর ঐতিহাসিক নির্ভরতার ভিত্তিতে তথা সনদ, মতন ও রাবির বিশ্বস্ততার ভিত্তিতে।

আবার তারা বলে বেড়ায়, বিধান হিসেবে আমরা একমাত্র কুরআনকেই মানি। একাধিক বিধান মানি না। অতঃপর বলে- আমাকে আবার আহলে কুরআন মনে করবেন না। প্রশ্ন হলো- আপনারা যদি একমাত্র কুরআনকেই বিধান হিসেবে স্বীকার করেন হাদিসকে স্বীকার না করেন, তাহলে কেন আপনাদেরকে আহলে কুরআন বলা যাবে না?

অথচ হাদিসে এসেছে- “আবূ হুরাইরা কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা অবলম্বন করলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাহ ” (হাকেমঃ ৩১৯)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন