শুরুকথা: বর্তমান সময়ে মানুষ টেকনোলজিতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যান-বাহনেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কিন্তু যেই ঘর হলো মানুষের একান্ত আশ্রয়স্থল, আবেগের জায়গা, পরিবার ও শিশুদের নিরাপত্তার বেষ্টনী, সেই ঘর নিয়ে বৈপ্লবিক কোন চিন্তা-ভাবনা করছে বলে মনে হয় না। আমাদের মনে রাখা দরকার যে, ঘর যত নিরাপদ থাকবে আমাদের পরিবার ও শিশুরা তত নিরাপদ ও বিপদমুক্ত থাকবে। তাছাড়া আমাদের অর্জিত সম্পদ, জরুরী কাগজ-পত্র ও কষ্টার্জিত সামগ্রিগুলোও সুরক্ষিত থাকবে। আর এই ক্ষতি মোকাবেলার একমাত্র সমাধান হতে পারে বহনযোগ্য বসত ঘর।
বহনযোগ্য ঘরের সুবিধাসমূহ নিম্নরূপ-
বন্যা মোকাবেলায় সহায়ক: আমাদের বর্তমান অবকাঠামোর ঘরগুলো নির্দিষ্ট একটি স্থানে খোটা গেড়ে বা পাকা ফাউন্ডেশন করে তৈরি করা হয়। ফলে নিচু এলাকার ঘরগুলো বন্যার সময় পানিতে তলিয়ে যায় এবং অবকাঠামো এবং ঘরের অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রিগুলো নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এই ঘরগুলোতে চাকা যুক্ত করে বহনযোগ্য করা গেলে ঘরের অবকাঠামো যেমন ঠিক থাকবে তেমনি পরিবারকে অন্যের ঘরে উঠার প্রয়োজনও হবে না। এতেকরে যেমন বিশাল কষ্ট থেকে মানুষ মুক্ত থাকবে তেমনি ঘরের প্রয়োজনীয় তৈজস পত্রগুলোও অক্ষত রয়ে যাবে।
সমাবেশ-ও শৃংখলায় সহায়ক: ঘরগুলো বহনযোগ্য হলে স্থানীয় সভা-সমাবেশ করা সহজ হয়ে যাবে। কারণ তখন কিছু ঘর অস্থায়ীভাবে সরিয়ে সাময়িকের জন্য জায়গা ফাঁকা করে নেওয়া সম্ভব হবে। ফলে জায়গা সংকটের ব্যাপারটি আর থাকবে না। তাছাড়া সরকার ইচ্ছা করলে যেকোন সময় একটি নির্দেশের মাধ্যমে অবকাঠামোর বিন্যাস পরিবর্তন করতে পারবেন।
নদী ভাঙ্গনে ক্ষতি রোধক: বর্তমান ঘরগুলো বহনযোগ্য না হওয়ার কারনে নদী ভাঙ্গনের সময় তীরবর্তী ঘরগুলো নদীর পানিতে ভেসে যায়। ফলে একজন সাধারণ মানুষের কষ্টের শেষ থাকে না। স্থানান্তরযোগ্য বা চাকাযুক্ত ঘর হতে পারে এর সুন্দর সমাধান। এতেকরে ঘরগুলো অতি দ্রুত সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে এবং ক্ষয়-ক্ষতি রোধ করা সহজ হবে।
খরচবিহীন ও অক্ষত স্থানান্তর: অনেক সময় মানুষকে ভিটে-মাটি বিক্রি করে অনত্র চলে যেতে হয়। তখন ঘর ভেঙ্গে পুনরায় নতুন স্থানে মেরামতের প্রয়োজন হয়। আর এটা করতে গিয়ে মাঝখানে অনেক সময়, পরিশ্রম আর টাকা নষ্ট হয়। কিন্তু ঘরগুলো শুরুতেই বহনযোগ্য করে তৈরি করা হলে বাড়তি সময়-শ্রম আর টাকা বেঁচে যাবে।
রাস্তা বাড়াতে ও সরকারি জমি উদ্ধারে ঘর থাকবে অক্ষত: ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় হরহামেশাই দেখা যায় যে, সরকারি জমির উপর বাড়ি তৈরি কারনে বাড়িগুলো ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে অথবা রাস্তা বড় করার জন্য অনেক বাড়ি ভাঙ্গা পড়ছে। কিন্তু যদি বাড়িগুলো বহনযোগ্য হতো তাহলে যেমন টাকা খরচ করে ভাঙ্গার প্রয়োজন হতো না তেমনি ঘরগুলোও ভাঙ্গা পড়তো না।
মেহমান সহায়ক: বিয়ে বা বড় অনুষ্ঠানের সময় মেহমান বাড়িতে থাকার জায়গার সংকুলান হয় না। এমতাবস্থায় বহনযোগ্য ঘর হতে পারে দারুন একটি সমাধান। মেহমান ইচ্ছা করলে নিজের বাড়িটিই মেহমান বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন। আর নয়তো মেজবান তার কাছের প্রতিবেশিদের থেকে কিছু ঘর সাময়িকের জন্য তার জায়গায় এনে মেহমানের থাকার ব্যবস্থা করতে পারবেন।
আবাদি জমি সাশ্রয়: বর্তমান ঘরগুলো নির্ধারিত হওয়ার কারনে বাড়ি এবং আঙ্গিনার অনেক জায়গা স্থায়ীভাবে অকেজু হয়ে পড়ে। বাড়িগুলো বহনযোগ্য হলে কোন জায়গা স্থায়ীভাবে আটকা পড়বে না। ফলে আবাদের জন্য অনেক জায়গা উন্মুক্ত হয়ে যাবে।
ভাসমান ঘর হতে পারে অনেক সমস্যার সমাধান: যাদের বাসস্থান নদী বা খাল-বিলের পাশে তারা ঘরগুলোতে ভাসমান ব্যবস্থাপনার সুযোগ সুবিধা রখতে পারেন। এতেকরে বন্যা বা জলোচ্ছাসের সময় ঘরগুলো পানিতে না তলিয়ে ভেসে থাকবে।
চাকা ও ভাসমান উভয় সুবিধাযুক্ত ঘর যে কারনে প্রয়োজন: তাছাড়া প্রয়োজন অনুসারে চাকা ও ভাসতে সক্ষম উভয় ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এতেকরে প্রয়োজনে যেমন এগুলো স্থলের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া যাবে, আবার ইচ্ছা করলে তা পানিতেই ভাসমান রাখা যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন