রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪

লোকাল ফ্রিল্যান্সিং: জাতীয় উন্নয়নের এক যুগান্তকারী আইডিয়া


ভূমিকা: বর্তমানে “ফ্রিল্যান্সিং” ক্যারিয়ারের জগতে বিপ্লব সাধন করতে সক্ষম হয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং করে বিশ্বের অসংখ্য মানুষ আজ নিজেদের জীবনমান উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এরপরও আইটি জগতের বাইরে এই ফ্রিল্যান্সিং কার্যকরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। বরং বলাচলে আইটি জগতের বাইরের মানুষ এই ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে এখনো অবগত নয়। কিন্তু আমার বিশ্বাস যদি ফ্রিল্যান্সিং এর ধারণা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং স্থানীয়ভাবে এর প্রয়োগ করা যায় তবে বিশ্বময় উন্নয়নের গতি আরও বহুগুন বৃদ্ধি পাবে। তাহলে চলুন ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-


ফ্রিল্যান্সিং কী? : ফ্রিল্যান্সিং হল কাজের এমন একটি পদ্ধতি যেখানে গ্রাহক একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি কাজ আহ্বান করে। আর ফ্রিল্যান্সারগণ বা কর্মীগণ সেই কাজে অভিজ্ঞ হলে এবং কাজের বিনিময় তার উপযুক্ত মনে হলে সেই কাজটি করে দেয়ার জন্য সম্মত হয়। এর মাধ্যমে গ্রাহক এবং ফ্রিল্যান্সার উভয়েই লাভবান হয়। কেননা, গ্রাহকের যেমন ছোট একটি কাজের জন্য পুরো দিনের বা পুরো মাসের বেতন গুনতে হয় না, তেমনি একজন অভিজ্ঞ কর্মী বা ফ্রিল্যান্সারও একটি নির্দিষ্ট বেতনে একটি অফিসে আটকে না থেকে তার পারদর্শিতা দিয়ে একাধিক লোকের কাজ করে বেশি টাকা ইনকাম করতে পারে।


ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু হলো? উন্নত দেশগুলোতে একজন আইটি এক্সপার্টকে তার মর্যাদা অনুযায়ী একটা ভালো পরিমাণ বেতন দিতে কোম্পানীগুলো বাধ্য থাকে। কিন্তু কিছু কিছু কাজের জন্য কোম্পানীগুলোর পক্ষে যেমন এত বেশি বেতন বহন করা বাস্তব সম্মত হয় না তেমনি একজন এক্সপার্টের জন্যও অল্প বেতন পোষায় না। সেই পরিস্থিতে কোম্পানীগুলো কিছু কিছু কাজের জন্য

ফ্রিল্যান্সিং এর গুরুত্ব অনুভব করে। তারা ছোট ছোট কাজের জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সোস্যাল মিডিয়ার দ্বারস্থ হয়। তারা দেখতে পায় যে,অনুন্যত দেশগুলোতে ডলারের রেট বেশি হওয়ায় খুব কম টাকায় নেট দুনিয়া থেকে কাজ আদায় করে নেওয়া যায়। আর এভাবেই ফ্রিল্যান্সিং এর যাত্রা শুরু হয়।


স্বাভাবিক দৈনিক কাজের প্রক্রিয়াঃ আমাদের দেশে একজন দিনমজুর তার কাজে জন্য খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হয় আর সন্ধ্যা অবধি কাজ করতে হয় । সে ইচ্ছা করলেই বেলা ১২ টায় কর্মস্থলে উপস্থিত হতে পারে না। দেরি করার কারনে তার ঐ দিন পুরোপুর কাজ বন্ধ রাখতে হয়। তাছাড়া যদি তাকে কাজে নেওয়া হয় তবে তাকে পুরো দিনের বেতন দিতে হবে বলে সামাজিক স্বীকৃতি রয়েছে। তাই দেরী হলে যেমন কর্মী কর্মস্থলে হাজির হয় না তেমনি পুরো দিনের বেতন দিতে হবে বলে প্রধান মিস্ত্রীও তাকে কাজে নিতে চায় না। ফলে উভয়পক্ষই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আর এজন্যই লোকাল ফ্রিল্যান্সিং এখন সময়ের দাবি। 


সম্ভাবনাময় লোকাল ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে শুরু করা যাবে:


কর্মঘন্টা অনুযায়ী পারিশ্রমিক প্রদান: পূর্ববর্তী ঘটনার প্রধান মিস্ত্রী যদি একটা নিয়ম করে যে, একজন কর্মী যে কয় ঘন্টা কাজ করবে সে তদানুযায়ী পারিশ্রমিক পাবে। ধরি, ভোর ৭ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত পূর্ণ কর্মদিবস। দৈনিক কাজের বেতন ৬০০ টাকা। তাহলে প্রতি ঘন্টার বেতন হয় (৬০০/১০) = ৬০ টাকা। সুতরাং কেউ দেরী করলে তার কর্মঘন্টা অনুযায়ী বেতন পাবে। এতেকরে কাজের যেমন ঘাটতি হবে না তেমনি কর্মী দেরী করার কারণে একেবারে বঞ্চিত হবে না।


প্রডাকশন অনুযায়ী পারিশ্রমিক প্রদান: কিছু কিছু কর্মস্থল থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত। সেখানে একজন কর্মী যে কোন সময় এসে যে কোন পরিমান পণ্য তৈরি করে ইচ্ছামতো সময়ে চলে যেতে পারবে। এতেকরে কর্মীগণ যেমন নিজেকে পরাধিন মনে করবে না তেমনি কর্মীসংখ্যা অধিক থাকায় কাজের গতিও হবে বেশি।


লোকাল ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধাসমূহ: লোকাল ফ্রিল্যান্সিং শুরু হলে মালিক পক্ষ এবং কর্মী উভয়েই লাভবান হবে। যেমন- কোন মালিকের কোন একটি কাজের বিশেষ চাপ তৈরি হলে সে তৎক্ষনাৎ কর্মী আহ্বান এবং হায়ার করে নিতে পারবে। আবার অভিজ্ঞ কর্মীগণ একই দিনে একাধিক জায়গায় একাধিক মালিকের কাজ করে অধিক লাভবান হতে পারবে। তাছাড়া কর্মীগণ পালাবাদল হলে, পরবর্তী কর্মী নতুন উদ্যমে কাজ করার জন্য পূর্ণ সামর্থ্যবান থাকবে। আর এতেকরে কাজের হারও বৃদ্ধি পাবে। আবার পালাবদলের ফলে কর্মীগণ তাদের নিজস্ব কাজ এবং প্রয়োজনও পূরণ করে নিতে পারবে, যা সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।
 আবার নিজস্ব কাজ এবং প্রয়োজন পূরণের ফলে কর্মীগণ মানসিকভাবেও প্রশান্তি পাবে।

শেষকথাঃ ফ্রিল্যান্সিং এর ধারণা প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ুক এবং দৈনন্দিন প্রতিটি কাজে এর প্রয়োগ নিশ্চিত করে সবাই উপকৃত হোক পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা আরও বেগবান হোক এই প্রত্যাশায় আজকের লেখা এখানেই শেষ করলাম।

বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৪

খারাপ বা পর্ণ সাইট অনুসন্ধান বন্ধ করতে পিসি ও মোবাইলের সেটাপ

 


ভূমিকাঃ আজকাল উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের হাতে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন গেলে তারা খারাপ বা পর্ণসাইটগুলো অনুসন্ধান করতে চায়। এই সমস্যার মোকাবেলায় অভিভাবকগণ তাদের সন্তানের কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে নিম্নোক্ত সেটাপগুলো দিয়ে রাখতে পারেন-

পিসিতে যে সেটাপগুলো দিবেনঃ

১) ওয়েব ফিল্টারিং সফটওয়্যার: অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করুন যেগুলি ইন্টারনেটে অগ্রাহ্য কন্টেন্টের অ্যাক্সেস প্রতিরোধ করে। এই সফটওয়্যারগুলির মধ্যে কিছু উদাহরণ হলো- Net Nanny, Qustodio, এবং Covenant Eyes

২) ওয়েব ব্রাউজারের নির্দেশিকা: কিছু ওয়েব ব্রাউজার বিনামূল্যে স্থানীয় বা অনলাইনে অসম্পূর্ণ সার্চ সংশোধন ব্যবহার করে অস্থায়ী পর্নোগ্রাফি অবজেক্টগুলি ফিল্টার করতে পারে।

৩) প্রতিবন্ধী ওয়াল সফটওয়্যার: কিছু সফটওয়্যার সিস্টেমের মধ্যে স্থানীয় কম্পিউটারে পর্নোগ্রাফি সাইটের অ্যাক্সেস প্রতিরোধ করার সুযোগ সরবরাহ করে।

৪) প্রোসি সার্ভার সেটআপ: বা হোম রাউটারে প্রোসি সার্ভার সেটআপ করা যেতে পারে, যাতে সমস্ত ইন্টারনেট অ্যাক্সেস গ্রাহকের উত্তাপে অগ্রাহ্য কন্টেন্ট সার্ভারের মাধ্যমে ফিল্টার করা যায়।

এনড্রয়েড ফোনের সেটাপঃ এন্ড্রয়েড ফোনে পর্নোগ্রাফি সাইটে অনুসন্ধান বন্ধ করতে নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:

ফোনের সেটিংসে যান: আপনার এন্ড্রয়েড ফোনের সেটিংসে যান।

সেকিউরিটি অপশন সনাক্ত করুন: সেকিউরিটি অপশনে ক্লিক করুন এবং সেটিংস মেনুতে ঢুকুন।

সার্চবারে লিখুন: "Safe Search", "Filtering ", বা "Site Blocking" সার্চ করুন।

অপশনগুলো দেখুন: আপনি এখানে বিভিন্ন সেফ সার্চ এবং ফিল্টারিং বিকল্প পাবেন। অনেক সময় এই অপশনগুলি "Google" বা "Open Development" সেবাগুলির মধ্যে পাওয়া যায়।

ফিল্টারিং সেট করুন: আপনি সেফ সার্চ অথবা অনুসন্ধান ফিল্টারিং সেট করুন যেন পর্নোগ্রাফি সাইটের অনুসন্ধান বন্ধ হয়।

সেটিংস সেভ করুন: আপনার পছন্দ সেটিংস সেভ করুন যেন আপনি সুরক্ষিত থাকেন এবং অপরাধ বন্ধ করতে পারেন।

এছাড়াও, আপনি এন্ড্রয়েড এ্যাপ স্টোর থেকে পর্নোগ্রাফি সাইট ব্লক করার জন্য অনেক অ্যাপস পাবেন যেগুলি আপনার ব্রাউজিং নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য রাখবে।

সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০২৪

ভয়ঙ্কর ফাঁদ : একটি পিলে চমকানো প্রতারণার গল্প


বার নাবিলা ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ায় কিছুদিন ধরে সে একটি মেসে উঠেছে। সে গ্রামের মেয়ে। খুবই মেধাবী আর সহজ-সরল হৃদয়ের অধিকারী। গ্রামের সাধারণ নারী-পুরুষ জানেনা ঢাকার ইট-পাথরের দালানে থাকা মানুষদের হৃদয় কতটা পাষাণ, ধূর্ত আর ভয়ঙ্কর। নাবিলা নিয়মিত ভার্সিটিতে ক্লাস করে। তার মেসটা ভার্সিটি থেকে সামান্য দূরে। তাই সে পায়ে হেঁটেই ভার্সিটিতে আসা-যাওয়া করে।


একদিন নাবিলা ভার্সিটিতে যাওয়ার পথে দেখে রাস্তার পাশে একটি শিশু চিৎকার করে কাঁন্নাকাটি করছে কিন্তু তাকে কেউ কোনকিছু জিজ্ঞেস করছে না বা তাকে তার অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে না। এটা দেখে সে খুবই মর্মাহত হয় এবং শিশুটির কাছে এগিয়ে যায়। তারপর শিশুটিকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কান্না করছ কেন? তোমার বাবা-মা কোথায়? শিশুটি রাস্তার বিপরীত পাশের একটি ছোটমতো বিল্ডিং দেখিয়ে বলে ওটাই আমাদের ঘর, আমি রাস্তা পার হতে পারছি না,দয়াকরে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিন। 


নাবিলা শিশুটিকে নিয়ে রাস্তা পার হয়ে তার বাড়ির দিকে চলল শিশুটিকে তার পিতা-মাতার কাছে পৌছে দিতে। দরজার কাছে গিয়ে সে নক করে। কিছুক্ষনের মধ্যেই দরজা খুলে যায় এবং একটি মধ্য বয়স্ক লোক দরজা খুলে মুখে বিরক্তি ভাব ফুটিয়ে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে কোথায় ছিলে বাবা এতক্ষণ? তোমার জন্য আমি পেরেশান হয়ে আছি!


তারপর নিজেকে যেন একটু সামলে নেয় এবং নাবিলাকে বলেÑ আপনি আমাকে বড়ই উপকার করলেন। এ ঋণ আমি কখনোই শোধ করতে পারবো না। এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ! আসুন, আসুন ভেতরে আসুন! একটু চা-নাস্তা করে যান। একথা বলেই ভেতরের দিকে রাওয়ানা দেয়। নাবিলা ভেতরে যেতে ইতস্তত বোধ করছে। লোকটি ঘাড় ফিরিয়ে নাবিলার দিকে তাকিয়ে বলে, আরে আপনি আমার উপকার করলেন আর আমি একটু চা-নাস্তাও করাতে পারবো না তা কি হয়! আসুন, আসুন অন্তত একটা চা খেয়ে যান। গ্রামের সহজ-সরল মেয়ে নাবিলা লোকটির অনুরোধ আর ফেলতে পারে না। কিন্তু সে জানেনা, ভেতরে প্রবেশ করলে কী ভয়ঙ্কর পরিস্থি তার জন্য অপেক্ষা করছে!


সে ঘরে প্রবেশ করে সোফায় গিয়ে বসে। ইত্যবসরে বাইরে থেকে কেউ একজন এসে দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়। দরজা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে লোকটি ফিক করে হেসে উঠে। লোকটির হাসি দেখে নাবিলার শরীরটা ভয়ে শিউরে উঠে। সে দৌড়ে গিয়ে দরজার হাতল ধরে টান দেয়। কিন্তু না, সে খুব দেরী করে ফেলেছে। লোকটি বলে উঠে, টানাটানি করে লাভ নেই, দরজা বাইরে থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। 


তারপর বলল, আপনার কাছে যা আছে সব বের করুন। এই বলে লোকটি এগিয়ে এসে তার হাতব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। এরপর ব্যাগের ভেতর থেকে মোবাইল এবং টাকা পয়সা যা ছিল সব নিয়ে নেয়। তারপর লোকটির চোখেমুখে শয়তানী হাসি খেলে গেল। নাবিলা এটা বুঝতে পেরে চিৎকার করে বলে উঠল, না! না! এমনটি করবেন না, প্লিজ! আমাকে ছেড়ে দিন ! ছেড়ে দিন! কিন্তু কে শোনে কার কথা, লোকটি নাবিলার হাত ধরে টানতে টানতে বিছানায় নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল।


দেশ ও জাতির উন্নয়নে এক যুগান্তকারী ধারণা!



ভূমিকা: একটি যৌক্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ধারণা যত শক্তিশালীই হোক না কেন তা যদি বাস্তবায়ন করা না হয় তবে তা মূল্যহীন। অপরদিকে একটি সঠিক সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন একটি দেশ ও জাতিকে উন্নয়নের পথে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমি নিচে প্রচলিত কিছু অনুৎপাদনশীল ধারণার বিপরীতে উৎপাদনশীল কিছু ধারণার অবতারণা করবো যা প্রয়োগ করতে পারলে একটি দেশ বা জাতির উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।


অনুৎপাদনশীল প্রতিযোগিতার সংজ্ঞা: যে প্রতিযোগিতা দেশ বা জাতির উন্নয়নে কিৎবা কোনকিছু উদ্ভাবন বা উৎপানে কোনরূপ অবদান রাখতে পারে না তাকে আমি অনুৎপাদনশীল প্রতিযোগিতা বলে সংজ্ঞায়িত করেছি। যেমন— মোবাইলে গেম খেলা। এই খেলায় আসক্ত একজন ব্যক্তি সময় অপচয় ব্যতীত কিছুই লাভ করতে পারে না। যদি এই খেলায় সে বিশে^র চ্যাম্পিয়ন ব্যক্তিটিও হয়ে যায় তবুও জাতি একটি মেধা অপচয় ব্যক্তিত কিছুই পাবে না। তাই এটাকে বলতে পারি অনুৎপাদনশীল খেলা বা প্রতিযোগিতা।


ফুটবল খেলা বনাম ধানের চারা রোপন প্রতিযোগিতা: যদি আপনি মোবাইলে গেম খেলাকে অনুৎপাদশীল খেলা মেনে নিয়ে থাকেন তবে ফুটবলকেও অনুৎপাদনশীল খেলা বলে স্বীকার করতে হবে। কেননা, যদি একটি দেশের সকল মানুষ নিজেদের পেশা ছেড়ে দিয়ে ফুটবল খেলায় মত্ত হয়ে যায় তবে দেশটি অকার্যকর হতে বাধ্য। এর বিপরীতে যদি একটি দেশের সকল মানুষ শুধুমাত্র ধানের চারা রোপন প্রতিযোগিতায় লেগে যায় তবে দেশে অন্যান্য উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলেও দেশের মানুষ অন্তত ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। 


 একটি ফুটবল খেলার আয়োজন করা হলে সেই খেলায় দুই টিমের অনেকগুলো খেলোয়ার ছাড়াও দর্শনার্থীর একটি বিশাল অংশের সামষ্টিক সময় অপচয় হয়। আর এই সময় অপচয়ের মাধ্যমে তারা উৎপাদনশীল কোন চেতনাও লাভ করতে পারে না। তাই সরকার যদি এমন পদক্ষেপ নেয় যে— কৃষকেরা ধানের চারা রোপনের সময় প্রতিটি এলাকায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে রোপনের কাজ সম্পন্ন করবে। 


বিজয়ী কৃষকগণকে মালিকগণ বা স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি বেতনের পাশাপাশি বিজয়ী সংবর্ধনা প্রদান করবে। প্রতিটি খেলা এজন্যই জমে উঠে যে, তাতে জয় পরাজয় থাকে চাই তা উৎপাদনশীল হোক বা অনুৎপাদনশীল। যদি ফুটবল খেলার পরিবর্তে ধানের চারা রোপন প্রতিযোগিতা চালু করা যায় তবে প্রতিযোগিরা যেমন বিজয়ের স্বাধ নিতে পারবে, তেমননি দর্শনার্থীরাও উৎপাদনশীল চেতনা পাবে। সর্বোপরি খেলাটি দেশের উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।


অনুৎপাদনশীল ভারোত্তোলন বনাম উৎপাদনশীল ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতা: আমরা টিভিতে বা ইউটিউবে ভারোত্তোলনের যেসব প্রতিযোগিতা সাধারণত দেখে থাকি তা একেবারেই অনুৎপাদনশীল। তো এই প্রতিযোগিতাটিকে সহজেই উৎপাদনশীল প্রতিযোগিতায় পরিবর্তন করা যাবে যদি এরকম করা হয়— ধরুন একটি ধানমিল ফ্যাক্টরি থেকে শত শত মন ধান বিক্রি হয়। সেখানে শ্রমীকদেরকে দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কম সময়ে অধিক ভারোত্তোলনকারী শ্রমিকদেরকে বিজয়ী ঘোষণা এবং বাড়তি কিছু টাকা প্রদান করা হলে কাজের সামগ্রিক হার অনেকাংশে বেড়ে যাবে এবং শ্রমিকরা কাজকে কঠিন ভাবার পরিবর্তে বিজয়ী হওয়ার পথ ভাবতে থাকবে। কাজকে শ্রমিকদের সামনে এভাবে উপস্থাপন করা গেলে দেশের উন্নয়নে তা সহাক হবে।


বসে দাবা/লুডু খেলা বনাম বসে মুড়ক তৈরি প্রতিযোগিতাঃ দাবা, লুডু, কেরাম, মোবাইল গেম বা এরকম যেকোন খেলা যেগুলো বসে বসে খেলতে হয় সেগুলোর পরিবর্তে বিভিন্ন কোম্পানীর পণ্যের মুড়ক তৈরির প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। আর এটা হবে উৎপাদনশীল খেলা যার মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। 


গাড়ি দিয়ে চলা বনাম দৌড়ে যাতায়াত করা: আমরা এতই বুকা যে, পাঁচ মিনিটের রাস্তা চলার জন্য গাড়ির জন্য দশ মিনিট অপেক্ষা করি। আর এভাবে অলসতার জন্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে সকাল বেলা হাটাহাটি বা দৌড়াদৌড়িকে ভদ্রতা বলে আখ্যায়িত করি। অথচ এই ট্রেডিশন বাদ দিয়ে যদি প্রত্যেককে অফিস হতে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব দৌড়ে আসতে বাধ্য করা হয় তবে যেমন শারিরীক অনেক ব্যধি থেকে চাকুরিজীবি রক্ষা পাবে তেমনি গড় কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া গাড়ি দিয়ে চলার পরিবর্তে হেটে বা দৌড়ে চলার প্রতি মানুষকে সরকারিভাবে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। দূর দূরান্তে চলার জন্য সাইকেল বা এজাতিয় জ¦ালানিবিহীন যানবাহনে চলাচল করতে বলা হবে। এতেকরে গাড়ির ক্ষতিকর ধোয়া থেকে প্রকৃতি যেমন মুক্তি পাবে তেমনি সাধারণ মানুষ অধিক কর্মক্ষম হয়ে উঠবে।


উপবাস থাকা গৌরবের বনাম কৃপণতার/অসহায়ত্বের: সাধারণত একজন মানুষ যদি সামর্থ থাকা সত্বেও দিনে দুইবার খায় তাহলে মানুষ তাকে কৃপণ বলা শুরু করবে। মানুষ এটা ভাবতে শরু করবে যে, লোকটা টাকা বাঁচানোর জন্য নিয়মিত খাবারটাও খাচ্ছে না। আর কোন মোটা মানুষ যদি দিনে দুইবেলা খাবার খায় আর বলে আমি ডায়েট কন্ট্রোল করছি তখন তাকে বলা হয় সে সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিয়েছে। আবার একজন সৈনিককে ট্রেনিং করার সময় ১০—১৫ দিন খাবার সরবরাহ না করে প্রাকৃতিক উপায়ে খাবার সংগ্রহ করে টিকে থাকার দীক্ষা দেওয়া হয়। আর এই কাজটা সে করতে পারলে তাকে সম্মানিত করা হয় এবং প্রতিকুল পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবে বলে গণ্য করা হয়। তাহলে ব্যপারটা কী দাঁড়ালো? 


একই ঘটনা তিনভাবে ঘটার কারণে একজন কৃপণ বলে গণ্য হলো, আরেকজনকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে গণ্য করা হলো আবার আরেকজনকে যোগ্য ও সম্মানিত বলে গণ্য করা হলো। এই প্রেক্ষাপটগুলো বিবেচনা করে আমরা যদি এই সিদ্ধান্ত নেই যে, যারা স্বাস্থ্য ঠিক রেখে মাঝে মাঝে উপবাস যাপন করবে তাদেরকে কৃপণ না ভেবে দেশের সম্পদ স য়কারী এবং সম্মানিত গণ্য করি তাতে কি কোন সমস্যা আছে? তারপর যারা কম খেয়ে অধিক কাজ করতে পারবে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হলে মানুষ আরও বেশি উৎসাহ পাবে।


শেষকথাঃ এভাবে সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে যন্ত্র ব্যবহারের পরিবর্তে মানুষকে শারিরীকভাবে সক্ষম করে গড়ে তুলতে পারলে এবং নিতান্ত প্রয়োজনের ক্ষেত্রে উন্নত এবং জ্বালানীবিহীন যন্ত্র আবিস্কার ও ব্যবহারে হতে পারলে মানুষ যেমন স্বাস্থ্যবান—নিরোগ থাকবে তেমনি প্রকৃতিও সবুজ—সতেজ এবং আরো সুন্দর হয়ে উঠবে।

প্রেমের ফাঁদ থেকে ছোটদের বাঁচিয়ে রাখার কৌশল


ভূমিকাঃ সাংস্কৃতিক অবক্ষয় বলুন আর সহশিক্ষা ব্যবস্থার ফলই বলুন, বাস্তবতা হলো— প্রতিনিয়ত অসংখ্য কুমলমতি ও মেধাবী ছোট ছোট শিক্ষার্থী প্রেম নামক সর্বনাশা মোহে জড়িয়ে পড়ে অংকুরেই ঝড়ে পড়ছে। এদেরকে সঠিক সময়ে সচেতন করতে না পারার দরুণ এই জাতি অসংখ্য মেধাবীকে প্রতিনিয়ন হারিয়ে ফেলছে। এই নিবন্ধে আমি সর্বনাশা প্রেমের গ্রাস থেকে ছোটদের বাঁচিয়ের রাখার সূক্ষ্ম কিছু কৌশল শেয়ার করবো — যেগুলো প্রয়োগ করতে পারলে ছোটদেরকে এই মারাত্মক ব্যাধি থেকে রক্ষা করা সহজ হবে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

প্রাথমিক কাজঃ কোন শিশু একবার প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে পড়লে সেই মোহ থেকে তাকে ফেরানো খুবই মুশকিলের কাজ। তাই সে এই মোহে জড়ানোর পূর্বেই আপনি নিম্নোক্ত প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারেন:—

নৈতিক শিক্ষাঃ আপনি শিশুকে এমনভাবে নৈতিক শিক্ষা দিন, যেন সে নিজ থেকেই প্রেম নামক অশ্লিলতাকে বড় পাপ হিসেবে জানে এবং একে ঘৃণা করতে পারে। আপনি তাকে ইসলামের আলোকে জানান যে এগুলো যেনার মতো মহাপাপ এবং এর ফলে পরকালে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। তাছাড়া যারা এসব অশ্লীলতা করে বেড়ায় তাদের ভাগ্যে অশ্লীল নারী/পুরুষই জোটবে। পারিবারিকভাবে তারা কখনোই শান্তির দেখা পায় না। তাছাড়া এসব মানুষকে সমাজের মানুষ কখনোই সম্মানের চোখে দেখে না। সকলেই এদেরকে ঘৃণা করে। 

কুফলের দৃষ্টান্তঃ পাড়া মহল্লার কেউ এসব করে বেড়ালে তাদের সম্পর্কে এমন তাচ্ছিল্লের সাথে শিশুদের সামনে উপস্থাপন করুন, যেন শিশুরা বুঝতে পারে এগুলো খুবই গর্হিত কাজ। তাছাড়া তার পরিবারের লোকজন তার কারণে সমাজে কেমন হেয় ও তাচ্ছিল্লে্যর স্বীকার হচ্ছে তা তার সামনে বলুন। শিক্ষার্থী হলে তার পড়ালেখার পূর্বের অবস্থা এবং বর্তমানে তার দায়—দায়িত্ব থেকে পরিবারের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার ইতিহাস বর্ণনা কারুন। সর্বোপরি এসব কথা এমনভাবে উপস্থাপন করুন যেন আপনার শিশুরা এসবের কাছাকাছি হোক তা কখনোই বরদাস্ত করতে পারবেন না। 

পরবর্তী কাজঃ যখন দেখবেন যে, আপনার শিশুটি প্রেমের ফাঁদে ইতোমধ্যে জড়িয়ে পড়েছে— তখন নিম্নোক্ত কৌশলগুলো প্রয়োগ করুন:—

ঘৃণা প্রকাশ ও উপদেশ: শিশুকে এমনভাবে কথা বলুন যেন তার সেই কাজকে আপনি ঘৃণা করেন কিন্তু তাকে নয়। তাকে এসবের মন্দ সম্পর্কে সচেতন করুন। পাড়া মহল্লার অন্যান্য ব্যক্তি পূর্বে এসব করে কেমন পরিণতির স্বীকার হয়েছিল সেসব দৃষ্টান্ত বর্ণনা করুন। তার আশু পরিণতি কী হতে যাচ্ছে তা তাকে বুঝিয়ে বলুন। তাছাড়া পরকালে এই পাপের শাস্তি সম্পর্কে হুশিয়ার করুন। হয়তো এসব উপদেশের ফলে শিশুর বিবেক জেগে উঠবে এবং প্রেম নামক অশ্লীলতা বর্জন করবে। 

সহজভাবে শেয়ার করুন: যখন দেখলেন যে, এসব উপদেশও তার জন্য কাজ হচ্ছেনা তখন কি তাকে মারধর করবেন? না তার দরকার নেই। তখন আপনার কৌশল ধীরে ধীরে পরিবর্তন করুন। প্রেম জিনিসটাকে তার সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করতে থাকুন যেন এটা মোহের কোন বিষয়ই নয়। তাছাড়া অমুকের ছেলে কিছুদিন প্রেম করে প্রেমিকাকে বিয়ে না করে অন্যকে বিয়ে করে। ফলে মেয়েটা পড়ালেখায় মন বসাতে পারছে না। আবার অমুকের মেয়ে কলেজে ভর্তি হয়ে পুরাতন প্রেমিককে বাদ দিয়ে নতুন প্রেমিকের সন্ধানে আছে। সুতরাং এগুলো ধুকাবাজি ছাড়া কিছুই নয় এবং এসবের ফাঁদে পড়ে পড়ালেখায় শৈথিল্য প্রদর্শন করা বা কর্মবিমুখ থাকা কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

বন্ধু হোন নিয়ন্ত্রণে আনুন: তাছাড়া আরেকটি কৌশল অবলম্বন করতে পারেন, তা হলো— তার সাথে গভীর বন্ধুত্ব তৈরি করুন। আপনার ছাত্রজীবনে আপনার অথবা আপনার বন্ধুর প্রেমের ঘটনা মাজা করে বলুন, যেন এটা কোন মোহ নয় মজার বিষয়। এমনকি তার প্রেমিক/প্রেমিকা আজ তাকে কী মেসেজ দিল তা বলতে উৎসাহিত করুন। যখন আপনার সন্তান তার প্রেমিক/প্রেমিকার মেসেজ/চিঠি আপনার সাথে শেয়ার করতে শিখবে তখন ধরে নিন সে আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। সে অত্যধিক খারপ কোন সম্পর্কে জড়াতে পারবে না। সময় মতো তাকে যে কোন ডুজ দিয়ে ফেরাতে পারবেন অথবা লেখাপড়ায় বাধ্য করতে পারবেন।

শেষকথা: শেষ কৌশলগুলোকে মজাদার মনে করে প্রথমেই প্রয়োগ করতে যাবেন না। কারণ এগুলোর ক্ষতিকর অনেক দিক রয়েছে। যেমন— প্রেমে মত্ত থাকলে পড়ালেখায় কিছু না কিছু ক্ষতি হবেই। তাছাড়া শিশুটি অবশ্যই পিতা মাতা বা প্রেমিক/প্রেমিকাকে ধোকা দেওয়া শিখে নেবে। পরবর্তীতে বৈবাহিক জীবনে সে সন্তুষ্ট থাকতে পারবে না। তাছাড়া নৈতিক অবক্ষয় অপূরণীয় থেকে যাবে সবসময়। সুতরাং সাধু সাবধান!

রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪

যে কথাগুলো বলে বেড়ালে বিপদে পড়বেন

শুরুকথা:

পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা কথার মাধ্যমে মনের সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু কথা যদি হিসাব মাফিক না হয় তবে এই কথাই আপনার বিপদের কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। তাই সব ধরনের কথা এবং অনর্থক কথা থেকে বেঁচে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। আজ আমি আপনাদেরকে জানাবো এমন কিছু কথা সম্পর্কে যেগুলো মানুষকে বলে বেড়ালে আপনার বিপদ তৈরি হতে পারে। তাহেল চলুন দেরী না করে সরাসরি মূল আলোচনায় চলে যাই-

নিজের অভাবের কথা বলে বেড়ানো: 

মানুষের সাথে নিজের অভাবের কথা বলে বেড়ানো উচিত নয়। কারণ অভাবের কথা বলে বেড়ালে ঘনিষ্ঠ বন্ধবান্ধব দূরে সড়ে যেতে থাকে। কারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই টাকার পিছনে ছুটে চলা পছন্দ করে। কিন্তু যার সাধারণত টাকা পয়সা থাকে না, সে অপরের কাছে টাকা ধার চাইবে এটাই স্বাভাবিক। আর এটার ভয়েই মানুষজন আপনার থেকে দূরে সরে যেতে থাকবে। তাই সবার সাথে অভাবটা শেয়ার না করে শুধুমাত্র যার কাছে টাকা ধার করা যাবে বলে মনে করেন তার কাছেই বলুন। সবার সাথে বিষয়টি শেয়ার করার তো প্রয়োজনও নেই। অযথা সবার সাথে অভাবের কথা বলতে থাকলে মানুষজন আপনাকে অবজ্ঞা করে চলতে পারে বা আপনার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াতে পারে।

নিজের স্বচ্ছলতার কথা না বলা:

আপনি হয়তো বলতে পারেন, স্বচ্ছলতার কথা বললে আবার সমস্যা কোথায়? কিন্তু বিষয়টি চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন যে, এখানেও সমস্যা আছে। কারণ, আপনার স্বচ্ছলতার কথা জানতে পারলে সুসময়ের কোকিলদের আনাগুনা বেড়ে যেতে থাকবে। কারণ প্রতিটি মানুষের বন্ধ তালিকায় কিছু সহযোগী মনোভাবের যেমন বন্ধু থাকে তেমনি কিছু সুসময়ের কোকিল মার্কা বন্ধুও থাকে। তাই আপনার স্বচ্ছলতার বিষয়ে জানতে পারলে সেই ধরনের বন্ধরা এসে অযথা ভিড় করতে থাকবে। তাই নিজের স্বচ্ছলতার কথা গুপন রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। 

গুপন অপরাধের কথা বন্ধুদেরকে বলা: 

অধিকাংশ মানুষ একট বড় ধরনের ভুল করে থাকে। তা হলো নিজের গুপন পাপ বা অপরাধের কথা কাউকে না কাউকে জানিয়ে দেয়। কিন্তু চিন্তা করে দেখলে বুঝতে পারবেন এটার যেমন কোন প্রয়োজনই ছিল না, তেমনি এই ইনফরমেশন অন্যকে জানানো ফলে আপনি যে কোন সময় বিপদের সম্মখীন হতে পারেন। কেননা আজকের প্রাণপ্রিয় বন্ধু যে কাল শত্রুতে পরিণত হবে না, এই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না। কাজেই কোন কারণে আপনার ও আপনার বন্ধুর মাঝে শত্রুতা দেখা দিলে দেখবেন- আপনার গুপন কথাগুলো প্রকাশ করে দিয়ে আপনাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। তাই যে কাজ গুপনে করেছেন, তা গুপনই রেখে দিন। অযথা আলাপ করে নিজের কাধে এতবড় বিপদ ডেকে আনার কোন মানে হয় না। 


মিথ্যা কথা বলা: 

মিথ্যা এমন একটা জিনিস, যা শেষ পর্যন্ত গুপন থাকে না। কিন্তু তবুও দেখা যায় হর হামেশাই অনেক মানুষ অপ্রয়োজনে মিথা কথা বলে থাকে। এর ফলে কি হচ্ছে? দিন দিন সে মানুষের বিশ্বস্ততা হারাচ্ছে।  স্বভাবতই মানুষ চায় যে, মানুষ তাকে সম্মান করুক। কিন্তু আপনি যদি কথায় কথায় মিথ্যা বলুন তাহলে কখনোই মানুষ আপনাকে মন থেকে সম্মান করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, আপনি চিন্তা করলে দেখবেন যে, যারা আপনার সাথে মিথ্যা কথা ইতিপূর্বে বলেছিল এবং তার মিথ্যার বেপারে আপনি জেনে গেছেন তাকে কিন্তু আপনিও মন থেকে সম্মান করেন না। তাহলে এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে, আপনি মিথ্যা বলবেন আর মানুষ আপনাকে সম্মান করবে। যদিও প্রয়োজনের তাকিদে এবং ঠেকে মানুষ আপনাকে কটু কথা বলবে না কিন্তু বিপদে পড়লে আপনি এই মিথ্যা বলার জন্য কোন সহযোগী পাবেন না। এটাই বাস্তবতা। 

মানুষকে মন্দ নামে ডাকা:

আপনি যদি চান যে মানুষ মন থেকে ভালবাসুক। তবে ছোটদের বা বন্ধুদের সম্পূর্ণ নাম সুন্দর করে ডাকুন। কিন্তু আমরা অনেক সময় মজা করে বন্ধু বান্ধবকে মন্দ নামে ডাকি আর হাসাহাসি করি। হয়তো আপনার বন্ধুও সাময়িকভাবে তাল মিলাতে হাসাহাসি করে থাকে। কিন্তু মন থেকে আপনার প্রতি শ্রদ্ধা আর সম্মান দুটোই উঠে যায়। অনেক সময় এই ছোট বিষয়টিই ঝগড়া এবং শত্রুতার কারণ হয়ে দাড়ায়। তাই মন্দ নামে ডাকা থেকে বিরত থাকুন। অজানা ও অনাকাংখিত অনেক বিপদ থেকে মুক্তি পাবেন। 

সমাপনি: 

প্রতিটি ধর্ম এবং সভ্যতাই মানুষকে সংযত এবং উদার হওয়ার শিক্ষা দেয়। তবুও আমরা অসংযত হয়ে বড় বড় বিপদ তৈরি করি এবং নিজেরাই এর ভুক্তভোগী হই। তাই অনাকাংখিত বিপদ থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে কথায় এবং আচরণে সংযত হতে হবে। তবেই সকলে মিলে একটি শান্তিপূর্ণ ও স্বস্তির পরিবেশ উপভোগ করা যাবে। লেখাটি ভালো লাগলে ফেসবুকে শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিন। শেষ পর্যন্ত লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই- অসংখ্য ধন্যবাদ।


যেই বুকামির দন্ড আজীবন বয়ে বেড়াতে হয়


শুরুকথাঃ

বেঁচে থাকার জন্য এবং জীবন নির্বাহের জন্য আমাদেরকে প্রতিদিন বিভিন্ন কাজ করতে হয়, অনেক ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এর মধ্যে কিছু কাজ এবং সিদ্ধান্তে ভুল হয়ে গেলে সেগুলো সহজেই শুধরে নেওয়া যায়। কিন্তু এমন কিছু কাজ বা সিদ্ধান্ত রয়েছে যেগুলো ভুল করে একবার করে ফেললে বা বাস্তবায়ন হয়ে গেলে সেগুলো আর শুধরে নেওয়ার উপায় থাকে না এবং এর মন্দ প্রভাব বা কুফল সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। আজকের লেখায় এমনি কিছু ভুল বা বুকামি নিয়ে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক-

অন্যের কাছে টাকা আমানত রাখা বা সঞ্চয় করাঃ  

কিছুদিন পূর্বে ফেসবুকে একটি ভিডিও খুব ভাইরাল হয়েছিল। ভিডিওর ঘটনা ছিল এরূপ- এক ব্যক্তি বিদেশ থেকে তার স্ত্রীর নিকট টাকা পাঠিয়ে তা শ্বশুর বাড়িতে সঞ্চয় করতো। দীর্ঘদিন এভাবে টাকা রাখার পর দেশে এসে তা চাইতে গেলে তারা দিতে অস্বীকার করে। ফলে ঝড়গা তৈরি হয় এবং তার স্ত্রীর নেতৃত্বে তাকে তার শ্বশুর ও শ্যালক বেপক মারধর করে। কেউ একজন এটা ভিডিওতে ধারেণ করে ফেসবুকে ছাড়লে তা ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায় সেখানে বর পক্ষের লোকজন কেউ ছিল না যে তার পক্ষ নিয়ে কথা বলবে এবং এর প্রতিবাদ করবে। এজন ব্যক্তি ছিল যে তার বন্ধ হবে হয়তো সে তার শ্বশুর পক্ষের লোকজনকে মার ফেরানো থেকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই বিদেশীকে ছোট বাচ্চার মত এক ছেলে ব্যাপক মারধর করলেও সে মাটিতে উপুর হয়ে পড়ে রয়েছে। কোন প্রতিবাদ বা নাড়াচাড়াও করছে না। কারণ তাদের কাছে সে এখন ধরা খেয়েছে ।  উক্ত ভিডিওর কমেন্টে লোকজন তার শ্বশুর শাশুরি, শ্যালক বা স্ত্রীকে নয় বরং তাকেই দুষারূপ করতে থাকে। এছাড়াও অনেক ঘটনা এরূপ শুনা যায় যে, গ্রাম থেকে ঢাকায় গিয়ে অনেকেই অপরিচিত ও অজানা ব্যক্তিকে আত্মীয় বানিয়ে তাদের কাছে টাকা গচ্ছিত রাখে। একসময় তা চাইতে গেলে তা আর কখনো ফিরে পায় নি। তাই সাবধান! নিজের ইনকামের টাকা নিজের কাছেই রাখুন। অন্যকে অযথা বিশ্বাস করার দরকার নেই। যদি অন্যের কাছে টাকা রাখতেই হয় তবে তা মা বাবার কাছে রাখুন নিরাপদে থাকবে। যদি তারা খেয়েও ফেলে তবুও মনে আফসোস থাকবে না। কেননা তারা তো প্রতিদানের আশা ছাড়াই আপনাকে মায়া-মমতা দিয়ে লালন পালন করে বড় করেছে।

গুপন পাপ বা অপরাধের কথা স্ত্রী বা বন্ধুদেরকে বলাঃ 

আমাদের প্রতিবেশি এক দাদা একদিন আমাকে একটি গল্প শোনান। গল্পটির মূলকথা ছিল এরূপ- এক লোক একদা বৃষ্টির দিনে আনমনা হয়ে হাসতেছিল। তা দেখে তার স্ত্রী প্রশ্ন করলো- তুমি হাসছো কেন? লোকটা কোন উত্তর দিল না। এতে তার স্ত্রী অভিমান করে বললো- তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো না? আমি কি তোমার মনের কথা জানতে পারি না? ইত্যাদি। যেহেতু তাদের মধ্যে যথেষ্ট ভালবাসা ছিল তাই স্ত্রীর পীড়াপিড়িতে একটি গুপন অপরাধের কথা প্রকাশ করে দিল। ঘটনাটি ছিল এই- লোকটি একদিন তার এক প্রতিবেশিকে শত্রুতার জেরে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। যখন সে তার প্রতিবেশিকে মারতে যায় তখন ছিল বৃষ্টির দিন। প্রতিবেশি কোন উপায়ান্তর না দেখে বলেছিল- হে বৃষ্টি! একমাত্র তুই ছাড়া এখন আমার কোন স্বাক্ষী নেই। এই খুনির ব্যপারে তুই সবাইকে জানিয়ে দিস! তারপর বহুদিন কেঁটে যায় কেউ কোনদিন সেই খুনের ঘটনা জানতে পারে না। তাই বৃষ্টি এলেই লোকটির হাঁসি পায় এ কথা ভেবে যে, কই? বৃষ্টিতো এতদিনেও সেই খুনের স্বাক্ষী দিল না? এই কথাটা সে তার স্ত্রীকে বলে হাসতে শুরু করল। দিন যায়, মাস যায়। একসময় তার ও স্ত্রীর বন্ধনের মাঝে ফাঁটল তৈরি হলো। একসময় দুইজনের মাঝে প্রচন্ড ঝগড়া বেঁধে গেলো। সেই ঝগড়ার মাঝে শুরু হলো বৃষ্টি। তখন তার স্ত্রীর মনে পড়ে গেলো সেই খুনের ঘটনা। ফলে সে তার স্বামীর থেকে প্রতিশোধ নিতে খুন হওয়া ব্যক্তির আত্মিয়-স্বজনের কাছে সেই ঘটনা ফাঁস করে দিল। ফলে বেচারার অপরাধের প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে ফাঁসির আদেশ দিল। 

তাই সাবধান! আজকের মুহব্বতের স্ত্রী বা ঘনিষ্ঠ বন্ধু যে কোন সময় শত্রু হয়ে যেতে পারে। তাই কাউকে গুপন পাপ বা কৃত অন্যায়ের ব্যাপারে বলা মানে চরম বুকামি। এ ভুলের কোন ক্ষমা বা সংশোধনের পথ নেই। 

সমাপনীঃ 

চলার পথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ক্ষেত্র বিশেষে একটি মাত্র ভুল সিদ্ধান্তই পুরো জীবণকে বিষিয়ে তুলার জন্য যথেষ্ট। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। লেখাটি ভাল লাগলে ফেসবুকে শেয়ার করে রাখুন, এতে অন্যরাও উপকৃত হবে। লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

সেদিন স্বাক্ষী ছিল বৃষ্টি ! – একটি মর্মান্তিক গল্প



“তাড়াতাড়ি ভাত দাও তো! আজ মাঠে অনেক কাজ করতে হবে”- হাত-মুখ মুছতে মুছতে বলল বাদল।

“তুমি টেবিলে গিয়ে বস, আমি এখনই ভাত বেড়ে দিচ্ছি” বলল তার স্ত্রী নাজমা।

বাদল আর নাজমার সংসার প্রায় দুই বৎসর হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাদের মুহব্বতে কোন ভাটা পড়েনি। আজকের যুগে স্বামী স্ত্রীর এমন বন্ধন প্রায় দেখাই যায় না। তাই তো তাদের দুজনের ভালোবাসা দেখে গ্রামের অনেকেই ঈর্ষা করে। কিন্তু কথায় আছে না- ‘এই দুনিয়ায় কেউ চিরসুখী হতে পারে না, কোন না কোন দিক দিয়ে অপূর্ণ থেকেই যায়’। তেমনি একটি দুঃখ তাদের রয়েই গেছে। এখনও তারা সন্তানের মুখ দেখতে পারেনি। চেষ্টাও কম করা হয়নি। কিন্তু বিধাতার ইচ্ছা না থাকলে চেষ্টায় কি আর সব হয়? তারপরও তারা বেশ সুখেই আছে। 

বাদল লেখাপড়ায় মন বসাতে পারেনি। তাই সে ছোট থেকেই বাবার গৃহস্থের কাজ কর্ম দেখাশুনার দায়িত্ব নিয়েছে। পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া জমির পরিমাণও বেশ ভালই। তাই গৃহস্থ করেও বেশ সুখেই দিনগুলো পার হয়ে যাচ্ছে। 

গত পাঁচ-সাতদিন যাবত বৃষ্টির দেখা নেই। তাই আজ সবগুলো ফসলের জমিতে পানি দিতে হবে। তাই সে আজ খুব সকাল সকাল খাবার খেয়ে বেড়িয়ে পড়ার জন্যই স্ত্রীকে তাড়া দিচ্ছে। 

বাদল হাত-মুখ মুছে টেবিলে বসতেই তার স্ত্রী ভাত ও তরকারির ডিস নিয়ে, প্লেটে ভাত ও তরকারি উঠিয়ে দিচ্ছে। বাদল ভাত খাওয়া আরম্ভ করতেই দেখাগেলো রোদ কেমন ফিকে হয়ে আসছে। তারপর দেখতে দেখতে ঝকঝকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে ক্রমেই চারদিকে অন্ধকার নেমে এলো। বাদলের খাবার শেষ হতে না হতেই ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি পড়া শুরু হলো। এই দৃশ্য দেখে বাদল প্রশান্ত মনে বলে উঠলো- ভালোই হলো! অনেক খাটুনি থেকে রেহাই পেয়ে গেলাম। চেয়ারটা দরজার কাছে এনে সে বৃষ্টি উপভোগ করতে লাগলো। তার স্ত্রী হাত-মুখ ধুয়ে তার পাশে এসে বসল। 

বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বাদল আনমনা হয়ে গেলো, যেন গভীর চিন্তায় নিমগ্ন। এই বৃষ্টি শুরু হলে মানুষের মনে কত ভাবনারই না উদয় হয়! সেও হারিয়ে গেলো ছোটবেলার হাজারও স্মৃতির পাতায়। হাঠাৎ কি এক কথা মনে করে মনের অজান্তেই হো হো করে হেসে উঠলো। নাজমা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। বাদলের হাসিতে তার তন্দ্রা ভেঙে গেলো। 

: “এভাবে হেসে উঠলে কেন?” 

: “ইয়ে মানে, এমনিতেই”- এই বলে বাদল কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা করছে। 

নাজমা আরও সন্দিহায় হয়ে উঠলো, সে ভাবলো হয়তো তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পাড়ায় তার চেহারা বিকৃত হয়ে পড়েছিল অথবা কাপড় চোপড় হয়তো অসাবধান হয়ে পড়েছিল, আর তা দেখেই বোধহয় বাদল হেসে উঠেছে। তাই নাজমা তাকে আরও ভালো করে জেরা শরু করলো।

“কি এমন হয়েছে যে, এত শব্দ করে হেসে উঠলে, এমনিতেই কি মানুষ হাসে? আমাকে বলো না প্লিজ…

কিন্তু বাদলের কোন উত্তর নেই। 

“এই তুমি এখনো চুপ করে আছো কেন? হ্যা! কি হয়েছে..

বাদল আর চুপ থাকতে পারলো না। সে আর বলো না, এই বৃষ্টি দেখতে দেখতে অতীতের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো। 

কি ঘটনা? বলো তো একটু শুনি: অনুনয় ঝড়ে পড়লো নাজমার গলায়।

বুঝতেই তো পারছো, ঘটনাটা বলতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু যেহেতু তুমি খুব করে বায়না করছো তাই বলছি। তবে সাবধান! এই কথা আর কারো সাথে শেয়ার করবে না, বলে দিলাম।

একথা শুনে নাজমার মনোযোগ কয়েকগুণ বেড়ে গেলো। উদগ্রীব শুনতে লাগলো- কী সেই ঘটনা?

বাদল বলতে লাগলো- পাশের বাড়ির পলাশ আর আমার মাঝে ব্যাপক বন্ধুত্ব জমে উঠেছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন খেলতে গিয়ে তার ও আমার মাঝে ঝগড়া তৈরি হয়। একপর্যায়ে তাকে মারধর করতে থাকি। কিন্তু এই ঘটনা দূর থেকে তার বড়ভাই দেখে ফেলে। তাই সে দৌড়ে কাছে এসে আমাকে ধরে  ফেলে এবং প্রচন্ডভাবে প্রহার করে। শুধু তাই নয়, সে আমার দুই হাত ধরে পলাশকে ইচ্ছামতো মারতে বলে। তখন পলাশ আমাকে অনেকক্ষণ কিল, ঘুষি আর লাথি মারতে থাকে। ইস! কি যে যন্ত্রণা! ভুলাই যায় না। এভাবে অনেকক্ষণ মারার পর পলাশের ভই আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলে, এই ঘটনা যদি তোর মা বাবাকে বলে দিস, তবে আরেকদিন দেখাবো মজা! এই হুমকী দেওয়ায় আমি এই ঘটনা মা বাবাকেও বলার সাহস পেলাম না। কিন্তু মনে মনে এই আঘাতের কঠিণ প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। 

দিন যায় দিন আসে, এক পর্যায়ে তার ও আমার মাঝে আবার বন্ধুত্ব তৈরি হয়। কিন্তু সেই ঘটনা পলাশ ভুলে গেলেও আমি কখনো ভুলতে পারি না। আমার অন্তরে প্রতিশোধের আগুন জ্বলতেই থাকে। কোনভাবেই সেদিনের অত্যাচার ও আঘাতের কথা ভুলতে পারি না। হঠাৎ একদিন আমার মাথায় শয়তান এসে ভর করলো। চিন্তা করলাম পলাশ আমাকে যে পরিমাণ আঘাত করেছে তার জন্য তাকে মরতে হবে, তাকে আমি শেষ করে দেবো। কিন্তু কিভাবে? যদি সবাই জেনে যায় তবে তো আমাকেও মরতে হবে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম তার ও আমার মাঝে যে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব বিদ্যমান আছে তা ধরে রাখতে হবে এবং আরো বাড়াতে হবে, যেন মানুষ আমাকে সন্দেহ করতে না পারে। তাই আমি তার সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হতে থাকলাম। 


একদিন তাকে বললাম চলো আমরা দুজনে আজ বিকালে চুপি চুপি পাশের জঙ্গলে খেলতে যাবো। তুমি একথা কাওকে বলবে না। সে আমাকে আশ্বস্ত করে বললো ঠিক আছে।

বাড়ি থেকে আমি কাওকে কিছু না জানিয়ে বিকেলে সেই জঙ্গলে এসে হাজির হলাম। কিছুক্ষণ পর সেও এসে উপস্থিত হলো। আশেপাশে কোন জনবসতি নেই। কোন মানুষের আনাগুনাও নেই। তখন শয়তান পুরোপুরি আমাকে আয়ত্বে নিয়ে ফেলেছে।হঠাৎ তার মুখে আমি প্রচন্ড বেগে এক ঘুসি বসিয়ে দিলাম। চিৎকার করে বলে উঠলাম, মনে আছে? সেদিন তোরা দুই ভাই মিলে আমাকে কত মার মেরেছিস? আজ তোকে আর জ্যান্ত ছাড়ছি না। ঘটনায় হতকিত হয়ে সে অনুনয় বিনয় হয়ে বলতে লাগলো? ‍দুস্ত আমাকে মেরে ফেলিস না! তুই আমাকে যত পরস মার, আমি কাওকে কিছু বলবো না। কিন্তু অনুরোধ আমাকে একেবারে মেরে ফেলিস না! আমার জীবনটা ভিক্ষা দে! আমি বললাম, তোকে শায়েস্তা করার জন্য আমি কতদিন যাবত বন্ধুর অভিনয় করে আসছি জানস না। এই বলে তার গলায় ধরে পায়ে ল্যাং মেরে ফেলে দিয়ে বুকের উপর চেপে বসলাম। সেই সময় শুরু হলো প্রচন্ড বৃষ্টি কিন্তু সেদিকে আমার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। যখন সে দেখলো তার বাঁচার কোনই উপায় নেই তখন সে বলল, হে বৃষ্টির ফোঁটা! তুই ছাড়া আজ আমার কোন স্বাক্ষী নেই। তুই-ই আমার এই হত্যাকারির ব্যাপারে একমাত্র স্বাক্ষী। 

তার করুণভরা সেই চাহনি আর কাকুতি মিনতি চোখে ভেসে উঠলে আজও আফসোস করি, কেন তাকে মেরে ফেললাম? যে আমাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতো, জানের চেয়েও বেশি ভালোবাসতো তাকে জীবনে তরে কেন মেরে ফেলাম? হায় আফসোস!

তার পিতামাতা এই ঘটনার তদন্তে কেস করেছিল। পুলিশ যখনই আমাকে জেরা করতে এসেছে তার পিতা-মাতাই বলেছে তাদের মধ্যে কোন ঝগড়া ছিল না। তারা এখনো একে অপরের প্রাণের বন্ধু। সে আমার ছেলের খুনি নয়। এই বলে তারাই আমাকে পুলিশের সন্দেহ থেকে দূরে রেখেছে। 

প্রথম প্রথম বৃষ্টি হলেই মন আতকে উঠতো, না জানি এই বৃষ্টি তাদেরকে জানিয়ে দেয়! কিন্তু এখন তো এটা ভুলতেই বসেছি। আজ প্রায় দশ বারো বছর হয়ে গেলো, কত বৃষ্টি হলো- কই এই বৃষ্টি তো তাদেরকে কোন স্বাক্ষী দিল না! বৃষ্টি কি আর স্বাক্ষী দিতে পারে? কি বুকাই না ছিল পলাশ! এই বলে হাসতে থাকে বাদল। 

ঘটনা শুনে নাজমার মন প্রকম্পিত হলো। যে মানুষটাকে সে এত সহজ সরল ভেবেছিল - সে ততটা সহজ সরল নয়। তাই সে মনে মনে খুব উদ্বীগ্ন হয়ে উঠলো। কিন্তু বাদলকে তা বুঝতে না দিয়ে উল্টো সে বলে উঠলো- সাবধান এই ঘটনা আর কাউকে বলো না। কেউ জানলে কিন্তু তোমার আর রক্ষা নেই। 

দিন যায়, মাস যায়। একসময় বাদল ও তার স্ত্রীর বন্ধনের মাঝে ফাঁটল তৈরি হলো। কয়েকদিন পর দুইজনের মাঝে প্রচন্ড ঝগড়া বেঁধে গেলো। ঝগড়ার এক ফাকে বাদল হাতে লাঠি নিয়ে নাজমাকে মারতে যায়। তখন নাজমা দৌড়ে গিয়ে পলাশের মায়ের ঘরে আত্মগোপন করে। কিছুক্ষণ পর শুরু হলো বৃষ্টি।

নাজমা আনমনা হয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিযে আছে। আচমকা মনে পড়ে যায় পলাশের হত্যার কথা। মহিলা মানুষের দূরদৃষ্টি খুবই কম। কোন কথার কি পরিণতি হতে পারে তা অনেক সময় তারা অনুমান করতে পারে না। সে ভাবলো বাদলকে শায়েস্তা করার মুখ্যম একটা সুযোগ পেয়ে গেছি। কিন্তু সে কি জানে? এই ঘটনা প্রকাশ হয়ে গেলে বাদলের কি পরিণতি হবে? কিন্তু নাজমা এসব ভাবতে চায় না। ভাবখানা এমন যে, মুখ্যম সুযোগটি হাতছাড়া করার কোন মানে হয় না। তাই সে হাঁক ছাড়লো- চাচি! শুনেন একটা কথা কই..

ঘটনা শুনে বৃদ্ধ মহিলা চিৎকা করে কেঁদে উঠলো। সাথে সাথে লোকজন দৌড়ঝাপ করে জড়ো হলো। কি হলো মা? কাদেন কেন দাদি? কি হলো গো চাচি? সবাই এসে ঘটনা জানতে চাইলো। তখন পলাশের মা চিৎকার করে বলে উঠলো- এই বাদল আমার ছেলের খুনি! আমার বাবাকে সে কত কষ্ট দিয়েই না হত্যা করেছে! ওকে ধর, পুলিশে দে! হায় আল্লাহ! তাকে পুলিশের হাত থেকে বাচাঁনোর জন্য কত চেষ্টাই না করেছি! সাথে সাথেই ঘটনা চারদিকে ছাড়িয়ে পড়লো। পুরোনো কেস মামলা আবার সচল হয়ে উঠলো।

কি থেকে কি হলো নাজমা বিশ্বাসই করতে পারছে না। বেচারা বাদলের অপরাধ আদালতে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে ফাঁসির আদেশ দিল। এদিকে নাজমা কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো। সবাই ধরাধরি করে তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মাথায় পানি ঢালতে লাগলো। এরই মাঝে চারদিক অন্ধকার করে শুরু হলো বৃষ্টি। হঠাৎ প্রচন্ড শব্দে গর্জে উঠলো আকাশ!


শ্রেষ্ঠ যে খাবারগুলো এদেশে অবহেলিত


ভূমিকা: আমরা যখন পত্রিকা, ফেসবুক এবং ইউটিউবে দেখি, কোন একটি দেশের মানুষ মাছ খায় না, তখন আমরা ভাবি- ইস! যদি সেই দেশে থাকতাম তবে মাছগুলো মজাকরে একাই খেতাম। আবার যখন দেখি বিভিন্ন দেশের মানুষের আত্মীয় স্বজন মারা গেলে সাথে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার ইত্যাদি কবরে রেখে আসে তখন আমারা মনেকরি তারা কতই না বুকা!  যদি সেই দেশে থাকতাম তবে রাতের অন্ধকারে সেগুলো চুপি চুপি নিয়ে নিতাম। কিন্তু আমরা বাঙালিরাও কম বুকা নয়। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, আমরাই হয়তো দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বুকা। কেননা আমরা কুসংস্কারের কারণে সর্বশ্র্রেষ্ঠ খাবারগুলো এখনো বর্জন করে চলছি। এখন নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে সেই খাবারগুলো সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক-

মায়ের শালদুধ: 

শ্রেষ্ঠ খাবারের মধ্যে প্রথম তালিকাতেই আছে মায়ের শালদুধ, যা আমরা কুসংস্কারের কারণে আজও বর্জন করে চলছি। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, একজন শিশুর জন্য দুনিয়াতে সর্বশ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে মায়ের প্রথম দুধ, যা আমরা শালদুধ বলে অবজ্ঞা করে থাকি। ডাক্তারগণ শালদুধ সম্পর্কে বলেন- মায়ের শালদুধ হচ্ছে একটি শিশুর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ খাবার। এই দুধ এতই পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং জরুরী যে, তাতে রয়েছে শিশুর সর্বরোগের প্রতিষেধক। এই দুধ খেলে শিশুর দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় সবচেয়ে বেশি । শিশুর বেড়ে উঠার জন্য এই দুধের বিকল্প বা সমমানের কোন খাবার পৃথিবীতে নেই। আর তাই তো এই দুধ হয় সবচেয়ে ঘণ। কারণ পুষ্টিতে থাকে তা একেবারে পরিপূর্ণ। কিন্তু আমাদের অজ্ঞতার কারণে আমরা মনেকরি যে, এই দুধ খেলে তা শিশুর গলায় আটকে যাবে। কথাটা খুবই অবাস্তব, অজ্ঞতা আর মূর্খতার পরিচায়ক। যেই খাবারটি শিশুর জন্য আল্লাহ তায়ালা শ্রেষ্ঠ করে, সবচেয়ে উপযোগী করে তৈরি করলেন আমরা তা অজ্ঞতার কারণে বর্জন করলাম। এটা শ্রষ্টার উপর মাতব্বরীর মতই বেয়াদবি এবং অজ্ঞতাই বটে। অথচ এটা ঘন হওয়ার কারণ হলো-এটা একটা শিশুর জন্য জরুরী সব পুষ্টিতে পরিপূর্ণ প্রাথমিক ডোজ। 

গরু, মহিষের শালদুধ: 

মায়ের শালদুধ যেমন পুষ্টিতে পরিপূর্ণ থাকার কারণে প্রাথম দিকের দুধের ঘনত্ব কিছুটা বেশি থাকে, ঠিক একই কারণে গরু, মহিষ ইত্যাদির দুধও বেশি ঘন হয়। আমরা অনেকে এগুলো নিজেরাও খাই না সেই পশুর বাচ্চাদেরও খেতে দেই না। আবার আমাদের এলাকায় একটি কুসংস্কার আছে যে, এই দুধ কুকুরে খেলেও নাকি গাভির দুধ কমে যায়।তার মানে দাড়াচ্ছে এই পুষ্টিকর খাবার আমরা নিজেরাতো খাবোই না, তার বাচ্চাকেও খেতে দেবো না এমনকি কোন প্রাণীকেই না। খুবই অবাক লাগে। আমাদের অজ্ঞতা আমাদেরকে কোথায় নিয়ে ঠেকিয়েছে। এতদৃষ্টে আমার মনে হয়েছে- শ্রেষ্ঠ খাবারগুলো প্রতি আমাদের শুধুমাত্র অনিহাই নয়, এগুলোর প্রতি রীতিমতো শত্রুতা তৈরি করে দিয়েছে আমাদের আজ্ঞতা ও কুসংস্কার। 

ছাগলের দুধ: 

এদেশের অধিকাংশ অঞ্চলের মানুষ আজও ছাগলের দুধ বর্জন করে চলে। ছাগলের দুধ নিয়ে কুসংস্কারও কম নয়। মানুষ মনে করে- এই দুধ খেলে নাকি ছাগলের মতই শরীর দূর্গন্ধময় হবে, যা সম্পূর্ণ অবাস্তব আর কুসংস্কারাচ্ছন্ন কথা। আবার বলে থাকে- এই দুধ খেলে নাকি ছাগলের মতই রোদের উত্তাপ বেশি সহ্য করা যায় না। এগুলো সবই অবাস্তব্, হাস্যকর আর অবৈজ্ঞানিক কথা। বরং সত্য হলো- ছাগলের দুধ পুষ্টিগুনে গরুর দুধের চেয়েও বেশি সমৃদ্ধ। সচেতন মানুষ চাইলেই অনলাইন বা পত্র-পত্রিকায় এই তথ্যটি যাচাই করে দেখতে পারবেন। 

পরীক্ষার্থীদের খাবারে কুসংস্কা:

আমাদের দেশে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে কুসংস্কার। অধিকাংশ পিতামাতা ছাত্রদের পরীক্ষায় যাওয়ার পূর্বে ডিম খাওয়া বা ডিমের তরকারি দিয়ে খাবার খাওয়া বারণ করে। মনে করা হয় ডিম দিয়ে খাবার খেলে পরীক্ষায় শূন্য পাবে। কারণ, ডিম তো শূন্যের মতোই গোল। কি চমৎকার ব্যাখ্যা! কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে খাবারের সাথে পরীক্ষার ফলাফলের কোনই সম্পর্ক নেই। পরীক্ষায় ভাল করা না করার পিছনে পড়ালেখা এবং অধ্যাবসায়ই দায়ী। কিন্তু কে শোনে করা কথা? পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ডিমের মতো একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবারকে এদেশে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। তাছাড়াও পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অঞ্চলভেদে আরও বেশকিছু খাবারকে কুসংস্কারাচ্ছ করা হয়েছে- যা কোনভাবেই কাম্য নয়।

সমাপনী: 

প্রতিটি সচেতন নাগরিকের উচিত নিজ এলাকায় এসকল কুসংস্কারের মূলোৎপাটনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা এবং এই খাবারগুলোর গুরুত্ব সাধারণ মানুষের সামনে তোলে ধরা। তবেই সমাজ ও জাতি এই খাবারগুলোর সুফল ভোগ করতে পারবে। লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন- এতে আপনার বন্ধুরাও উপকৃত হতে পারবে। লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

যৌক্তিক কিছু পদক্ষেপ : কয়েকটি জটিল রোগের সমাধান


ভূমিকা: রোগ নেই পৃথিবীতে এমন লোক খুজে পাওয়া দুষ্কর।আমরা সবাই কোননা কোন রোগে প্রায়ই আক্রান্ত হয়ে থাকি। কিছু লোক এমন আছে যারা ছোটখাট কোন রোগ হলেই গপাগপ ঔষধ খাওয়া শুরু করে। তারা জানেনা যে বেশি বেশি ঔষধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভয়াবহ হুমকী। বেশি বেশি ঔষধ সেবনে শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। যেই রোগটা আপনার শরীর এমনিতেই প্রতিরোধ করতে পারতো, বেশি বেশি ঔষধ সেবনে শরীরের সেই শক্তিটা শেষ হতে থাকে। একসময় এমন অবস্থা দাড়ায় যে, সামান্য রোগ হলেও ঔষধ সেবন ছাড়া আর ভালো হয় না। তাই আমাদের উচিত প্রথমত রোগ হওয়ার পূর্বেই সতর্ক থাকা, যেন আমাদের অবহেলা ও খদ্যাভাসের অসামঞ্জস্যের কারণে শরীরে রোগ সৃষ্টি না হয়।তারপারও ছোটখাট রোগে আক্রান্ত হলে তার ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উপাদান বা ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ফলমুল, মাছ-মাংস ও শাক-সবজি ইত্যাদি খেয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করা।এরপরও যদি শরীর সুস্থ না হয় তখন তো ঔষধের চিন্তা করতেই হবে। আবার কিছু রোগ আছে যেগুলো যৌক্তিক কিছু নিয়ম-কানুন অনুসরণ করেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। আজকের আর্টিকেলটিতে সেই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন জেনে নিই কোন রোগ প্রতিরোধে কী ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার-

১. কোষ্ঠকাঠিণ্য: কোষ্ঠকাঠিণ্য হলে সাধারণত পায়খানা অত্যধিক শুষ্ক হয়ে অনেক আঠালো ও শক্ত হয়ে যায়। ফলে পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয়, সহজে পায়খানা হয় না এবং কিছুক্ষণ পর পরই প্রচণ্ড দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু আসে। এ অবস্থায় একজন মানুষ নিজেকে নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। মিটিং, সমাবেশ বা ঘরের লোকদের থেকে ভয়ে আলাদা থাকার চেষ্টা করে। কারণ পুতিগন্ধময় অবাধ্য বায়ু সবার বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়ায়। 

কোষ্ঠকাঠিণ্য রোধের/নিরাময়ের যৌক্তিক উপায়ঃ একটা বিষয় সুস্পষ্ট যে, এ রোগে আক্রান্ত হলে বার বার বায়ুচাপ তৈরি হয়। আর এই বায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করেই এই রোগ থেকে নিরাময় সম্ভব। যেহেতু ঘন ঘন বায়ুচাপ তৈরি হয় তাই আপনি পর পর দুই-তিনবার বায়ু আটকিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। দেখবেন পায়খানার চাপ তৈরি হবে। এর একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যাও আছে। যেহেতু এসময় বার বার বায়ুচাপ তৈরি হয় তাই দুই-তিনবার আটকানোর ফলে পায়খানার থলেতে চাপ সৃষ্টি করে। এতে সহজেই পায়খার বেগ তৈরি হয়। তবে যেহেতু বায়ু নিজেই একটা বর্জ্য, তাই স্বাভাবিক অবস্থায় বায়ুচাপ আটকিয়ে রাখা উচিত নয়।কারন এতেকরে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া কোষ্ঠকাঠিণ্যের সময় তরল জাতিয় খাবার খাবেন, এতে পায়খানা রসালো ও আরমদায়ক হবে।

২. নখের কোণা দেবে যাওয়া: নখের কোণা দেবে যাওয়ার ‍মূল কারণ আমাদের অসবাধানতা। আবার এই অসাবধানতার কারণেই এটা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং যন্ত্রণা দিন দিন বাড়তে থাকে। নখের কোণা দেবে যাওয়ার কারণ হলো নখ কাটার সময় নখের কোণাগুলো একদম চামড়ার সাথে ঘেষে কেটে ফেলা। এভাবে ছোট করে নখ কাটার ফলে নখের কোণা দিয়ে কাদা বা ধুলোবালি ঢুকে পড়ে এবং তা ভিতরে লেগে থাকার ফলে মাংস ফুলে যায়, দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। এই যন্ত্রণার কারণে আমরা আবারও ভুল করি। তখন কোণাগুলো আরও কেটে ভিতরের ময়লা বের করার চেষ্টা করি। এতে নখের কোণায় আরও গর্তের সৃষ্টি হয় এবং আরও ময়লা ঢুকে সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। 

প্রতিকারের যৌক্তিক পদক্ষেপঃ আপনাকে এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, এই সমস্যার মূল কারণ হলো নখের কোণাগুলো গভীরভাবে কেটে ফেলা।সুতরাং এই সমস্যা প্রতিরোধের প্রধান কাজ হলো নখ কাটার সময় এর কোণাগুলো গভীরভাবে কেঁটে ফেলা যাবে না। আর যদি আপনার অসতর্কতার কারণে নখ দেবে যাওয়া শুরু হয় এবং যন্ত্রণায় ভোগতে থাকেন তবে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করুন-

ক. সরিষার তেল গরম করে আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করুন, এতে যন্ত্রণার উপশম হবে।

খ. বেশি যন্ত্রণা হলে সুই দিয়ে হালকা খুচিয়ে যতদূর সম্ভব ময়লা বের করে দিতে হবে।এক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে যেন খুচানোর ফলে বেশি গর্তের সৃষ্টি না হয়। সেই সাথে সুতি কাপড়ের টুকরো দিয়ে ব্যাথাযুক্ত জায়গা হালকা করে বেধে রাখতে হবে ।এরফলে নখের কোণায় নতুন করে ময়লা ঢুকতে পারবে না। 

গ. কোনভাবেই নখের কোনা কেটে ময়লা বের করার চেষ্টা করা যাবে না। কেননা, কোণা কাটলেই সমস্যা আরও বড় হতে থাকবে।তাই টর্গেট নিয়ে নখের কোণা বড় হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হবে। 

ঘ. সর্বোপরি, সমস্যা থাকুক আর নাই থাকুক নখের কোণা কখনোই চামড়ার সাথে ঘেষে কাঁটা যাবে না। 

৩. স্যাতস্যাতে ঘা: যাদের শরীর খুব রসালো তাদের শরীরে কোন কারণে ঘা হলে সহজে তা সারতে চায় না। বরং সব সময় কষ পড়ে স্থানটি ভেজা ভেজা থাকে। ফলে সহজে তা শুকায় না। এই সমস্যার সৃষ্টি হলে আপনি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় নেকড়াতে আগুন জ্বালিয়ে সেই আগুন বার বার ঘাযের উপর সেক দিতে থাকুন। এতে উক্ত স্থান শুষ্ক থাকবে ফলে ঘা থেকে খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবেন।

৪. ব্রণ: নির্দিষ্ট একটি বয়সে নারী-পুরুষ সবার মুখেই ব্রণ দেখা দেয় । ব্রণের সবচেয়ে মারাত্বক ব্যাপার হলো- রোগটা যতনা যন্ত্রণার, তারচেয়ে মানসিক চাপ ঢের বেশি। কারণ মুখের যা অবস্থা হয়, এই মুখ নিয়ে মানুষের সামনে যেতে বিরক্তই লাগে। যে যাই বলুক ব্রণকে ঠেকানোর মতো কার্য়কর কোন ঔষধ এখনো আবিষ্কার হয়নি।তবে আপনি একটু সচেতন হলে এবং নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে সহজেই এই বিপত্তিকে প্রতিহত করতে পারবেন-

ক. ব্রণকে বাড়ানোর প্রধান হাতিয়ার হলো হাতের স্পর্শ। আপনার হাতের প্রতিটি স্পর্শ ব্রণকে করে তোলবে আরও বড়, বড়িয়ে তুলবে তীব্র যন্ত্রণা, সেই সাথে চেহারাকে করে তোলবে আরও ভয়াবহ। তাই এ রোগের প্রতিকারে প্রথমেই আপনার হাতকে রাখতে হবে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। ব্রণ শক্ত হওয়ার আগে কোনভাবেই তাতে হাত লাগানো যাবে না। 

খ. ব্রণ শক্ত হয়ে দানাদার হয়ে গেলে তখন শুধুমাত্র চাপ দিয়ে দানা বের করে দিতে হবে। তারপর আবারও হাতের স্পর্শ বন্ধ। 

আপনি যদি এই বিষয়টি মেনে চলতে পারেন তবে আপনার মুখ পূর্বের রূপ ফিরে পাবে। ব্রণের দাগের কোন চিহ্নও থাকবে না। তবে অনেকেই না জানার কারণে সময়মত ব্রণের দানা বের করে দেন না। ফলে দানাগুলো চামড়ার নিচে রয়ে যায় এবং পরে এগুলোর কারণে মুখ এবড়ো-থেবড়ো এবং খসখসে হয়ে যায়। 

৬. ব্রণের দাগ দূর করার উপায়: আপনি পূর্ব থেকে সাবধান না হলে বা হাতকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নখের খোচা, চিমটি ও বার বার স্পর্শের কারণে যদি দাগ লেগেই যায় তবুও এই দাগ থেকে মুক্তি সম্ভব।তাও আবার কোনরকম ঔষধের ঝামেলা ছাড়াই। এজন্য আপনাকে শুধুমাত্র একটি কাজ করতে হবে, তাহলো- ব্রণের উৎপাত শেষ হয়ে গেলে- দিনে এক/দুইবার দাগপড়া স্থান ও তার আশপাশে কিছুক্ষণ আলতোভাবে ঘষুন। নিয়মিত এভাবে ঘষলে এক সপ্তাহের মধ্যেই ফলাফল হাতেনাতে পেয়ে যাবেন (আমি নিজে উপকৃত হয়েছি)। আপনার মনে এই প্রশ্ন আসতেই পারে- ঘষলে কিভাবে দাগ দূর হবে? তবে এর একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যাও আছে- ঘষামাজার কারণে উক্ত স্থানে রক্ত চলাচল তাৎক্ষণিক বেড়ে যায়। ফলে আক্রান্ত টিস্যুতে পর্য়াপ্ত রক্ত সরবরাহ ঘটে টিস্যুটি সেড়ে ওঠে। আবার মৃত টিস্যুগুলো অতিরিক্ত রক্ত সরবরাহের ফলে রক্তের সাথে ভেসে গিয়ে প্রস্রাবের মাধ্যমে বা্ইরে বেরিয়ে আসে। 

শেষকথাঃ উপরোক্ত সবগুলো রোগ ও সমস্যায় আমি নিজে পড়েছি এবং আমি স্বয়ং উল্লিখিত পন্থাগুলো অবলম্বন করে উপকৃত হয়েছি। আর্টিকেলের কোন বিষয়ে আপনর ভিন্ন মত থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন। সবশেষে সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে এখানেই লেখার ইতি টানলাম।