মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫

ইন্তিফাদা বাংলাদেশকে যেরূপ দেখতে চাই:

 

ইন্তিফাদা বলতে বুঝায় জাগরণ, উত্থান বা প্রতিরোধ আন্দোলন। এই শব্দগুলোর মাঝে যে তীব্রতা ও বিপ্লবের আমেজ রয়েছে সেই বিপ্লবী কর্মসূচী কি এই “ইন্তিফাদা বাংলাদেশ” নামক সংগঠনে রয়েছে? ভিডিওতে আপনাদের কর্মসূচীর ঘোষণাগুলো শুনে আমার কাছে তেমনটা মনে হয়নি। ভিডিও থেকে মোটা দাগে কয়েকটি বিষয় ‍বুঝতে পেরেছি। যেমন- মুসলিম জনগুষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করা, ইসলামের মূল্যবোধ রক্ষা করা, সরকারকে ইসলামের বিষয়ে নৈতিক পরামর্শ দেওয়া, গবেষণামূলক লেখনির মাধ্যমে গণতন্ত্রের অষাড়তা প্রমাণ এবং ইসলামী মূল্যবোধের বিকাশ করা ইত্যাদি। এই কার্যক্রমগুলোর মাধ্যমে ইন্তিফাদা শব্দের উপযুক্ত কর্মসূচী গৃহীত হয়েছে বলে আমার মনে হয়নি। তাই সাধারণ মুসলিম জনগুষ্ঠির পক্ষে আমি ইন্তিফাদা বাংলাদেশকে যেরূপ দেখতে চাই তার একটি রোডম্যাপ তুলে ধরা হলো-


গণতান্ত্রিক সিস্টেমকে পরামর্শ নয় হোক বিদ্রোহ: আপনারা জানেন যে, গণতন্ত্র নিজেই একটা জীবন ব্যবস্থা, যা ইসলামী জীবন ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে। তাই এই সিস্টেমকে পরমর্শ নয় বরং এই সিস্টেমের বিরুদ্ধে মুসলিম জনসাধারণকে সচেতন করা। এই সিস্টেম কেন ইসলামের জন্য চ্যালেঞ্জ এবং এর বিপরীতে ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যস্থার সৌন্দর্য তুলে ধরার মাধ্যমে মুসলিম জনসাধারণে মাঝে শরিয়াহ শাসনের তীব্র আকাংখা গণতন্ত্রের প্রতি তীব্র ঘৃণা তৈরি কর। যেন মুসলিম জনগোষ্ঠি এই গণতন্ত্রের উৎখাত করে ইসলামী শাসন কায়েমের স্বপ্ন দেখতে পারে।


বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং ঐক্যবদ্ধ জনশক্তি তৈরি করা: সদস্যদেরকে ইসলামের আলোকে নেতার আনুগত্যের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং বিপদে-আপদে সদস্যদেরকে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ থাকারা নসিহত প্রদান করা।


সংগঠনকে ক্ষুদ্র শরিয়াহ হিসেবে পরিচালনা: 

যেমন- ক) গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণে সদস্যরা রাষ্ট্রিয় ও সামাজিক বিভিন্ন চাপের মুখে পতিত হবে এবং অনেকের জানমাল ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এসবের মোকাবেলায় সদস্যরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত সদস্য বা পরিবারকে অর্থ ও খাবার দিয়ে সহায়তা প্রদান করে এমন ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করতে হবে। 

খ) সংগঠনের উদ্যোগে ফান্ড তৈরি করা হবে যেন, মজলুম সদস্যদেরকে সহায়তা প্রদান করা যায়। তাছাড়া প্রতিটি সাংগঠনিক প্রোগ্রামে যেন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা সাধারণ সদস্যদের আর্থিক অবস্থার খোজ খবর নেয়। এতে করে কর্মীরা উজ্জীবিত হয়।

গ) বিত্তশালী সদস্যদের থেকে যাকাত আদায় করে অভাবী সদস্যদের পরিবারে বন্টন করা। এতেকরে সংগঠনের মজবুতি কায়েম হবে।

ঙ) সংগঠনের অধীনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। যেন সংগঠনের কর্মীদেরকে আর্থিক আয়ের জন্য সুদ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকে পড়তে না হয়।

চ) বাস্তব জীবনে ন্যায় ও সততার পথে অবিচলতার পথে অটল থাকার পরামর্শ দেওয়া। বিশেষ করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা বাজায় রাখার ব্যপারে আপোষহীন নীতি অবলম্বন করা। 

ছ) নিজেদের মধ্যে সংঘটিত ঝগড়া-বিবাদ সংগঠন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সালিশি বোর্ডের মাধ্যমে সমাধান করা। 


কুরআনকে সংবিধান হিসেবে উপস্থাপন: বর্তমান মুসলিম সমাজ কুরআনকে কেবল নেকি অর্জনের মাধ্যম হিসেবে গণ্য করে। তাই কুরআনকে মানবতার মুক্তির সংবিধান হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে।


স্বতন্ত্র সভ্যতা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া: একটি আলাদা সংস্কৃতি ও সভ্যতা নির্মাণে নিজস্ব স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, গবেষণাগার, ব্যাংকিং সিস্টেম ডেভেলপ করতে হবে। যাকাত ব্যবস্থা চালু করতে হবে। কর্জে হাসানার ব্যবস্থা করা। । সর্বোপরি নিজস্ব কমিউনিটি ডেভেলপের কার্যক্রম হাতে নেওয়া।


সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ: বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে তরুণদেরকে সংগঠনে আকৃষ্ট করতে হবে। যেমন- রক্তদান কর্মসূচী, স্বেচ্ছায় রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, গরীবের ফসল ফলানো ও উত্তোলনে সহায়তা, অসহায়দের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। যেমন, ব্যাবসা গড়ে দেওয়া, গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া, কর্মে উৎসাহিত করা। ভিক্ষা ব্যবস্থাকে নিরুৎসাহিত করা। 


গুণীজনকে আকৃষ্ট করা: দেশ ও সমাজের প্রভাবশালী, বিশেষজ্ঞ, শিল্পপতি, লেখক, সমাজ সেবক, আলেম, ইমাম ও এধরণের ব্যক্তিদেরকে দৃষ্টি আর্কষণ করা ও বিভিন্ন বৈঠকে অতিথি হিসেবে রাখার চেষ্টা করা। এতে কয়েক ধরণের লাভ হবে। যথা- হিংসা কমবে ও সংগঠনে আকর্ষিত হবে। আর্থিক ও জ্ঞানে সহায়তা পাওয়া যাবে। সমাজে সংগঠনের প্রভাব বিস্তার করা যাবে। সর্বশেষে তাদেরকে সংগঠনে যুক্ত করার পরিবেশ তৈরি হবে। তাছাড়া নতুন ইসলামী বক্তা, নতুন গবেষক, নতুন ইসলামী লেখকদের সাথে সবার আগে পরিচিত হওয়া, নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরা এবং দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করা।


প্রোগ্রামসমূহে ইহতেসাবের এজেন্ডা রাখা: নেতৃস্থানীয়দের ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ইহতেসাবমূলক প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মীদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সংগঠনের স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দেওয়া নতুন পরামর্শ বিবেচনা ও গ্রহণ করতে হবে।


টেকসই সাংগঠনিক কাঠামোর বিন্যাস: সর্বোচ্চ নেতা একজন থাকবেন। তিনি সর্বোচ্চ মজলিশে শুরার সভাপতি এবং সর্বাধিনায়ক হবেন। তার টিমের আন্ডারে থাকবে বিভিন্ন বিভাগের কেন্দ্রিয় সভাপতিগণ, যাদেরকে এই টিম দিকনির্দেশনা দিবেন। আর এই কেন্দ্রিয়া সভাপতিগণ হবেন ১-৫ বছরের নির্দিষ্ট একটি মেয়াদ পর্যন্ত। মেয়াদ নির্দিষ্ট থাকলে প্রচেষ্টা বৃদ্ধি পায় এবং প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়, যা অনির্দিষ্ট কালের মেয়াদের ক্ষেত্রে তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। যেমন একজন ইবাদতকারী যদি জানতে পারে যে, সে আর এক মাস বেঁচে থাকবে, তাহলে ইবাদতে তার একনিষ্ঠতা ও ইবাদতের সময় বৃদ্ধি পাবে। যেমন- আলী বানাতের জীবনী।


তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে বিস্তৃত করা: যোগ্য দায়িত্বশীল তৈরির উদ্দেশ্যে সংগঠনকে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত করা। যেমন- ছাত্র শাখা, যুব শাখা, শিশু-কিশোর শাখা ইত্যাদি। তারপর প্রতিটি শাখার জন্য- বিভাগীয় দায়িত্বশীল, জেলা, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম/মহল্লা দায়িত্বশীল নিয়োগ দেওয়া। 


সংগঠনে যুক্ত সদস্যরা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করা:  যেমন- কারও কর্জে হাসানার দরকার হলে প্রদান করা, অভাবী থাকলে অভাব দূর করা, পরিবার ও সমাজ থেকে বঞ্চিত হলে আশ্রয় দেওয়া, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাকে যাকাত প্রদান করা, কর্মহীন হলে কর্মের ব্যবস্থা করে দেওয়া, বিয়েশাদীতে সাংগঠনিক অনুমতি ও সংগঠনের তত্ত্বাবধানে বিয়ের আয়োজন করা, সংগঠনের বাইরে বিবাহকে অনুৎসাহিত করা বা বন্ধ করা। কেননা এতেকরে পারিবারিক জীবনে মতানৈক্য সৃষ্টি হতে পারে এবং ব্যক্তি সংগঠন থেকে ছিটকে যেতে পারে। 


নিজস্ব মিডিয়া তৈরি: বিরুধীদের অপপ্রচারের জবাব দিতে এবং নিজেদের আদর্শের প্রচারের জন্য মিডিয়া তৈরি, সাংবাদিক তৈরি, নিজস্ব সংবাদপত্র ও প্রকাশনী প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবী। 


নিজস্ব স্কুল-কলেজ তৈরি: নিজস্ব স্কুল-কলেজ তৈরি করে দ্বীন ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বিত কারিকুলাম প্রণয়ন করে ছাত্রদেরকে দ্বীন ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার কর্মসূচী হাতে নেওয়া।


ভিন্ন ধারায় ইসলামের খেদমতকারীদের শুভাকাংখীর ভূমিকায় থাকা:  ইসলামী ভাবধারার সকল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, টিভি চ্যানেল, ফেসবুক গ্রুপ ইত্যাদির সমর্থন, সহমর্মিতা এবং কাছে আনতে হবে। এমনকি প্রতিটি চ্যানেলের সাবস্ক্রাইব ও মেম্বারদের সাথে অনলাইনে অফলাইনে যোগাযোগ ও পরিচিত হওয়া এবং তাদেরকে দলে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করা।


অনুশীলনযোগ্য ইসলামের নমুনা তৈরি: 


বর্তমান আলেম সমাজ শুধুমাত্র মুখে ইসলামের গৌরবের কাহিনী বলে বেড়ায়। কিন্তু বাস্তবে অনুশীলন করা যায়, পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় এবং সমষ্টিগতভাবে চর্চা করা যায় এমন একটি সমাজ সৃষ্টি করে দেখাতে পারেনি (যাদের মাঝে বসবাস করে বাস্তব ইসলামের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে)। তাই আপনারা এমন একটি সমাজ তৈরি করুন যেই সমাজে গিয়ে ইসলামের সৌন্দর্য্য কিছুটা হলেও পর্যবেক্ষন করে দেখা যাবে। যেমন- 

ক) আপনাদের প্রতিষ্ঠিত স্কুলের দোকানে বিক্রেতা না থাকলেও ছাত্র-ছাত্রী বা বা শিক্ষক দোকানের জিনিস বিনামূল্যে বা কৌশলে কম মূল্যে নিবে না।

খ) বাগানের গাছগুলোতে ফল ঝুলে থাকলেও কোন সদস্য গাছ থেকে আম ছিড়ে খাবে না বা চুরি করে নিয়ে যাবে না।

 গ) ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত পণ্যগুলোতে লাভের আশায় কেউ ভেজাল মিশ্রণ করবে না। 


শেষকথা: সর্বশেষে বলতে চাই, প্রস্তাবিত এই নীতিগুলো পছন্দ হলে আরও বিস্তারিতভাবে লিখে দিতে প্রস্তুত আছি। 



শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫

হেজবুত তাওহীদ! বাংলার আকাশে এক বিপ্লবী ঝড়ের পূর্বাভাস!


ভূমিকাঃ যদিও হেজবুত তাওহীদ সম্পর্কে এদেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো অবগত নয়। আবার যারা জানে তাদের অধিকাংশই তাদেরকে ঘৃণা করে। কিন্তু আমি তাদের সম্পর্কে যাচাই করতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছি বাংলার আকাশে এক বিপ্লবী ঝড়ের পূর্বাভাস! যে ঝড় এদেশের বর্তমান প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলার শক্তি অর্জন করে ফেলবে খুব শীঘ্রই। আর তখন তাদের সামনে দাড়ানোর মতো কোন নৈতিক ভিত্তি কিংবা সুসংঘটিত শক্তি এদেশের অন্য কোন দলের মধ্যে থাকবে না। কেন এবং কিভাবে? চলুন এই আলোচনার মাধ্যমে তা দেখে নেয়া যাক-


অপরাজয়ী হওয়ার মূলমন্ত্রঃ আমি মনেকরি একটি দল মৌলিকভাবে তিনটি কারনে অপরাজেয় হয়ে উঠে। যথা- 

ক) দুনিয়াবী সমস্যায় বাস্তবমূখী সমাধান 

খ) শক্তিশালী আদর্শিক ভিত্তি। 

গ) আদর্শে অবিচল। 

এবার চলুন দেখি মৌলিক এই তিনটি দিক থেকে হেজবুত তাওহীদ কতটা শক্তিশালী-


ক) দুনিয়াবী সমস্যায় বাস্তবমূখী সমাধান: প্রথমত তারা যেহেতু ইসলাম প্রচারের বিনিময়ে অর্থ গ্রহণকে হারাম মনে করে, তাই তারা তাদের সদস্যদেরকে পরিশ্রম করে রোজগার করার প্রতি উৎসাহ দিয়ে থাকে। তাছাড়া অর্থনৈতিক ‍মুক্তির লক্ষ্যে তাদের নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো উল্লেখযোগ্য-


কর্মীদের বাস্তব জীবনের সমাধান: অন্যান্য ইসলামী দলগুলোতে দেখা যায় তারা কর্মীদেরকে শুধুমাত্র দলের প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। কিন্তু একজন কর্মী যখন আর্থিক সমস্যায় পতিত হয় তখন সংগঠন তাকে বাস্তব কোন সমাধান দিতে পারে না। কিন্তু হেজবুত তাওহীদ তার প্রতিটি সদস্যের অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলায় তার পাশের কর্মীদেরকে সহায়তা করতে বলে। শুধু তাই নয় তাদের ইমাম প্রতিটি জুমার খুতবায় এই বলে ঘোষণা করে যে- “কার ঘরে খাবার নাই আমার কাছে নির্দিধায় বলুন, কে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, কে টাকার অভাবে বস্ত্র কিনতে অক্ষম আছেন বলুন- আমরা সাধ্যমতো আপনাকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।” এই যে একটা শান্তিময় ঘোষণা, যা আবেগকে তাড়িত করে ইসলামের সেই সোনালী অতীতের গৌরবোজ্জল খোলাফায়ে রাশেদার স্বর্ণযুগের ইতিহাসকে স্বরণ করিয়ে দেয়। বাংলাদেশে এমন কর্মীবান্ধব সংগঠন কি দ্বিতীয়টি আছে?


নিজস্ব কর্মসংস্থান সৃষ্টি: তারা দরিদ্র কর্মীদেরকে সাময়িকভাবে কিছু খাবার বা কিছু টাকা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে না। বরং তাদের সংগঠনের কর্মক্ষম বেকার সদস্যদের জন্য তিলে তিলে গড়ে তুলেছে প্রায় বিয়াল্লিশটি (৪২) প্রতিষ্ঠান। যাতে কর্মীদের স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় এবং কর্মীরা যেন সুদের মতো ঘৃন্য পন্থায় জড়িয়ে পড়তে বাধ্য না হয়। ভাবা যায়! যেখানে অন্যান্য ইসলামী দলগুলো কর্মীদের থেকে শুধুমাত্র নেয়ার জন্য চেয়ে থাকে এবং বলা চলে কর্মীদের দানের মাধ্যমে সংগঠন টিকে থাকে সেখানে হিজবুত তাওহীদ তার কর্মীদের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় কতটা কার্যকর! আমার মনে হয় বাংলাদেশের অন্যান্য ইসলামী দলের নেতারা নিজেদের কর্মীদের নিয়ে এরূপ দূরদর্শী উদ্যোগ আগামী একশত বছর পরও নিতে পারবে না।


খ) শক্তিশালী আদর্শিক ভিত্তি: তাদের আদর্শিক ভিত্তি শক্তিশালী হওয়ার কারণগুলো নিম্নরূপ-


আল্লাহর সার্বভৌমত্বে আপোষহীন: বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামী দলগুলো মুখে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কথা বললেও বাস্তবে গণতন্ত্রকে গ্রহণ করে নিয়েছে, যেই গণতন্ত্রের মধ্যে সুষ্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে যে- জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। যেকথা আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে। পক্ষান্তরে হেজবুত তাওহীদ প্রচলিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে ইসলামী বিপ্লব সাধন করে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যা প্রচলিত বিকৃত গণতান্ত্রিক ইসলামের চেয়ে নৈতিকভাবে উন্নত এবং বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ। প্রকৃতপক্ষে বিপ্লবী চেতনা না থাকলে একটি প্রতিষ্ঠিত শক্তিকে উৎখাত করা যায় না। যারা গণতন্ত্রকে মেনে নিয়েছে বা গণতন্ত্রের সাথে আপোষ করেছে তাদের পক্ষে গণতন্ত্রে বিরুদ্ধে বিদ্রোহী চেতনা অর্জন করা কখনোই সম্ভব হবে না। 


নৈতিক চরিত্র গঠনে অনন্য: বাংলাদেশের অন্যান্য ইসলামী দলগুলো যেখানে শুধুমাত্র সাংগঠনিক কার্যক্রমে কর্মীদের সততা পেলেই সন্তুষ্ট। কর্মীদের ব্যক্তিগত জীবনের চাকুরি, ব্যবসা কিংবা নিজ কর্মস্থলে সৎ কি-না এটা তারা তেমন গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণে আনেন না। তবে এক্ষেত্রে হেজবুত তাওহীদ একেবারেই আলাদা। তারা তাদের কর্মীদের বাস্তব জীবনের চরিত্র নিয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখে। তাদের যুক্তি হলো তুমি যদি বাস্তব জীবনেই সততার পথ থেকে বিচ্যুত থাক তাহলে কি এই ইসলাম পরকালে তোমার কোন কাজে আসবে? কাজেই কর্মস্থলে সততা বজায় রাখাই হলো মুমিনের বৈশিষ্ট্য।


জিহাদ তাদের অনুপ্রেরণ: তাদের কর্মসূচী হলো- ঐক্য, শৃঙ্খলা, আনুগত্য, হিজরত ও জিহাদ (সর্বাত্মক প্রচেষ্টা)। তাদের আলোচনায় জিহাদকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ফলে জিহাদের আলোচনা শুনতে শুনতে তাদের কর্মীরা মানসিকভাবে জিহাদের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে বলে আমি মনেকরি। 


সুসংগঠিত এবং শৃঙ্খলিত: হেজবুত তাওহীদ আনুগত্যের প্রতি এতটাই গুরুত্ব দিয়ে থাকে যে, অন্য কোন দলের সাথে তুলনাই করা চলে না। তারা সেনা কমান্ডের মতোই সুসংগঠিত এবং শৃঙ্খলিত শক্তি। এই সংগঠিত শক্তির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে তাদের দ্বারা বিপ্লব ঘটানো শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা বলেই আমার মনে হয়।


আমি মনেকরি একটি সুসংঘটিত ও অবিচল দলের হাতেই আল্লাহ বিজয় তুলে দেন, চাই তা ইসলামী আদর্শের হোক কিংবা কোন আদর্শের। কেননা যদি আল্লাহ তায়ালা শুধুমাত্র ইসলামেরই বিজয় দিতেন তবে পৃথিবীতে অন্য কোন আদর্শ বিজয় লাভ করতে পারতো না। এই উপলব্ধির মাধ্যমে আমার মনে হয় হেজবুত তাওহীদের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও এই সুসংঘটিত, শৃঙ্খলিত, অবিচল ও আপোষহীন নীতির কারণে তাদের দ্বারা বিপ্লব অবশ্যম্ভাবী। 


এক উম্মাহ ও এক নেতৃত্বে বিশ্বাসী: হেজবুত তাওহীদের ভাষায়- আমাদের আল্লাহ এক, কুরআন এক, নবী এক অতএব সকল মুসলিম এক উম্মাহর অন্তর্ভূক্ত। আর যখন এই মুসলিম উম্মাহ সকল ফেরকা ও মাজহাব পরিত্যাগ করে এক নেতৃত্বের অধীনে জিহাদ ও জীবন পরিচালনা করবে কেবলমাত্র তখনই মানবতা মুক্তি পাবে এবং ইসলাম বিজয়ী বলে বিবেচিত হবে।


অনুশীলনযোগ্য ইসলামের নমুনা তৈরি: 

বর্তমান আলেম সমাজ শুধুমাত্র মুখে ইসলামের গৌরবের কাহিনী বলে বেড়ায়। কিন্তু বাস্তবে অনুশীলন করা যায়, পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় এবং সমষ্টিগতভাবে চর্চা করা যায় এমন একটি সমাজ সৃষ্টি করে দেখাতে পারেনি (যাদের মাঝে বসবাস করে বাস্তব ইসলামের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে)। পক্ষান্তরে হেজবুত তাওহীদ এমন একটি সমাজ তৈরি করে দেখাতে পেরেছে, যেই সমাজে গিয়ে ইসলামের সৌন্দর্য্য কিছুটা হলেও পর্যবেক্ষন করে দেখা যায়। যেমন- ক) তাদের স্কুলের আম গাছগুলোতে আম ঝুলে থাকলেও কোন ছাত্র বা শিক্ষক গাছ থেকে আম ছিড়ে খাচ্ছে না বা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে না। খ) স্কুলের দোকানে বিক্রেতা না থাকলেও ছাত্র-ছাত্রী বা বা শিক্ষক দোকানের জিনিস বিনামূল্যে বা কৌশলে কম মূল্যে নিচ্ছে না। গ) তাদের ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত পণ্যগুলোতে লাভের আশায় কেউ ভেজাল মিশ্রণ করছে না। 


চতুর্মুখী পদক্ষেপ: তাদের আছে স্বতন্ত্র মিডিয়া, কর্মসংস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পত্রিকা ও সংস্কৃতি। এই উদ্যোগের ফলে একটি স্বতন্ত্র ও ব্যতিক্রমী সভ্যতা গড়ে উঠছে। 


দ্বীন প্রচারে অর্থনৈতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে: হেজবুত তাওহীদ মনেকরে দ্বীনের কাজ করতে হবে শুধুমাত্র জান্নাত লাভের আশায়, এর মধ্যে দুনিয়াবী স্বার্থের আশা করা যাবে না। তাই হেজবুত তাওহীদ কুরআনের বিনিময় নেওয়াকে হারাম বলে। পক্ষান্তরে বর্তমান আলেম সমাজ টাকা ছাড়া দ্বীন প্রচারে ইচ্ছুক নয়, যা দ্বীনের সাথে সাংঘর্ষিক। হেজবুত তাওহীদের ভাষায়- আলেমরা বলেন ওয়াজ মাহফিল জান্নাতের বাগান, তাহলে আপনারা এই জান্নাতের বাগানে টাকা ছাড়া  যেতে চান না কেন? খুবই যুক্তিসংগত কথা। আলেমরা এর কী উত্তর দেবেন? হেজবুত তাওহীদ তাদের কর্মীদেরকে বেতনভুক্ত ইমামের পিছনে সালাত আদায় করতে নিষেধ করে থাকে। 


গ) আদর্শে অবিচলতায় দৃষ্টান্ত স্থাপন:


সীমাহীন বিরোধিতায় অবিচল ও অগ্রগামীঃ বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্য কোন ইসলামী দল এতটা বিরোধিতার মুখোমুখি হয়নি যতটা হয়েছে হেজবুত তাওহীদ। বাংলাদেশের প্রায় সকল শ্রেণির আলেম তাদেরকে বিপজ্জনক, ধর্ম বিনাশকারী, ভ্রান্ত ও গুমরাহ বলে প্রচার করে থাকে। ফলে সকল মিডিয়া এবং দেশের সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি ক্ষিপ্ত ও খড়গহস্ত। এতসব বাঁধা সত্যেও হেজবুত তাওহীদ তাদের নিজেদের পথে অটল ও অবিচল। শুধু এখানেই থেমে নেই। সবার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দিনে দিনে তাদের কার্যক্রম প্রসারিত করছে, সদস্য সংখ্যা ক্রমশঃ বেড়েই চলছে। এই অবিচলতা একটা বিপ্লবের সূর্যকে কালক্রম অধিক প্রচণ্ড, প্রখর ও দূর্বার বিষ্ফারণের সময়কে নিকটবর্তী করে দিচ্ছে।

উপসংহার: যদিও আমি সরাসরি এই দলটির সাথে যুক্ত নই। তবে দীর্ঘ দিন যাবত অনলাইনে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে আমার এই উপলব্ধি হয়েছে। এখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এই দলের কাছে যাবো, তাদের সাথে কিছুদিন মিশে তাদের কার্যক্রম স্বচক্ষে দেখবো। তারপর ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেব।

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫

সার্বভৌমত্ব কার? ইসলাম ও গণতন্ত্রের সংঘাত!


ভূমিকাঃ ইসলাম গতানুগতিক কোন ধর্ম নয়। এটা একটা পরিপূর্ণ জীবন বিধানের নাম। আর এই বিধান বাস্তবায়ন করার জন্য ইসলামকেই মডেল হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। গণতন্ত্র বা অন্য কোন মতাদর্শকে ব্যবহার করে ইসলাম বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা কেবল বুকামিই নয় বরং ইসলামের সাথে মিথ্যার মিশ্রণের শামিল। কেননা এই গণতন্ত্রকে মেনে নিলে এর ধারা মোতাবেক সাধারণ মানুষকে সার্বভৌমত্বের মালিক বলে মেনে নিতে হয়। যা ইসলামী বিশ্বাসে শিরকের মতো মহা পাপ। কেননা ইসলামে সার্বভৌমত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ। চলুন তাহলে প্রথমে দেখে নেয়া যাক এই সার্বভৌমত্ব বলতে আসলে কী বুঝায়-

সার্বভৌমত্ব কি?

সার্বভৌমত্ব (Sovereignty) বলতে বোঝায় কোনো রাষ্ট্র বা কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত, স্বাধীন নিরঙ্কুশ ক্ষমতা, যার উপর আর কোনো উচ্চতর কর্তৃত্ব নেই।

সার্বভৌমত্বের মূল ধারণা:

এটি এমন একটি ক্ষমতা, যার মাধ্যমে রাষ্ট্র নিজের অভ্যন্তরীণ বাহ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।

রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন, বিচার, প্রশাসন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ ছাড়াই।

সার্বভৌমত্ব ছাড়া কোনো রাষ্ট্র পূর্ণতা পায় নাএটি রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক উপাদান।

 

সার্বভৌমত্বের দুইটি প্রধান রূপ:

ধরন

ব্যাখ্যা

আইনগত সার্বভৌমত্ব

রাষ্ট্রের সেই ক্ষমতা, যার মাধ্যমে আইন প্রণয়ন বাস্তবায়ন করা হয়। যেমন: পার্লামেন্ট বা সংবিধানিক কর্তৃপক্ষ।

রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব

জনগণের ইচ্ছা মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা। যেমন: গণতান্ত্রিক ভোট, জনমত।

সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্য:

চূড়ান্ত: এর উপর আর কোনো কর্তৃপক্ষ নেই।

অবাধ: নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীন।

অসীম: সীমাহীন ক্ষমতা, তবে বাস্তবে সংবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

অবিভাজ্য: একক কর্তৃত্ব, যদিও আধুনিক রাষ্ট্রে ক্ষমতা ভাগ হয়।

একটি সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা:

সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের সেই চূড়ান্ত ক্ষমতা, যার মাধ্যমে সে নিজের অভ্যন্তরীণ আন্তর্জাতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে, অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই।

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সার্বভৌমত্ব

ইসলামে সার্বভৌমত্বের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। তিনি সৃষ্টিজগতের মালিক, বিধানদাতা এবং চূড়ান্ত কর্তৃত্বের অধিকারী।

 

মূল ভিত্তি:

আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কুরআন হাদীসে সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত:

ইসলামী রাষ্ট্রে আইনের উৎস: কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা কিয়াস।

মানুষের খিলাফত: মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি, কিন্তু আইন প্রণয়নের চূড়ান্ত ক্ষমতা তার নেই।

ইসলামী রাষ্ট্রে সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্য:

নিঙ্কুশ কর্তৃত্ব: আল্লাহর বিধানই চূড়ান্ত।

আইনানুগ শাসন: শাসকরা আল্লাহর বিধানের ভিত্তিতে শাসন করেন।

জনগণের ইচ্ছা নয়, আল্লাহর নির্দেশ: গণতন্ত্র নয়, আল্লাহর বিধানই মূল।

 

 আধুনিক রাষ্ট্রে সার্বভৌমত্বের চ্যালেঞ্জ

আধুনিক রাষ্ট্রে সার্বভৌমত্বের ধারণা মানবকেন্দ্রিক রাজনৈতিক। এখানে জনগণ বা সংবিধানকে চূড়ান্ত কর্তৃত্বের উৎস হিসেবে দেখা হয়।

চ্যালেঞ্জসমূহ:

আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ: জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা, বৈশ্বিক চুক্তি রাষ্ট্রের স্বাধীন সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে।

গ্লোবালাইজেশন: অর্থনীতি, প্রযুক্তি মিডিয়ার প্রভাবে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতিতে বহির্বিশ্বের প্রভাব বাড়ছে।

আইনগত দ্বন্দ্ব: আন্তর্জাতিক আইন বনাম জাতীয় আইনকোনটি চূড়ান্ত?

রাজনৈতিক চাপ: শক্তিশালী রাষ্ট্র বা জোটের প্রভাব ছোট রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে।

তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি

দিক

ইসলামী দৃষ্টিকোণ

আধুনিক রাষ্ট্র

কর্তৃত্বের উৎস

আল্লাহ

জনগণ বা সংবিধান

আইন প্রণয়ন

কুরআন সুন্নাহ

সংসদ বা রাজনৈতিক দল

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

আল্লাহর বিধান

রাজনৈতিক প্রক্রিয়া

চ্যালেঞ্জ

শিরক, বিদআত

আন্তর্জাতিক চাপ, গ্লোবালাইজেশন

 

গণতন্ত্র বনাম ইসলামী শাসনব্যবস্থা

গণতন্ত্র: মানুষের শাসন

গণতন্ত্র (Democracy) শব্দটি এসেছে গ্রিক “Demos” (জনগণ) “Kratia” (শাসন) থেকে। অর্থাৎ, জনগণের শাসন।

মূল বৈশিষ্ট্য:

সার্বভৌমত্ব জনগণের: আইন প্রণয়ন, শাসন বিচার জনগণের বা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে।

সংখ্যাগরিষ্ঠের মত চূড়ান্ত: ভালো-মন্দ নির্ধারণে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ই শেষ কথা।

ধর্মনিরপেক্ষতা: ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে ধর্মের ভূমিকা নেই।

বহুদলীয় রাজনীতি: বিভিন্ন দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ক্ষমতায় আসে।

ইসলামী শাসনব্যবস্থা: আল্লাহর বিধান

ইসলামী শাসনব্যবস্থা (খিলাফত বা শরীয়াহভিত্তিক রাষ্ট্র) আল্লাহর সার্বভৌমত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত।

মূল বৈশিষ্ট্য:

সার্বভৌমত্ব আল্লাহর: আইন প্রণয়নের অধিকার একমাত্র আল্লাহর।

শাসক আল্লাহর প্রতিনিধি: জনগণের নয়, বরং আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত।

ধর্ম কেন্দ্রিক রাষ্ট্র: কুরআন সুন্নাহই রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি।

শূরা (পরামর্শ): জ্ঞানী ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের পরামর্শে রাষ্ট্র পরিচালনা।

কুরআনে বলা হয়েছে: “আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান দেওয়ার অধিকার নেই।” — সূরা ইউসুফ ৪০

 

তুলনামূলক বিশ্লেষণ

বিষয়

গণতন্ত্র

ইসলামী শাসনব্যবস্থা

সার্বভৌমত্ব

জনগণের

আল্লাহর

আইন প্রণয়ন

সংখ্যাগরিষ্ঠের মত

কুরআন সুন্নাহ

ধর্মের ভূমিকা

ব্যক্তিগত

রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিগত উভয়

নেতৃত্ব

নির্বাচিত প্রতিনিধি

যোগ্য খলীফা বা আমীর

উদ্দেশ্য

জনগণের সন্তুষ্টি

আল্লাহর সন্তুষ্টি


 আল্লাহর সার্বভৌমত্বের বাস্তব প্রয়োগ

আল্লাহর সার্বভৌমত্বের বাস্তব প্রয়োগ বলতে বোঝায়মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানকে চূড়ান্ত কর্তৃত্ব হিসেবে গ্রহণ করা এবং তা বাস্তবভাবে সমাজ, রাষ্ট্র ব্যক্তিগত জীবনে কার্যকর করা।

 

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সার্বভৌমত্বের বাস্তব প্রয়োগ

. আইন প্রণয়নে আল্লাহর কর্তৃত্ব

ইসলামী রাষ্ট্রে কুরআন সুন্নাহ- আইন প্রণয়নের উৎস।

কোনো সংসদ, নেতা বা জনগণ আল্লাহর বিধানের বিপরীতে আইন তৈরি করতে পারে না।

হুকুম তো একমাত্র আল্লাহরই।” — সূরা ইউসুফ ৪০

 

. শাসনব্যবস্থায় আল্লাহর বিধান

শাসকরা জনগণের প্রতিনিধি নয়, বরং আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত।

শাসনব্যবস্থায় শূরা (পরামর্শ) থাকবে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে শরীয়াহ অনুযায়ী।

 

. আদালত বিচারব্যবস্থায় শরীয়াহ

বিচার হবে আল্লাহর আইন অনুযায়ী, ব্যক্তিগত মত বা পশ্চিমা আইন নয়।

তারা কি আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে জাহেলিয়াতের বিধান চায়?” — সূরা মায়েদা ৫০

. শিক্ষা সংস্কৃতিতে তাওহীদের ভিত্তি

পাঠ্যবই, মিডিয়া, সংস্কৃতিসবকিছুতে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের শিক্ষা থাকতে হবে।

পশ্চিমাদের কল্পিত মানবতাবাদ এর নামে ধুকাবাজি নয়, আল্লাহকেন্দ্রিক জীবনদর্শন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই মানবতার প্রকৃত বিজয় সুনিশ্চিত হবে।

 

আধুনিক বাস্তবতায় চ্যালেঞ্জ

* গণতন্ত্র মানবকেন্দ্রিক আইন আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করে।

* আন্তর্জাতিক চুক্তি সংস্থা ইসলামী রাষ্ট্রের স্বাধীন সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করে।

* মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে অনেক সময় আল্লাহর বিধান নামমাত্র থাকে, বাস্তবে পশ্চিমা আইন চলে।

 

বিশ্লেষণমূলক রেফারেন্স

* পাঠাগার ওয়েবসাইটে বিশদ আলোচনা অনুযায়ী, ইসলামী রাষ্ট্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মানেআইন, বিচার, শিক্ষা, সংস্কৃতি সবকিছুতে আল্লাহর বিধান কার্যকর করা।

* ইসলামে সার্বভৌমত্বের স্বরূপ বইয়ে বলা হয়েছে, আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে ভাগ করে অন্য কাউকে কর্তৃত্ব দেওয়া স্পষ্ট শিরক।

আধুনিক রাষ্ট্রে ইসলামী শাসন বাস্তবায়নের কৌশল

. আদর্শিক ভিত্তি গঠন

জনগণের মধ্যে তাওহীদ, রিসালাত আখিরাত ভিত্তিক চিন্তা জাগ্রত করতে হবে।

ইসলামী আদর্শকে শিক্ষা, সংস্কৃতি মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে।

 

. শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার

পাঠ্যবই শিক্ষা নীতিতে ইসলামী মূল্যবোধ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ইসলামিক চিন্তাবিদদের মত অনুযায়ী আধুনিক শরীয়াহভিত্তিক ফিকাহ শিক্ষা দিতে হবে।

 

. আইন বিচারব্যবস্থায় শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা

ধাপে ধাপে শরীয়াহভিত্তিক আইন প্রণয়ন বাস্তবায়ন করতে হবে।

বিচারকদের ইসলামী জ্ঞান নৈতিকতা নিশ্চিত করতে হবে।

 

. রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরিবর্তন

জনগণকে জাগ্রত করে একটি ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে গণতন্ত্রের কাঠামো ভেঙ্গে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

নেতৃত্বে আসতে হবে এমন ব্যক্তিদেরযারা আল্লাহর বিধানকে চূড়ান্ত কর্তৃত্ব হিসেবে মানেন।

. সাংবাদিকতা মিডিয়ায় ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি

মিডিয়াকে ব্যবহার করতে হবে ইসলামী চিন্তা সংস্কৃতি প্রচারে।

ভ্রান্ত মতবাদ পশ্চিমা প্রভাব থেকে জনগণকে সচেতন করতে হবে।

 

. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কৌশল

ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সংহতি সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে।

পশ্চিমা চাপ মোকাবেলায় নৈতিক কূটনৈতিক কৌশল গ্রহণ করতে হবে।

 

বাস্তবায়নের ধাপভিত্তিক রূপরেখা

ধাপ

কাজ

লক্ষ্য

আদর্শিক জাগরণ

জনগণের চিন্তা পরিবর্তন

শিক্ষা সংস্কার

ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠন

আইন বাস্তবায়ন

শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা

আদর্শিক বিপ্লব

নেতৃত্বে পরিবর্তন

মিডিয়া ব্যবহার

সচেতনতা বৃদ্ধি

আন্তর্জাতিক কৌশল

চাপ মোকাবিলা

 

 

 বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

সম্ভাবনার দিকগুলো

. জনগণের ধর্মীয় অনুভূতি

বাংলাদেশের জনগণের একটি বড় অংশ ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী।

দাওয়াত, ওয়াজ-মাহফিল, মসজিদ-মাদ্রাসার প্রসারসবই ইসলামী চেতনার শক্ত ভিত্তি।

. তরুণদের আগ্রহ

নতুন প্রজন্মের মধ্যে ইসলামী চিন্তা আত্মপরিচয়ের ঝুঁক বাড়ছে।

সামাজিক অবক্ষয় পশ্চিমা সংস্কৃতির চাপে অনেক তরুণ ইসলামী আদর্শে ফিরে আসছে।

. সংগঠনের বিস্তার

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত আন্দোলনসহ অনেক সংগঠন তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছে। যদিও এই সংগঠনগুলো বিপ্লবের পথ পরিহার করে গণতন্ত্র নামক তাগুতের অনুগত হয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায় (যা কখনোই সম্ভব নয়)। তবুও আদর্শ কোন প্ল্যাটফরম না থাকায় ইসলাম মনেকরে মানুষ এগুলোতেই ঝুঁকে পড়ছে।

 চ্যালেঞ্জ প্রতিবন্ধকতা

. ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক কাঠামো

বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলো ইসলামী আদর্শের প্রতি বিরূপ।

নির্বাচন আইন প্রণয়নে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রাধান্য পাচ্ছে।

. আন্তর্জাতিক চাপ সীমান্ত সমস্যা

ভারত, মিয়ানমার বৈশ্বিক শক্তির প্রভাবে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে স্বাধীনতা সীমিত।

বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সীমান্ত আগ্রাসন বহুমেরু বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ইসলামী আন্দোলনের জন্য চ্যালেঞ্জ।

. সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা

নেতৃত্ব সংকট, আদর্শিক বিভাজন, এবং আন্তঃসংগঠন দ্বন্দ্ব ইসলামী আন্দোলনকে দুর্বল করে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কৌশল

কৌশল

ব্যাখ্যা

আদর্শিক জাগরণ

জনগণের মাঝে তাওহীদ ইসলামী চিন্তা ছড়িয়ে দেওয়া

শিক্ষা সংস্কার

ইসলামী মূল্যবোধভিত্তিক পাঠ্যক্রম চালু

রাজনৈতিক অংশগ্রহণ

ইসলামী দলগুলোর ঐক্য বিপ্লবের কৌশল

 মিডিয়া ব্যবহার

ইসলামী আদর্শ প্রচারে মিডিয়ার সক্রিয় ভূমিকা

আন্তর্জাতিক সংহতি

মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার

 

বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জগুলো কি কি?

বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কিছু গভীর বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা আদর্শিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণযোগ্য। নিচে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হলো:

. ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান রাজনৈতিক কাঠামো

বাংলাদেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে গঠিত, যদিও ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত।

আইন প্রণয়ন রাষ্ট্র পরিচালনায় আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কার্যকরভাবে প্রতিফলিত হয় না।

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর উপর আইনি রাজনৈতিক বাধা রয়েছে।

. আন্তর্জাতিক চাপ বৈশ্বিক প্রভাব

জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা বৈশ্বিক চুক্তির কারণে শরীয়াহভিত্তিক আইন বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি হয়।

পাশ্চাত্য মিডিয়া সংস্কৃতির প্রভাবে ইসলামী মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

. আদর্শিক বিভ্রান্তি ধর্মীয় অজ্ঞতা

অনেক মুসলমান ইসলামের প্রকৃত আকিদা শরীয়াহ সম্পর্কে অজ্ঞ।

শিরক, বিদআত কুসংস্কার ইসলামী সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

ইসলামী দলগুলোর মধ্যে আন্তঃসংগঠন দ্বন্দ্ব বিভাজন রয়েছে।

. শিক্ষা মিডিয়ায় ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির অনুপস্থিতি

পাঠ্যবই শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী আদর্শের উপস্থিতি দুর্বল।

মিডিয়া সংস্কৃতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা পাশ্চাত্য প্রভাব প্রাধান্য পাচ্ছে।

. রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ইসলামী নেতৃত্বের দুর্বলতা

দৃশ্যমান ইসলামী দলগুলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মেনে নিয়ে বিপ্লবী চেতনার টুটি চেপে ধরেছে যা বিপ্লবকে নির্বাপিত বা হাইজ্যাক করার শামিল। তবুও তারা নির্বাচনী মাঠে প্রভাবশালী নয়।

নেতৃত্বে আদর্শিক ঐক্য, দৃঢ়তা কৌশলগত দক্ষতার অভাব রয়েছে।

. সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা

জাতীয়তাবাদ, ভাষাবাদ আঞ্চলিকতা ইসলামী ঐক্যকে দুর্বল করে।

নারী যুব সমাজে পাশ্চাত্য জীবনধারার প্রভাব ইসলামী মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জ করছে।

. ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার

ইসলামী আন্দোলনগুলোকে জঙ্গিবাদ বা মৌলবাদ হিসেবে চিহ্নিত করে অপপ্রচার চালানো হয়।

মিডিয়া রাজনৈতিক মহলে ইসলামী চিন্তাবিদদের অবমূল্যায়ন করা হয়।

 

 এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় করণীয়

বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো মোকাবেলায় প্রয়োজন দূরদর্শী কৌশল, আদর্শিক দৃঢ়তা বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় তুলে ধরা হলো:

. আদর্শিক পুনর্জাগরণ

জনগণের মাঝে তাওহীদ, রিসালাত আখিরাত ভিত্তিক চিন্তা জাগ্রত করতে হবে।

কুরআন সহীহ হাদীসভিত্তিক শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবেশিরক, বিদআত কুসংস্কার দূর করতে।

জনগণকে একটি বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে হবে এবং বিপ্লবের চেতনায় তীব্র আকাঙ্খী করে তুলতে হবে।

. শিক্ষা মিডিয়া সংস্কার

পাঠ্যবই শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী মূল্যবোধ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

মিডিয়ায় ইসলামের সৌন্দর্য মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে হবে।

ওয়াজ মাহফিল, বক্তৃতা দাওয়াতি কার্যক্রমে আদর্শিক বিশুদ্ধ জ্ঞান নিয়তের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

. ইসলামী ঐক্য গঠন  

বিপ্লবে বিশ্বাসী ও আগ্রহী ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য কৌশলগত সমন্বয় জরুরি।

. সামাজিক ঐক্য সংস্কৃতির পুনর্গঠন

জাতীয়তাবাদ, ভাষাবাদ আঞ্চলিকতা নয়উম্মাহ ভিত্তিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

পরিবার, সমাজ তরুণদের মাঝে ইসলামী জীবনদর্শন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

. আন্তর্জাতিক কৌশল সংহতি

মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে নৈতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।

আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবেলায় ইসলামী চিন্তাবিদ, অর্থনীতিবিদ কূটনীতিকদের ভূমিকা বাড়াতে হবে।

বাস্তবায়নের রূপরেখা

ধাপ

করণীয়

লক্ষ্য

আদর্শিক জাগরণ

দাওয়াত, শিক্ষা, মিডিয়া

চিন্তা বিশ্বাসের পরিবর্তন

রাজনৈতিক কৌশল

নেতৃত্ব, ঐক্য, অংশগ্রহণ

রাষ্ট্রীয় নীতিতে প্রভাব

শিক্ষা সংস্কার

পাঠ্যবই, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠন

 মিডিয়া ব্যবহার

ওয়াজ, সোশ্যাল মিডিয়া

সচেতনতা দাওয়াত

আন্তর্জাতিক সংহতি

মুসলিম রাষ্ট্র, কূটনীতি

বৈশ্বিক চাপ মোকাবিলা

 

 বাংলাদেশে ইসলামী ঐক্য গঠনের কৌশল

বাংলাদেশে ইসলামী ঐক্য গঠনের বিষয়টি সময়ের দাবিবিশেষ করে যখন ইসলামপন্থী দলগুলো রাজনৈতিকভাবে ছিন্নভিন্ন এবং আদর্শিকভাবে বিভক্ত। চলুন দেখি, কীভাবে এই ঐক্য গঠন সম্ভব হতে পারে এবং কী কৌশল গ্রহণ করা যেতে পারে তা বিশ্লেষণ করি।

 

ইসলামী ঐক্য গঠনের প্রয়োজনীয়তা

আদর্শিক মিল: তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাতমূল আকিদায় প্রায় সব ইসলামী দলের ঐক্য রয়েছে।

রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি: এককভাবে দুর্বল হলেও সম্মিলিতভাবে ইসলামী দলগুলো শক্তিশালী বিরোধী শক্তি হতে পারে।

জনগণের প্রত্যাশা: ধর্মপ্রাণ জনগণ চায় ইসলামী দলগুলো এক প্ল্যাটফর্মে কাজ করুক।

ঐক্য গঠনের কৌশলসমূহ

. আদর্শিক সংলাপ পারস্পরিক শ্রদ্ধা

ফিকহি বা মাসালাগত মতপার্থক্যকে শাখাগত হিসেবে গ্রহণ করে মূল আকিদায় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

আমরা সবাই আল্লাহর জমিনে ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে চাই”—এই ভিত্তিতে ঐক্য সম্ভব।

. নেতৃত্ব পর্যায়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ বৈঠক

সব দলের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক যোগাযোগ বাড়াতে হবে

. গণমাধ্যমে ঐক্যের বার্তা প্রচার

মিডিয়ায় নেতাদের ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে জনগণের আস্থা সমর্থন বাড়ে।

অপপ্রচার বিভ্রান্তি রোধে সমন্বিত বক্তব্য জরুরি।

. আন্তঃসংগঠন প্ল্যাটফর্ম গঠন

একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে নিয়মিত বৈঠক, কর্মসূচি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে।

ছোট দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে সীসা ঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

শেষকথাঃ যেহেতু এদেশের প্রায় নব্বই শতাংশ মানুষই মুসলিম। তাই সবাইকে এটা বুঝাতে হবে যে, সার্বমৌভত্বের মালিক তথা চূড়ান্ত নির্দেশদাতা একমাত্র আল্লাহ। তাই সকল তন্ত্র মন্ত্র ও ফেরকা-মাজহাবকে বাদ দিয়ে একজন নেতার অধীনে এসে সকল মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলামের বিজয় সুনিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে হবে।